জ্বলদর্চি

জন কীটস /সন্দীপ কাঞ্জিলাল

"শ্রুত ধ্বনি মধুর, কিন্তু অশ্রুত ধ্বনি মধুরতর"
"সে, শুধু সে-ই পারে পরতে অমরত্বের মুকুট, যে শুনেছে বাতাসের কণ্ঠস্বর।"

John Keats
জন কীটস 
(৩১/১০/১৭৯৫--২৩/০২/১৮২১)

সন্দীপ কাঞ্জিলাল

প্রচন্ড জ্বর! কাশি! কফ যখন ফেলছি দেখছি রক্ত উঠছে কিনা। জ্বর কমানোর ঔষধ খেয়ে সারা শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে। একটু তন্দ্রা ভাব! দেখতে পাচ্ছি একটি তরতাজা যুবক প্রচণ্ড জ্বর গায়ে কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে আসছে। আর মুখ দিয়ে উঠছে তাজা লাল রক্ত। ছেলেটি মোমবাতির আলোয় রক্ত দেখে বলছে, এ রক্তের রং আমি চিনি, এ রক্ত উঠে এসেছে ধমনি থেকে। এ রক্ত নয়, আমার মৃত্যুর সমন। ডাক্তার এলো। তখনও যক্ষার চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। প্রথা অনুসারে কিছু রক্ত হাতের শিরা কেটে বের করে দেওয়া হলো। যাতে মুখ দিয়ে না রক্ত ওঠে। এ যক্ষা নাকি তাঁর মায়ের ছেলেকে দান। মা ছিলেন প্রচণ্ড পানাসক্ত। ছেলেটির জন্মের সময় ও তাঁর মা মদ্যপানে বিরতি দেননি। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন এক জটিল রোগে আক্রান্ত হয় গর্ভস্থ সন্তান। যার নাম "ফিটাল অ্যালকোহল সিনড্রোম" সংক্ষেপে "ফ্যাস"। যা পরে সন্তানকে যক্ষায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছিল। এই যক্ষাই তাঁর প্রাণ কেড়ে নিল ২৩শে ফেব্রুয়ারী ১৮২১ সালে। ছেলেটির ইচ্ছানুসারে সমাধিক্ষেত্রে মৃত্যুর তারিখ লেখা হলো না। লেখা হলো তাঁরই লিখে যাওয়া কথা, "এখানে শুয়ে আছে সে, যার নাম জল দিয়ে লেখা।" এখানে শুয়ে আছে রোমান্টিক কবি সৌন্দর্যের কবি 'জন কীটস'। কাব্য জগতের এই অতিথি লন্ডনের মুরগেটের এক আস্তাবলে ১৭৯৫ সালে ৩১ শে অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ঐ আস্তাবল দেখাশুনা করতেন। ১৮০৪ সালে বাবা ইমাস কিটস ঘোড়া থেকে পড়ে মারা যান। ১৮১০ সালে যখন মা মারা গেলেন, কীটস এর বয়স পনেরো। পৃথিবীতে তখন তার সহায় সম্বল কিছু নেই, সঙ্গে দুটো ছোটো ভাই। 

কীটস প্রথমে ভর্তি হলেন এনফিল্ডের একটি স্কুলে। সেখানে দিন রাত পড়তে থাকে ইতিহাস ও সাহিত্য। সেই বয়সে তিনি পড়ে ফেলেন চাপম্যানের অনুবাদ হোমার। পড়ে বিস্ময় বোধ করেন। ১৮১৫ সালে তিনি লিখবেন "Wild surmise" নামে একটি বিখ্যাত সনেট। ইতিমধ্যে তাঁর হাতে এসে যায় Spenser এর 'Faery Queene'। তা পড়ে তিনি সুখের সাগরে ভাসতে লাগলেন। অসাধারণ কবিত্ব, আশ্চর্য সৌন্দর্য সৃষ্টি এবং অসামান্য লেখার কৌশলে কীটস মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে লিখে ফেলেন প্রথম কবিতা নাম "অ্যান ইমিটেশন অফ স্পেনসার' (An Imitation of Spensor)। ইস্কুলে পড়াকালীন তিনি ভার্জিলের 'ইনিড' অনুবাদ করেন। 

