জ্বলদর্চি

লাভ আজ কাল পরশু

'লাভ আজ কাল পরশু’ : প্রেমের শরীরে থ্রিলারের চোরাস্রোত।

পরিচালনা: প্রতিম ডি গুপ্ত
অভিনয়: অর্জুন চক্রবর্তী, মধুমিতা সরকার, পাওলি দাম, অনিন্দিতা বোস। 
মুক্তি – ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
রেটিং – 3/5 


ডিম আগে না মুরগি? এই প্রশ্নে আজও নিমেষে বেবুক বনে যায় আম জনতা। ভাবছেন কেন বলছি এসব কথা। আরে দাদা, ‘লাভ কামস ফার্স্ট’। ‘প্রেম’ না থাকলে ফলটা হবে কীভাবে? ‘ লাভ’, ‘প্রেম’, ‘ভালবাসা’ এক আজব চিড়িয়ার নাম। স্থান কাল পাত্র ভেদে সে তার রূপ বদলায়, সংজ্ঞা বদলায়, বদলায় মেজাজ কিন্তু তার আবেদন থেকে যায় চিরকালীন। তাইতো এই দরিয়া ডুব সাঁতারে পার হতে হয় হৃদয় হাতে। সংযোগ কখন নতুনের সূত্রপাত ঘটিয়ে ফেলে তার খেলা বোঝা পিটুহিটারিরও অসাধ্য। পরিচালক প্রতীম ডি গুপ্ত তার চতুর্থ ছবি ‘লাভ আজ কাল পরশু’-তে সেই চিরদিনের চিরকালীন প্রেমের গল্পকে পরিবেশন করেছেন এক অন্য মোড়কে। বর্তমানে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘হইচই’ এ উপলব্ধ রয়েছে মুভিটি। 

আজ, কাল ও পরশু এই তিনদিনের সময়সীমায় এ ছবির যাবতীয় ঘটনা ঘটে। দু’টি অজানা মানুষের প্রথম দেখার গল্প নিয়ে তৈরি ‘প্রথম দেখা’ শীর্ষক একটি টেলিভিশন শোয়ের মালিক কালকি মৈত্র (পাওলি দাম), শোয়ে যিনি ‘প্যারাডাইস হোটেল’-এর মালকিন। এই শোয়ের মূল চরিত্র অর্থাৎ নায়ক-নায়িকা প্রতি দিন যারা ঘুম থেকে উঠছেন নতুন এক পরিচয় নিয়ে, সম্পূর্ণ নতুন এক মানুষ হয়ে। ফলস্বরূপ, প্রতিদিন হোটেলের কফি শপে কখনও আলাপ হচ্ছে ক্রিকেটার তৃপ্তি ও বিখ্যাত গায়ক অভিরূপের, আবার কখনও বিজনেস রিপোর্টার অভিষেক ও মডেল তাপসীর। প্রতিদিনের এই পরিচয় বদলের মূলে রয়েছেন মিস্টার বটুক, যিনি এক অভিনব যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হিপনোটিজমের মাধ্যমে এই দুই ব্যক্তির (অর্জুন চক্রবর্তী ও মধুমিতা সরকার) মগজে প্রতি রাতে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন অসংখ্য নতুন তথ্য, তৈরি করছেন নতুন স্মৃতি, নতুন গল্প যার ফলে পরের দিন সে জেগে উঠছে এক সম্পূর্ণ নতুন ব্যক্তি হয়ে, যার সঙ্গে আগের দিনের ব্যক্তির কোনও মিল নেই‌। এভাবে প্রতিদিন একই মানুষ প্রেমে পড়ছেন নতুন নতুন চরিত্রের, এবং অভিষেক-তাপসী বা অভিরূপ-তৃপ্তির অগোচরেই গোপনে রাখা ক্যামেরায় ধরা হচ্ছে তাঁদের অন্তরঙ্গ মুহূর্ত, তাঁদের কফিশপের প্রথম আলাপের কথোপকথন। যা টেলি সিরিয়াল হিসেবে পরিবেশিত হচ্ছে টেলিভিশনের পর্দায়। কিন্তু এই মিথ্যা সাজসজ্জার ধারা কি দিনের পর দিন চলে অবিচ্ছেদ্য ভাবে? এই দুই ব্যক্তির আসল পরিচয়ই বা কী? কিভাবে স্মৃতি মুছে ফেলার পরেও দুজন অচেনা মানুষ বারবার এঁকে অপরের প্রেমে পড়ছে ? সেই নিয়েই ‘লাভ আজ কাল পরশু’-র গল্প এগিয়েছে। 
পরিচালক-চিত্রনাট্যকার প্রতীম ছবির অর্ধেক সময়টায় রহস্য বজায় রেখেছেন বেশ সুপরিকল্পিতভাবেই। ছবিতে এমন কিছু বিশেষ বিশেষ জিনিসের ব্যবহার করা হয়েছে যা ছবির গল্পকে আরও রহস্যের মোড়কে মুড়েছে। বেডরুমে মাথার উপর রাখা পেইন্টিংটিকে যদি ভালোভাবে লক্ষ্য করেন তাহলে দর্শক বুঝতে পারবে প্রেম যতটা হৃদয়ের উপলব্ধি ঠিক ততটাই মগজের বিশ্লেষণ। অরিন্দমের সুরে ‘শুনে নে’ বা ‘আয় দেখে যা’ গান দু’টি সুব্যবহৃত। তবে আলাদা করে বলতেই হচ্ছে অর্জুন-মধুমিতার কথা। সত্যিই বেশ স্মার্টলি কাজ করেছেন। অর্জুন চক্রবর্তী আগেই প্রমাণ করেছেন তার অভিনয় দক্ষতা। কিন্তু মধুমিতা সরকার এই ছবিতে কমপ্লিট সারপ্রাইজ প্যাকেজ। ছোট পর্দার অভিনয়ের হাতেখড়ির পর বড় পর্দার সাবলীল উড়ানেও তিনি নিজেকে মেলে ধরেছেন। অন্তরঙ্গ দৃশ্য থেকে ইমোশনাল দৃশ্য ছবির সব দৃশ্যকে সহজেই প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। পাওলি দামের মত একজন বলিষ্ঠ অভিনেত্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাওয়াটাও তো সহজ নয়! ওজনদার ব্যক্তিত্ব এবং মগজ দিয়ে খলনায়িকাপনা দুটো রূপেই পাওলি নজর কাড়েন। অনিন্দিতা বসু (লীনা), অনির্বাণ চক্রবর্তী (গণেশ), অভিজিৎ গুহ (বটুক) কমেডির ছোঁয়া দিতে ভুল করেননি। তবে গল্পের গরু মুভির প্রয়োজনে মাঝেমাঝেই দলছুট হয়েছে। আসলে প্রেমের সাথে থ্রিলারের সমান্তরাল গমনকে নিয়ন্ত্রণ করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার। 
এখনকার আধুনিক জীবনে লাইফস্টাইল তো বটেই, জীবনদর্শনটাও বদলে গিয়েছে। যদিও পরিচালক বোঝাতে চেয়েছেন আজকের কুল ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ পানীয়র গ্লাসের সেই বুদবুদের উল্লাস, আর প্রকৃত প্রেম চিরন্তন থিতিয়ে থাকা সেই সোনালী তরলের মতো! একটু অন্যরকম প্রেমের গল্প দেখতে বসে যুক্তিগ্রাহ্যতা কিছুক্ষনের জন্য একটু পাশে সরিয়ে উপভোগ করতে পারেন এই মুভি। 

রেটিং : 
5 অসাধারণ 
4 বেশ ভালো 
3 ভালো 
2 দেখতে পারেন
1 না দেখলেও চলবে

Post a Comment

0 Comments