স্বাধীনতার স্বাদ
প্র তা প সিং হ
১৪ আগস্ট ক্লাসে ঢুকেই সুদর্শনবাবু
প্রশ্ন করলেন, কাল তো তোমাদের ছুটি,
নিশ্চয়ই এই দিনটায় হেসেখেলে কাটাবে না। আচ্ছা স্বাধীনতা নিয়ে তোমাদের
মনোভাব কী ? তোমরা তো নতুন প্রজন্ম,
কীভাবে দ্যাখো এই দিনটাকে ?
আমাদের বন্ধু অলীক বলল, আমার নামের মতোই
রহস্যময় এই স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা অর্থহীন, অবান্তর ।অলীক একটু রগচটা,যা বলবার
সে মুখের ওপর বলে দেয়।
অলীক বলল, তিয়াত্তর - চুয়াত্তর বছর হয়ে গেল
আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি কিন্তু কতটুকু
স্বাধীন হয়েছি বলুন তো?
আমাদের কি সত্যিই বন্ধন-মুক্তি হয়েছে ?আমাদের চিন্তার স্বাধীনতা হয়নি।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হয়নি।
বাক স্বাধীনতা এখনও আসেনি।
আমরা পরনির্ভরশীল। পরাশ্রয়ী।
অনেক প্রাণের বিনিময়ে, অনেক রক্তের
বিনিময়ে, অনেক লাঞ্ছনা আর
নির্যাতনের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা চেয়েছিলাম আমরা কি সত্যিই পেয়েছি স্যার?
এত বছরেও আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা,
অনৈক্য, অসাম্য, হিংসা, নিষ্ঠুরতা একটুও কমেনি, আমরা এখনো শৃঙ্খলিত, একটা নৃশংস
শিকলে বাঁধা আমাদের জীবন।
বলতে বাধা নেই স্যার এখনও আমরা
ক্রীতদাস, পরের গোলামি করছি।
দারিদ্র আমাদের হাড়ে মজ্জায়
বুভুক্ষা আমাদের রক্তে
একটা রুটির জন্য মানুষ এখনো ছটফট করে নিরাশ্রয় মানুষ ফুটপাতে রাত কাটায়
অভাবের তাড়নায় ধুঁকতে ধুঁকতে
মৃত্যুকে বরণ করে নেয়।
শাসন - শোষণহীন যে সমাজব্যবস্থা
আমরা চেয়েছিলাম তা কি পেয়েছি?
একে কি আমরা স্বাধীনতার স্বাদ বলব?
আসলে 'স্বাধীনতা' শব্দটা একটা
বিরাট গোলকধাঁধা,
একটা অস্পষ্ট, কুয়াশাচ্ছন্ন কথার কথা
একটা বিশাল শূন্য --
এরকম স্বাধীনতা আমরা তো বটেই
আমাদের বাপ - ঠাকুর্দারাও
কোনোদিন চায়নি।
মাস্টারমশাই কোনো কথা বলতে
পারলেন না, তিনি নির্বাক,
মাথা নিচু করে ধীরে ধীরে ক্লাস থেকে
বেরিয়ে গেলেন।
1 Comments
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংবিধান কে ব্যঙ্গ করে ভোট নিয়ন্ত্রিত রাজনীতি,বিবেক হীন নেতৃত্ব, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপব্যবহার, ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করা ইত্যাদি অনৈতিক কাজ কর্ম। দেশের অন্ত্যজ শ্রেণী,দরিদ্র মানুষেরা রাষ্ট্রীয় শোষণ যন্ত্রের শিকার, সবচেয়ে সুবিধাভোগী বণিক শ্রেণী...তাই আপনার লেখা কে মর্যাদা দিয়ে স্বাধীনতা পূর্ণরূপে সফল হোক এই প্রার্থনা করি... কবিতা টা খুব ভালো লাগলো
ReplyDelete