জ্বলদর্চি

বিজ্ঞানে ঈশ্বরের চিহ্ন-২০ / পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

 
বিজ্ঞানে ঈশ্বরের চিহ্ন― ২০

পূর্ণ চন্দ্র ভূঞ্যা

ধর্ম : বিজ্ঞান ও ঈশ্বর

এ বৃহৎ সৃষ্টির স্রষ্টা কে? বিভিন্ন ধর্ম ও দর্শন প্রাচীন কাল থেকে প্রচার করে আসছে যে, ঈশ্বর-ই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টা। তিনি পরম। তিনি একক। কখনও তিনি নিরাকার, আবার কোথাও তাঁর নির্দিষ্ট অবয়ব রয়েছে। অর্থাৎ মূর্ত এবং বিমূর্ত― এই দুই মতবাদ প্রচলিত বিভিন্ন ধর্ম ও দর্শনে। কিন্তু বিজ্ঞানে তিনি প্রমাণিত সত্য নন। বরং বলা যায় প্রাচীন বিজ্ঞান কোন‌ও রকম ঈশ্বরের সন্ধান করেনি। তখন এ সবের প্রয়োজন বা চল ছিল না। সে-জন্য বিজ্ঞান সাধকরা বারে বারে নিপীড়িত হয়েছেন, এমনকি চরম দণ্ডভোগ করেছেন ধর্মের কালো হাতে, ধর্মের ব্যবসায়ীদের হাতে। এর উদাহরণ রয়েছে ভূরি ভূরি। ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। বাইবেলের বিরুদ্ধ মত প্রচার করার জন্য গ্যালিলিও লাঞ্ছিত হয়েছেন। বিবর্তনবাদ আবিষ্কারের জন্য ডারউইনকে বারবার হেনস্থা হতে হয়েছে। যদিও পরে ধর্ম বিজ্ঞানের কাছে তার কৃত ভুল স্বীকার করেছে। গ্যালিলিও'র মৃত্যুর ৩৫০ বছর পর মহামান্য পোপ গ্যালিলিও'র মতবাদ স্বীকার করে নিয়েছেন। ডারউইন-এর মৃত্যুর ১১৪ বছর পর ভ্যাটিকান স্বীকার করে; বিবর্তনবাদ নিছক অনুমান ছিল না, বরং তার চেয়ে বেশি কিছু ছিল।

একসময় পিয়ের লাপ্লাস তার গ্রন্থ "Mechanique Celeste" উপহার দেন নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে। পড়ার পর নেপোলিয়ন জানতে চান, 'এ গ্রন্থে ঈশ্বরের উল্লেখ নেই কেন?' প্রত্যুত্তরে নির্ভীক লাপ্লাস বলেছিলেন, 'আমার তত্ত্বে ঈশ্বরের দরকার পড়েনি।' এমন নাস্তিক উদাহরণও আছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদল হয়েছে ঈশ্বর সম্বন্ধীয় ধারণা। বিজ্ঞানের অনেক পণ্ডিত মূর্ত বা বিমূর্ত ঈশ্বরের ধারণায় বিশ্বাসী হয়েছেন। আবার এক এক জনের কাছে ঈশ্বরীয় দৃষ্টিভঙ্গি  ভিন্ন রূপে প্রতিভাত হয়েছে। মহাকর্ষ ও আধুনিক গতি-বিজ্ঞানের জনক আইজাক নিউটন ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন। অপেক্ষবাদের জনক আলবার্ট আইনস্টাইন ঈশ্বর বলতে প্রাকৃতিক বলের প্রতীককেই চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। পদার্থ বিজ্ঞানে এবছর (২০২০)-এর নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রজার পেনরোজ আবার আধ্যাত্মিক ধর্ম প্রচারক। সুতরাং আধুনিক যুগের ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে দ্বন্দ্ব মূলত ঈশ্বরের মূর্ত অথবা বিমূর্ত ধারণা নিয়ে, কীভাবে ঈশ্বরকে দেখছি বা গ্রহণ করছি তার উপর নির্ভরশীল। কারও নিকট ঈশ্বর হল অসীম শক্তি (এনার্জি), অন্য কারও কাছে তা আত্মা।