১৮১০ সাল থেকে ডাক্তারি পড়া শুরু করেন 'ইমাস হ্যামন্ড' নামে এক শল্য চিকিৎসকের কাছে। পরের পাঁচ বছর হসপিটালে প্রশিক্ষণ নিয়ে ছিলেন। ডাক্তারি পেশায় সফলতা অর্জন করলেও তিনি সব ছেড়েছুড়ে কবিতা লিখবেন স্থির করলেন, কবি হতে চাইলেন।একথা পড়লে অনেকে চমকে উঠবেন। কবি হতে চাইলে কি কবি হওয়া যায়? কখনও না। "Poet is born not manufactured"- একথা ধ্রুব সত্য। কিন্তু কীটস কবি হয়েই জন্মেছিলেন। শুধু কবিত্ব তাঁর মধ্যে সুপ্ত ছিল। 'Faery Queene' সেই সুপ্ত প্রতিভার ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছে মাত্র। 

পাঁচ মহান ইংরেজ 'রোমান্টিক কবি'র মধ্যে সবচেয়ে ছোট সে, অথচ সকলের আগে মৃত্যু হবে তার। টেনিসনের মতে, সে উনিশ শতকের শ্রেষ্ঠ কবি, ম্যাথু আর্নল্ড তার বৌদ্ধিক আর আধ্যাত্মিক আবেগে আপ্লুত। ক্ষমতায় সে রাঁবো-র সমান, কবিতার গোপন অ্যালকেমি তার করায়ত্ত। 'হাইপেরিয়ান' পড়ে বায়রনের ইসকাইলাসের কথা মনে পড়েছিল। দু'শো বছরে রুচির এত পরিবর্তন হয়েছে, স্বয়ং শেলি বিশ শতকের অধিকাংশ বোদ্ধাদের কাছে একসময় অপাংক্তেয় হয়ে যাবেন, কিন্তু কীটসের সম্মান কখনও একচুল কমেনি। সৌন্দর্যের এক উপাসক যেন নিজেই কবিতার সুন্দরতম এক দেবতা। 

তাঁর ছোট কবিতা শুধু কবিতাই নয় বরং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে সমৃদ্ধ। জীবন রঙ্গমঞ্চে কয়েকটি মাত্র দৃশ্যে এসে, তিনি জীবনের জন্য, মানুষের জন্য এমনকি পরবর্তীকালে কালজয়ী সাহিত্যিকদের জন্য রেখে গেছেন রসদ। তাঁর কবিতা আমাদের রোমাঞ্চিত করে, পঞ্চ ইন্দ্রয়ে ঝংকার তোলে, শব্দের দ্বারা সংবেদনশীল চিত্র ফুটিয়ে তুলতে, তাঁর মতো পারদর্শী কবি খুব কম আছেন। কীটস যেন এক আঁকা ছবি। যেখানে সমস্ত রং জীবন্ত হয়ে ওঠে। 

