জ্বলদর্চি

‘লুডো’ – বাস্তবের বোর্ডে আড়াই ঘণ্টার জমজমাট খেল/রাকেশ সিংহ দেব

‘লুডো’ – বাস্তবের বোর্ডে আড়াই ঘণ্টার জমজমাট খেল

পরিচালক : অনুরাগ বসু
অভিনয় : অভিষেক বচ্চন, আদিত্য রয় কাপুর, রাজকুমার রাও, পঙ্কজ ত্রিপাঠি, রোহিত সরফ, ফাতিমা সানা শেখ, সানয়া মালহোত্রা, আশা নেগি। 
মুক্তি – ১২ নভেম্বর ২০২০, নেটফ্লিক্স
রেটিং : 4/5  
নদীর ধারে নির্জনে পাথরের উপরে বসে দুজন মানুষ তাদের আইপ্যাডে লুডো খেলছে। তাদের চোখের সামনেই ঘটছে মুভির বিভিন্ন চরিত্রদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড। সেইসব কান্ড দেখতে দেখতে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে ঘটনাপ্রবাহ এবং তার ফলাফল নিয়ে। তাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে ইহকাল পরকাল এবং পাপ পুণ্যের মূল্যায়ণ নিয়ে। এর সাথে মুভির সাথে সমানে চলছে লুডোর ঘুঁটি। ‘লাইফ ইজ্‌ লুডো, অ্যাণ্ড লুডো ইজ লাইফ’ জীবনের গোলকধাঁধায় আবর্তিত বিভিন্ন রঙিন চরিত্রগুলি আসলে লুডোর ঘুঁটির মতো। প্রত্যেকে নিজের মতো করে যাত্রা শুরু করে এবং অবশেষে প্রত্যেককেই একই ঘরে আসতে হয়। জীবন-মৃত্যু, পাপ-পুণ্যের এরকম অন্যধারার ন্যারেটিভের কথা বলে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত  পরিচালক অনুরাগ বসুর ছবি ‘লুডো’। ফাঁস হওয়া সেক্স টেপ, টাকা ভর্তি স্যুটকেস থেকে শুরু করে দু'টো ভয়াবহ খুন; চারটে একেবারে আলাদা ধরনের ভাগ্য কিছু কাকতালীয় ঘটনা এবং এক হার্ডকোর অপরাধীর কারণে একে-অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়। লুডোর প্রতিটি ঘুঁটি যেমন অন্য ঘুঁটির উপর প্রভাব ফেলতে পারে, এক নিমেষে ঘ্যাচাং ফুঃ করে দিতে পারে সেরকম একজন মানুষের কর্ম অন্যের জীবনে সচেতন বা অসচেতন ভাবে প্রভাব ফেলে। ‘লুডো' ছবির পাঞ্চলাইন ‘ইনসান ক্যায়া হ্যায়? লাইফ কী বিসাত পর হরি, নীলি, লাল, পীলী গোটিয়া.‌.‌.‌অউর ইন সবকা পাশা হ্যায় উপারওয়ালে কে হাথ।'এই ধারণাকেই অনুরাগ বসু চারটে গল্পের মাধ্যমে একসঙ্গে কিন্তু আলাদা আলাদা ভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। জীবনের সঙ্গে দাবার ছকের তুলনা তো সেলুলয়েডের পর্দায় অনেকবারই করা হয়েছে, কিন্তু লুডো থেকে বের হওয়া এই চার রঙের গল্প একেবারেই অন্যরকম। লুডো-তে চারটে গল্প একসঙ্গে দেখানো হয়েছে, যেগুলি আলাদা আলাদা মোড় হলেও একটা সময়ে তারা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। 
প্রথম গল্প হল আকাশের (‌আদিত্য রয় কাপুর)‌, যার প্রেমিকা শ্রুতির (‌সানয়া মালহোত্রা)‌ সঙ্গে একটি সেক্স টেপ পর্ণ সাইটে ফাঁস হয়। অন্যদিকে শ্রুতির চারদিনের মাথায় অন্য কারোর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা। কিন্তু এই টেপ এখন উভয়ের জীবনেই সমস্যার সৃষ্টি করেছে এবং তাদের এই সমস্যা থেকে বের করতে পর্দায় আসেন সত্যেন্দ্র ‘সত্তু’ ত্রিপাঠী (পঙ্কজ ত্রিপাঠী)। 

