অজান্তে
শুভজিৎ মুখার্জী
আমাদের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে,
যেগুলো আমরা ঘটতে দিতে চাই না .
আমাদের অজান্তেই ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাগুলো---
আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয় এক প্রশ্নের মুখোমুখি !
এমনটা কি খুব জরুরি ছিল ?
এরকমই এক ছোট্ট ঘটনার কথা,
বলতে বসেছি তোমায়।
এটা কিন্তু চিঠি নয়,
বরং বলতে পারো ;
তোমায় বলতে না পারা কিছু কথাকে,
মনের ভেতর গুমড়ে ওঠা থেকে মুক্তি দেওয়া।
এ লেখাটাকে অন্যভাবে শুরু করা যেত।
যেমন ধরো, আজ থেকে বেশ ক'বছর আগে ---
যখন আমরা কৈশোরের ফুল ফোটানোর খেলায় মেতেছিলাম।
একে অপরকে না চিনেই, নিজেদের অজান্তে।
আমাদের পরিচয় করিয়ে দিতে হয়নি।
এ জগতের অনামা অখ্যাত এক কোণে,
অসংখ্য জোড়া জোড়া পায়রার মতো আমরাও,
বড় হচ্ছিলাম একে অপরকে ঘিরে ---
নিজেদের অজান্তে ।
তখন শুধু জানতাম,
ভোরের আলো ফোটার আগেই,
তুমি এসে দাঁড়াবে তোমাদের বাগানে ---
খালি পায়ে ;
সারারাতের জমে থাকা শিশির ভেজা ঘাসের উপর।
তুমি ঠিক ততক্ষণই থাকতে,
যতক্ষণ না ভোরের মোলায়েম আলো এসে ---
স্নান করাতো তোমাকে,
রক্তিম করাতো তোমার ঠোঁট,
আরক্ত করাতো তোমার গাল ।
দেখে আমার বুকেও রক্ত ছলাৎ করে উঠত,
শরীরে জাগতো শিহরন ।
কিন্তু ব্যাস ওই পর্যন্তই,
এর বেশি কোনদিন আমি এগোতে পারিনি ।
হয়তোবা নিজেরই অজান্তে,
চেয়েছিলাম ভবিষ্যতের দিকে ।
সময়ের সূর্যটা যখন যৌবনাকাশে এল,
তখন দেখলাম---
ভোরের আলোয় পাপড়ি মেলা ফুলটাকে,
আমি আর খুঁজে পাচ্ছিনা ।
আমি চারিদিকে দুচোখ মেলে চাইলাম ---
কোথায় আমার স্বপ্নের নন্দনকানন ?
রঙিন পাখপাখালিতে ছেয়ে যাওয়া আকাশ ?
অথবা ঝরনার কলতান ?
আমার মনে হল,
নিঃসীম শূন্যতার এক মরুভূমিতে,
এসে দাঁড়িয়েছি আমি ।
এমন সময় হতাশা এল,
মনের গোপন কোণে গুটিসুটি মেরে থাকা হতাশা ---
আমার অজান্তেই হামাগুড়ি দিয়ে এসে,
গ্রাস করল আমার অন্তর ।
ঠিক যেমন চন্দ্রগ্রহণের সময়,
চাঁদটাকে গিলে নেয় রাহু ।
পাগলের মত খুঁজলাম তোমাকে ।
জানো নিশ্চয়ই, পেলাম না ।
মনের মধ্যে তখন রাত নেমেছে ।
সেই নিকষ কালো অন্ধকারের মাঝে,
আমায় পথ দেখাল,
ছোট্ট একটি আলোক বিন্দু ।
দুই অক্ষরের একটা শব্দ---'নারী'
তুমি নারী, কিন্তু সব নারী তো 'তুমি' নয় ।
নিজের অজান্তেই কিন্তু আমি,
খুঁজতে লাগলাম তোমাকে---
আমার অন্তরের তৃপ্তিকে,
আর পাঁচ জন নারীর মাঝে ।
ফলে, কৈশোরের রোমান্টিক প্রেমিক,
যৌবনে এসে রূপান্তরিত হল
একজন প্লে-বয়ে ।
মিষ্টি প্রেম, পরিবর্তিত হলো
বুভুক্ষু কামনায় ।
এবং অবশ্যই নিজের অজান্তে ।
প্লিজ ! আর একটু ধৈর্য ধরো ।
ধৈর্য ধরো এ কাহিনীর শেষটুকু শোনার জন্য।
কি যেন বলছিলাম ?
