জ্বলদর্চি

বিশেষ ছোটোবেলা ত্রয়োদশ সংখ্যা

বড়দিন ও নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই।
আমন্ত্রিত লেখকদের শ্রদ্ধা। তরুণ লেখকলেখিকা ও শিল্পীদের অভিনন্দন জানাই। 
গল্পকার মৌসুমী ঘোষের কাছে আমাদের ঋণ বেড়েই চলেছে। তিনিই এই বিভাগটি সম্পাদনা করে চলেছেন। সরাসরি তাঁর কাছেও লেখা পাঠাতে পারেন।
সাহিত্যিক মুক্তি দাশের পরামর্শ মেনে 'জানেন কি' নামকরণটি বদলে এবার থেকে 'জানো কি!' করা হল।এতে সম্পর্কের দূরত্ব কমলো। মহাভারত সংক্ষিপ্ত ভাবে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। পড়ে দেখার আবেদন জানাই।
নতুন বছর নতুন হোক।


ঘুম বিভ্রাট 
নীলাঞ্জনা শীল
ষষ্ঠ শ্রেণিটেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ পাবলিক স্কুল,
 হুগলি

কত কিছুই না হয়ে গেলো সেদিন ওই নিরিবিলি বাগানটাতে। রোজই, দৈত্যের মতো নিঝুম সন্ধ্যা নেমে আসে বাগানটার ওই ফুলগাছগুলোর ফাঁকে। ঘরের মধ্যে  হঠাৎ একটা খসখস শব্দ পেলাম। বুকটা খুব জোরে কেঁপে উঠল। কোনোদিনই ওই সময় ওইখানে কেউ আসেনি। মাকে ডাকারও কোনো ফুরসৎ নেই। ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলার উপক্রম। তবুও, সাহসে ভর দিয়ে চারিদিক দেখে, দমবন্ধ করে এগিয়ে গেলাম, বারান্দার ওই বাগানটার দিকে। আবার একটা সরে যাওয়ার শব্দ। একটু সতর্ক করে নিলাম নিজেকে। মনে হতে থাকল, এই বোধহয় কিছু ঘটবে। থালার মতো চাঁদটার আলো উপুড় হয়ে পড়েছিল ঝোপটার উপর। আলো-আঁধারিতে দেখলাম, কেউ মাথা গুঁজে বসে রয়েছে। গলায় যেটা ঝোলানো ছিল, তাতে কিছু লেখা ছিল। আলোর দিকে সরে গিয়ে দেখি, লেখা আছে—'ব্যাকরণ শিং'। মাথায় একটু বিদ্যুৎ খেলে গেল। 'ব্যাকরণ শিং' তো 'হযবরল'-র সেই নামকরা ছাগল বিশেষজ্ঞ, যাকে ঘিরে আমার অনেক কল্পনা। ব্যাকরণ শিং তখন আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। পাশ থেকে কে যেন খ্যানখ্যানে গলায় গেয়ে উঠল—'মিশিমাখা শিখিপাখা আকাশের কানে কানে'...। কানের মোচড়ে ঘুম ভাঙতেই দেখি, মা বড়ো বড়ো চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। পাশে ব্যকরণ বই খোলা আর মোবাইলের ইউ টিউবে বাজতে শুনলাম,' বাদুড় বলে, ওরে ও ভাই শজারু, আজকে রাতে দেখবে একটা মজারু...
বড়দিন
অর্ণা দাশ 
সপ্তম শ্রেণি, পাঠভবন স্কুল, কলকাতা


বড়দিনে অনেক মজা
চপ, কাটলেট, তেলেভাজা  
সেই দিনে পাই অনেক উপহার।
কেউ বা চায় খেলনা গাড়ি 
কেউ বা চায় খেলনা চুড়ি
কেউ বা চায় গরম জামা কেক চকলেট মিহিদানা।
সবার ইচ্ছে পূরণ করে 
সান্টা আসে ঘরে ঘরে  
চুপিচুপি রেখে সে যায় অনেক উপহার।
সকালবেলায় উঠে দেখে 
যা চেয়েছে পেয়েছে যে সে  
খোকাখুকীর মিষ্টি হাসি  
সান্টাকে দেয় অনেক ধন্যবাদ 
সেটাই হল সান্টার কাছে বড় উপহার। 


