জ্বলদর্চি

মিশাইল ম্যান/পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

আজ এ.পি. জে আবদুল কালামের জন্মদিন

মিশাইল ম্যান

পূ র্ণ  চ ন্দ্র  ভূ ঞ্যা

'এই দাঁড়াও, দাঁড়াও! কোথায় যাবে?'
'স্যারের সঙ্গে দেখা করতে।'
'কোন স্যার?'
'ঐ সাদা বড় বাড়িটায় যে স্যার থাকে।'
'অ্যাপয়ন্টমেন্টে লেটার আছে?'
'না, নেই!'
'এভাবে বিনা অ্যাপয়ন্টমেন্টে উনি যার-তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন না।'
'কিন্তু উনি তো বাচ্চাদের খুব ভালোবাসেন!'
'হ্যাঁ, ঠিক আছে। কিন্তু এভাবে হুট করে...। আচ্ছা, কী দরকার তোমার?'― ঠোঁটের কোণে আলতো হাসি লাগিয়ে উত্তর দেয় মধ্য-চল্লিশের সিকিউরিটি গার্ড।
'এই চিঠিটা উনাকে দেওয়ার ছিল। উনি আমার জীবনের আদর্শ। আমিও একদিন তাঁর মতন বড় মানুষ হতে চাই'― ঝটপট উত্তর দেয় ছেলেটি। ভয়ডরহীন। বয়েস মাত্র দশ বছর। রাজস্থানের অখ্যাত ছোট্ট একটি ধাবায় থালা-কাপ-প্লেট ধোয়, চা-খাবার সার্ভ করে, টুকটাক ফাইফরমাস খাটে। ধাবার টিলিভিশন স্ক্রিনে একদিন সে দেখে খাকি ড্রেস পরা অনেক মানুষ মিলে একজন মানুষকে স্যালুট করছে, সম্মান প্রদর্শন করছে। সে-দিনটা ছিল১৫-ই অগাস্ট। ধাবার মালিকের কাছ থেকে এ হেন সম্মানীয় মানুষটির সম্পর্কে জেনে তাঁকে ভালোবেসে ফেলে সে। তাঁর মতো 'বড় মানুষ' হওয়া ছেলেটার জীবনের ব্রত হয়ে দাঁড়ায়। মাথাভর্তি ঘনকালো চুলে বেশি করে তেল দিয়ে তার স্যারের মতো হেয়ারস্টাইল বানিয়ে ফেলে সে। 

কিন্তু তার স্বপ্ন ও বাস্তবের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তীব্র আর্থিক অসঙ্গতি। সে সুবাদে এই ধাবায় আসা। অথচ ছোটবেলা থেকেই সে খুব ব্রিলিয়ান্ট। একবার সে যা পড়ে, যা দেখে, যা শোনে; সঅব তার মনে থেকে যায়। সব দিকে সে বেশ পারদর্শী। শুধু স্কুলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তার নেই। অথচ লেখাপড়ার খুব নেশা তার। ধাবায় কাজের ফাঁকে, রাতে ঘুমানোর আগে লুকিয়ে লুকিয়ে বইপত্র পড়ার সবদিনের অভ্যেস তার। এরজন্য ঝকাঝকা খায় দিনরাত। তবুও সে শোনে না। সমুদ্রনীল চোখে তার অসীম স্বপ্ন― ভবিষ্যতে বড় হয়ে 'কালাম' হবে। 'কালাম' হওয়া তার জীবনের শুধু স্বপ্ন নয়, প্যাশনও বটে। তাই নিজের ডাকনাম 'ছোট্টু' পাল্টে সে 'কালাম' রাখে। তারপর একদিন সুযোগ বুঝে ধাবায় পরিচিত হওয়া এক পাঞ্জাবি ট্রাকডাইভারের ট্রাকে চেপে দিল্লি চলে আসে সে। দিল্লির অভিজাত এলাকা রাষ্ট্রপতি ভবনে তার প্রিয় ড: এ পি জে আব্দুল কালাম স্যারের সঙ্গে সাক্ষাতের নেশায়। সেখানে গেটে নিরাপত্তা রক্ষী তার পথ আটকায়।

এ হেন রোমাঞ্চকর কাহিনিটি "আই অ্যাম কালাম" নামক একটি হিন্দি সিনেমার। অবশ্য শুধু চলচ্চিত্র নয়, বাস্তবের রুক্ষ ভূমিতে হাজার হাজার লাখো লাখো শিশুর স্বপ্ন― বড় হয়ে তাদের খুব কাছের, ভীষণ প্রিয় 'কালাম' হবে তারা। 'ড: এ পি জে আবদুল কালাম'। 
                     
তাই দেশ-কালের গণ্ডি পেরোনো এক স্বপ্নের নাম 'ড: এ পি জে আবদুল কালাম'। এ এমনই এক স্বপ্ন যা আবালবৃদ্ধ মানুষজনকে ঘুমোতে দেয় না; জাগিয়ে তোলে অভীষ্টপূরণের লক্ষ্যে। 

ভারতবর্ষের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে স্বল্প ও দূর পাল্লার ব্যালাস্টিক মিশাইল পৃথ্বী, অগ্নি সহ আরও বহু ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সফল রূপকার ড: কালাম। জল-স্থল-বায়ু এই তিন ক্ষেত্রে ভারতবর্ষের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে এ হেন মিশাইলের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ড: আব্দুল কালামকে 'ভারতবর্ষের মিশাইল ম্যান' বলা হয়।

তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০২―২০০৭ সময়কালের জন্য ভারতের সব রাজনৈতিক দলের সর্বসম্মতিক্রমে বিনা বাধায় ভারতের এগারোতম রাষ্ট্রপতি হিসাবে ২০০২ সালের ২৫-শে জুলাই তিনি শপথ গ্রহণ করেন।

আজ সেই মিশাইল ম্যান-এর শুভ জন্মদিন। ১৯৩১ সালের আজকের দিন (১৫ অক্টোবর)-এ তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। একটি নির্দিষ্ট ধর্ম-সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়েও জাতিগত, ধর্মগত ও প্রদেশভিত্তিক সংকীর্ণ স্বার্থের উর্ধ্বে তিনি ছিলেন আপামর সকল ভারতবাসীর খুব কাছের মানুষ, প্রিয়জন। হাজারো সমস্যায় জর্জরিত সর্বকালীন ভারতীয় সমাজে আজও তাঁর জীবনদর্শন ভীষণ প্রাসঙ্গিক। প্রাসঙ্গিক নিরামিষভোজী এ হেন মহান অকৃতদার মানুষটিও।

তাই জন্মদিনের এই শুভ ক্ষণে একরাশ শুভেচ্ছা, অনন্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাপূর্ণ প্রণাম জানাই এ হেন মহান মানুষটিকে। শুভ জন্মদিন প্রিয় ড: এ পি জে আব্দুল কালাম।
                    

Post a Comment

1 Comments

  1. খুবই সুন্দর হয়েছে। তবে বানানের দিকে একটু নজর রাখতে হবে প্রকাশককে।

    ReplyDelete