হ্যাঁ মনে পড়েছে,
বিরহ ও কামনা মিশ্রিত এক অনির্বাণ আগুনে,
জ্বলছি আমি তখন ।
বিরহটা যেন জ্বলন্ত কাঠ,
আর তার থেকে ঠিকরে ওঠা আঁচটাই কামনা ।
চোখে তখন আমার নগ্ন নারীর ছবি,
নিঃশ্বাসে যোনির ঘ্রাণ ।
অজানা কি এক তাড়নায়,
আমি তখন ছুটে বেড়াচ্ছি,
এ নারী থেকে সে নারী ---
সে নারী থেকে অন্য কোন নারী ।
আর ঠিক এমন সময়ই,
আমাদের অজান্তেই ঘটল সেই ব্যাপারটা।
তোমার সাথে আমার দেখা হলো ।
সেদিন রাতে যখন আমার মাতাল দুটো পা,
বেসামাল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে,
পুলিশের খাতায় লাল কালি মারা অঞ্চলে !
তখন এক নারী কন্ঠের আহ্বানে,
চমক ভাঙ্গে আমার !
"বাবু, যাবেন আমার ঘরে ?খুব কম রেট !"
রাস্তার আলো-আঁধারিতে আমি,
শুধু একটা নারীদেহ দেখেছিলাম ।
প্রতিদিনকার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারের পুনরাবৃত্তিতে,
বেশি সময় লাগে না ।
অভ্যস্ত দু জোড়া হাত,
খুলতে থাকে একে অপরের পোশাক ।
কিন্তু একি ?
আমার অজান্তেই কে যেন আমার চেতনাকে,
সূউচ্চ কোন পর্বত শিখর থেকে---
নিক্ষেপ করল একেবারে সানুদেশে ।
সমুদ্রমন্থনের ন্যায় আমার অন্তর মন্থনে,
অমৃত সমান সুন্দর একটি মেয়ের মুখচ্ছবি,
ভেসে উঠল আমার চোখের সামনে ।
তুমি কি "তুমি" ?
তুমি কি আমাকে চিনতে পেরেছিলে ?
জানিনা ।
তবে তুমি নিশ্চয়ই খুব অবাক হয়েছিলে,
যখন তোমার দেহটাকে স্পর্শ না করেই,
ফিরে এসেছিলাম আমি ।
বাইরে এসে রাতে আকাশের দিকে চেয়ে,
খুব একচোট হেসে উঠেছিলাম ।
নেশার ঘোরে, তবে মদের নেশা নয় !
নিজেদের অজান্তেই আজ আমরা,
একই পথের পথিক ।
সমাজের বিচারে, নোংরা পূতিগন্ধময় এক পথ ।
কিন্তু আমি তোমাকে স্পর্শ করিনি, তাই ---
আমার এই নেশা জিতে যাওয়ার নেশা !
কেননা তোমার রহস্য আমার,
আজও অজানা ।।
4 Comments
লেখনি ও ফটো খুবসুন্দর। স্নেহাংসু নাম্বার দিলাম কন্ট্যাক্ট কোরো।৭৩৬৪০২৫৪৪৪.
ReplyDeleteThanks....
Deleteতুষারদা
ReplyDeleteTushar da ke ?
DeleteAami Subhajit Mukherjee....
8240744879.