জ্বলদর্চি

একা হতে চাই / সুমন মল্লিক



   ফোটোগ্রাফি-  সৈয়দ স্নেহাংশু  


একা হতে চাই 

সু ম ন  ম ল্লি ক



বৈশাখী বাতাসে উড়ে যায় হৃদয়ের ধুলোবালি ৷
অবাক হতে হতে শেষে
কী দারুণ নির্বাক হয়েছি চাঁদের চিতায় !
এত এত অস্পৃশ্যতা, এত এত কাটাকুটি...
এই মায়াময় আলো থেকে অনেক অনেক দূরে
কার্শিয়াঙের মেঘের বাড়িতে কয়েক মাস অন্তত
আত্মগোপন করতে চাই – একা হতে চাই,
একা হবার মতো শান্তি আর কি কিছুতে আছে ?

বুকের বালুচরে গোল্লাছুট খ্যালে আমার শৈশব
আর যে চোখ তা দ্যাখে
তার থেকে সমস্ত বিস্ময় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে
প্রতিটি সফল ও অসফল জ্যোৎস্নার ভেতর ৷
এখন যদিও মধ্যজীবন – মেকি ভালবাসা ঠেলে
গভীর কিংবা অগভীর কোন অরণ্যে বসে বসে
বুঝে নিতে হবে, কোন্ অভাব আসলে
ঝিনুকের গর্ভে মুক্তো... ঠিকঠাক খুলে গেলেই
মুগ্ধতার নতুন ভাষার জন্ম লেখা হবে আত্মায় ৷
তারপর শুধু কাগজের নৌকো ভাসানোর দিন...

নাম ও নাভির মাঝে যতটুকু ব্যবধান, তার চেয়ে
সামান্য কিছু কমই হবে এই দূরত্ব,
যার একপ্রান্তে নগরবালিকা সাজায় স্মৃতির পট
আর আরেক প্রান্তে ঝুলে থাকে ফকির-জীবন... 
মাঝে পিরিতপুঁথি – সব পৃষ্ঠা খোলা, এলোমেলো ৷
অশ্রুরেখা ধুয়ে দেয় যে অশ্রু, তাতে রূপকথা নেই, 
সব কথা পুড়ে ছাই হয় মধ্যবিত্ত বুকে ৷

তবু কত বৃষ্টি, তবু কত সৃষ্টি – নতজানু হয়ে বসি
নষ্ট যাপনের কাছে... কিছু কিছু নষ্ট জিনিস দিয়ে
সোনার ভুবন বানানো যায় ৷
সাহুই শাশ্বত সংশোধনাগার, পাড়ে বসে উজাড় হয়েও
অলৌকিকভাবে ফিরে পাই জীবনের অভিধান ৷
দূরে কিংবা কাছে, কোথাও আর কোন
মায়াচ্ছন্ন মুখ থাকে না, মুখোশও না, শুধু ভেসে ওঠে
সুখ দিয়ে মাখা ভুখ, যা আসলে মরমের মোহর ৷

সভ্যতার আড়ালে হাঁটি নিজস্ব এক মুক্তির মিছিলে ৷
পায়ে পা মেলায় অগণিত পাথরপ্রতিমা...
কত স্বপ্নের নীচে পুঁতে দেয়া হয়েছে আরও কত স্বপ্ন – 
আঁতকে উঠি ! মিছিল থেকে ফিরে
অন্ধকার ঘরে দেখি, ভোটার কার্ড হাতে কত মানুষ
এগিয়ে চলেছে রাষ্ট্রের কফিনে ৷
এই দ্যাখাদের কেন যে আজও নামিয়ে আনতে পারিনি
কাব্যজমিতে ! ভাবলেই হস্ত ও শিল্পকে পাপী মনে হয়।  
রাতের নির্জনতার ভেতর গজোলডোবায় যেতে চাই – 
তিস্তার গ্রীবায় চুমু খেয়ে 
শুয়ে থাকতে চাই ডিঙির কোলে... বিপন্ন সুখ নিয়ে... 
একথা ঠিক যে, মানুষ বড়ই সামাজিক – সমাজজীব ;
তবু একা হতে চাই ভীষণরকম ৷ 
একা হবার মতো শান্তি আর কি কিছুতে আছে ?
নেই... নেই... নেই... ৷
তাই আত্মগোপন করতে চাই অনির্বচনীয় নিঃসঙ্গতায়
আর তার ভেতর দেখতে চাই, কীভাবে 
দেহ হয়ে ওঠে আলাদিন আর মন তার জাদুর চিরাগ ৷

    ফোটোগ্রাফি-  সৈয়দ স্নেহাংশু  

Post a Comment

8 Comments