প্রথম কাব্যবেদ
ব কু ল জা না
'হাজার বছর ধরে পথ হাঁটিতেছি আমি পৃথিবীর পথে' ---- হাজার বছর ধরে পথ হেঁটে চলেছে বাংলা সাহিত্য। অথচ কত না অদ্ভুত , মাত্র দেড়শ বছর আগে বাংলা ভাষার পিতা বরেণ্য বিদ্যাসাগর মহাশয় কালের হাতে দিয়ে গেলেন ' বর্ণপরিচয় '। শেখালেন --- কর খল ঘটঃ অন্তঃসলিলা এক সুর।
কর খল ঘট --- দ্বি অক্ষর , দ্বি মাত্রিক তিনটি শব্দ। লেখক নিজেই অর্থ দেখতে না বলেছেন , আমাদেরও দরকার নেই। ক্রম ক-এরপর খ , স্টেপ জাম্প ঘ। কিন্তু ক খ গ ঘ-এর ক্রমিক রেশ আমাদের ভেতর চলতে থাকে , এক সুরে এক ভাবে।
অচল অধম আলয় আসন। কত সুন্দর এক সুর। অথচ কোনো শব্দান্তিক মিল নেই।
কপট গগন ঘটক। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে আমরা উচ্চারণ করি কপট্ , গগন্ , ঘটক্। কিন্তু এই বই পড়ার সময় বজায় থাকে সুরের মহিমা। সেই সঙ্গে ভাবের খেলা। বিষয়টি আমার কাছে অবাক করার মতো।
বড় আকৃতির শব্দের দিকে গেলোও একই মজা খুঁজে পাই। পারলৌকিক পারিতোষিক। প্রথম শব্দের ঔ-কার দ্বিতীয় শব্দে ই-ও তে ভেঙে দিলেও গাম্ভীর্যপুর্ণ সুর ঠিকই বজায় থাকে।
গোপাল বড় সুবোধ বালক। বাঙালির ঘরে ঘরে কত না গোপাল। মায়ের আঁচল বিছিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে , আঁচলের ছায়ায় বয়ে সারাজীবন। সু-বোধ দিয়ে গড়া জীবন সোনার বাংলা , মজবুত দেশ গড়ছে।
বাঙালির আর এক প্রিয় চরিত্র রাখাল। ছোটবেলায় যাদের কেউ ভালোবাসে না। আদরের দুলাল তারা নয়। অথচ সমাজের মহৎ কর্মগুলি সাধিত তাদের দ্বারাই। দেশ সমাজ গঠনে ও রক্ষার্থে
গোপাল রাখাল উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ।
ইতিহাসের পাতায় বয়ে চলা বাঙালি জীবন কখনো গোপাল রাখালকে ছেড়ে হয় না। মহৎ সৃষ্ট এই দুই চরিত্র বাঙালির অন্তর থেকে নিয়ে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকর্তা। মাত্র কয়েকটি কথায় , সহজ সরল বাক্যে
বিদ্যাসাগরের বিদ্যা বাঙালির হৃদয়ে গাঁথা হয়ে গিয়েছে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাই এই দুই চরিত্র নিয়ে কলম ধরেছিলেন।
আসলে উচ্চারণগত এক সুর পুরো বই জুড়ে এগিয়ে চলে। এ সুর জাতীয় সঙ্গীতের সুরের সঙ্গে কোথাও যেন মিল পাই। আর ভাবের পারম্পর্য নিয়ে যায় অন্য জগতে।
নিজেকে খুব ভাগ্যবান ভাবি। এরকম এক কাব্য পড়ে শিক্ষা নয় দীক্ষা শুরু হয়েছিল সরস্বতী সাধনার।
আজীবন যেন সেই ফুলের তলায় থাকি।
2 Comments
দারুণ লেখা । এক অন্য দিক খুলে দিলে৷ শুভকামনা।
ReplyDeleteবর্ণপরিচয়ের শিক্ষায় উপলব্ধি সুন্দর প্রকাশ হয়েছে ।
ReplyDelete