অদ্ভুত
প্রবাহনীল দাস
ষষ্ঠ শ্রেণি, একমি একাডেমি কালনা

সেদিন রাতে ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখি এক
একটা সাপের পাঁচ খানা পা
দেখেই, কোকিল ডাকছে ‘কা কা’।
পিটিয়ে গাধা করছে ঘোড়া
অশ্বগ্রামের পুঁচকে ছোঁড়া
একটা ময়ূর পেখম তুলে ডাক দিল প্যাঁক প্যাঁক।

          
চোরে চোরে
মুক্তি দাশ 

ও পাড়ার গজানন
লোক বড় সোজা নন, 
             পাকড়ে সে চোরকে
বলে, "আয় এইদিকে 
দেখে মোর মুখটিকে
             বল আমি তোর কে?"
চোর বলে, "আজেবাজে 
কথা বলে মহা কাজে
             কেন দ্যান ভড়কে!"
গজা বলে, "ওরে চোর, 
মাসতুতো ভাই তোর
             হই সম্পর্কে!"
       
ভরলো মাটির কোল
মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস

ঝিন্টিফুলে ভরেছে গাছ,
গাছের গায়ে গাছে
দিনটি আলো হচ্ছে রঙে
পাতকুয়োটার কাছে৷
রিন্টিসোনা হাততালি দেয়
কানটি মুলে পুষির,
পুষিও নেড়ে নরম গলা
ম্যাঁও সুরে গায় খুশির৷
ঝিন্টি ঝোপে ফিঙের ল্যাজে
বাতাস দিল দোল,
টুপটুপিয়ে ফুল সাজালো
শ্যাওলা মাটির কোল৷

জন্মদিনে
স্বাগতা ভট্টাচার্য্য

প্রদীপ জ্বালিয়ে পায়েসের বাটি আর থালায় সাদা ভাত সাজানো,  শাক, পাঁচ রকম ভাজা, শুকতো, ডাল, মাছ, মাংস চাটনী এই জন্মদিনের মেনু। বাবা ছিল প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক-এটুকু বলে থেমেছে নীতা। হয়তো সে মশগুল হয়েছে অতীত রোমন্থনে। এগারো বছরের পায়েল মায়ের গায়ের সাথে আটকে শুয়ে আছে। আগামী কাল নীতার জন্মদিন। এবছর লকডাউন আর এই করোনা ভাইরাসের কারণে সবারজীবন অন্যরকম হয়ে গেছে। স্কুল, অফিস সব বন্ধ।
নীতার স্বামী প্রবাল এখন সারাদিন বাড়িতে থাকলেও  ল্যাপটপ নিয়ে concall, জুম, hangout এসব নানা এপসে অন লাইন মিটিং নিয়েই প্রায় সারাদিন ব্যস্ত। অফিস এখন বাড়িতে। পায়েলের  পড়াশোনাও ফোনে চলছে। অন লাইনের ব্যপারটা অতো বুঝতে পারে না নীতা। মা বাবাকে তো আর অন লাইনে প্রণাম করা যায় না। মেয়ের গরমের ছুটির মধ্যে জন্মদিন পড়ে বলেই প্রতিবার এসময় মেয়েকে নিয়ে সাবেকি পুরনো বাড়িতে যায়। অনেক কিছু বদলে গেলেও বাবা মায়ের স্পর্শ সেই একই। কেমন একটা মন খারাপের সুর বাজছে আজ। গ্রামের সেই চেনা চেহারা এখন অনেক বদলে গেছে তবুও সেই উঠোন, ধানের গোলা, বাঁধানো পুকুরঘাট , পুরনো ঘোষ কাকুর মিষ্টির দোকান একটা চেনা ছবির বৃত্ত সম্পূর্ণ করে। ভারী মন খারাপ হচ্ছে। 
'ওমা তুমি আর তোমার জন্মদিনের গল্প বলছো না তো! কিছু ভাবছো? - মেয়ের কথায় চমক ভাঙে নীতার। 
'এই তো আমার জন্মদিনের গল্প রে মা। বাবা মাকে প্রণাম করতাম আর ওরা আমাকে ধান, দূব্বো, চন্দন টিপ পরিয়ে আশীর্বাদ করে দিতো। নতুন একটা জামা ব্যস।
'কেক কাটা, পার্টি, বন্ধুবান্ধব আসা, হুল্লোড়, রাতে বিরিয়ানী খাওয়াএসব কিছুই হতো না?'
অবাক হয় পায়েল।
' - নাহ আমি কোনদিন কেক কাটি নি রে। ওই আমাদের ছোট বাড়িতে বাবা মায়ের সাথেপ্রতি বছর হৈ চৈ করে কাটানো সময়গুলো সঞ্চয়- 'গলা বুজে আসে নীতার।
 পায়েল মায়ের কষ্টটা হয়তো বুঝতে পারে। আগামী দিনের জন্য হয়তো মা ভাবছে। ছোট করে দীর্ঘশ্বাস সেও ফেলে। মায়ের সাথে একসাথে শোয় সে ।তারপর রাতের হালকা সবুজ আলো আঁধারিতে ফ্যানের  ঠান্ডা হাওয়ায় মায়ের গা ঘেষে ঘুম আসে।
'ওঠো নীতা চা '
অবাক হয়ে উঠে বসে নীতা। স্বপ্ন নাকি সত্য! পিছনে পায়েল মিটিমিটি হাসছে।
'মা তুমি আজ কোন কাজ করবে না। বাবা আমি ঠিক করেছি ভাগ করে সব কাজ করবো। ছোটবেলার মতো তোমাকে জন্মদিন উপহার দেবো। দিদু সব বলে দিয়েছে। কেক বানানো খুব চাপের। ওটা অন লাইনে অর্ডার করছি। তোমার মতো রান্না হবে না তবুও আমি বাবা মিলে চেষ্টা করবো তিনজনে একটা সুন্দর দিন কাটাতে। তুমিতো রোজ আমাদের খেয়াল রাখো আজ আমরা একটু চেষ্টা করি। শুভ জন্মদিন মা। '
বুকের মধ্যে হাজারটা ঝাড়বাতি জ্বলে ওঠে নীতার। কবে ছোট্ট মেয়েটা এতো বড় হয়ে গেল সে জানতেই পারে নি!


বন্ধু যখন শালু
মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়

রুবিয়ার মন ভাল নেই। একটুও না। নতুন জায়গায় রুবিয়ার মন বসছে না। খালিখালি কান্না পায়। বারবার আগের শহরে ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু উপায় কোথায়? রুবিয়ার বাবার বদলির চাকরি। সেই সূত্রে ওরা এখানে এসেছে মাত্র তিনমাস। এই তিনমাসেও রুবিয়া ভালবাসতে পারেনি নতুন শহরটাকে। বাবা খুব সুন্দর লাল রঙের সাইকেল কিনে দিয়েছে। রুবিয়া হাত দেয়নি। তার ইচ্ছেই করে না কোথাও যেতে। 
বাবাকে বলেছে, ‘এই শহরটা পচা। আমার এখানে ভাল লাগছে না। তুমি আমায় আগের শহরে নিয়ে চলো বাপি।’
বাপি কিছু বলেনি। শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক আদর করেছে। 
রুবিয়া স্কুলে ভর্তি হয়ে গেছে। নিয়মিত স্কুলে যায় ঠিকই, কিন্তু হাসিখুশি রুবিয়া কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। স্কুলে গেলে মনখারাপ আরও চেপে ধরে তাকে। তোমরা নিশ্চয়ই ভাবছ স্কুলে গেলে মনখারাপ হবে কেন!? শুধুই কি পড়া হয় স্কুলে নাকি? কত বন্ধু আছে স্কুলে। তাদের সঙ্গে কত গল্প, টিফিন খাওয়া, খেলা কত কী হয়। তাহলে মনখারাপ এলো কোথা থেকে? 
এখানেই সেই গোলমেলে ব্যাপারটা। রুবিয়া এই স্কুলে নতুন এসেছে। সবাই অপরিচিত। এখনও কেউ রুবিয়াকে বন্ধু করে কাছে টেনে নেয়নি। আগের স্কুলের বন্ধুদের জন্য খুব মনকেমন করে। তারা সবাই কত ভালবাসত। এখানে তাকে কেউ ভালবাসে না 
 কথাটা মনে আসতেই কান্নায় রুবিয়ার ঠোঁট ফুলে ওঠে। 
‘চিঁ চিঁ চিঁ’… 
চমকে তাকায় রুবিয়া। দেখে বারান্দায় একটা শালিখ পাখি। আরে মাথা দোলাচ্ছে পাখিটা। তাহলে কি ওকে ডাকছে? এগিয়ে যায় রুবিয়া। 
বারান্দার গ্রিল গলে মাটিতে এসে বসে শালিখ। আবার ডাকে, ‘চিঁ চিঁ চিঁ’। 
রুবিয়াও বসে পড়ে মাটিতে। দুগালে হাত রেখে বলে, ‘আমার বন্ধু হবি? এখানে আমার কোন বন্ধু নেই।’
শালিখ ঘুরে ঘুরে লাফায়, ‘চিঁ চিঁ চিঁ’।
রুবিয়া ছুট্টে রান্নাঘরে গিয়ে মায়ের থেকে বিস্কুট চেয়ে আনে। ছোট-ছোট টুকরো করে এগিয়ে দেয়। শালিখ কুটকুট করে খেয়ে নেয় ।
এখন রুবিয়া আর শালু খুব ভাল বন্ধু। ওহ্‌, শালু কে বুঝতে পারোনি তোমরা, তাই তো? শালু হলো সেই শালিখ পাখি। যে রোজ সকালে এসে রুবিয়ার সঙ্গে গল্প করে, বিস্কুট খায়।  
এখন প্রতিদিন বিকালে ওরা বেড়াতে যায় সামনের খোলা মাঠে অথবা নদীর ধারে। রুবিয়ার লাল সাইকেলের ঝুড়িতে বসে শালু আর রুবিয়া চালিয়ে নিয়ে যায়। প্রাণভরে গল্প করে শালুর সঙ্গে। শালুও ‘চিঁ চিঁ চিঁ’ শব্দ করে উত্তর দেয়। রুবিয়া সব কথা বুঝতে পারে শালুর। তোমরাও বুঝতে চাইলে ঠিক পারবে। 
এই ফাঁকে একটা কথা বলি তোমাদের। স্কুলেও বেশ কয়েকজন বন্ধু হয়েছে রুবিয়ার। তারা শালুকেও বন্ধু বলেছে। 
রুবিয়া এখন খুব হাসিখুশি থাকে, আগের মতো। তোমরাও চাইলে শালুকে বন্ধু করতে পারো। শালুরা আমাদের চারিপাশে ভালবেসে থাকে। শুধু আমাদের চিনে নেওয়ার অপেক্ষা। কি, তাই তো ?
সাঁতরাইচেঙ্গার রহস্যময় সাতকাহন
পর্ব-৩

গৌতম বাড়ই

ভুটনীরঘাটের লোকজনের প্রথমে মনে হয়েছিল ও বড় কোন ভারী মালবাহীর গাড়ির কম্পনে বুঝি নরম খেতের মাটি ধ্বসে গিয়েছে। তবে কিছু বয়স্ক লোকও আমার আর সুশান্তের মতন ঐ আলোর চাকিকে ভুটনীরঘাটে রাতের অন্ধকারে নামতে দেখেছিলেন সেদিন। তারা কিন্তু এ-ঘটনাকে সহজে মেনে নিচ্ছেন না। ঐ গোলাকার গর্ত ঘিরে ক্রমেই একটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি হল আশপাশের সব গ্রামে।

