জ্বলদর্চি

সুব্রত দাস


সু ব্র ত  দা স 


পরিযায়ী

এতকাল শুনে এসেছি পরিযায়ী পাখী হয়
আসে ভিন দেশে,
স্বদেশেও শ্রমিক পরিযায়ী হয়
জানি না কোন বেশে,
শ্রমের মূল্যও পায়নি তারা
একি নির্মম অবিচার
শিক্ষিত সমাজ মালিক শ্রেণীর
কি অদ্ভুত আচার।

রাজনীতি আজও স্বার্থহীন নয়
সদা মনে জাগ্রত ভয়
খালি মনে হয় বেঁচে থাকা
আর নয় আর নয়।

নিরুপায় হয়ে যেতে হবে হেঁটে
নিজ গ্রামে নিজ ঘরে
শত শত যোজন দূরে,
মাথায় বোঝা অবসন্ন পা
অন্নহীন পেটে
শুখা রুটি আছে কয়খানি
তাই খাবে চেটে চেটে
বাঁহকে আছে শিশু
আছে ঘুমিয়ে টানা ট্রলি ব্যাগে
পাটাতনে বসে আছে পোয়াতী মা-- যেতে হবে বেগে।

ওরা চলে গেলো
অদৃষ্টে এই লেখা ছিল
দেহগুলি হল ছিন্ন ভিন্ন
পড়ে থাকলো শুখা রুটিসব
আর্তনাদে পূর্ণ হলো মাঠ
রক্ত শুকিয়ে হলো কাঠ।

শুধু থেকে গেলো সাধ
দেখা না হওয়ার
প্রিয়জনে পরিজনে
সে ভীষণ ব্যথা রয়ে গেলো মনে,
ফিরে যাওয়া হলো না আর
নিজ নিজ নিবাসে
পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে সব
চলে গেলো স্বর্গীয় আবাসে।।

দাও আর নাও

যেতে যেতে পথ খোঁজে 
আবেগঘন মুহুর্ত
পথ যেমন বলে তেমন আর কেউ বলে না
গাছের ছায়া শ্রান্ত পথিককে ডাকে
এসো আমার কাছে বিশ্রাম নাও
মা ছাড়া একথা আর কেউ বলে না
প্রেয়সী তুমি তখন ডাক
যখন আমার পকেটে টাকা থাকে
না থাকলে প্রেম তো দূরের কথা
ভালো কথা একটাও বলো না
দাও আর নাও তার বাইরে কি
কিছু নেই
নিঃস্বার্থ প্রেম কোথাও পেলাম না
শুধু মা, ঈশ্বর আর গাছেদের বাদে।।


আর যদি না বাসো ভালো

দেখো না এনেছি কিনে একগোছা লাল গোলাপ
তুমি ভালো-বাসতে বলে
যদি ফিরিয়ে দাও - ভেবোনা দুঃখ পাবো
জেনেই এসেছি দুঃখ পাবো বলে
তোমার দেওয়া ফুলদানিটা আজও আমার টেবিলে
তাতেই রাখবো সাজিয়ে।।
আঁজলা ভরে চাদেঁর আলো এনেছি উঠোন থেকে
মেঘ এসে চাঁদকে ঢেকে দেওয়ার আগেই
তুমি এলে মাখাবো তোমার গালে
না এলে জানালা দিয়ে ফিরিয়ে দেবো চাঁদের কাছে।।
এক মুঠো রোদ্দুর মেখে এসেছি লেপের তলায়
প্রেয়সী আসার অপেক্ষায়
যদি না আসে - 
আমি আমার ওমটুকু হারাতে চাই না বলে।।


প্রশ্ন থেকে গেলো

পুবের বাগানে ডাক শুনে
নীলকণ্ঠ পাখীর খোঁজে গেলাম
দেখা পেলাম নীলবসনা সুন্দরীর
নীলকণ্ঠ পরিযায়ী নয়-কিন্তু
নীলবসনাও পরিযায়ী কিনা বলা মুস্কিল
পরিযায়ীর সংজ্ঞাটা জানা আছে
ত্রস্ত চকিত ভীত, সন্দেহ হলে পলায়ন
শিকারি যেমন ভাবে ও শিকার
না-আমি
অতএব দুজনেই সজাগ
লুকোচুরি খেলা।

নীলকণ্ঠ পাখীর বদলে নীলবসনাকে স্বপ্নের অনুভূতিতে চেয়ে থাকা
স্বল্প বক্ষ আবরণের উপর নীল মখমলের স্বচ্ছতার প্রলেপে ফুটে উঠেছে অজন্তা ইলোরা কোনার্ক খাজুরাহোর
সূক্ষ্ম কারুকার্য
অঞ্চল লুটিয়ে পশ্চাৎদেশ একটু অন্ধকার
কোটিদেশ থেকে ঝোলানো কুঁচি
চলার ছন্দে উতলা পায়ের
শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি
মনের হাওয়াতে আঁচল খসে পড়া-আবার আলতো করে টেনে নেওয়া - আর
আয়তটানা চোখের মোহিনী চাউনি
নীলকণ্ঠ পাখীর মতোই দেহের বিচ্ছুরণ
সম্মোহিনী যাদুতে যেন আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার ডাক
প্রশ্ন থেকে গেল কে ছিল-ও
নীলবসনা সুন্দরী-না-মায়াবিনী।।

কাপুরুষ

জোয়ান মরদ ভেগেছে রাঁড়ের সাথে
একফালি শিশু ও যুবতী বউকে ফেলে
মরদ সেদিন ঝগড়া করলো দুই নেশাতে মেতে
সেদিন তুই হাসছিলি কেন দাঁড়িয়ে বাবুর ক্ষেতে?
একটু হাসিও এতো খারাপ
এ কেমন ধারাপাত!
কাপুরুষেরাই পালায় দিয়ে
না-নান অজুহাত।।

--------

Post a Comment

0 Comments