জ্বলদর্চি

এবার পুজোয়/ আভা সরকার মন্ডল

অলংকরণ- সুদেষ্ণা রায়চৌধুরী     

গুচ্ছ ছড়া

আ ভা  স র কা র  ম ন্ড ল  


মহালয়া 

ঝলমলে সব মন গুলো আজ ভুলে গেছে  স্বপ্ন দেখা
তবু ও তো হাতছানি দেয় দূরের কিছু আলোর রেখা
মহালয়ার ভোরে---
পুজো পুজো গন্ধ গুলো ডাক দিয়ে যায় জোরে।।

বই খাতা সব তুলে রেখে আমার কিশোর বেলা
কাছে যেন ডাকছে আবার ভাসিয়ে মন ভেলা
ফুল কুড়াতে নামি---
ঘাসের শিশির পা ধুয়ে দেয় চমকে উঠি আমি।।

আকাশ বাতাস আজও মাতে চণ্ডীপাঠের সুরে
আমিই শুধু ভুলে ছিলাম, সে ছিল না ‌ দূরে
ফেরে ছেলেবেলা---
মহালয়ার ভোরে জাগায় বুকে দিয়ে ঠেলা।

ছেলেবেলার ডাকটি শুনে ছুটে গেলাম পথে
সামলে নিয়ে ধুকপুকানি বাইরে কোনো মতে
অপেক্ষায় নেই কেউ---
শুধু শুধু বুকের মাঝে ণল পাথাল ঢেউ।



এবার পুজোয়

এবার পুজায় ঘটছে যত 
হতচ্ছাড়া কাণ্ড,
তর্পণ থেকে বোধন যেতে
শুকায় ঘিয়ের ভাণ্ড।

শুকনো মুখে সরস্বতী 
বসে দেবীর বামে,
ধনুক হাতে কার্তিক দাদা 
ঘুরছে বিনা কামে।।

লক্ষ্মী মায়ের মুখখানি ভার 
গণেশ তাঁর ই কাছে,
ইঁদুর,ময়ূর হাঁস পেঁচারা 
ঘুরছে গাছে গাছে।।

দুগ্গা মায়ের শরীর জুড়ে 
স্যানিটাইজার পালিশ,
সিংহ, অসুর বেজার,তবু
মুখে নেই তো  নালিশ।।

কৈলাস মহা তুষ্ট, পেয়ে 
 নন্দি ভৃঙ্গির সেবা,
কলকে হাতে অচৈতন্য 
কলির মহাদেবা।।


রুটি রুজির চাবি

ষোল আনা তোড়ে জোড়ে
সাজছে কুমোরটুলি,
আনতে চেয়ে ঘরে মাকে 
ব্যস্ত রং আর তুলি ।।

তাঁরই আসার পথটি চেয়ে
কাজের হাত যে কত,
চলছে খেটে সকাল সন্ধ্যা
সুখে যে যার মত।।

উৎসব শুধু নয় অট্টনাদ
রুটি রুজির চাবি,
পুজোর প্রতি সবারই তাই 
অভিন্ন এক দাবি।।

বিসর্জনের পরে থেকেই 
আবাহন তাই চলে,
আসতেই হবে মাকে নেমে
মাটির ধরা তলে।


লক্ষ্মী পেঁচা

দেখতে এলাম সেজেগুজে 
তোমরা আছো কেমন,
আসছে পুজো তবু দেখি
আনন্দ নেই তেমন!!

খবর পেয়ে তোমরাও তো 
আমায় দেখতে এলে
আমার গায়ে পুজোর কোন 
গন্ধ কি কেউ পেলে?

লক্ষ্মী পেঁচা নামে আমি
লক্ষ্মী মায়ের বাহন,
শুনতে এলাম স্বর্গ থেকে
তোমাদের সাতকাহন।।

সেখান থেকে  নিতে এসে
তোমাদেরই খবর,
দেখি ধরায় ঘরে ঘরে
যুদ্ধ চলছে জবর।।

মর্ত্য বাসীর বিপদ এখন 
বলব গিয়ে মাকে,
এমন সময় এদের ফেলে
দূরে কি কেউ থাকে?

কেমনতর মা তুমি হে
কেমন তোমার আচার,
সন্তানেরা কষ্টে আছে
যুদ্ধ চলছে বাঁচার।।

চাইলে পুজো, আগে ঘরের 
রোগ-ব্যাধিটা সারাও ,
আশীর্বাদের ঝুড়িটাকে
নিয়ে পাশে দাঁড়াও।।


টলোমলো

পুজোর খুশির দিনে মেয়ে
চলল বাপের বাড়ি,
মেঠো পথে চলছে দুলে 
পরে ঢাকাই শাড়ি।।

দু'ধারে ফুল গাছের সারি 
ফুল ফুটিয়ে শাখে,
 সম্ভাষণে সিক্ত করে 
গল্প শোনায় তাকে।।

বিলের ধারের পাখপাখালি 
গভীর অভিমানে,
ভুলে থাকার কারণটা কি 
শুধায় কানে কানে ।।

টলটলে জল শাপলা-শালুক 
দু'হাত মেলে ডাকে,
ছলছলে চোখ রাইকিশোরী
দেখে চলার  ফাঁকে।।

ঘোমটা টানা রুপোর নথে
মুখটি ঢলো ঢলো,
সেই মুখে দুই গভীর দীঘি
করছে টলোমলো।




Post a Comment

0 Comments