জ্বলদর্চি

বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে চিকিৎসা সংকট

   ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু   



বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে চিকিৎসা সংকট


শু ভে ন্দু  ম ণ্ড ল

 ২০১৯ সালে ডিসেম্বর মাসে যখন চিনে করোনা ভাইরাসের কথা প্রথম শোনা গেল তখন কেউ কল্পনাই করতে পারেনি যে, এই  ভাইরাসর  গোটা পৃথিবী ব্যাপী একটা মহামারির আকার ধারণ করবে। বোঝা গেল, ২০২০ সালের মার্চ মাসে। সারা পৃথিবীসহ ভারতে একটা সংকটময় পরিবেশ- পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। ইতালি ও আমেরিকার মতো উন্নত দেশের করোনা আবহ দেখে বিশেষজ্ঞরা সহজেই অনুমান করেছিল যে, এদেশে এই ভাইরাস যদি কোনোভাবে মানুষের দেহে সংক্রমণ হয় তাহলে, সংক্রমণের চেহারাটা এক বিভীষিকার রূপ নেবে। ঘটনা ঘটলও তাই। শিক্ষিত মানুষের অসচেতনতা এবং সরকারের প্রাথমিক  উদাসীনতায় এই ভাইরাসে আজ দেশ পর্যুদস্ত। সরকার বিশেষজ্ঞদের মত অনুসারে দ্রুত সংক্রমণ আটকানোর জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো এ দেশেও দীর্ঘ লকডাউনের পথকে বেছে নেয়। ফলে, সরকার দু'দিক দিয়ে লাভবান হয়। একদিকে যেমন দ্রুত সংক্রমণ রুখে দিতে সক্ষম হয় অন্যদিকে, স্বাস্থ্য পরিষেবাকে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার উপযুক্ত করে সাজিয়ে নেওয়ার সময়টুকু পেয়ে যায়। যদিও WHO -এর বিভ্রান্তিকর নির্দেশে বারে বারেই সরকাকে তাদের মতামত পরিবর্তন করতে হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নত করা সত্ত্বেও বিপুল জনসংখ্যার এই দেশের মানুষকে সচেতন করা যায়নি বলেই সংক্রমণের চেহারাটা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার উপযুক্ত পরিষেবা রয়েছে বলে ঘোষণা করলেও যখনই  এক সঙ্গে কোনো এলাকার বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছে তখনই সমস্ত রকম পরিষেবাগত সমস্যা লক্ষ করা গেছে-- কখনো বেডের সমস্যা,  কখনো অ্যাম্বুলেন্সের সমস্যা,কখনো পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সমস্যা, কখনো টাকা না দেওয়ায় ভর্তি সংক্রান্ত সমস্যা, এছাড়া রয়েছে, দালাল চক্রের মতো নানাবিধ চিত্র। পাশাপাশি সরকারিভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবাগত ত্রুটি দেখা দিয়েছে নানাভাবে। প্রথম দিকে কোভিড রোগিদের টেস্টের উপযুক্ত 'ল্যাব ও কিট্' সংক্রান্ত গাইড লাইন না থাকায় বারে বারে এদেরকে বিপদের মুখে পড়তে হয়েছে। বহু মানুষের মৃত্যু হলেও সরকার নানা প্রকল্পের মাধ্যমে কোভিড আক্রান্ত রোগিদের মনোবল ও মানসিকতা পরিবর্তন করার প্রয়াস নিয়েছে। ওয়ার্ডে ডাক্তার ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগিদেরকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে সর্বত্র চেষ্টা করেছে। কিন্তু আজ তারাই সমাজের কিছু মানুষে কাছে অবহেলার পাত্র হয়ে উঠেছে। কারণ, স্বাস্থ্যকর্মীরা যে যে এলাকায় থাকে তাদের নিয়ে প্রথম দিকে নানা জটিল আবহ তৈরি হয়েছিল। পরে অবশ্য পুলিশ প্রশাসনের প্রচেষ্টায় এই সমস্যা আজ অনেকটাই দূর করা গেছে। কিন্তু সব সমস্যাতো একেবারে দূর করা যায় না। এই সময় কালে যারা বাইরের রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে নার্সিং ট্রেনিং নিতে এসেছিল তারা নিজেদের রাজ্য সরকারের সঙ্গে বার্তালাপ করে হঠাৎ-ই এখান থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তে সরকারি ও বেসরকারি  স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে নানামুখী জটিলতার সামনে পড়তে হয়। পরে অবশ্য সরকার কিছু নার্সকে বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে সেই শূন্যস্থান পূরণ করার চেষ্টা