জ্বলদর্চি

বুলবুল : অলৌকিককতার মোড়কে নারীবাদের গল্প


বুলবুল : অলৌকিককতার মোড়কে নারীবাদের গল্প

পরিচালক- অন্বিতা দত্ত

অভিনয়ে- রাহুল বোস, তৃপ্তি দিমরি, পাওলি দাম, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অবিনাশ তিওয়ারি। 
মুক্তি – ২৪ জুন ২০২০। নেটফ্লিক্স। 
রেটিং – 4/5


বড়পর্দার পর ওয়েব ময়দানেও প্রযোজক হিসেবে রীতিমতো সাফল্যের স্বাদ নিয়ে চলেছেন অভিনেত্রী প্রযোজক অনুষ্কা শর্মা। তার প্রযোজিত প্রথম ওয়েব সিরিজ ‘পাতাললোক’-এর রেশ কাটবার আগেই তিনি নেটফ্লিক্সে দর্শকদের জন্য উপহার দিলেন 'পরী' ছবির পর দ্বিতীয় হরর ফ্লিক ‘বুলবুল’। অনুষ্কার প্রযোজিত ছবিগুলিতে নারী চরিত্র সবসময় শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। এবার সেই নারীশক্তির জয়গাথা দেখানো হয়েছে এক অন্য ছলনে, ‘বুলবুল’ সে দেবী না ডাইনি? কখনও কখনও অন্ধকার, অন্যায়-অবিচারে শেষ করতে, দুষ্টের দমন করতে ত্যাগ করতে হয় অন্দরের কোমলতা। সেরকমই এক কাহিনী ‘বুলবুল’। এক অলৌকিক শক্তির মোড়কে সেরকমই এক অন্যধারার নারীবাদের গল্প পরিবেশন করেছেন অন্বীতা দত্ত।
গল্পের প্রেক্ষাপট ১৮৮১ সালের বাংলা। ছোট্ট বুলবুল, যার শৈশব ফুরোনোর আগেই বিয়ে হয় এক জমিদারবাড়িতে। বাপের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়িতে চলে আসতে হয় তাকে। সেই সময় থেকেই তার হাসি-কান্না-ভয়-আবদার সবকিছুর সঙ্গী হয়ে উঠে তারই বয়সি দেওর সত্য (অবিনাশ তিওয়ারি)। বয়সে অনেক বড় স্বামীর থেকেও তার কাছে সমবয়সী দেওর সত্য-র সান্নিধ্য প্রিয় হয়ে ওঠে। বয়সে বড় কিন্তু সম্পর্কে ছোট জা বিনোদিনী (পাওলি দাম) বুলবুলের স্বামীর কানে ফুসমন্তর দিয়ে দেওর সত্যকে উকিল বানানোর জন্য বিলেতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। এদিকে বিরহিনী রাধার মতো কাতরাতে থাকে বুলবুল। স্ত্রীর দেওরের উপর এরূপ টান দেখে তার উপর ‘জোর’ খাটায় বুলবুলের স্বামী ইন্দ্রনীল, যাকে কিনা সে আদর করে শ্বশুরঘরে পা রাখা থেকেই ‘ঠাকুরমশাই’ (রাহুল বোস) বলে ডাকত। রাগে ক্ষোভে নির্মম ভাবে স্ত্রীকে মারধর, ক্ষত-বিক্ষত করার পর সে নিজেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এদিকে দাদার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে চিকিৎসাধীন বুলবুলকে ধর্ষণ করে তার মানসিক ভারসাম্যহীন আরেক দেওর মহেন্দ্র। এর কয়েকবছর পর নিজের বিছানায় উদ্ধার হয় মহেন্দ্রর রক্তাক্ত দেহ। গঞ্জে হাওয়া ওঠে ডাইনির আগমনের। তারপর? 
‘নারী প্রধান গল্প’ কিংবা ‘উইম্যান এমপাওয়ারমেন্ট’-এর ভাষা রয়েছে ‘বুলবুল’-এ। তবে রহস্য-রোমাঞ্চে এবং ভয়ের মোড়কে। মূল চরিত্রে অর্থাৎ বুলবুলের ভূমিকায় তৃপ্তি দিমরি বেশ ভাল। বাঙালি বেশভূষায় তিনি মোহময়ী। ডাক্তার বন্ধুর চরিত্রে পরমব্রতও নিজস্ব স্বাক্ষর রেখেছেন। গল্পের প্রয়োজনে পার্শ্বচরিত্র হয়েও তার উপস্থিতি বেশ উজ্জ্বল। পরীর পর দ্বিতীয়বার পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় কাজ করলেন অনুষ্কার প্রযোজনায়। পরমের পাশাপাশি একঝাঁক বাঙালি মুখ রয়েছে 'বুলবুল'-এ। রয়েছেন পাওলি দাম, রাহুল বোস, অবিনাশ তিওয়ারি, তৃপ্তি দিমরি। তবে উল্লেখ্য, সিনেমায় পাওলি দামের ‘শেডি’ চরিত্র বেশ মন কাড়ে। পাওলির মাথা ন্যাড়া লুকে একেবারে প্রথমেই নজর কেড়েছেন দর্শকের। গল্পের দুই নারীচরিত্র বুলবুল এবং বিনোদিনী বেশ গুরুত্বপূ্র্ণ। মূল চরিত্র বুলবুল হলেও, মুভিতে বিনোদিনীর গুরুত্ব কিন্তু কোনও অংশে কম নয়। দ্বৈত চরিত্রে রাহুল বোসের অভিনয়ও বেশ। যেখানে যতটুকু প্রয়োজন, ঠিক ততটাই দিয়েছেন। তবে সব উপকরণ মজুত থাকলেও, প্লটের বাঁধন আরেকটু পোক্ত হলে পারত। তবে গোটা ছবির সেট ডিজাইনে আভিজাত্য, বাঙালিয়ানা বেশ ভালভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই ছবির সিনেম্যাটোগ্রাফি ছবির মেজাজকে ধরে রাখতে যথাযথ সাহায্য করেছে ৷ বিশেষ করে ‘রক্ত’ বা প্রতিহিংসাকে বোঝাতে ছবিতে লাল রঙের ব্যবহার এবং গা ছমছমে ভৌতিক ভাব আনতে হলুদ রঙের ব্যবহার অসাধারণ ৷ অবশ্যই এ ব্যাপারে বাহবা দিতে হয়, সিধান্ত দিওয়ান ও মীনাল আগরওয়ালকে৷ ছবিতে বাংলার লোকগাথার স্টাইল বেশ স্পষ্ট যা ছবিকে এক ‘ক্লাসিক’ লুক এনে দিয়েছে৷ 'বুলবুল' দেখে নিজের অফিসিয়াল টুইটার হ্যাণ্ডেল থেকে প্রযোজক পত্নী অনুষ্কা শর্মার প্রসংশা করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ক্রিকেটার বিরাট কোহলী। 


রেটিং
5 অসাধারণ
4 বেশ ভালো
3 ভালো
2 দেখতে পারেন
1 না দেখলেও চলবে

Post a Comment

2 Comments

  1. ভালো মূল্যায়ন / পার্থপ্রতিম আচার্য

    ReplyDelete
  2. ভালো মূল্যায়ন / পার্থপ্রতিম আচার্য

    ReplyDelete