জ্বলদর্চি

ক্লাস অফ এইটিথ্রি / রাকেশ সিংহ দেব

ক্লাস অফ এইটিথ্রি’ : সিস্টেমের ভেতরে সিস্টেম রক্ষার লড়াই

পরিচালক – অতুল সবরওয়াল 
অভিনয় - ববি দেওল, অনুপ সোনি, জয় সেনগুপ্ত, বিশ্বজিৎ প্রধান।
মুক্তি – ২১ আগস্ট ,২০২০। নেটফ্লিক্স । 
রেটিং – 3/5 

‘আইন’ আর ‘ব্যবস্থা’ আসলে একই মুদ্রার দুটো পিঠ। প্রয়োজনে তাই আইন ভেঙেও আইনের হেফাজত করতে হয় যাতে সমাজ নামক ‘সিস্টেমে’ ব্যবস্থা ঠিক থাকে। আটের দশকে মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডকে কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবস্থার ভারসাম্য আনতে মুম্বাই পুলিশকেও করতে হয়েছিল আইনের মধ্যে থেকে আইন ভাঙার নানা কাজ। সে সময়ে পুলিশ আধিকারিকদেরও নকলি এনকাউন্টারের গপ্পো ফেঁদে খতম করতে হত আন্ডারওয়ার্ল্ড চক্রের একের পর এক পাণ্ডাকে। একদিকে স্বার্থান্বেষী প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ডের রাঘব বোয়ালদের অদৃশ্য কানেকশন আর অন্যদিকে গ্যাংস্টারদের দাপট। এনকাউন্টারের পর হিউম্যান রাইটস কমিশনের কটাক্ষ, সমালোচনা। সিস্টেমে থেকে সিস্টেমের সঙ্গে এই লড়াই, খাকি উর্দি গায়ে সবদিকই সামাল দিতে হত। জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করা যে কতটা কঠিন, একাধিক সৎ পুলিশ অফিসারকেই তা হাড়ে হাড়ে টের পেতে হয়েছে। মুম্বই পুলিশ ও আন্ডারওয়র্ল্ড এর এই সংঘর্ষ বলিউডি পরিচালকদের অত্যন্ত পছন্দের বিষয়। এই ভালবাসা বড় পর্দা থেকে ঢুকে পড়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের হৃদয়ে। এই বিষয়ে নানা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ওয়েব সিরিজ়ের দাপট দিব্যি বহাল। এইসময় এস হুসেন জ়াইদির লেখা ‘দ্য ক্লাস অফ এইটিথ্রি: দ্য পানিশারস অব মুম্বই পুলিশ’ নভেলের ছায়া অবলম্বনে ছবি বানিয়েছেন পরিচালক অতুল সবরওয়াল। আটের দশকের মুম্বইয়ের বুকে আন্ডারওয়ার্ল্ড জগতের দাপাদাপি ঠিক কতটা ছিল? খুন, স্মাগলিং, বিদেশি দ্রব্যের কালোবাজারি, রাহাজানি… অন্ধকারজগতের ছায়া মায়নগরীর পুলিশ প্রশাসনে ঠিক কতটা প্রভাব ফেলেছিল, সেই সম্পর্কিত মোটামুটি একটা আন্দাজ পাওয়া যায় এই ছবি থেকে।  ছবির চেনা মুখ বলতে ববি দেওল, অনুপ সোনি এবং জয় সেনগুপ্ত। এক্ষেত্রে কনটেন্টই ছবিকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ছবির স্মার্ট পরিবেশনা।
সাল ১৯৮২। নাসিকের পুলিশ অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ চলছে নতুন ব্যাচের ক্যাডেটদের। অ্যাকাডেমির নতুন ডিন বিজয় সিংহ-র (ববি দেওল) প্রথম ব্যাচ। যদিও বিজয়ের জন্য সেটি শাস্তিমূলক পোস্টিং। ব্যাচের সবচেয়ে খারাপ পাঁচ জন ছাত্রের ডিনের ক্লাস করার খুব ইচ্ছে। কিন্তু তার দর্শনই পাওয়া যায় না! ক্লাসের সবচেয়ে দুর্বল পাঁচ জন কী ভাবে ডিন বিজয় সিংহের সহচর্য এবং প্রশিক্ষনে পরবর্তীতে দুর্ধর্ষ অফিসার হিসেবে মুম্বই পুলিশ ফোর্সে নিজেদের ছাপ ফেলে, কী করেই বা আট বছর আগে ডিনের হেরে যাওয়া অপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে, তা নিয়ে গল্প। কী সেই অসাধ্যসাধন, তা জানতে হলে ছবি দেখতে হবে।
পৌনে দু’ঘণ্টারও কম সময়ের এই ছবির ট্রিটমেন্ট খুব ফোকাসড। যা এই ছবির সাফল্য আবার দুর্বলতাও। কম সময়ের কারণে ছবির গতি দ্রুত হয়েছে, চিত্রনাট্য টানটান নির্মেদ হয়েছে। কিন্তু ঘটনার প্রেক্ষাপট, চরিত্রগুলির নির্মাণে রয়ে গেছে গলদ। অনেক সময় কার্যকারণ সম্পর্ক বের করতে দর্শকদের যথেষ্ট মাথা চুলকোতে হয়। কপ-ড্রামা হলেও সারাক্ষণ গুলির কানফাটা শব্দ বা সাইরেন বাজিয়ে চেজ় করার জগঝম্প নেই এ ছবিতে। ছবিতে ঘটনার ঘনঘটা নেই। বরং আশির দশকের মুম্বইয়ের টুকরো টুকরো ঘটনা, সংবাদপত্রের কাট আউট, সাদা-কালো ভিডিয়োর ক্লিপিংস ডকু-ড্রামার ফিল তৈরি করেছে। পিরিয়ড ছবির সিনেম্যাটোগ্রাফি, সেট ডিজ়াইনিং ও ডিটেলিং প্রশংসনীয়। পোড় খাওয়া পুলিশ অফিসারের চরিত্রে ববি দেওয়লের এনার্জি একটু কম মনে হলেও পর্দায় তার অভিনয় সংযত ও সুন্দর। বিজয়ের বন্ধু-অফিসারের চরিত্রে জয় সেনগুপ্ত ভাল। মন্ত্রী মনোহর পাটকরের চরিত্রে অনুপ সোনিকে আরও বেশি পাওয়া গেলে ভাল লাগত। কয়েক সেকেন্ডের একটি ‘আর রেটেড’ দৃশ্য ছাড়া সিনেমায় তেমন কোনও অস্বস্তিকর দৃশ্য নেই। একটু অন্য ধারার কপ ড্রামা দেখবার জন্য মুভিটি দেখে ফেলতেই পারেন। 


রেটিং : 
5 অসাধারণ 
4 বেশ ভালো 
3 ভালো 
2 দেখতে পারেন
1 না দেখলেও চলবে

Post a Comment

0 Comments