করেছে। এমনকি আমরির মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নার্সের কাজে ব্যবহার করেছে রোবটকে। সর্বাগ্র প্রচেষ্টা করেও যারা এই পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত তাদের মধ্যে অনেক ডাক্তার ও নার্স এই রোগে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ যেমন হয়েছে তেমনি, আবার অনেকে মারাও গেছে। এই ঘটনা আমাদের কাছে খুবই বেদনাদায়ক ও নির্মম । রোগিদের ক্ষেত্রেও এহেন চিত্র বর্তমান। সরকারি নিয়মাবলী সঠিক ভাবে না মানায় অনেক রোগির পরিবারকে নানাভাবে হেনস্তা হতে হচ্ছে। যার চিত্র আমরা সংবাদ মাধ্যমে প্রায়শই  লক্ষ করি। 
     দেশে যে কোনো মহামারি দেখা দিলে কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী মানুষ এই সময়কে কাজে লাগিয়ে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করে। যা এক্ষেত্রে সবত্রই চলছে। একদিকে  বাজার মূল্য যেমন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি করোনা চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা ধরনের জিনিসের একটা 'ব্ল্যাক মর্কেট'-এর  পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলত, সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারছে না তারা আজ কি করবে? পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলির চরম বিলের বোঝায় রোগির পরিবার আজ বিপদাপন্ন। তার উপর করোনায় মৃত লাশগুলিকে যে অমানবিক পদ্ধতিতে সৎকারের ব্যবস্থা করা হচ্ছিল তা দেখে সকলেই বিস্মিত। পরে অবশ্য সরকারের হস্তক্ষেপে এই সকল সমস্যা অনেকটাই আজ দূরীভূত। কিন্তু প্রশ্ন হল এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তির উপায় কি কিছু আছে? সারা বিশ্বে ভ্যাকসিন প্রস্তুতিতে বিজ্ঞানীরা আজ নিয়োজিত। কিন্তু কবে এই মহামারি থেকে মানুষ রেহাই পাবে তার কথা এখনও অজানা।তাছাড়া,যতদূর জানা যাচ্ছে কোভিড ভাইরাস বার বার চরিত্র বদলে নতুন নতুন রূপ নিচ্ছে। ফলে কার্যকারি ও নিরাপদ পার্শ্ব- প্রতিক্রিয়াহীন প্রতিষেধক আদৌ তৈরি হবে কিনা তা নিয়ে অনেকেই  সন্ধিহান।কিন্তু কিছু সম্ভবনার দিক ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। আনলক প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবন- যাপনের মধ্য দিয়ে একটি প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। কারণ, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন মানুষ যত গৃহবন্দি হয়ে থাকবে ততই তার শরীরে 'ইমিউনিটি' ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকবে। এই কথা চিন্তা করেই আনলক৪- এ সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে আরও কিছু কার্যব্যবস্থা খোলার পরিকল্পনা নিয়েছে।মানুষের শরীরে যদি স্বাভাবিকভাবে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠে তাহলে করোনার আক্রমণ থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তার জন্য সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসম্পন্ন জীবন-যাপন এবং 'ফাস্টফুড' ব্যতীত পুষ্টিকর খাবারের অভ্যাস তৈরি করতে হবে। যাপনে আনতে হবে নতুন নিয়মবিধি।                                                                                       এই পরিস্থিতিতে সকলে বিশেষভাবে সচেতন হলে এবং স্থানীয় স্তরে প্রত্যেক ব্যক্তি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলি যথাযথভাবে গ্রহণ করলে এই সংকট থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে। অজ্ঞতা দূর করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি-ই এই সময়ের একমাত্র করণীয়।

   ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু   

Post a Comment

0 Comments