জ্বলদর্চি

ডিয়ার কমরেড : দুই সহমর্মীর প্রেমকাহিনী/রাকেশ সিংহ দেব

Dear Comrade Film Review 

ডিয়ার কমরেড : দুই সহমর্মীর প্রেমকাহিনী

পরিচালক – ভরত কাম্মা 
অভিনয় – বিজয় দেভারোকোন্ডা, রশ্মিকা মন্দানা, শ্রুতি রামচন্দ্রন, রাজ অর্জুন। 
মুক্তি – ২৬ জুলাই, ২০১৯ 
রেটিং – 5/5
 
‘কমরেড’ বহুল প্রচলিত এই শব্দের প্রকৃত অর্থ কি? এটা শুধুই কি এক বিশেষ রাজনৈতিক শব্দ? বর্তমান সময়ে এর অন্তর্নিহিত অর্থ উপলব্ধি করতে পারে কতজন? এরকম কিছু অতিপরিচিত প্রশ্ন ও ভাবাবেগের সরল উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে সিনেমা ‘ডিয়ার কমরেড’। ছবির মধ্যে যে প্যাশন এবং প্রেমের গল্প বলা হয়েছে তা সাধারণ মধ্যবিত্ত জীবন থেকে নেওয়া, যার সাথে দর্শকরা সহজেই একাত্ম হতে পারে। দর্শকদের পুরো তিন ঘণ্টা এমন মনে হয় যে নিজের জীবনকে পর্দায় দেখছেন। যদি আপনি একটি ভাল ছবি দেখতে চান যাতে প্রেমের সাথে সাথে এমন কিছু পাওয়া যায় যা জীবনের ভালোলাগার খাতায় অমূল্য সঞ্চয় হয়ে থাকবে তাহলে ‘ডিয়ার কমরেড’ অবশ্যই মাস্ট ওয়াচ। 

   সিনেমার গল্প কলেজ জীবন কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে যার প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রাগ এবং প্রেম। ববি (বিজয় দেভারোকোন্ডা) কলেজের ছাত্রনেতা। উগ্র, আগ্রাসী এবং প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে ছাত্রদের অধিকার বুঝে নিতে যে কোনও কিছুর তোয়াক্কা করেনা। ববির কয়েকজন অভিন্নহৃদয় বন্ধু রয়েছে যারা একে অপরকে কমরেড নামে ডাকে। এদের বন্ধুত্ব ঠিক বেঠিক এর হিসেব মেনে চলেনা। কমরেড বিপদে পরলে যেকোনো পরিস্থিতিতে এরা একে অপরের পাশে থাকে। ববির জীবনের সবচেয়ে বড় জেদ হল যেকোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সে যে কোনো মূল্যে চোকাতে প্রস্তুত। এই কারণে তাদের প্রায় দিন কারও না কারও সাথে মারপিট লেগেই থাকে। অপরদিকে লিলি (রশ্মিকা মান্দানা) এক স্টেট লেভেল ক্রিকেটার যে বিশ্বাস করে লড়াই সবসময় নিজের সাথে নিজের হওয়া উচিৎ। বাইরের লড়াই সবসময় ব্যক্তি এবং তার আপনজনেদের ক্ষতিই করে। খুড়তুতো দিদির বিয়ে উপলক্ষ্যে লিলি ববিদের পাশের বাড়িতে আসে। একদিকে ববি অশান্ত সাগর আর অপরদিকে লিলি শান্ত ডিঙা। কিন্তু কথায় আছে না বিপরীত মেরুর দুরন্ত আকর্ষণ! লিলি এবং ববির মধ্যেও ধীরে ধীরে এক সহজ অথচ অসামান্য প্রেম কাহিনীর জন্ম নেয় যা এই সিনেমার প্রধান উপজীব্য। গল্পের মধ্যে ক্রিকেট এবং রাজনীতির উপস্থিতি এই গল্পকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।  ছবির মধ্যে হৃদয়াবেগ এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে সিনেমা দেখতে দেখতে কিছু দৃশ্য দর্শককে আবেগ তাড়িত করে তুলবে। ছবির মধ্যে এর পাশাপাশি একটি সোশ্যাল ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছে যা অনেক মানুষকে মোটিভেট করবে। 

  কিছু কিছু গল্প থাকে যা পর্দার জীবনের সাথে বাস্তবের পার্থক্যের রেখাকে মুছে দেয়। দর্শকরা আনুভব করে এটা গল্পের নায়ক নায়িকার জীবন নয়, স্মৃতির মলাটে মোড়া তাদের ফেলে আসা সময়ের কথা। এই মুভির প্লাস পয়েন্ট হল এর ন্যারেশন স্টাইল পরিচালক যেভাবে গল্প বলেছেন তাতে দর্শকরা একটুও কাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হননা। ছবির চিত্রনাট্য এত অসাধারণ যে তিন ঘন্টা ছবি দেখার পরও দর্শকদের মনে হবে যদি আরেকটু লম্বা হতো ববি লিলির এই সিনে সফর। এই ছবির মূল স্তম্ভ ছবির নায়ক বিজয় দেভরাকোন্ডা অভিনয়। ভিন্ন লুক, ভিন্ন এক্সপ্রেশান সব কিছুতেই তিনি অদ্বিতীয়। বিজয়ের এক্সপ্রেশন এতই ন্যাচরাল যে দর্শক চোখ সরাতে পারবেন না। তার সাথে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন ছবির নায়িকা রশ্মিকা মন্দানা। এই ছবির গানগুলো যেন চিত্রনাট্যের হিলিং ফ্যাক্টর। ছবির গতি কমে এলেই এই সুমধুর গানগুলি বুষ্ট করেছে ছবির গতি। সুরের সাথে সাথে গানগুলির দৃশ্যায়ণ দর্শক হৃদয় তৃপ্ত করে 
   ছবি রিলিজ হওয়ার আগেই করণ জোহরের ধর্মা প্রোডাকশন ছবির হিন্দি রিমেক স্বত্ব কিনে নিয়েছে।  যে সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমা নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ এতদিন মশকরা করে এসেছে আজকাল সেই ইন্ডাস্ট্রির সিনেমা তার দমদার গল্প আর অভিনয়ের কারণে মুক্তির আগেই এভাবে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে! ইউটিউবে হিন্দি ডাবিং এ সিনেমাটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উপলব্ধ রয়েছে। ঘন্টা তিনেক সময় বের করে সপরিবারে অবশ্য দেখে ফেলুন এই অসাধারণ সিনেমাটি। ভালোবাসায় থাকুন, আপনজনদের পাশে থাকুন, ভালো থাকুন। আপনার কাছের মানুষদের জীবনে সত্যিকারের ‘কমরেড’ হয়ে উঠুন। 

রেটিং 
5 অসাধারণ
4 বেশ ভালো
3 ভালো
2 দেখতে পারেন
1 না দেখলেও চলবে
________________________________
আরও  পড়ুন। 

"কোনও যুদ্ধের জয় বা পরাজয় নির্ধারিত হয় একটাই বিষয়ের উপর তা হল তথ্য বা ইনফর্মেশন।" 

'র-- রোমিও আকবর ওয়াল্টার': এক ভারতীয় গুপ্তচরের রুদ্ধশ্বাস কাহিনি নিয়ে আলোচনা করলেন রাকেশ সিংহ দেব। 

Post a Comment

1 Comments