জ্বলদর্চি

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, শ্রদ্ধা ও স্মরণ/ মুক্তি দাশ

শ্রদ্ধা ও স্মরণ  || মু ক্তি  দা শ

প্রণব মুখোপাধ্যায়
(১৯৩৫-২০২০)

চলে গেলেন আমদের প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায়। ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন প্রণবকুমার মুখোপাধয়ায়। দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে নানান উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে এগোতে এগোতে অবশেষে ভারতীয় রাজনীতির আকাশে যিনি নিজেকে জাজ্জ্বল্যমান করতে পেরেছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্ররূপে, আজ সেই নক্ষত্রের পতন ঘটল।
অধুনা বীরভূমের মিরাটীতে ১৯৩৫ সালে ১১ই ডিসেম্বর এক সম্ভ্রান্ত বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম প্রণবকুমারের। বাবা কামদাকিঙ্কর ও মা রাজলক্ষ্মী মুখোপাধ্যায়। প্রণব বাবা-মায়ের মধ্যম সন্তান। স্কুলশিক্ষার পর তিনি বীরভূমের সুরী বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে স্নাতক হন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস বিষয়ে এম. এ. এবং সেই সংগে আইন পাশ করেন ষাটের দশকে গোড়ার দিকে। তারপর কিছুকাল কলকাতায় পোষ্ট এন্ড টেলিগ্রাফ বিভাগে চাকরি করার পর তিনি বিদ্যাসাগর কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যাপনাও শুরু করেন। এর মধ্যে ১৯৫৭ সালে তিনি বিয়েও করেন।
প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয় সেই ১৯৬৯ সালে। সেই সময় মেদিনীপুরের উপনির্বাচনে ভি. কে. কৃষ্ণমেননকে পরাস্ত করে তিনি সকলের, বিশেষ করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নজর কাড়েন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৬৯ থেকে ১৯৯৯ মোট পাঁচবার রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ঘটে গেছে ভারতের বুকে একের পর এক চরম রাজনৈতিক বিপর্যয়। ১৯৮৪-তে ইন্দিরা হত্যা। ১৯৯১-তে রাজীব হত্যা। রাজনীতির ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পথে তবু তাঁর নিরবচ্ছিন্ন এগিয়ে চলা থামেনি। প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায় ২০০৮-এ পদ্মবিভূষণ এবং ২০১৯-এ ভারতরত্ন উপাধিতে ভূষিত হন।

তাঁর রচিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে Midterm Poll, Beyond Survival, Off the Track, Saga of Struggle and Sacrifice, Challenges before the Nations, A Centenary History of the INC, Congress and the making of the Indian Nation, Thought and Reflections, The Dramatib decade : The Indira Gandhi years, Selected Speeches, The Turbulent Years প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য।

২০১২ সালের ২৫শে জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ২৫শে জুলাই পর্যন্ত তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে আসীন ছিলেন। ২০১৭ সালে অবসরের পর থেকেই বলতে গেলে বার্দ্ধক্যজনিত কারণে তাঁর শরীর-স্বাস্থ্য ভালো যাচ্ছিল না। পত্নী শুভ্রা মুখোপাধ্যায় তো আগেই ২০১৫ সালেই গত হয়েছিলেন। এবার তিনিও চলে গেলেন। ঘটলো একটি যুগের সমাপ্তি। 

গত ১৫/২০ দিন তিনি অসুস্থ হয়ে দিল্লির একটি হাসপাতেলে ভর্তি হন। পরে ক্রমশ তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এবং শেষপর্যন্ত তিনি কোমায় চলে যান। অবশেষে ৩১শে আগস্ট ৮৫ বছর বয়সে পৃথিবীর সব জাগতিক মায়া কাটিয়ে বাংলার গৌরব, বাঙালির গৌরব চিরনিদ্রার দেশে চলে গেলেন। শুধু বাঙালি নয়, সারা ভারতবাসীর কাছে এ এক অপূরণীয় ক্ষতি। 

Post a Comment

0 Comments