                       (এক)

মহাতপস্বী সর্বত্যাগী ঋষি-মুনি ফকিরের দেশ ভারত। আধ্যাত্মিকতার পীঠস্থান। প্রাচীন কাল থেকে সম্ভ্রান্ত তার সে-ইতিহাস। সমর্পণ যার মূল ভিত্তি। এমন সমর্পণের কেন্দ্রীয় চরিত্র একজন মহাশক্তিশালী ব্যক্তি। তার অঙ্গুলিহেলনে না-কি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবকিছু নির্ধারিত হয়। তা-ই ঈশ্বর নামে মান্যতা প্রাপ্ত। তেমন সফল কাহিনির উদাহরণও ভুরি ভুরি। রচিত হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের আকর এক একটি ধর্মগ্রন্থ। হাজার হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো হিন্দুদের দুটি উৎকৃষ্ট এমন ধর্মগ্রন্থ 'রামায়ণ' এবং 'মহাভারত'। একটি নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বী মানুষের প্রিয় এই দুই গ্রন্থে হয়তো একটি পারিবারিক ঘটনার উপস্থাপনা অতিরঞ্জিত করা হয়েছে, যার কোন‌ও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা নেই। কিন্তু তার বাইরে উক্ত ঘটনার গতিপ্রকৃতি উল্টো পথে চলার সম্ভাবনাও খুব কম। তাছাড়া এই গ্রন্থে এমন কিছু প্রবচন বা শ্লোক উদ্ধৃত করা হয়েছে, যার ব্যাখ্যা একমাত্র আধুনিক বিজ্ঞান-ই দিতে পারে। অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং এখানে ধর্ম, বিজ্ঞান ও ঈশ্বর মিলেমিশে একাকার। তেমন কিছু গ্রন্থ, কাহিনি, ঘটনা অথবা প্রবচনের উল্লেখের মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞানের মধ্যে ধর্ম তথা ঈশ্বরের অন্তর্ভুক্তির সন্ধান করব, যাতে সচেতন পাঠক বিজ্ঞানের সার্থকতা অনুসন্ধান করতে সমর্থ হন। 

এমনই একটি গ্রন্থ "হনুমান চল্লিশা"। ষোড়শ শতাব্দীর অধ্যাত্মবাদী কবি তুলসীদাসের অমর সৃষ্টি আধী বা বৈস্বরী ভাষায় রচিত এই 'হনুমান চল্লিশা'। হিন্দু মহাশাস্ত্র 'রামায়ণ'-এর উল্লেখযোগ্য চরিত্র মহাশক্তিশালী লর্ড হনুমানের গুণকীর্তনমূলক রচনা এটি। চল্লিশটি, প্রকৃতপক্ষে তেতাল্লিশটি শ্লোক রয়েছে এখানে। এর আঠারোতম শ্লোকে কবি তুলসীদাস বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একটি রহস্যের কথা উল্লেখ করেছেন। ব্রহ্মাণ্ডের রহস্য!  সেটা কী?           
এখানে দেবনাগরি এবং ইংরেজি ভাষায় মুদ্রিত শ্লোকটি 'হনুমান চল্লিশা'-এর আঠারোতম শ্লোক।  সুজলা সুফলা পৃথিবী থেকে উজ্জ্বল সূর্যের দূরত্ব কত― এ হেন বিষয়টি পৃথ্বীবাসীর নিকট তখনও রহস্যে মোড়া। আধ্যাত্মিক কবি তুলসিদাস এমন রহস্যের সহজ সমাধান 'হনুমান চল্লিশা'-র ১৮-তম শ্লোকে উদ্ধৃত করেছেন। কীভাবে?
                    ১ যুগ       = ১২,০০০ বছর
                    ১ সহস্র    = ১,০০০
                    ১ যোজন = ৮ মাইল
উপরোক্ত তিনটি রাশির সাংখ্যমান গুণিতক করে পাই,


