ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু
যৌগিক জীবন
গৌতম বাড়ই
মিতালি এলোচুলে ব্যালকনিতে এসে বসলেন।এই অবেলায়। গোধূলির আলো আঁধার আর মহানগরের আলোক স্তম্ভে সবে লাইটগুলো জ্বলে উঠেছে।এক বিষণ্ণ পরিবেশ।এ সময়ে খালি পুরানো কথাগুলি মনে পড়ে।অবেলায় এই সদ্যজাত সন্ধ্যের বুকে হারিয়ে যেতে থাকে সে ভাদ্র শেষের দিনে। চুল শুকোবে বলে এসেছিল।আসলে তা নয়,এ তার অভ্যেসে পরিণত হয়ে গিয়েছে।প্রতিদিন এখানে এই সময়ে বসে সম্পর্কের মেরামতি করার উপায় খোঁজে।পেতে গিয়েও পায়না।সব হারিয়ে ফেলে। কিছু কাক এই গোধূলি লগ্নে উড়াল মেট্রোপথের রেলিং-এ এসে বসেছে।হয়ত বাসায় ফিরে যাবার আগে ক্লান্ত ডানাগুলোকে একটু জিরিয়ে নিতে। মেট্রো এ পথে এখনও চালু হয়নি,কবে হবে কেউ জানে না।তার শরীর আর মনের মতন অপার জিজ্ঞাসা নিয়ে সেও দাঁড়িয়ে।রাত একটু হতেই ধীর পদক্ষেপে ব্যালকনি ছেড়ে ঘরে ঢোকে মিতালি।
মিতালি ব্যালকনি ছাড়তেই শ্রীপর্ণা এসে বসে এখানে।জানে মায়ের পার্টনার বা বয়ফ্রেন্ড দীপায়নের এ বাড়িতে আসবার সময় হয়ে গিয়েছে।সপ্রতিভ ভঙ্গীতে এসে ঢুকবে সে এক্ষুণি।
শ্রীপর্ণা আর রুবেলা এবং মিতালি আর দীপায়ন চারটে চরিত্র ঘোরাফেরা করা এই ঘরের অন্দরে।তাদের মধ্যে দুটো সম্পর্ক জড়িয়ে আছে।শ্রীপর্ণা বোঝেনা ঈশ্বর বলে যদি কেউ থেকে থাকেন তাহলে এতো রহস্যময়তা দিয়ে এ শরীর কেন গড়েন?তার নারী শরীর তো কোনো পুরুষকে চায়না আর চায়নি কোনদিন।শরীরের ভেতর যে মন,সে মন যার প্রত্যাশী সে তো তাই চায়।এতে অন্যায়টা কোথায়?সেই মনটাকে জবরদস্ত ধাক্কা দিয়েও তো ভেঙ্গে মূল স্রোতধারায় আনা যায় না,তবে?আজ ব্যালকনিতে এই claimed physical space নিয়ে সে ভাবতে বসেছে। কিন্তু যদি conventional relationship বলা হয়,তাহলে শ্রীপর্ণার মা এবং দীপায়ন ওরাও বিবাহিত না।ওদের মধ্যেও একটা প্রেমের সম্পর্ক।ওদের টা জাস্ট একটা heterosexual relationship,তাই বলে এতো সাবলীল।Post 377 চেহারাটা কী? যখন আইনসিদ্ধ হল এক ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে। ঐতিহাসিক ছয়-ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ (ইংরেজি) রায়।মানুষের সেই বিদ্রুপ বা scepticism যেটা ভেবেছিলো সে একটু কমবে, বাস্তবিক সেটা সে দেখতে পাচ্ছেনা।তাই তার ঘরে সে বিচ্ছিন্ন একটা দ্বীপে বাস করে।শ্রীপর্ণা এখান থেকে দীপায়ন আর মিতালির প্রেমের কলকাকলী টের পায়, এ ব্যালকনিতে বসে।এমন সময় ফ্ল্যাটের কলিং বেলটা বেজে উঠলো।শ্রীপর্ণার ভাবের ঘোরে ছন্দপতন ঘটলো।রুবেলা এই একটু আগে রাসবিহারী থেকে ফোন করেছিলো আজ রাতটা সে এখানেই থাকবে।
শ্রীপর্ণা দরজা খুলে রুবেলাকে এ ঘরে নিয়ে আসে।
মিতালি আর দীপায়ন ড্রিঙ্কস আর খাবার দাবার সাজিয়ে গুছিয়ে বসেছিলেন।ওদের সম্পর্ক সাবলীল শুধুমাত্র একটি মাত্র কারণেই।
ওনারা না উঠলে এই ড্রইং রুম রুবেলার জন্য নয়।মায়ের পার্টনার বাড়ির মধ্যে ঘুরে বেড়াতে পারেন,তার পরিধির বাইরে যেতে পারেন, শ্রীপর্ণার পার্টনার তা কখনোই পারে না।
রুবেলা ঘরে ঢুকে আসে ধীর গতিতে।মিতালি শ্রীপর্ণাকে চেঁচিয়ে বলে,তোমাদের ডিনারটা আমাদের ডিনার শেষ হলে করবে।শ্রীপর্ণা মাকে বলে,এ আর নতুন কথা কী!তোমরা নিশ্চিন্তে ড্রিঙ্কস করো।
শ্রীপর্ণা আর রুবেলা তাদের ঘরে,তাদের স্পেস টুকুতে গল্পে মেতে ওঠে।মায়ের ঐ "তোমাদের" কথাটি শ্রীপর্ণার কানে বাজতে থাকে খুব।Post 377 এর পরেও কী বিরাট কিছু পরিবর্তন হয়েছে?তারা এখনো সমাজে বিচ্ছিন্ন একটা দ্বীপ,কি ঘরে কি বাইরে, আউটলুকটা বদল হয়েছে কি?হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা চলতি রীতিগুলোর বাইরে যে কোন নতুন কিছু মানুষ চট করে মানতে চায় না।তাই মা দিব্যি আছেন, তার এই সম্পর্কে সোচ্চার তিনি।অথচ আইনী রায়ে তার সম্পর্ক স্বীকৃতি পেলেও, সে তার আপন কুঠুরিতে সোচ্চার হতে পারে না।
অনেক রাতে শ্রীপর্ণা আর রুবেলা তাদের ডিনার সেরে ঘুমোতে গেলেন।শ্রীপর্ণা এই মধ্যরাতে একটা কাকের কর্কশ আওয়াজ পেল ঐ মেট্রোর উড়াল পথের থেকে।মনে মনে ভাবলো, আজ রাতে সাথী হারা হয়ত বা সে।চারটে চরিত্র, দুটো সম্পর্ক এই মহানগরীর রাত গভীরে আপন আপন কক্ষে তাদের নিজস্ব সম্পর্কে হারিয়ে গেলো।
জ্বলদর্চি পেজ-এ লাইক দিন।👇
0 Comments