জ্বলদর্চি

নিস্তরঙ্গ স্রোতের অভিমুখ(সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মহাপ্রয়াণে)/ তপনজ্যোতি মাজি


নিস্তরঙ্গ স্রোতের অভিমুখ (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মহাপ্রয়াণে)


সহজ শব্দের মতো বাক্যের শরীরে লগ্ন হয়ে আছো।
দীর্ঘ নক্ষত্ররেখাটিকে অমর্ত্যপথ ভেবে চেয়ে থাকে
নির্নিমেষ চোখ।
তোমার ঘুম পাড়ি দেয় নীরব নগরে।
কবি জানে এই জাগরণ
নিস্তরঙ্গ স্রোতের অভিমুখে নৌকা ভাসানো।
ভেসে যায় অবস্থান।
ভেসে যায় প্রাচীরের আড়ালে সংগৃহীত
স্বর্ণাভ শস্য।

প্রশান্ত রাত্রির মুখখানি অভিব্যক্তিময়।
দিগন্তরেখার পর মহাসিন্ধুর শুরু। 
মৃন্ময় প্রদীপের অঋণী অগ্নিশিখার আলোতে 
সারিবদ্ধ মানবিক মুখ।
মৃত্যু নয় মহাপ্রয়ান।
সব মহাজীবনের জন্যে অভাব বোধ করে 
মহারাত্রি।
তুমি বলেছিলে কবিরা তপস্বী।
হয়তোবা তাই।
মহাপ্রস্থানের পথ কি নক্ষত্ররেখা 
ছুঁয়ে বিলীন হয়েছে 
মহাশূন্যময় শান্তিপারাবারে?

অজস্র প্রশ্নের অবিরাম বুদবুদ স্থির জলে।
হওয়ায় কবিতা বলা সনাতন স্বর।
কে তুমি অনির্বান শিখা?
কে তুমি নক্ষত্র পথিক?
এসো বসো এই  প্রতীক্ষালয়ে কিছুক্ষণ।
গল্প হোক কবিতা পথের।
গল্প হোক নাট্যমঞ্চের।
গল্প হোক পত্রিকা সম্পাদনার।
গল্প হোক জীবনানন্দের।
গল্প হোক সত্যজিতের।
বৈদিক কথক তুমি,জীবনের 
ধারাভাষ্যকার।

স্তুতিতে অপ্রস্তুত যে জীবন যাপন করেছো
তাকে বলি আর্যজীবন।
সব পথের শেষ হয় একদিন।
সব জীবনের গতি থেমে যায়।
এই উপসংহারে প্রস্তুত কি ছিল মন?
তুমিও কি ছিলে?
তুমি কি শুনেছিল কালের যাত্রা ধ্বনি?
এমন হাজার প্রশ্নে নীরব তোমার সংবেদী ওষ্ঠ।
মহাপথিক এই মহাপ্রস্থান কি
পুনরাগমনের আবর্তনময়
 প্রস্তুতি?
নিশ্চিন্ত করেনি সময় সারথি।
অনির্বান যাপন

শ্রেষ্ঠ পুরুষের দশদিকে সৌরবর্ণালী।
খুব কাছে থেকে যে দেখেছে সে জেনেছে অনির্বান
যাপন কোনও সূত্র নয়।
অভ্যাসে ধ্রুব।
চির অম্লান।

উপমা যথেষ্ট নয় উজ্জ্বল যাপনের কাছে।
উড়ে যায় শীতের হিমেল মেঘ
বরফের দেশে।
কথারা কাহিনী হয়ে যায় সাদা কালো 
অক্ষরে।
ছবির পর ছবি।
লৌকিক নির্মাণ কেবল জলের ওপর ছায়া।
মধ্য রাত্রির নিঃশব্দ সময় জানিয়ে দিল
পরিনির্বান কথা।

সব যুদ্ধ কি রণাঙ্গনে হয়?
সব যুদ্ধে কি রক্তপাত হয়?
অনির্বান যাপন থেকে যায়
উপসংহারহীন।


ফিরে দেখা

ফিরে দেখতে চাই।
ফিরে দেখতে চাই হেমন্তের মেঘ ঠিক কোন 
দিকে গেল।
এখনও তো শুনছি জলের পতন শব্দ।
এখনও তো দেখছি পাখির উড়ান।
এখনও তো প্রস্তুত নয় মেনে নিতে
তুমি নেই।

ফিরে দেখতে চাই। 
ফিরে দেখতে চাই জীবনের অবহমানতা।
পড়ে নিতে চাই অক্ষর প্রবাহ।
ফিরে ফিরে দেখে নিতে চাই
সব আবর্তন বৃত্ত।

দেখতে চাই নক্ষত্রলোকে তুমি কোন 
পরিচয়ে আছো।
__________
আরও পড়ুন 

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় 
"পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য বাঙালির হৃদয়ে থাকা অসম্ভব গুণী মানুষটির প্রয়াণে আজ শোকাহত অগণিত মানুষ।"---
শ্রদ্ধা ও স্মরণে কবি ও চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ সাঁতরা।

জ্বলদর্চি পেজ-এ লাইক দিন।👇


Post a Comment

0 Comments