জ্বলদর্চি

অন্ধকারই শেষ কথা নয় / মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি

ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু   


অন্ধকারই শেষ কথা নয়

ম ঙ্গ ল প্র সা দ  মা ই তি 


এই ক’মাস ধরে ভয়ঙ্কর এক অন্ধকারের উত্তাল সাগরে কষ্টের সঙ্গে পাড়ি দিচ্ছি আমরা। না, এরকম এক ভয়ের অন্ধকার, আতঙ্কের অন্ধকারের সম্মুখীন কোনদিন যে হতে হবে আমাদের তারজন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। কিন্তু আচমকাই নেমে এসেছে সেই অন্ধকার। ব্যক্তিজীবন, সমাজজীবন, রাষ্ট্রীয়জীবন ছাড়িয়ে সে অন্ধকার গোটা বিশ্বজীবনে ছড়িয়ে পড়েছে। একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ অন্ধকার হয়ে ইতিহাসের পাতায় চিহ্নিত হয়ে গেছে। আমরা মানুষেরা যেন খানিকটা খেই হারিয়ে ফেলেছি। সকলের কপালে ভাঁজ-কি হবে! এরপরে কি হবে! ‘করোনা’ নামক এক অদৃশ্য ভাইরাস এই অন্ধকার সৃষ্টি করেছে। ডেকে এনেছে মারণব্যাধি। স্পর্শ থেকে ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগ। যার কোনও চিকিত্সা  নেই, যার কোনও ওষুধ নেই। সবচেয়ে সর্বনাশের কথা যাঁরা চিকিত্সায় করবেন সেই চিকিত্সিকরা পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। একের পর এক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে মানুষ। ধনী-গরিব, জাতি-ধর্ম-বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে সকলে এই রোগের শিকার হয়ে যাচ্ছেন। বলা যেতে পারে আমাদের স্বাভাবিক জীবনের ছন্দটাই যেন অনেকখানি নষ্ট হয়ে গেছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে সামাল দিতে দেশে লকডাউন ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন দেশের সরকার। স্কুল-কলেজ বন্ধ, অফিস-আদালত বন্ধ, দোকান-বাজার-হাট সব বন্ধ। কতজন যে কাজ হারিয়ে ফেলেছেন তার ঠিক নেই। সবে মিলে এক দুর্মুহূর্ত আমাদের সামনে। তাই বলে তো হেরে যাওয়া যায় যায় না। অন্ধকার যেমন আছে তার বিপরীতে আলোও আছে। সেই আলোর অঙ্গীকার নিয়ে আমরা এখন লড়াই করে যাচ্ছি। হয়তো এ লড়াই আমাদের আরো বেশ কিছুদিন চালাতে হবে। এই আলো জ্বালানোর সদর্থক ভূমিকা নিয়ে লড়ছেন দেশের সরকার, পুলিশ-প্রশাসন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা লড়ছেন। সাংবাদিকরা লড়ছেন। সেই আলো জ্বালানো আলো যাতে নিভে না যায় তারজন্য সর্বতোভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ। আমাদের এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষদের যেটা করতে হবে তা হল ডাক্তার, সরকার আর পুলিশ-প্রশাসন যা পরামর্শ দিচ্ছেন তাকে মান্যতা দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কষ্ট হলেও আমাদের দৈনন্দিন জীবনের আগেকার যে অভ্যাস, সেখানে বদল আনতেই হবে। এখনো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে এই কথাটাও মনে রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে যেন মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি করে না ফেলি, আমরা যেন অমানবিক হয়ে না পড়ি। ‘করোনা’ রোগীদের যেন দূরছাই না করি। ভাবতে হবে আমিও তো যে কোনও সময় এই রোগে আক্রান্ত হতে পারি। তাই সচেতন থাকব, কিন্তু মানসিক দূরত্ব বাড়াব না। এই সময়ের যা স্বাস্থ্যবিধি তা আমাদের মেনে চলতেই হবে। মুখে মাস্ক পরতে হবে, হাতে সাবান মাখতে হবে, স্যানিটাইজ করতে হবে সময় সময়। বাইরে থেকে এলে পোশাক আমাদের পালটে ফেলতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ। ছাত্রছাত্রীদের কতদিন হল কাছে পাচ্ছি না। একজন শিক্ষক হিসাবে আমার তো রীতিমতো কষ্ট হচ্ছে। সে কষ্টও আমাদের মেনে নিতে হবে। সব কিছু স্বাভাবিক না হলে ছাত্রছাত্রীদের কোনোমতেই বিদ্যালয়ে আসতে দেওয়া চলবে না। আপাতত বাড়িতেই থাকতে হবে। অন লাইনের মাধ্যমে যতটা পারা যায় পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে হবে, প্রয়োজনে বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটি টাস্ক, অন্যান্য কিছু ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। না, বর্তমানের এই অন্ধকার দেখে আমদের ভেঙে পড়া চলবে না। লড়াই আমরা করছি, আরো করতে হবে লড়াই। মনে রাখতে হবে সম্মিলিত প্রয়াসে যে দীপ আমরা জ্বেলেছি তা একদিন সূর্যের আলো হয়েই দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়বে। যার তেজরশ্মিতে আজকের এই অন্ধকার দূর হবেই হবে। আমাদের এই কৃচ্ছ্রসাধন নিশ্চিত বিফলে যাবে না। সামগ্রিক ভাবে আলোয় ফেরাটা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।  
                                                          
                                           

Post a Comment

0 Comments