জ্বলদর্চি

অসুখে নয় দহনে/ গৌতম বাড়ই

ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু 

অসুখে নয় দহনে

গৌতম বাড়ই


শরীরের সাথে মন অসুস্থ হয়ে আসে,
কষ্টশরীরে তখন বিড়ম্বনার ঘোর।
হিমজোছনারা সারাক্ষণ ছুঁয়ে রয়
মন যখন আঙিনাতে দাঁড়ায়
মায়াবী বলে- ভেতরে এসো
এ কোষে কোষে জন্ম মৃত্যুর রহস্য
স্নায়বিক অসুস্থতা একরাশ কালো অন্ধকার
কাম মোহ লক্ষ্য ভেদী নীহারিকায়
বিপন্ন সংগঠন।
ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের সাথে আলাপ আছে?
কী বোকা বোকা লাগে এসব নাম বললে
তাই না?
আমার অসুস্থতার তৃতীয় রাত্রির গভীরে
একপাল উন্মাদ বেড়ালের সাথে 
আচমকা একাকার।
তাদের বিকল জঙ্ঘায় খিদের সাথে 
একরাশ বেঁচে থাকবার অপরাধবোধ।
সনাতন পুঁথি গাঁথে শাদ্বলে কোমর চুবিয়ে আলাপন
পৃথিবীর সমস্ত মৃত্যু অবশেষে বাঁচবার 
একমাত্র রাস্তাই দেখায়-
অনেক মৃত্যুর পর কুম্ভকর্ণ মৌতাতে ফেরে
আমার নক্ষত্ররাত আগুন জ্বালিয়ে দেয়
অসুখটা কোথায় এ শরীর না মনে?
যদি শরীরে কোষের গভীরে দেখতে পাব না
মন সে তো আরও যোজন গভীরে
পুরাতন ছাল বাকল ছেড়ে রাতে ভেসে উঠে
সেই আদিম পোড়া চাঁদ।
এই আলোয় বিবসনা হয় রক্তিমা 
সমস্ত জানুপ্রদেশ উলঙ্গ করে উদ্যত স্তনবৃন্তে
আহ্বান--এসো ক্রীড়াবিদ যুদ্ধ মন্থনে 
তারপর পাকল বর্ণ থেকে বিবর্ণ ছাই হবে।

এ পোড়া জীবন কাঁদে বারবার শারীরিক অসুখে
সরলরেখা তো নয়-ই আঁধারের বৃত্ত কাটি মননে
আরও গভীর অন্ধকারে
সুনসান কিছু উদাসীন বিরক্ত বাসনা
মানুষ ফেরী করবো এবার ঝোলায়
যোনীঅঙ্গ তো কবেই  আদিম ব্যবসায় নামিয়েছি
এবারে একে একে ঝোলায় থাকবে
লিভার কিডনি চোখ হার্ট আর মনুষ্য লিঙ্গ
দু -হাতে চোখ মুখ কান এসব শব্দে 
ঢাকবার প্রয়োজন নেই,
এর চেয়ে ঢের ধ্রুব সত্যি আছে জানবে।

অন্ধকারের পর্দা তিরতির কাঁপছে ক্রন্দনে
আমাদের প্রত্যেকের এই বেনিয়া হাতে
অজস্র মৃত্যুর গন্ধ লেগে আছে।যত মানুষের মৃত্যু
ততই বেনিয়ার লক্ষী পয়মন্ত ঝাঁপি।
একটা মৃত্যু আমাদের প্রত্যেকের বামবগলে গুঁজে
ধার্মিক ভণ্ড সেজে ভালো থাকি
দিনান্তে হিসাবে বোঝা যায় সব
কতটা দুধ আর কতটা পানি?

জিজীবিষা অমোঘ টানে পরিযায়ী ছক কষে
পাখির ডানার গন্ধে দূরাগত বিশ্রাম জানতাম
এখানে মার্জনা উন্মাদ মার্জারের পিঠে 
আকাশগঙ্গায় মেশে।
সাঁজালির আধো আলোয় হৈয়ঙ্গবীন জিহ্বার
তৃপ্তিকণায় গোলকধামের অপরূপ রূপকথা।
ভ্লাদিমির লেনিনের সাথে একান্তে কিছু কথা 
শারীরিক বিকলতার রাত গভীরে-
এতো রাগ কেন পাথরের দেহে? 
এত দীর্ঘ সুউচ্চ প্রদর্শন কেন পাথরের দেহে?
আমাদের আশ্রয় আমাদের জীবনে হোক
জীবনের কথাগুলো সব কথকঠাকুরের মুখে।
অস্থিরতা শরীরকে স্থিতি দেয় না
একরাশ অন্ধকার ঠেলে মনের সন্তরনে
ঘাটোয়াল ভাই দু-চারটি কথা বলে
মর্তুকাম কে দিলখুশ করো এমন সময়
পথেই এবার নেমো সাথী
দিগন্তে দিকচক্রবালে আস্তিনে আস্ফালন
আমাদের একমুঠো খাবার আর একটা
খোলামেলা নীল আকাশের স্বাধীনতা
রাতের আঁধারে অসুস্থতা এ সুস্থতা চায়।

শরীর আর মনের অসুস্থতা মাপতে গিয়ে দেখি
উন্মাদ বেড়ালেরা একে একে উড়ে গেছে
নীহারিকার পথে রাতের কালো গভীরে
যেখানে নক্ষত্রেরা জ্বলে আবহমানকাল।
আমাদের কোন অসুখ হয়নি বা হয়না
যা হয় তা এই--
শরীর আর মনের মাঝে এক সদ্য গড়ে ওঠা
বহুধা বিভক্ত প্রাচীর।
----------------------------------
আরও পড়ুন। ক্লিক করুন। 
 চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো
সন্দীপ কাঞ্জিলাল


Post a Comment

1 Comments