যুগ সহস্র যোজন = ১২,০০০ × ১,০০০ × ৮ মাইল
                           = ৯,৬০,০০,০০০ মাইল
                           = ৯,৬০,০০,০০০ × ১.৬ কিমি
                           = ১৫,৩৬,০০,০০০ কিলোমিটার
                              (যেহেতু ১ মাইল = ১.৬ কিলোমিটার)


'যুগ সহস্র যোজন পর ভানু'― এই বাক্যে কবি তুলসীদাস পৃথ্বী থেকে ভানু ওরফে সূর্যের সঠিক দূরত্ব ভবিষ্যবাণী করেছেন ১৫,৩৬,০০,০০০ কিলোমিটার ('লীল্যো তাহি মধুর ফল জানু'―এর বাংলা তর্জমা করলে পাওয়া যায়, এত দূরের উজ্জ্বল সূর্যকে লর্ড হনুমান মিষ্টি ফল হিসেবে গিলে খেতে চায়)। এ হেন ভবিষ্যৎবাণী তিনি ষোড়শ শতকে করেছিলেন। অথচ বিজ্ঞানীরা তার দু'শো বছর পর অষ্টাদশ শতকে তা হুবহু একই মানে পরিমাপ করতে সক্ষম হন।  বিস্ময় জাগে এখানেই। কীভাবে সম্ভব এমন অদ্ভুত সমাপতন? কোন অতীন্দ্রিয় (না-কি দৈব শক্তি!) ক্ষমতাবলে তুলসীদাস এ হেন দূরত্বের সঠিক তথ্য পরিবেশন করতে সক্ষম হলেন? 'ঈশ্বর' নামক অসীম শক্তিশালী চরিত্রের অবতরণ অথবা অতীন্দ্রিয়বাদ স্বীকার করে নিলে এই প্রশ্নের ঠিকঠাক দিশা পাওয়া যেতে পারে হয়তো।

                                (দুই)

পঞ্চবটির জঙ্গলে ছলনার আশ্রয়ে সীতাকে অপহরণ করে লঙ্কা'য় (বর্তমানে শ্রীলঙ্কা দেশ) নিয়ে যায় লঙ্কাধিপতী রাবণ। শোক-দুঃখে কাতর শ্রীরামচন্দ্র সীতা পুনরুদ্ধারের আশায় বানর রাজা সুগ্রীব, অতীব শক্তিমান হনুমান প্রভৃতির সঙ্গে জোট বাঁধে। কিন্তু বাধ সাধল সমুদ্রের বিপুল জলরাশি। রাম জন্মভূমি ভারত ও শ্রীলঙ্কার মাঝে পক প্রণালী। সেটি পেরিয়ে যেতে হবে শ্রীলঙ্কা, রাম-ঘরনি সীতা উদ্ধার করতে। উপায়ান্তর না-দেখে সমুদ্রে বড় বড় পাথর ফেলে রামসেনারা একটি হাঁটা-পথ নির্মাণ করে। এ হেন কাহিনি মহাকবি বাল্মীকির রচিত "রামায়ণম"-এ উল্লেখ করা আছে। আধুনিক কালে পক প্রণালীতে ঐ সেতু, যা রাম সেতু নামে পরিচিত, সমুদ্রের জলরাশির তলায় অদৃশ্য হলেও সম্প্রতি নাসার সাটল মহাকাশ যান থেকে এ হেন পথের ইমেজগুলি সামনে এসেছে। 
                      
তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ভারত-শ্রীলঙ্কার সমুদ্রের পক প্রণালীতে দুই ভূখণ্ড সংযোগকারী ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ 'Ancient Man-made Bridge' (প্রাচীন মনুষ্য নির্মিত ব্রিজ)-এর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তদন্তে উঠে আসা আরও আশ্চর্য তথ্য। এই পাথরের সেতু সাড়ে সতেরো লক্ষ বছর আগে নির্মিত বলে প্রত্নতাত্ত্বিক কালনির্ণয়ে বলা হয়েছে। আর হিন্দু শাস্ত্র মতে ঠিক ঐ সময়ে পৃথিবীতে চলছিল ত্রেতাযুগ, শ্রীরামচন্দ্রের আবির্ভাব-কাল।


                                (তিন)

আত্মা কী? তার উপকরণ কী কী?

দেহ নামক যন্ত্র বা গাড়ির আরোহী যা হৃদয়স্থিত চেতনা নিঃসৃত করে তা-ই আত্মা। ভৌত শরীরে শাশ্বত ব্যক্তিত্বের উৎস হল আত্মা। তিনটি চিৎ-কণা (সৎ বা শাশ্বত, চিৎ বা চেতন ও আনন্দ) সম্বলিত আত্মা অপরিমেয়, অবিনশ্বর, অনুভবের কেন্দ্র, চিন্ময় ইন্দ্রিয়যুক্ত। শ্রীকৃষ্ণের বাণী সংবলিত 'শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা'-য় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আত্মার স্বরূপ দর্শণ করিয়েছিলেন তৃতীয় পাণ্ডব মিত্র অর্জুনকে। এ হেন আত্মাকে 'এনার্জি' রূপে কল্পনা করে নিলে বিজ্ঞান ও ঈশ্বর একাকার হয়ে যায়। ধর্মের ভেতর বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠা দৃঢ় হয়। কারণ এমন ধার্মিক কল্পনায় বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের "E = m × C^2" সমীকরণটি মান্যতা পায়। এই সমীকরণ অনুসারে এনার্জি এবং জড় ভর সমতুল্য। অর্থাৎ এনার্জি ভরে ও ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা'য় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন― আত্মা অবিনশ্বর, মৃত্যুর পর কেবল এক জড় দেহ পরিত্যাগ করে অন্য নতুন দেহে স্থানান্তরিত হয়। ভৌত শরীরকে জড়-ভর ধরলে "E = m × C^2" সমীকরণ মেনে মৃত্যুর পর এক শরীর থেকে আত্মা তথা এনার্জি তার রূপ পরিবর্তন করে অন্য দেহে (পড়ুন ভরে) রূপান্তরিত হয়। 
                
আবার দুই বিজ্ঞানী আমেরিকান ড: স্টুয়ার্ট হ্যামারঅফ এবং ইংরেজ স্যার রজার পেনরোজ কোয়ান্টাম থিওরির সাহায্যে মানুষের মস্তিষ্কের মাইক্রোটিউবস নামক ব্রেন সেলে এক বিশেষ ধরনের এনার্জির খোঁজ পান। তারা বলেন, মৃত্যু পথযাত্রী মানুষের মাইক্রোটিউবস কোয়ান্টাম কক্ষ পরিত্যাগ করে।  সোজা ভাষায়, সদ্য মরণশীল ব্যক্তির ব্রেন থেকে কিছু শক্তি তার মরণের পর পারিপার্শ্বিকে গমন করে। অর্থাৎ ৫০০০ বছর আগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলে গেছেন, আত্মা (এনার্জি) অমর। কেবল শরীর বদলায় সে। ধর্মের অভ্রান্ত বাণী বিজ্ঞানের আশীর্বাদে প্রত্যক্ষরূপে প্রমাণিত হল হাতে-কলমে।

আরও, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা'র তৃতীয় অধ্যায়ের এগারোতম শ্লোকে জড়জগতের ক্ষুদ্রতম অংশ যে পরমাণু, নাম-সহ তার অভ্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীর উল্লেখ রয়েছে। মহর্ষি বেদব্যাস লিপিবদ্ধ বিভিন্ন শাস্ত্রে বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী অভ্রান্ত প্রতিপন্ন হয়েছে। ভগবান বুদ্ধের আবির্ভাবের আড়াই হাজার বছর আগে তাঁর আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী।
হজরত মহম্মদের আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী। যীশু― ভবিষ্যপুরাণ। কৃষ্ণাবতার শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী। রাজা ধননন্দ ও চাণক্য। চন্দ্রগুপ্ত, বারিসার ও সম্রাট অশোক। শঙ্করাচার্যের জন্মের ৩৮০০ বছর পূর্বে তাঁর আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী। ইত্যাদি। 

মেন্টাল প্রেসার দূর করতে আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে যে মেডিটেশন এত বেশি জনপ্রিয়, প্রাচীন ভারতে তা ধ্যান-যোগা নামে পরিচিত ছিল, আর ধ্যান-যোগার উপকারিতা আজ প্রমাণিত ও বহুল প্রচলিত। ষষ্ঠ অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে 'কসমিক ভিশন' প্রদান করেন। কসমিক ভিশন প্রদান করে তিনি এটা প্রমাণ করেন যে অলৌকিক শক্তির অধিকারী ছিলেন তিনি। অর্থাৎ তিনি-ই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর।
                
বিভিন্ন ধর্মে ঈশ্বরের কিছু কিছু বাণী অভ্রান্ত প্রতিপন্ন মনে হলেও সব বাণী সত্য বলে গ্রহণ করেনি বিজ্ঞান। বাইবেলের মতে ঈশ্বর সরাসরি অ্যাডাম ও ঈভ নামে যথাক্রমে প্রথম মানব ও মানবী সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির আদিম লগ্নকাল, বাইবেলের মতে, মাত্র ৬০০০ বছর। আসলে সৃষ্টির বয়স, আধুনিক বিজ্ঞানের মতে, ১৩.৭ মিলিয়ন বছর (এক মিলিয়ন = দশ লক্ষ)। বৌদ্ধ ধর্মে জন্মান্তরবাদ স্বীকৃত, বুদ্ধত্ব লাভই চরম লক্ষ্য। বিজ্ঞানে 'চরম' বলে কিছু হয় না, সবই আপেক্ষিক। বেদ-উপনিষদের মতে, পৃথিবী স্থির। আদপে পৃথিবী গতিশীল।এমন আরও অনেক উদাহরণ আছে। 

অবশ্য 'শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা' প্রসঙ্গে বিখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন একদা বলেছিলেন, 'When I read the Bhagavad Gita and reflect about how God created this Universe everything else seems so superfluous.' 

তিনি আরও বলেছেন, 'I have made the Bhagavad Gita as the source of my inspiration and guide for the purpose of scientific investigation and formation of my theories.'

সুতরাং পরিশিষ্টে বলা যায়, বর্তমান যুগে বিজ্ঞান ও ধর্মের বিরোধ মূলত মূর্ত ঈশ্বরের ধারণা নিয়ে। সর্বশক্তিমান ও মঙ্গলময় ঈশ্বরের ধারণা বিক্ষিপ্ত-মনা মানুষকে শান্তি, সান্ত্বনা ও প্রেরণা প্রদান করে। এ ধারণা এত সহজ সরল যে তা সাধারণ মানুষের গ্রহণযোগ্য হয়ে দাঁড়ায়। এমনই অভিমত নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী সুব্রক্ষণ্যন চন্দ্রশেখরের। আইনস্টাইনের কথায় "মূর্ত ঈশ্বরে বিশ্বাস বা কোন অন্ধবিশ্বাস থেকে খাঁটি ধর্মবোধ আসে না, আসল ধর্ম বিশুদ্ধ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের দ্বারাই সমৃদ্ধ হতে পারে।" তাই বিগব্যাঙ সময়কালে উদ্ভূত অসীম শক্তিকে বিমূর্ত ঈশ্বর রূপে মেনে নিলে বিজ্ঞানে ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ ছাপ বা চিহ্ন স্পষ্ট প্রতিভাত হয়।

 জ্বলদর্চি  পেজ- এ লাইক দিন👇


আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments