জ্বলদর্চি

২২ শে শ্রাবণ / সোহম সেন

গুরু-শিষ্য কথা

সো হ ম  সে ন

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শ্বেতকমল’ গল্পগ্রন্থের ‘বাইশে শ্রাবণ’ গল্পটির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সে গল্পের একেবারে শেষে শকুন্তলার মুখ দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে নারায়ণবাবু বলছেন, “তুমি দেবতা, তুমি মহাকবি। মানুষের প্রেমে তোমার চোখের জল ঢেলে পৃথিবীকে তুমি ধন্য করে গেছ। তুমিই বলো, আমার কতখানি অপরাধ? ……আজ তোমার মৃত্যুতিথিতেও কেন এমন করে পাপের অন্ধকারে তলিয়ে চলেছি-- তুমিই তার জবাব দাও।” এ প্রশ্ন শুধু শকুন্তলার নয়, সমকালীন সমাজের বিকৃতি, অধঃপতন দেখে ব্যথিত নারায়ণবাবুর একারও নয়, এ প্রশ্ন আমাদেরও। আমাদের সবাকার। সে’দিনেরও, আজকেরও। আমরা তাঁকে দেবতার আসনে বসিয়েছি। বুদ্ধদেব বসু লিখেছেন, “কে না আমরা মুগ্ধ হয়েছি তাঁর ক্ষমতায়, তাঁর স্বাচ্ছন্দ্যে, তাঁর অবিরাম রচনাপ্রবাহে-- মর্মান্তিক বন্ধ্যতার দিনে, কাগজের উপর হতাশ আঁকিবুঁকি কাটতে কাটতে, কে না আমরা দেবতা ব’লে মেনেছি তাঁকে!” সাধ্যমতো অর্ঘ্য সাজিয়ে তাঁকে নিবেদন করিনি তা নয়, তবু এই পূজা ব্যাপারটার মধ্যে কোথাও একটা ফাঁকি রয়ে গেছে। সে ফাঁকির জালে আমরা আপনি বাঁধা পড়ে গেছি। তিনিই আমাদের এ পতন থেকে উদ্ধার করবেন, কিন্তু নিজেদের কাছে যদি সৎ না রই, তাঁর সামনে মুখ তুলে দাঁড়াব আমরা কোন চিৎ-বলে? নারায়ণবাবু রবীন্দ্রনাথের শিষ্যত্ব কতকটা গ্রহণ করেছেন। সে কথা তাঁর সৃষ্টির ভাণ্ডারের দিকে চাইলেই চোখে পড়ে। তাঁর চরিত্ররা, তাঁর গল্পোপন্যাসের নর-নারীরা যেভাবে জীবনের, আমারা যাকে আজ বলি  মোমেন্ট অব ক্রাইসিস, সে’সময়ে বার বার কবির ঐশী সৃষ্টির পদতলে আশ্রয় নিয়েছে-- তা যে কাল-স্থানের গণ্ডি পেরিয়ে আজ আমাদের জীবনের ক্ষেত্রেও কত বড় সত্য, তা বুঝতে না পারলে সেইটেই হবে রবীন্দ্র-পূজার উপকরণে আমাদের সবচেয়ে বড় ফাঁকি। 

রবীন্দ্রনাথকে কে, কবে, প্রথম গুরুদেব বলে সম্বোধন করেছিলেন, সে’ কথা আমি জানি না। ইতিহাসের ধূসর পাতা উল্টে সে তথ্যটুকু জানবার ইচ্ছে আমার কখনো হয়নি। আমি কেবল মানি, তিনি আমাদের সবাকার গুরুদেব, আমরা সকলেই তাঁর শিষ্যতুল্য। এই বিরাট গুরুগৃহে, যে অনন্ত অতুলৈশ্বর্য তিনি আমাদের কাছে রেখে গেছেন; জীবনের শূন্যগর্ভকে তার অংশ অংশ দিয়ে পূর্ণ করবার চেষ্টা করেছি সত্য, কিন্তু যে ‘অমোঘ প্রতীতি’ আর স্থান-কালের ঊর্ধ্বে সূর্যমান শাশ্বতবোধ তাঁর মননকে আজীবন বিশ্বমুখী করে গেল, তার সমগ্র রূপটিকে যথার্থ করে ধরতে পারিনি বলেই আজ শেষ বৈতরণীটুকু পার করতে তাঁকেই আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। পৃথিবীর একটা ক্ষুদ্র স্থানে আমরা বাস করি। যদি আমাদের জিজ্ঞাসা করা হয় যে এই সমগ্র পৃথিবীর রূপখানা কেমন, তবে আমাদের কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, শ্রুত জ্ঞান আর কিছুটা কল্পনাশক্তির উপর নির্ভর করতে হয়। আমি বলি, রবীন্দ্র-পরিক্রমাতেই পৃথ্বী-সন্দর্শন হয়, তিনিই আমাদের সেই পৃথিবী। 

শরৎচন্দ্র নিজেই বহু স্থলে, বহু বার একথা স্বীকার করেছেন যে, সাহিত্যে তিনি গুরুবাদ মানেন এবং রবীন্দ্রনাথকে তিনি গুরুর আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। কবির উপন্যাসের, তাঁর চেয়ে বড় পাঠক যে এ বাংলাদেশে আর নেই, সে’ কথা তিনি বেশ গর্ব করেই বলেছেন। সমালোচক ও গবেষকরা আলোচনা করে দেখিয়েছেন যে, তাঁর কোন কোন উপন্যাসের কোন কোন চরিত্র কোন কোন রবীন্দ্রসৃষ্ট চরিত্রগুলির দ্বারা প্রভাবিত। ‘গৃহদাহে’র ত্রিকোণ প্রেমের প্লট যে কতকটা ‘গোরা’-প্রতিচ্ছায়াবিষ্ট একথা সকলেই জানেন। সে কথায় যাচ্ছি না। আগ্রহের ব্যাপার এই যে, রবীন্দ্রনাথ এই অনুজপ্রতিম সাহিত্যিককে জীবনের মধ্য দিয়ে সাহিত্যের কিংবা সাহিত্যের মধ্য দিয়ে জীবনের শিক্ষাটুকু আত্মস্থ করার উপদেশ বহু বার দিয়েছেন এবং কয়েকটি ব্যাপারে মতান্তর ঘটলেও রবীন্দ্রনাথ তাঁকে একটি কটু কথাও বলেননি। শরৎচন্দ্র কখনো কখনো কবিকে একটু তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন বটে, কিন্তু ভুল বুঝতে পারার পর সে অভিমান আর ক্ষোভ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁর ধুয়ে গেছে। সম্প্রতি একটি বই হাতে এসেছে, বহু পুরোনো। তার শতচ্ছিন্ন প্রথম পৃষ্ঠাটি থেকে লেখকের নাম সেভাবে বোঝা যায় না, তবে মনে হয়, লেখকের নাম গোপালচন্দ্র রায়। সে বইতে রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের পরস্পরকে লেখা অনেকগুলি চিঠি ও কিছু তথ্য আছে। তার আলোকেই গুরু-শিষ্যের সম্পর্কটি কিছু বোঝার চেষ্টা করব। শরৎবাবু রেঙ্গুনে থাকা কালীন তাঁর ‘নারীর লেখা’ প্রবন্ধের এক স্থলে লিখেছেন যে, “রবিবাবু কতকগুলা শব্দ প্রায়ই ব্যবহার করেন। সেইগুলা এবং তাঁহার উপমা ও লিখিবার প্রণালী আজকালকার সাহিত্যসেবী নরনারীরা কীরূপে যে বিকৃত করিতেছেন, তাহা দেখিলে ক্লেশ বোধ হয়। তিনি যাঁহাদের গুরু, তাঁহাদের উচিত, তাঁহাকে বুঝিবার চেষ্টা করা, তাঁহাকে শ্রদ্ধা করা।” গুরুরূপে তিনি যে রবীন্দ্রনাথকে কতখানি শ্রদ্ধা করতেন, এ কথায় তার কিছু প্রমাণ আছে। এই সাহিত্যসেবী নরনারীরা কারা, বুদ্ধদেব বসুর প্রবন্ধ থেকে তার কতকটা অনুমান করা গেলেও সে’ কথা এখানে না বলাই ভাল। বুদ্ধদেব বসু শরৎচন্দ্রকে উপন্যাসের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের তরলীকৃত ভার্সন বলেছেন। রবীন্দ্র-দর্শনের নিগূঢ় তত্ত্বকে সাধারণ বাঙালি নিজের করে গ্রহণ করতে পারেনি বলেই যে শরৎ-সাহিত্যের লঘুকৃত রসে সে অধিক আনন্দ নিয়েছে, বুদ্ধদেববাবুর এ কথাখানা খুব বেশি রকমের সত্যি। 

সে যাই হোক, ‘ষোড়শী’ নাটক প্রকাশিত হলে সে সম্বন্ধে শরৎচন্দ্র একবার কবির মতামত জানতে চান। রবীন্দ্রনাথ চিঠির উত্তরে এক জায়গায় লেখেন, “সকল বড় সাহিত্যের যে পরিপ্রেক্ষিত (perspective), সেটা দূরব্যাপী, সেইটির সঙ্গে পরিমাণ রক্ষা করতে পারলে, তবেই সাহিত্য টিকে যায়-- কাছের লোকের কলরব যখন দেয়াল হয়ে সঙ্কীর্ণ পরিবেষ্টনে তাকে অবরুদ্ধ করে তখন সে খর্ব হয়ে অসত্য হয়ে যায়। ষোড়শীতে তুমি উপস্থিত কালকে খুশি করতে চেয়েচ এবং তার দামও পেয়েচ। কিন্তু নিজের শক্তির গৌরবকে ক্ষুণ্ণ করেছ। ……সাহিত্যে তুমি বড় সাধক, ইন্দ্রদেব যদি সামান্য প্রলোভনে তোমার তপোভঙ্গ করেন, তাহলে সে লোকসান সাহিত্যের। তুমি উপস্থিত কালের কাছ থেকে দাম আদায় করে খুশি থাকতে পারো-- কিন্তু সকল কালের জন্য কী রেখে যাবে?” এই যে সাহিত্যের অঙ্গন-গর্ভে সর্বকালফলদায়ী সৃষ্টির বীজ রোপণ করে যাওয়ার আদর্শ, বলা বাহুল্য এইটিই তাঁকে সমকালের অন্য যেকোনো সাহিত্যসাধকের চাইতে অনেক বেশি অমরত্ব দিয়েছে। অমরত্বের বেশি-কমের তুলনাটা কতটা ঠিক হল জানি না, তবে তাঁকে যে আমরা সবার চাইতে বেশি করে মনে রেখেছি এবং রাখব, এ আমরাও মনে মনে বেশ জানি। উত্তরে শরৎচন্দ্র একটি দীর্ঘ চিঠি লিখেছিলেন এবং তারও একটু ইতিহাস আছে। আপাতত সে চিঠির একটুখানি তুলে দিই, “ষোড়শীর সমন্ধে আপনি ঠিক যে কী বলেছেন আমি বুঝতে পারিনি। শুধু এইটুকুই বুঝেছি এ যে ঠিক হয়নি, সে আপনার দৃষ্টি এড়ায়নি।” পরিপ্রেক্ষিত বিচারের ক্ষেত্রে আপন বক্তব্যের সপক্ষে ছবি আঁকা থেকে শুরু করে রামায়ণের যুদ্ধ এসব কিছুর তুলনা এনে লিখেছেন, “…উপস্থিত কালটাও যে মস্ত ব্যাপার, তার দাবি মানবো না বললে, সেও যে শাস্তি দেয়।” শরৎবাবু মুখে যাই বলুন, অন্তরে যে তিনিও কবিকে কতক সমর্থন করেছেন, সে তিনি নিজেও জানতেন বলেই মনে হয়। কেবল নিজের সন্তানতুল্য সৃষ্টির পক্ষ নিতেই যে তাঁর যুক্তিজালকে দীর্ঘ উপমাভারে ভারাক্রান্ত করতে হয়েছিল, আমার অন্তত তাই মনে হয়েছে। রাধারানী দেবীকে একটি চিঠিতে শরৎবাবু লিখেছিলেন, “তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা-ভক্তি করি-- আমার গুরুস্থানীয় তিনি, এ তো তুমি জানোই।” ‘নিষ্কৃতি’র ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশের প্রসঙ্গে দ্বিজেন্দ্রনন্দন দিলীপকুমার রায়কে তিনি একবার লিখেছিলেন যে, “সাহিত্যসেবার কাজে তিনি আমার গুরুকল্প। তাঁর ঋণ আমি কোনোকালে শোধ করতে পারব না, মনে মনে তাঁকে এমনি ভক্তি-শ্রদ্ধাই করি। কিন্তু ভাগ্য বাধ সাধলো-- আমার প্রতি তাঁর বিমুখতার অন্ত নেই।” ‘ষোড়শী’ নাটকে গান লিখে দেওয়া, ‘পথের দাবি’কে সমর্থন, কংগ্রেসের চরকা আন্দোলন, আধুনিক সাহিত্যে শরীরবাদ প্রভৃতি নানান বিষয়ে যে মতান্তর দু’জনার মধ্যে হয়েছিল, তার জন্যে রবীন্দ্রনাথ কোনোদিনই তাঁর প্রতি বিমুখ হননি। অভিমানের পর্দাটুকু সরিয়ে, নিরাবেগ-সত্যোন্মীলনের চেষ্টা করলে শরৎচন্দ্র দেখতেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে, অগ্রজের, গুরুর উপযুক্ত উপদেশই রবীন্দ্রনাথ তাঁকে দিয়ে গেছেন। পরে অবশ্য তাঁর ভুল ভেঙেছিল, সে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। 

দিলীপকুমার রায়কেই একটি পত্রে তিনি একবার লিখেছিলেন, “বুদ্ধদেব বসুর ‘বাসরঘর’ বই সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ কী বলেছেন আমি দেখিনি। বুদ্ধদেব বসু যদি বলে থাকে, আমার চেয়ে রবীন্দ্রনাথ ঢের বড় ঔপন্যাসিক, সে তো সত্যি কথাই বলেছে মণ্টু। নিজের মন তো জানে এ সত্য,-- পরম সত্য।” একথা জেনে রবীন্দ্রনাথ নাকি বলেছিলেন, “শরতের চিঠিখানা পড়ে মনে বেদনা পেয়েছি, বুদ্ধদেব শরতকে তাঁর ঔপন্যাসিক প্রতিভায় রবীন্দ্রনাথের চেয়ে নিম্নতর আসনে বসিয়েছেন, এ সংবাদ আমি জানিইনে।” শরৎবাবুর উপন্যাস সাহিত্যের ব্যাকরণের নিয়মে কত সার্থক উপন্যাস, সে বিতর্কে যাব না। শরৎচন্দ্র প্রসঙ্গে বুদ্ধদেব বসুর মনোভাব কেবল সাহিত্যজাত কারণেই চালিত হয়েছিল, নাকি এর সাথে আরো কিছু ছিল, শিব্রামকে শরৎবাবু প্রাপ্য অর্থ হ’তে বঞ্চিত করেছিলেন কিনা, সে প্রসঙ্গও আজ কিছুটা অবান্তর। যা দেখি, সাহিত্যে গুরু-শিষ্যের এই পারস্পরিক সম্পর্ক আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়। আর সব কিছু ভুলে, সে শিক্ষাটুকু যেন আমরা নিতে পারি। 

বুদ্ধদেব বসুর সাথেও রবীন্দ্রনাথের পত্রালাপ ছিল। ‘দেশ’ এ তা প্রকাশিতও হয়েছিল। এ লেখা দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কায় তার উল্লেখ করতে পারলাম না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, “এককালে রবীন্দ্র-বিরোধী থেকেও রবীন্দ্র-সাহিত্য সম্পর্কে সবচেয়ে পাঠযোগ্য মৌলিক প্রবন্ধ লিখেছেন (বুদ্ধদেব বসু)।” সেদিন কথাপ্রঙ্গে জনৈক বন্ধু বললেন যে, বুদ্ধদেববাবু স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথের নয়, প্রতিষ্ঠান রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে ছিলেন। কথাটা সত্য, তবে তার মধ্যে একটু আড়াল আছে। সাহিত্যাদর্শের দিক থেকে রবীন্দ্রনাথ ও বুদ্ধদেব বসুর মধ্যে অনেকটা প্রভেদ ছিল। রবীন্দ্র-মুগ্ধতার অন্তে প্রতীচ্যকাব্যের তরঙ্গ-কলরোল যখন বাংলা সাহিত্যের তীরসিকতায় প্রবল বেগে আছড়ে পড়ছিল, সেই ঢেউতেই সমুদ্রজয় করে ফিরে এসেছিলেন বুদ্ধদেব বসুরা। তিনি নিজেই লিখেছিলেন, “আমি ভারতীয় আধাত্ম্য ঐতিহ্যের প্রসাদবঞ্চিত।” ডঃ সুকুমার সেন লিখেছেন, “এ কথা খুবই সত্য। তবে ভারতীয় সাহিত্যের এবং সংস্কৃতির পরিচিতির অভাবে ইঁহার প্রথম অবস্থার রচনা যে উৎকট বিজাতীয়তার কণ্টকে আকীর্ণ ছিল তাহা পরে রবীন্দ্র-অনুগতির মধ্য দিয়া আসিয়া ঝরিয়া গিয়াছে।” রবীন্দ্র-তিরোধানের এক বছর পর বুদ্ধদেব লিখেছিলেন, “অন্তরে লভেছি তব বাণী / তাই তো মানি না ভয়, জীবনেরই জয় হবে জানি।” 

কবিতায় যে কালজ্ঞানের কথা জীবনানন্দ বলেছেন, রবীন্দ্র-আদর্শের সাথে তার মৌলিক স্তরে প্রভেদ ছিল। ‘রবীন্দ্রনাথ’ কবিতায় তবুও জীবনানন্দ লিখে রেখে গেলেন, “অনন্ত আকাশবোধে ভরে গেলে কালের দু’ফুট মরুভূমি।” এই অনন্ত আকাশবোধে কালের দু’ফুট মরুভূমি ভরার উপদেশই শরৎচন্দ্রকে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্র-বিস্মৃত হয়ে অতঃপর সুনীলও রবীন্দ্রনাথকে পুনরাবিষ্কার করেছিলেন।

সবার পিছে, সবার নীচে রয়েও যে আসে তাঁর আশিসপ্রার্থী হয়ে, তাঁকেও তিনি ফেরান না। তিনি আমাদেরই লোক। জীবনপথের দু’ধারের সকল দেবালয়েই গর্ভগৃহে তিনি রয়েছেন। ‘আমি কে?’ এ প্রশ্নের যে একটা বৃহত্তর দিক আছে, পাত্র-স্থান-কালের ঊর্ধ্বে অনাদি-অনন্ত-অসীমের লীলায়িত ছন্দকে সীমায়িতের খণ্ড অস্তিত্বের মধ্যে বেঁধে আনবার যে একটা বিশুদ্ধ প্রয়াস আর অভিলাষ আছে; তার মধ্যে দিয়ে গুরুদেব কখন আপনি এসে আমাদের কাছে ধরা দেন, তা বারে বারে প্রত্যক্ষ করে আমরা ঋদ্ধ হই, পুলকিত হই; চেতনার আন্তর-লোকে আমাদের প্রবেশ সহজ হয়ে আসে। তিনি আধার, আমরা আধেয়। তাঁর কীর্তির চেয়ে তিনি যে মহৎ।

Post a Comment

1 Comments