সাঁতরাইচেঙ্গা ফ্রী- প্রাইমারি স্কুলের মাঠে গ্রীষ্মের ছুটিতে ফি-বছর কোথা থেকে যেন বানজারাদের দল এসে ঘাঁটি গাড়ে। আমরা স্কুলের মাঠেই ফুটবল খেলতাম। শুনলাম ওদের দলে এবারে তিনটে খর্বাকৃতি বামুন লোক এসে জুটেছে। ঐ যে সার্কাসে যারা ক্লাউন সেজে খেলা দেখায় আর কী! আমরা ফুটবল খেলার ফাঁকে উঁকি মারলাম বানজারাদের তাঁবুগুলিতে। একজন বেশ লম্বা একটা ছেলে কানে দুল,মাথায় রঙিন পাগড়ি। আমাদের উঁকিঝুঁকি মারতে দেখে একটা তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলো। বললে--  এ খোকাবাবু লোগ্ তুমরা কী দেখছ?  কুনো আদমীকে খুঁজতেছো? আরে আগেবালা তাঁবু মে দেখো, হামাদের সাথে ইবারে তিন বাঁটুল লোগ ভি এসে হাজির হয়েছে। আমরা মিশমিশে কালো মতন বানজারাটা দেখে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে ওর কথা শুনে এবার একটু সাহস পেলাম। সামনের তাঁবুর দিকে এগিয়ে  উঁকি মেরে দেখলাম। দেখি তিনটে ছোট্টখাট্টো লোক জমকালো জামা পড়ে বড়-বড় তিনটে পাত্রে মুড়ি বা ওরকম কিছু  নিয়ে চিবোচ্ছে আনমনে। আমরা উঁকি মেরেই পালিয়ে যাচ্ছিলাম, আমাদের দলে আরও কিছু ছেলে-ছোকরা ছিল। হঠাৎ শুনি জোরে কর্কশ স্বরে ঐ বামুন মানুষদের মধ্যে একজন বলছেন-- এই খোকারা তোমাদের মধ্যে বুদ্ধদেব আর সুশান্ত বলে কে? কে? বাচ্চা আছে?  আমি আর সুশান্ত অনুপকে ডেকে বললাম--- ভাগ অনুপ। চল। চল। 
দৌড়ে বল বগলে নিয়ে দেওয়ানির বাড়ির মোড়ে এসে থামলাম আমরা।

আমাদের নাম জানল কী করে?  প্রকাশ আর দীপ বললে--  আরে আমরা খেলতে -- খেলতে এ ওর নাম ডেকে কথা বলি, ওরা হয়ত দাঁড়িয়ে আড়াল থেকে শুনেছে। আমরা সন্ধে নামার মুখে বাড়ির ভেতর ঢুকলাম।

ঘরে পড়তে বসে মন নেই, ঐ তিনটে বামন মানুষের মুখগুলো মনে পড়ছিল খালি। মা দু- দুবার আমায় দেখে গিয়ে ভেতরের ঘরের থেকে বললেন--  বুদ্ধ তোর কি খেলতে - খেলতে চোট লেগেছে নাকি?তবে পড়াশোনা করবার আজ মন নেই কেন?
আমি বলি-  না তো মা। কেন?
--  না, চোট আঘাত লাগলে লুকিয়ে রাখবি না।

ভাই অন্যঘরে পড়ছিল। বাবা ছাত্র- ছাত্রী পড়াতে গিয়েছিলেন মজুমদারদের বাড়িতে। রাত সাতটা কিংবা সাড়ে-সাতটা হবে। ভাই চট করে এ ঘরে আসেনা। দিদি পাশে বসে নিজের পড়ার সাথে ওর পড়াও দেখে। হঠাৎ কী করে সুযোগ করে আমার কাছে এসে বলে গেল চুপিসারে-- দাদা, আজ শ্রীদামদের দোকানঘরে দুটো আশ্চর্য রকমের পোস্টার কারা যেন মেরে গিয়েছে। এই বলে সে পাশের ঘরে চলে গেল।

আমার কিছুতেই আর পড়ায় মন নেই। ভাইয়ের এই  খবরটা পেয়ে মনটা আরও চঞ্চল হয়ে উঠল।

কিসের পোস্টার? সেগুলো কী? কারা মেরেছে? এইসব ভাবতে ভাবতে মা আমাদের রাতের খাবারের  জন্য ডাক দিয়েছে। বাবাও এসে গিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ ঘরে। সবাই মিলে খাবার ঘরে গিয়ে পিঁড়ি পেতে বসলাম খেতে।

বাবা খেতে-খেতে বললেন-- তোরা জানিস কিছু? গ্রামে কী সব আশ্চর্য এবং রহস্যময় ঘটনা ঘটে চলেছে। আমরা সবাই বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। বাবা বললেন--  শ্রীদামদের দোকান ঘরের ঝাঁপে বিচিত্র নকশার কিছু পোস্টার পড়েছে।  এই ধরনের পোস্টার গ্রামের কেউ আগে দেখেন নি। বিভিন্ন জ্যামিতিক নকশা কাটা। আর-----
(এর পরে পরের পর্বে। আগামী রবিবার।)

শুরু হয়েছে সংক্ষিপ্ত মহাভারত 
জানো কি! 
সংকলক- মনোজিৎ বেরা 

আজকের বিষয় : সুন্দরবন
 
১. সুন্দরবন শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় সারা ভারতেই প্রসিদ্ধ, এবার বলতে হবে এটি পশ্চিমবঙ্গের কোন জেলায় অবস্থিত?
২. 'সুন্দরবন' নাম হয় এক বিশেষ গাছের নাম অনুযায়ী। গাছটির নাম কি?
৩. এই বন কোন বিশেষ পশু সংরক্ষণের জন্য প্রসিদ্ধ?
৪. 'সুন্দরবন'-র আরেক নাম রয়েছে বিশেষ এক প্রকার উদ্ভিদ প্রজাতির নাম অনুসারে। সেই নামটি কি?
৫. বাঘের মধ্যে যে বিশেষ প্রজাতি এই অঞ্চলে দেখা যায় সেই বাঘকে আমরা কি নামে চিনি? 
৬. সুন্দরবনের অপরদিকে কোন দেশ রয়েছে?
৭. সুন্দরবনে  ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ ক্ষতিগ্রস্ত হবার মূল একটি কারণ উল্লেখ করো?
৮. এই অরণ্য কোন ধরনের উদ্যানের অন্তর্গত?
৯. বন্যপ্রাণী সপ্তাহ কত তারিখ থেকে কত তারিখ পালিত হয় কোন মাসে?
১০. জাতীয় উদ্যান রূপে স্বীকৃতি পায় সুন্দরবন কত সালে?

উত্তর পাঠান।  মেল - jaladarchi@yahoo.in

গত সপ্তাহের উত্তর :
    
১. জন্ম ১৯৩৫ সালে ১৯  জানুয়ারি। মৃত্যু ২০২০ সালে ১৫ নভেম্বর।
২. প্রথম অভিনীত সিনেমা হলো অপুর সংসার।
৩. হীরক রাজার দেশে সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৮০ সালে। পরিচালক ছিলেন সত্যজিৎ রায়।
৪. পদ্মভূষণ পুরস্কার পান ২০০৪ সালে।
৫. সর্বশেষ অভিনীত ছবিটি হলো বেলাশেষে।
৬. কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
৭. ঋত্বিক ঘটক ও মৃনাল সেন।
৮. শিবপ্রসাদ মুখার্জী ও নন্দিতা রায়।
৯. ২০১২ তে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার পান।
১০. ফেলুদা।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments