জ্বলদর্চি

লোককথা-বোকা তাঁতি

লোককথা -বোকাতাঁতি  
গল্প - ১৮

সু ব্র ত কু মা র মা ন্না    

পাগড়ীটা পড়েছে কুঁয়ােয়, জুতাে দুটো চিবিয়ে খাচ্ছে কুকুর

গ্রীষ্মকালের দুপুরবেলা বােকা আত্মীয় বাড়ি গিয়েছিল। ফিরতে ফিরতে বেলা হয়ে গেল। মাথার উপর সূর্যের তেজে চারিদিক যেন জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। এমন সময় দেখল পথের পাশে একটি কুঁয়াে আর তার পাশে একটি বড় বটগাছ। গাছের তলাটা বাঁধানাে। জায়গাটা ঠাণ্ডা দেখে সেখানে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। আর যখন ঘুম ভাঙলাে তখন দেখল মাথার পাগড়ি আর জুতা নেই। ফুরফুরে বাতাসে উড়ে গিয়ে পাগড়িটা পড়েছে কুয়াের মধ্যে, আর জুতাে দুটো চিবিয়ে খাচ্ছে একটা কুকুর। সে দেখে তাে বােকার মাথায় হাত। কি করে যাবে খালি পায়ে, খালি মাথায়।

 অবশেষে বাড়ির পথেই রওনা দিল। বাড়ির কাছাকাছি এসে দেখতে পেল তাদের বাড়ির কাজের মেয়েকে। সে বােকাকে এই অবস্থায় দেখে কাঁদতে শুরু করল। আর ছুটতে ছুটতে এসে তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে বলল, মা ঠাকরুন সব্বেনাশ হয়েছে। কর্তাবাবু খালিপায়ে খালি মাথায় মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে আসছেন। আমাদের কি সর্বনাশ হল গাে। একথা শুনে মা ঠাকরুন হাত, পা ছড়িয়ে কাঁদতে শুরু করল। তাকে দেখে ছেলে মেয়ে , ঝি-চাকররাও কাঁদতে শুরু করল।

বাড়ি পৌঁছে বােকা তাঁতি দেখল বহু লোক কাঁদছে আর তার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে গড়াগড়ি দিচ্ছে। সে ভাবল বাড়িতে কোন বিপদ-আপদ হয়েছে। তাই সবাই কাঁদছে। ওদের কান্না শুনে সেও সুর মিলিয়ে কাঁদতে লাগল।

কাঁদতে কাঁদতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল। একজন প্রতিবেশিনী কাঁদতে কাঁদতে মা ঠাকরুনকে জিজ্ঞাসা করল, তােমাদের কি হয়েছে ? বাড়িতে কেউ মারা গিয়েছে? সে বলল, লােক মরুক, আমার বাড়ির লােক মরবে কেন?

বােকা তাঁতি তখন বলল, সবাই তাহলে কাঁদছে কেন? কাজের মেয়েটা বলল, সে কি বাবু ! আপনার খালি মাথা আর খালি পা দেখে ভাবলাম আপনি বােধহয় আত্মীয় বাড়ি থেকে কোন খারাপ খবর নিয়ে আসছেন। তাইতাে আমি কেঁদে উঠলাম। বাড়িতে এসে গিন্নিমার কাছে আপনি কিভাবে আসছেন তা বললাম। শুনে তিনিও কেঁদে উঠলেন। তারপর সবাই কাঁদতে শুরু করল। তখন বােকা সব কথা খুলে বলল। শুনে সবাই হাে হাে করে হেসে উঠল। পাড়াপ্রতিবেশীরা এমন বােকামি জীবনে দেখেনি।

Post a Comment

0 Comments