চিত্রশিল্পী বন্ধু সেভার্ন লিখছে, কোনও কিছুই তার দৃষ্টি এড়ায় না। একটি পাখির ডাক, বা ঝোপঝাড় থেকে হালকা একটা খসখসানি, কোনও জন্তুর শরীরের শব্দ, সবুজ রঙের পরিবর্তমান রুপ, এক টুকরো বাদামি আলো, অপস্রিয়মাণ ছায়া, হাওয়ার গতি- কী করে তা গাছ আর ফুলকে আলোড়িত করে। মেঘের চলাফেরা, এমনকি চলমান ভাঁড়দের ভাবভঙ্গি, কোনও এক নারীর চুলের রঙ, শিশুর মুখের হাসি, ছলনাময় মানবতার আড়ালে জান্তবতা, এমনকি টুপি, জামাকাপড়, জুতো....যা কিছুতে মানুষের অন্তর্গত আত্মাকে ছোঁয়া যায়। একটি চিঠিতে সে লিখেছিলঃ "I muse with the greatest affection of my flower, I have known from my infancy in their shapes and colours." তাঁর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কবিতার স্নায়ুতে এক গভীর রহস্যময়তা। 
আর তাই তার ছিল এক স্বাধীন সত্তা। তাই তিনি বন্ধু ব্রেইলিকের লিখবেন, কবি শেলির সঙ্গে ১৮১৭ সালের তিনি দেখা করেন নি। ওয়ার্ডস ওয়ার্থ আর বায়রনকে ছেড়ে কথা বলেননি। তবে তিনি একজনের কাছে ছিল আজীবন নতজানু। তিনি হলেন 'শেকসপিয়ার', 'ট্রয়লাস অ্যান্ড ক্রেসিজ' প্রসঙ্গে তিনি লিখলেন-" The genius of Shakespeare was an innate University wherefore he had the utmost achievement of human intellect prostrate beneath his indolent and kingly gaze." 
কীটসকে আবার অনেকে গ্রিক বলে মনে করেন। তার কবিতায় প্রেম থেকে কবিতার অনেক উপকরণ গ্রিক সভ্যতা ও সাহিত্যের চরিত্র এবং মিথ সঞ্চারে সৃজিত। যেমন এনডিমিয়ন (Endymion) ১৮১৫, হাইপেরিয়ন (Hyperion)-১৮১৯, ওড(Ode) গুলোতে। 
'অটাম' (To Autumn)-১৮২০ গীতি কবিতাতে অটাম গীতি কবিতায় কবি মোহের আবাস ছেড়ে এই মর্তকে স্বীকার করে নেন; পৃথিবীতে দুঃখ, বেদনা, ক্ষয় আর সৌন্দর্যের মৃত্যু আছে কিন্তু এই প্রবহমান জীবনও নিছক অমূল্য নয়। এ যেন সেই অবিনাশী সত্যকে মেনে নেয়া বেদনা ছাড়া সুখের অনুভূতি কখনো উপভোগ্য হতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছিলেন "আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহবেদন লাগে/ তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।" 
ওড টু আ নাইটিংগেল (Ode To a Nightingale)- ১৮১৯ শ্রেষ্ঠ কবিতা। কবিতাটি বিভীষিকাময়, যন্ত্রণাকাতর জীবন থেকে মুক্তি লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষা দিয়ে শুরু হয়। গ্রিক মিথ চরিত্র মদের দেবতা বাক্কাসের ইন্ধনে কবি ইন্দ্রিয়কাতর হয়ে বাস্তবকে ভুলে যান নাইটিংগেলের মদির গান শুনে বেদনাকে ভুলে থাকতে। নাইটিংগেলের গান কবি মন আসক্তিপূর্ণ করে, কবি মন আফিম খেয়ে বিস্মৃতির নদীতে ডুবে যেতে চায়। কিটসের অসাধারণ উক্তি "কী ব্যাথা হৃদয়ে বাজে। সেই সঙ্গে অবশ আবেশ/ চেতনা জড়ায়ে আনে কোন বিষ করেছি কি পান/ অথবা আফিমের সুরাপাত্র করেছি নিঃশেষ।" এভাবে কবি নাইটিংগেলের গানের মায়ায় স্বপ্নছায়াময় কল্পনার রাজ্যে তলিয়ে যান। কারণ এ পৃথিবী শুধু বেদনার, হতাশার নাম মাত্র। কবি হৃদয় মানুষের সীমাহীন বেদনায় পিষ্ট, তাই নাইটিংগেলের গানে আশ্রয় নিয়ে করুণ জীবনের ছবি আঁকেন কবি, "এই ক্লান্তি, এই জ্বরতাপ, এই হাহাকার/ এখানে মানুষ বসে বসে শুনে একে অপরের চিৎকার।" সুন্দর তার লাস্যময়ী চোখে/ঝরে যাওয়া প্রেম তাই শুধু চেয়ে দেখে। কবির বেদনা এক থেকে সার্বজনীন হয়ে যায়। তাই কবি এই নশ্বরলোক ছেড়ে অবিনশ্বরে বিলীন হতে চান। কবিতার পাখায় ভর করে কবি অদৃশ্য লোকে চলে যান- "নেশায় মত্ত হয়ে সাথীদের নিয়ে নয়/ চলে যাবো আমি অদৃশ্য কাব্য পাখায়।" নাইটিংগেলের সুমধুর গান কবির মনে মৃত্যু বাসনা জাগায়। কবি এতো বেশি বেদনাদগ্ধ, কবির মনে হয় এই জ্বলন্ত পৃথিবীর চেয়ে মৃত্যুজ্বালাও শ্রেয়তর। মনে হয়- "কতো কতো সময় আমি অর্ধেক মৃত্যু নিয়ে ছিলাম মগ্ন/ কামনায় ছিলাম আরামদায়ক মৃত্যুর জন্য।" কিন্তু কবির এ মরণ চিন্তা স্থায়ী হয় না; নাইটিংগেলের গান কবিকে নিরাশ করে কবি বুঝেন কল্পনার শক্তি নেই যে কল্পলোককে সত্য বানাবেন। গ্রেসান আর্নে কবি যেমন চিত্রকলাকে স্থায়ী আর মানুষের জীবনকে ক্ষণস্থায়ী ভেবেছিলেন নাইটিংগেলেও কবি নাইটিংগেলের গানকে চিরস্থায়ী বলেন কারণ হাজার বছর ধরে নাইটিংগেলের সুমধুর গান মানুষ শুনে গেছে; মানুষ মরণশীল কিন্তু নাইটিংগেলের গান অমর। কবির স্বপ্নভঙ্গ হয় যখন নাইটিংগেল উড়ে চলে যায়। নাইটিংগেলের গান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কবি মর্তে ফিরে আসেন। কবি বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে ভাবেন তিনি স্বপ্নে না জাগরণে ছিলেন। তাই কবি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে ভাবেন "এ কি শুধু ভাবনা না ঘুম জাগরণ/ পলাতক গান- এটা কি ঘুম না জাগরণ।" কবির সমর্পণ ঘটে বাস্তবতার কাছে; কল্পনার এতো শক্তি নেই যে সে তার নিজের সত্য জগত সৃষ্টি করে নেবে। কিটসের আবার স্বপ্ন থেকে, তন্দ্রা থেকে বাস্তবে পদার্পণ ঘটে। 

তাঁর 'এনডিমিয়ন'(Endymion) ১৮১৫ সালে প্রকাশিত হওয়ার  পর দু একটি প্রশংসামূলক লেখা বের হলেও, 'ব্ল্যাকউডস' পত্রিকায় সমালোচক লকহার্ট লেখেন, "হাভাতে কবি হওয়ার চাইতে হাভাতে ডাক্তার হওয়া ভালো।কাজেই মিঃজন এখন তাঁর দোকানে ফিরে যান, তাঁর প্লাস্টার,ওষুধ আর মলমের বাক্সের কাছে।' সেই ব্যাক্তির মতে,কীটসের কাব্যগ্রন্থটি-'imperturbable drivelling idiocy'.
যাঁর বাবা মা অকালে মারা যান, ভাইয়ের অকাল মৃত্যু, প্রেমিকার অনীহা, তারপর এই সমালোচনা।হৃদয় ভেঙে চৌচির, তবুও ভাই জর্জকে লিখলেন,"যেরকম সমালোচনাই হোক,আমি নিশ্চিত যে আমার মৃত্যুর পর ইংরেজ-কবিদের মধ্যে আমাকে৷ গণ্য করা হবে।" কিন্তু অনেকে মনে করেন,তাঁর অনেক যন্ত্রণার মধ্যে এটাও একটি। 

ভাই টম যখন যক্ষায় মারা গেলেন, তখন তিনি বন্ধু ব্রাউনের বাড়িতে উঠলেন। সেই বাড়ির নাম আজ 'কীটসের বাড়ি'। সেখানেই দেখা হয়েছিল প্রতিবেশিনী 'ফ্যানি ব্রাউনের' সঙ্গে। তার মা আর বোনের নামে যার নাম। ফ্যানির বয়স তখন আঠারো, আর কীটসের তেইশ।কীটস আমৃত্যু ভালোবাসলো তাকে।
১৮১৭ সালে সে ইজাবেলা জোনস নামে এক শিক্ষিতা তরুণীর প্রতি আকৃষ্ট হন। শারীরিক সর্ম্পকও ছিল। কিন্তু ফ্যানি ব্রাউনের প্রতি ছিল তার আমৃত্যু প্রেম। 'Bright Star' কবিতা তাকেই নিবেদন করেন তিনি।
যখন অনবরত জ্বর আর কাশি তার সঙ্গে উঠছিল রক্ত,তখন তিনি বুঝে যান তাঁর মৃত্যু আসন্ন। এই সময় লেখা তাঁর 'ওড' এবং কবিতা হলো---

 কিটসের বিখ্যাত The Eve of St Agnes, La Belle Dame Sans Merci, Endymion, Hyperion, Ode to a Nightingale, To Autumn, Ode On A Gracian Urn ইত্যাদি। ইংরেজি ভাষায় পাঁচটি বিখ্যাত Ode এর মধ্যে Ode to a Nightingale অন্যতম। Ode On A Gracian Urn এ কিটসের একটি বিখ্যাত উক্তি হলঃ "Beauty is truth, truth beauty that is all Ye know on earth, and all ye need to know"
ফ্যানি ব্রাউনের প্রতি প্রেমের আকুলতা থেকে লিখলেন --
"আমার ভালোবাসা আমায় কী যে স্বার্থপর করেছে।তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না- তোমার সঙ্গে আবার দেখা হওয়ার কথা ছাড়া কিছুই মনে পড়ছে না আমার- মনে হচ্ছে আমার জীবন থেমে গেছে- আমি আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না। তুমি আমায় নিজের ভেতর শুষে নিয়েছ। এখন আমার মনে হচ্ছে আমি ডুবে যাচ্ছি- তোমাকে এক্ষুনি না দেখলে কী দুর্দশা হবে আমার.... আমি অবাক হই যে লোকে ধর্মের জন্য শহীদ হয়- শুনে আমার গা শিরশির করছে, এখন আর করে না- আমার ধর্মের জন্য আমি প্রাণ দিতে পারব না- প্রেমই আমার ধর্ম- তাঁর জন্য আমি মরতে পারি- আমি মরতে পারি তোমার জন্য।"

কীটসকে অসম্ভব ভালোবাসতেন শেলি। কীটসের মারণরোগের খবর যখন তার কাছে পৌঁছয় তখন তাকে আমন্ত্রণ জানান শেলি৷ শেলির ধারণা ছিল আবহাওয়া বদল হলে কীটস হয়তো সুস্থ হয়ে উঠবেন। হয়তো তাঁর সঙ্গে কীটসের যন্ত্রণাকে লাঘব করবে৷ ভীষণ অসচেতন কীটস কিন্তু শেলির আতিথেয়তা গ্রহণ করেননি। ১৮২০ সালে কীটস ইতালি যাত্রা করলেন ঠিকই, পৌঁছলেন রোম শহরে, কিন্তু শেলির কাছে নয়। এক বছরের মাথায় ১৮২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২৩ তারিখে রোমেই মৃত্যুবরণ করলেন। 

বন্ধুরা সমাধি পাথরে আঁকা একটি তার-ছেঁড়া বাদ্যযন্ত্রের নীচে লিখছিল এই জলের লিখন--
"শত্রুদের ক্ষতি করার ক্ষমতায় তিক্ত হৃদয়ে মৃত্যুশয্যায় শায়িত এই তরুণ ইংরেজ কবি চেয়েছিল এই সমাধিলেখা-- 'এখানে শুয়ে আছে সে, যার নাম জল দিয়ে লেখা।"

কীটসের এই সমাধিস্থলটিকে এত পবিত্র মনে হয়েছিল শেলির যে, ইছে প্রকাশ করেছিলেন মৃত্যু হলে তাকেও যেন সমাধিস্থ করা হয় এই স্থলেই। একমাস পরে শেলি লিখলেন কীটসকে নিবেদিত কবিতা "অ্যাডোনিস"। পরের বছর জুলাই মাসে ২৯ বছর বয়সি শেলির মৃতদেহ যখন ভেসে এল সমুদ্র থেকে, দাহ করা হল তাঁর শরীর, তাঁর শরীরভস্ম রাখা হল কীটসের পাশেই সমাধিতে। ১৮৭৯ সালে মৃত বন্ধু সেভার্নের মতো। সবশেষে বলতে ইচ্ছে করে- মৃত্যু, এত অহংকারে কিছু নেই তোমার....।
----------------
আরও পড়ুন

নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত(২০১৬) কবি বব ডিলানের জীবন ও কবিতা। 
আলোচনা ও অনুবাদ করলেন--সৌম্যদীপ চক্রবর্তী।

Post a Comment

0 Comments