গুঞ্জন সাক্সেনা: দ্য কারগিল গার্ল’ : স্বপ্নের উড়ান, যুদ্ধজয়, নেপোটিজমের ধোঁয়া
রেটিং – 3/5
পরিচালক- শরণ শর্মা
অভিনয়ে- পঙ্কজ ত্রিপাঠি, বিনীত কুমার, জাহ্নবী কাপুর, অঙ্গদ বেদি।
রিলিজ – ১২ আগস্ট, ২০২০/ নেটফ্লিক্স।
তুমি মেয়ে, পুরুষ অপেক্ষা তুমি আজন্ম দুর্বল। তোমাদের মুক্ত আকাশের স্বপ্ন দেখা বারণ। সেনাবাহিনীর পাইলট হওয়া অলীক কল্পনা। এরকম এক স্টিরিওটাইপ সামাজিক চিন্তাভাবনার গালে বিরাশি সিক্কার থাপ্পড় দিয়ে পাইলট হওয়ার স্বপ্নপূরণ করেছিলেন ‘ভারত কি বেটি’ গুঞ্জন সাক্সেনা। “যে পরিশ্রমের সাথ ছাড়েনা, ভাগ্য কোনওদিন তার হাত ছাড়েনা”, সেনা অফিসার বাবার বলা এই কথাগুলোই মেয়ে গুঞ্জন সাক্সেনার কাছে হয়ে উঠেছিল তার স্বপনপূরণের লক্ষ্যে অনুপ্রেরণার বীজমন্ত্র। তাই রানওয়ে থেকে পুরো দুনিয়া জয় করার নেশাকে কোনও কিছুই দমাতে পারেনি। ১৯৯৯ সালে কার্গিলের যুদ্ধক্ষেত্রে আহত ভারতীয় জওয়ানদের কাছে মহিলা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট গুঞ্জন সাক্সেনা হয়ে উঠেছিলেন ভগবানের দূত। ভারতীয় বায়ুসেনার ‘অপারেশন সফেদ সাগর’-এ যোগদান করে ‘চিতা’-র মতো একটি অস্ত্রবিহীন সার্ভিলেন্স চপারে শুধুমাত্র নিজের সার্ভিস রাইফেলকে সঙ্গী করে রণক্ষেত্রে শত্রুপক্ষ পাকিস্তানের রকেট, মিসাইলের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে ফিরেছিলেন বহু সেনা-জওয়ানদের। যুদ্ধচলাকালীন চল্লিশটিরও বেশি সার্ভিলেন্স এবং রেসকিউ মিশনে গিয়েছেন। পাক সেনার গোপন ঘাঁটির প্রকৃত অবস্থানের খবর দিয়েছেন সেনাবাহিনীকে। গুঞ্জন সাক্সেনাকে ভারতের কারগিল সাফল্যের অন্যতম মুখ বললেও অত্যূক্তি হয়না! প্রশিক্ষণকালীন ছেলেদের ভিড়ে দমিয়ে রাখা এই মেয়েটিই নিজের জেদ, অদম্য ইচ্ছেজানায় ভর করে উড়িয়ে দিয়েছিলেন জয়ের নিশান। প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে অসীম সাহসের পরিচয় দিয়ে পেয়েছিলেন ‘শৌর্য্য চক্র’ সম্মান। সেই বীরাঙ্গনার কাহিনীই নেটফ্লিক্সের পর্দায় তুলে ধরেছেন পরিচালক শরণ শর্মা।
শুরুটা ভালই হয়েছিল, কিন্তু ছবির মাঝে গিয়ে কোথায় যেন তাল কেটে গেল। পরিচালক শরণ শর্মার হাতে ‘গুঞ্জন সাক্সেনা: দ্য কারগিল গার্ল’ এক লড়াকু মেয়ের কাহিনীর পরিবর্তে কখন যেন সম্পর্কের গল্প হয়ে ওঠেছে। যে গল্প এক বাবা এবং তাঁর আদরের মেয়ের হার না মানার কথা বলে। প্রতিকূলতাকে জয় করে স্রোতের বিপরীতে সমুদ্রে গা ভাসিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কথা বলে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজপ্রথার প্রচলিত হিসেবনিকেশকে কষিয়ে চপেটাঘাত করতে গিয়েও কোথাও মনে হল লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গেল! এক যোদ্ধার লড়াই এর কাহিনী চাপা পড়ে গেল বাবা মেয়ের নরম স্নেহের দুনিয়ায়। গুঞ্জন সাক্সেনার ভূমিকায় জাহ্নবী কাপুরকে ছবিতে বেশ কিছু জায়গায় দুর্বল মনে হয়েছে। অভিনয়ের দিক থেকে মূল চরিত্র জাহ্নবীকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন বাবার চরিত্রে অভিনয় করা পঙ্কজ ত্রিপাঠী। বলিউডি নেপোটিজমের ধ্বজাধারী প্রযোজক করণ জোহর এখানে এক বেড়ে চাল চেলেছেন, স্টারকিড জাহ্নবীকে নায়িকা করেও সিনেমার কাস্টে এমন সব গুনী অভিনেতাদের নিয়েছেন বর্তমানে যাদের অভিনয়ের দিওয়ানা আসমুদ্র হিমাচল। তাই ‘আম’ দর্শক স্টারকিডদের বয়কটের ডাক দিলেও পঙ্কজ ত্রিপাঠী, বিনীত কুমারের অভিনয়ের টানে তাদের মুভি দেখতেই হবে। সব মিলিয়ে সিনেমাটি সপরিবারে দেখে ফেলতেই পারেন। ইতিমধ্যে সিনেমাটিকে ঘিরে ধরেছে বিতর্কের কালো মেঘ। ভারতীয় বায়ুসেনা তাদের কর্মসংস্কৃতিকে ভুলভাবে পর্দায় জনমানসের সামনে তুলে ধরার বিরুদ্ধে চিঠি দিয়েছেন সেন্সর বোর্ডকে। বায়ুসেনার পক্ষে মুখ খুলেছেন স্বয়ং গুঞ্জন সাক্সেনা। গুঞ্জন সাক্সেনা: দ্য কারগিল গার্ল’ সম্পর্কে অধিক জানবার জন্য পড়ে ফেলতে পারেন পেঙ্গুইন থেকে প্রকাশিত ‘THE KARGIL GIRL, An Autobiography’ বইটি।
রেটিং :
5 অসাধারণ
4 বেশ ভালো
3 ভালো
2 দেখতে পারেন
1 না দেখলেও চলবে
প্রতি মঙ্গলবার ও শুক্রবার সিনেমার আলোচনায় থাকছেন রাকেশ সিংহদেব।
0 Comments