দ্বিতীয় গল্প হল বিট্টু তিওয়ারির (‌অভিষেক বচ্চন)‌। যে একসময় ছিল সত্তুর ডান হাত। কিন্তু সংসার করার চক্করে বিট্টু অপরাধ জগত থেকে সরে আসে। বিট্টুর পুরনো অপরাধের জন্য ছয় বছরের জেল হয়। কিন্তু কথায় আছে পুরনো কর্ম কখনও পিছু ছাড়ে না। জেল ফেরত বিট্টুর জীবন এবং সংসারে পড়ে সত্তুর কালো ছায়া। 

তৃতীয় গল্প হল অলোক ওরফে আলুর (‌রাজকুমার রাও)। সে খুচরো পার্ট টাইমার ক্রিমিনাল, মিঠুন চক্রবর্তীর হার্ডকোর ফ্যান এবং এক ছোট রেস্টুরেন্টের মালিক। যে আজও তার স্কুল জীবনের প্রেম পিঙ্কিকে (‌ফাতিমা)‌ প্রচণ্ড ভালোবাসে। আর এই ভালোবাসার খাতিরে অলোক চুরি থেকে খুন সবকিছু করে বসে। 
চতুর্থ গল্প হল রাহুল আর শ্রীজার। যারা নিজের নিজের জীবন ও চাকরি নিয়ে সমস্যায় রয়েছে। কিন্তু এক ঝটকায় ভাগ্য এমন রূপ বদলায় যে এই দুইজনের সহজ সমতল জীবনে আসে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন। আর এই সব গল্প ও চরিত্রগুলির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সত্তু ত্রিপাঠি (‌পঙ্কজ ত্রিপাঠি)‌। সত্তুর জীবনের ঘটনা এই সব চরিত্রগুলিকে প্রভাবিত করে বা এরকমভাবেও বলা যায় যে সব গুটিগুলিকে নিজের নিজের ঘরে পৌছে দেয়।

পরিচালক অনুরাগ বসুর কাজ নিয়ে কোনও সন্দেহ প্রকাশ না করাই ভালো। তার আগের শেষ দুটি ছবি ‘বরফি’ এবং ‘জগগা জাসুস’ ছবিতেই প্রতিটি চরিত্র যেন কথা বলে তার নির্দেশনায়। দারুণ অভিনেতাদের অভিনয়ের সমন্বয় ও সঙ্গে পরিচালকের পরিচালনা এই ছবির প্রধান ইউএসপি। একটা ছবিতেই যেখানে অসাধারণ সব অভিনেতারা রয়েছেন সেই ছবির অভিনয় অসাধারণ হবে সেটা বলাই বাহুল্য। সব চরিত্রেই অভিনেতারা তাঁদের দক্ষ অভিনয় দেখাতে সফল হয়েছেন। বিট্টু তিওয়ারির চরিত্রে অভিষেক বচ্চন একেবারে ফিট ছিলেন। বহুদিন পর অভিষেক আবারও তার অভিনয় দেখানোর সুযোগ পেলেন এবং তিনি নিরাশ করেননি। কখনও রাগ, কখনও ভালোবাসা আবার কখনও আবেগ তার চোখে মুখে স্পষ্ট ছিল। সত্তু ত্রিপাঠির চরিত্রে পঙ্কজ ত্রিপাঠি একেবারে যথাযথ। অলোক কুমারের চরিত্রে রাজকুমার রাও একেবারে নিজেকে ঢুকিয়ে নিয়েছিলেন, তিনি যে সব চরিত্রেই পারদর্শী তা আবার একবার প্রমাণ করলেন। অন্যান্য অভিনেতা তথা সানয়া মালহোত্রা, ফাতিমা, আদিত্য রয় কাপুর সহ অন্যান্যরাও যার যার চরিত্রে যথেষ্ট দক্ষ অভিনয় প্রদর্শন করেছেন। অনেকদিন পর প্রীতমের সুর করা গানগুলো শুনতে মন্দ লাগেনা। এই বছরের এই কঠিন সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউডি ছবিগুলির মধ্যে ‘লুডো’ অবশ্যই মাস্ট ওয়াচ্‌। 

রেটিং : 
5 অসাধারণ
4 বেশ ভালো
3 ভালো
2 দেখতে পারেন 
1 না দেখলেও চলবে

জ্বলদর্চি পেজ-এ লাইক দিন।👇



আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments