জ্বলদর্চি

লক্ষ্মী : দিপাবলীর মিইয়ে যাওয়া সুতলি ‘বম্ব’/ রাকেশ সিংহ দেব

 LAXMII CINEMA 

লক্ষ্মী : দিপাবলীর মিইয়ে যাওয়া সুতলি ‘বম্ব’ 

পরিচালক - রাঘব লরেন্স 
অভিনয় – অক্ষয় কুমার, কিয়ারা আডবানী, শরদ কেলকার, রাজেশ শর্মা, আয়েশা রাজা মিশ্র, মনু ঋষি চাড্ডা। 
মুক্তি – ৯ নভেম্বর, ২০২০। ডিজনি প্লাস হটস্টার । 
রেটিং – 1/5

করোনা জট, কট্টরপন্থীদের আক্রমণ সামলে নাম পালটে অবশেষে সিনেমা হলের পরিবর্তে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেল অক্ষয় কুমারের হরর কমেডি মুভি ‘লক্ষ্মী’। বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর থেকেই বলিউডের একটা বড় অংশ ক্ষোভের মুখে পড়েছে, যার জেরে ‘সড়ক ২’-এর ট্রেলার ডিজলাইকের নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছে। ‘লক্ষ্মী’-কে এই ক্ষোভ ও বিতর্কের হাত থেকে বাঁচাতে ইউটিউবে ছবির ট্রেলার বা গানের লাইক/ডিজলাইক সংখ্যা গোপন রাখবার সিদ্ধান্ত নেয় নির্মাতারা। তবে শেষরক্ষা হল না, ‘সড়ক-২’-এর মতোই দর্শকদের চূড়ান্ত হতাশ করল ‘লক্ষ্মী’। প্রথম থেকেই এই মুভি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। পরিচালকের মাঝপথে সিনেমা ছেড়ে চলে যাওয়া আবার পরে ফিরে আসাই হোক বা ছবির বিতর্কিত টাইটেল। এই লক্ষ্মী থেকে ‘বম্ব’ তো আগেই বাদ পড়েছিল, দিওয়ালিতে যে ধামাকার আশা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে করেছিলেন অক্ষয়সহ গোটা টিম- তা বাস্তবে হোল না। বিতর্কের যে হাইপ তৈরি করে বৈতরণী পার করার কথা ভেবেছিল পরিচালক, প্রযোজক তা মাঠেই মারা গেল। চরম ‘হিন্দুফোবিক’ মুভির তকমা পেয়ে মিইয়ে গেল ‘বম্ব’-এর বারুদ। গত ৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ডিজনি প্লাস হটস্টারে মুক্তি পেয়েছিল পরিচালক রাঘব লরেন্সের এই ছবি। ছবিতে অক্ষয় কুমার ছাড়াও রয়েছে কিয়ারা আডবানী এবং শরদ কেলকার।  
ছবির গল্পে দেখানো হয়েছে, ছবির প্রধান দুই চরিত্র আসিফ (অক্ষয় কুমার) ও রশ্মি (কিয়ারা আডবানী) একে-অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করে। কিন্তু আসিফ মুসলিম হওয়ায় রশ্মির মা ও বাবা (‌আয়েশা রাজা মিশ্র ও রাজেশ শর্মা)‌ আসিফকে জামাই হিসাবে গ্রহণ করতে চায় না। বউ এর কথায় সবার সাথে সম্পর্ক ঠিক করার জন্য শ্বশুরবাড়িতে পা রাখে আসিফ। ছবিতে টুইস্ট আসে যখন আসিফের ওপর ভর করে রূপান্তরকামী আত্মা লক্ষ্মী (‌শরদ কেলকার)‌, যে আসিফের শরীর ব্যবহার করে নিজের মৃত্যুর বদলা নিতে ব্রতী হয়েছে। ভৌতিক-কমেডি হিসাবে ছবির প্রচার করা হলেও, লক্ষ্মীকে দেখে না ভয় লেগেছে না মজা। ছবির কাহিনী একেবারে খিচুড়িতে পরিণত হয়েছে।
মাথা আর মাথার বোধবুদ্ধি তফাতে রেখেই এই সিনেমা দেখা প্রয়োজন। কেবল চ্যানেলের কল্যাণে দক্ষিণী সিনেমার হিন্দি ডাবিং দেখার অভ্যাস সিনেমার দর্শকদের অনেক আগে থেকেই রয়েছে। তাতে বলিউডের রং চড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছে দক্ষিণী পরিচালক রাঘব লরেন্স, যে আবার ‘কাঞ্চনা’রও (২০১১ সালের এই তামিল ছবি থেকেই অনু্প্রাণিত) পরিচালক-অভিনেতা। যে সিনেমা ইউটিউব বা সোনি ম্যাক্সের মতো কেবল চ্যানেলে দর্শক অনায়াসে দেখে নিতে পারে, তা আবার কেন সময় এবং সাবস্ক্রিপশন ব্যয় করে ডিজনি প্লাস হটস্টারের মতো OTT প্ল্যাটফর্মে দেখতে হবে তা বোধগম্য হয় না। তবে কাঞ্চনার মতো দর্শক মন ভরাতে পারল না লক্ষ্মী, সৌজন্যে ছবির ঢিলেঢালা চিত্রনাট্য। দুর্বল সংলাপ। বিভিন্ন প্রেসমিটে অক্ষয় কুমার আগেই দাবি করেছিল এটা নাকি তার তিন দশকের ফিল্মি কেরিয়ারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং চরিত্র। পরনে লাল শাড়ি, কপালে বড় লাল টিপে ছবির ফার্স্ট লুকেই চমকে দিয়েছিল অক্ষয় কুমার। তবে আশা জাগিয়েও হতাশ করল এই ছবি, দাবি নেট নাগরিকদের। বিশ বছর আগে নিজের কাল্ট কমেডি ছবি ‘হেরা ফেরি’ এর কমেডি ম্যানারিজমে যে এখনকার দর্শক মজবে না তা বুঝতে পারেনি অক্ষয় কুমার। সময়ের সাথে সাথে ছবির ভাষা ও মেকিং অনেক স্মার্ট হয়েছে সেখানে আজকের সময়ে পঞ্চাষোর্ধ এক অভিনেতার সাথে এক হাঁটুর বয়সী নায়িকার নাচা গানা রোমান্স আর নেওয়া যায় না। শুধু নেটিজেনরাই নয়, ফিল্ম সমালোচকদের কাছেও প্রশংসা কুড়াতে ব্যর্থ লক্ষ্মী। একঝাঁক ভালো অভিনেতাদের নিয়েও কিভাবে জঘন্য ছবি বানানো সম্ভব তার আদর্শ উদাহরণ ‘লক্ষী’। ছবির গানগুলো মনে দাগ কাটতে ব্যর্থ হয়। তবে কম সময়ের জন্য হলেও শরদ কেলকারের অভিনয় মনে দাগ কাটে, ছবির মধ্যে ভালো কিছু বলতে এটুকুই।

রেটিং
5 – অসাধারণ
4 – বেশ ভালো
3 – ভালো
2 – দেখতে পারেন
1 – না দেখলেও চলবে

আরও পড়ুন

Post a Comment

0 Comments