জ্বলদর্চি

বর্ষ-শেষে কোভিড-১৯/গৌতম বাড়ই

বর্ষ-শেষে কোভিড-১৯

গৌতম বাড়ই 

একটা গোটা-বছর গুটিয়ে এল অর্থাৎ হাতে আর মাত্র গুটিকয়েক দিন, তারপর নতুন বছরের শুরু। আট থেকে আশি সবার মনেই গাঁথা-মালা ২০২০-র সালের এই জীবনের যাত্রাপালা। ভয়-আতঙ্ক- বিষাদ-প্রিয়জনকে হারানো- অগণিত মানুষের জীবনে হাজার দুঃখ- চাকরি- রুটি- রুজি- শিক্ষা- স্বাস্থ্য ইত্যাদি জীবনের সাথে প্রতিনিয়ত যোগ এই শব্দগুলো শুধু ব্যথার অক্ষরে সাজিয়ে রেখেছি এবং জানি না আর কতদিন রাখব?

মনে পড়ে কবির সেই অমোঘ বাণী- 'মন্বন্তরে মরিনি আমরা, মারি নিয়ে ঘর করি'।

আমরা মরেছি অনেক এবং মরছি-ও অনেক। একটি প্রাণে আর একটি মনে। শুধু আতঙ্কগ্রস্ত সেই লক-ডাউনের সময়ের কথা মনে পড়লে এখনও হৃৎকম্পন হয়। শুধু একটা অণুজীবের ভয়ে মানুষের মাঝে হাজারটা চারিত্রিক মেজাজ, হাজারটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মানুষের একক অস্তিত্ব ধরা পড়ল। মানুষের অসামাজিকতা এবং সম্পর্কের মেকী বুনিয়াদগুলোও ধ্বসে পড়ল। জানি না এখনও বছরের অস্ত নিভু-নিভু দিনে কবে হা-করে সেই নির্মল বাতাস নেব?

একটু গোড়া থেকেই শুরু করি বিষময় বছর ২০২০। বছরের শেষে সেই কোভিড-১৯ বা করোনা দিয়েই শুরু করছি।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে 
করোনাভাইরাসের একটি প্রজাতির সংক্রামণ দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO) ভাইরাসটিকে  প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ‘২০১৯-এনসিওভি’ নামকরণ করে। নোবেল করোনা ভাইরাস বা অতি সমধিক পরিচিতি কোভিড-১৯ বলে।

মনে পড়বেই,  ২২-শে মার্চের (রবিবার) জনতা কার্ফু আর মাঝের একটা দিন বাদে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর টিভিতে সেই ২১-দিনের পূর্ণাঙ্গ লক-ডাউন ঘোষণা। লোকজন প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শেষ না হতেই পিলপিল করে ছুটছে পাড়ার মুদি দোকান আর বাজারে। আমি মধ্যরাত প্রায় সাড়ে-বারোটার সময় পাঁচ-কেজি চাল, সর্ষের তেল, নুন,হলুদ আর সব্জী বাজার থেকে যোগাড় করে আনি। সেই বিভীষিকাময় রাত বছর শেষে মনে পড়বেই, আমার ভীষণ মনে পড়ছে। ২৫-শে মার্চ থেকে শুরু হল সেই পূর্ণাঙ্গ লক-ডাউন। পরে ধাপে-ধাপে তা আরও বাড়তে থাকলো। ভারতবর্ষে প্রথম করোনা আক্রান্ত-কে পাওয়া গিয়েছিল ৩১-শে জানুয়ারী।

২০২০ সালের ১৪ই মে পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ২১৩টিরও বেশি দেশ ও অধীনস্থ অঞ্চলে ৪৪ লাখ ৮০ হাজার-এরও বেশি ব্যক্তি করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন বলে সংবাদ প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে। ৩ লাখের  বেশী ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে এবং ১৬ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছে।

এই মুহূর্তে করোনার একটু তথ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরলে আপনারা বাস্তব চেহারাটি বুঝতে পারবেন।
ভারতবর্ষে:
২০২০ সালে হয়েছিল যেটি চীন দেশ থেকে শুরু হয়েছিল, আজ ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ অনুসারে মোট সংক্রামিত ব্যক্তির সংখ্যা ১,০০,৯৯,০৬৬ জন যার মধ্যে ১,৪৬,৪৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৯৬,৬৩,৩৮২ জন সুস্থ হয়ে গেছে। ভারতে অন্যদেশের তুলনায় কম হারে মানুষদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে সংক্রমণের সংখ্যাটি যথেষ্ট পরিমাণে অবমূল্যায়ন হতে পারে। ভারতে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের হার ১.৭, যা সবচেয়ে খারাপ প্রভাবিত দেশগুলির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম বলে জানা গেছে। ভারতে কোভিড-১৯ এর মৃত্যুর হার ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ অনুসারে ১.৪৫ শতাংশ।ভারতে কোভিড-১৯ পরীক্ষা ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ অনুসারে প্রতি দশ লক্ষে ১,২১,৪১০.৭৩ জন।

বিশ্বে:
২৩-শে ডিসেম্বরের রিপোর্ট অনুসারে, মৃত ১৭,১৬, ১২৬ জন। আক্রান্ত ৭,৮০,৫৮,২৮৬ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫,৪৮,৫৭, ৬৫১ জন।

করোনা যখন যাই-যাই করেও যাচ্ছে না। এরমধ্যে দু-দিন আগের নতুন করে একটি খবরে আমরা আবার আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। অতিমারির ঘন অন্ধকার এখনও গায়ে মেখে সবাই , এর মধ্যে করোনা-ভাইরাসের নতুন একটি ' স্ট্রেন' বা প্রকারভেদের এর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে ব্রিটেন থেকে। এই নতুন স্ট্রেনটি আগের থেকেও বেশি সক্রিয়। উদ্বেগে কাটাচ্ছে বড়দিনের মুখে গোটা বিশ্ব। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে অন্যান্য দেশের মতন ভারতবর্ষ আপাতত ৩১-শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্রিটেনের সাথে বিমান যোগাযোগ বন্ধ রাখতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শেষ করবার আগে আমাদের বঙ্গদেশের পরিসংখ্যানে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
২৩-শে ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান, যা সংবাদ-পত্র থেকে সংগৃহীত,  এখানে তুলে ধরা হল। মোট আক্রান্ত ৫,৩৯,৯৯৬ এবং মোট মৃত ৯৪৩৯ ।

আগের অতিমারিগুলোর মতন হয়ত এবারের অতিমারি মৃতের নিরিখে তেমন ভয়াবহ নয়। তবুও এমন ব্যাপক-ভাবে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া বা ঘটে যাওয়া প্যান্ডেমিক বা অতিমারি পৃথিবীতে হয়নি, এর আগে ঘটেনি।  

কোভিডের রকম-সকম দেখে তাই মনে হচ্ছে, 'যেতে পারি কিন্তু কেন যাব?' তোমাদের আরও কিছু অম্ল-মধুর-সহবৎ শেখাবো।

জানি একদিন সব স্বাভাবিক হবে। পৃথিবী আবার নতুন আলোকে জেগে উঠবে। বছর শেষে কোভিড-১৯ বর্ণনায় এই আশা রেখেই শেষ করলাম।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

আরও পড়ুন
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কী করবেন কী করবেন না!! জরুরি পরামর্শের লক্ষ্যে কলম ধরলেন স্বনামধন্য চিকিৎসক ডাঃ দিবাকর সামন্ত।

Post a Comment

0 Comments