জ্বলদর্চি

স্বপ্নগুলো সত‍্যি হবেই/অনিন্দিতা শাসমল


স্বপ্নগুলো সত‍্যি হবেই

অ নি ন্দি তা  শা স ম ল

পদ্মপাতায় শিশিরের মতো টলটলে কেটেছে রাণুর শৈশবের পুজোর দিনগুলো।
বিদ্যুতের আলোহীন গ্রামে শহরের আলোর রোশনাই এসে পড়তো ছায়াপথের মতো।
সেই পথরেখা ধরে মনে মনে হারিয়ে যেত কখনও উজ্জ্বল আলোয়, নতুন পোশাকের গন্ধে, জনসমাগমে -- আবার কখনও ছায়াঘেরা জঙ্গলের নির্জনতায়, যা ছিল তার উৎসবমুখর দিনগুলোর একান্ত অনুভব আর স্বপ্নে গড়া ভবিষ্যতের ঠিকানা।

তারপর গ্রামের পুজো শুরু হল।
পুজোর জোগাড়, ফল কাটা সব নিজের হাতে ! দুর্গাঠাকুরকে এত কাছ থেকে দেখতে পেয়ে, অঞ্জলি দিতে পেরে, আরতি দেখতে পেয়ে --সে কী  আনন্দ তাদের সকলের ! গোটা গ্রামটা  মেতে উঠতো উৎসবের আনন্দে -- যেন একটাই পরিবার !

রাণুরা চলে এলো গ্রাম ছেড়ে শহরের বুকে ।
পাড়ায় পাড়ায় প‍্যান্ডেল, মাইক, অনুষ্ঠান, জাঁকজমক, লোকে-লোকারণ্য সব রাস্তা, রেস্তোরাঁয় কত খাবারের আয়োজন !

তবুও তার মন পড়ে থাকে সেই গ্রামের পুজোতেই। তিতলি, মিতা, রূপা এমনকি নাসিমা আয়েষারাও কত আনন্দ করতো একসাথে !
পুজোর চারটে দিন কাটে স্মৃতিচারণায়, নতুন পূজো সংখ্যার পাতায় মুখে গুঁজে আর দিনান্তে মুঠোফোনে তারই মতো এক পাগল বন্ধুর সঙ্গে,
 পুটুর পুটুর কত গল্পে !

এবছর একটু অন্যরকম পুজো।
স্কুল নেই। বাড়িতে বসে
পুজোসংখ্যাগুলো প্রায় শেষের পথে-- 
যার সাথে গল্প করতো রাণু, সে বেড়াতে যাবে অযোধ্যা পাহাড়ে ।
ব্যস্ত থাকবে; কথা বলতে পারবে না বলেছে,বেশ রূঢ়় ভাবেই বলেছে -- আমাকে ফোন করে বিরক্ত করিস না যেন !
রাণু দুঃখ পাওয়ায় বুঝিয়েছে -- গাড়ির মধ্যে সবাই আনন্দ করতে করতে যাবো তো! তুই বারবার ফোন করিস না, প্লিজ।

খুব মন খারাপ হয়ে যায় রাণুর--
তারও খুব ইচ্ছে করে, অন্ততপক্ষে একটা দিন যে কোন গ্রামের পুজোমণ্ডপে গিয়ে, সন্ধেবেলায় শিশির ভেজা ঘাসে পা দিতে।
 না, থাক।
শহরে যে রোগের প্রকোপ অনেক বেশি, গ্রামে গেলে সবাই আতঙ্কিত হবে।

যে রাণু কোনোদিন  পুজো দেখতে বেরোয়নি শহরের উপচে পড়া ভিড়ে,
এবার সে পথে নামবে।
না, ঠাকুর দেখতে নয়..
অনেক মাস্ক নিয়ে বেরোবে-- মুখোশহীন সুন্দর মুখগুলোকে ঢেকে দিতে বলবে, তাদের ভালোর জন্য, সকলের ভালোর জন্য ।
পুজো কমিটির সঙ্গে, কোমর বেঁধে নেমে পড়বে দূরত্ব বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টায়।
 চরণামৃত যে নিরাপদ নয় এবার, সমস্ত জ্ঞানের আলো জ্বেলে বোঝাবে সবাইকে ।
সকলের হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে, প্রসাদের প‍্যাকেট নিজেই দূর থেকে দিয়ে বাড়িতে গিয়ে খেতে বলবে।
পুজোর খরচ কমিয়ে, উদ্বৃত্ত টাকা ও প্রণামী বাক্সে জমা অর্থ সাহায্য করতে বলবে হাসপাতালগুলোকে।  ঠাকুরের পায়ের কাছে জমা এত এত শাড়ি !  দেবে তো চাইলে ?
গরিব মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটাবে শাড়িগুলো দিয়ে; খুশিতে বেজে উঠবে ঢাকের বাদ‍্যি।

হঠাৎ, দূর থেকে ভেসে আসা আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভেঙে যায় রাণুর।

ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয় !
সেই আশায় এবারের  শারদোৎসবের অপেক্ষায় রাণু ।


Post a Comment

0 Comments