জ্বলদর্চি

অনুসন্ধানীর ডায়েরি (সূর্য কুমার অগস্তি)/সন্তু জানা

অনুসন্ধানীর ডায়েরি  : ৩
অখণ্ড মেদিনীপুর পর্ব 

সন্তু জানা 

সূর্য কুমার অগস্তি 


ব্রিটিশ যুগে উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে মেদিনীপুর জেলার কোন এক মেধাবী ছাত্র কলকাতার ব্রিটিশ অফিসারের  চোখে চোখ রেখে মুখের উপর জবাব দিয়েছিলেন, কথাটা শুনতেই কেমন অবাক লাগে। কিন্তু কে সেই ছাত্র?

 প্রেসিডেন্সি কলেজের পরীক্ষায় সঠিক সময় পৌঁছতে যাঁর এক ঘন্টা দেরি হয়ে যাওয়ায় শ্বেতাঙ্গ অফিসার ছাত্রটিকে ঢুকতে প্রবল বাধা দেন। তখন সাহসী বুকে ভর দিয়ে স্পষ্ট উচ্চারণে উত্তর এসেছিল -" I am the surya kumar agasti ,who never stood second in any examination ." ।নামটা কিন্তু একালে প্রায়-অনুচ্চারিত। 
        সূর্য কুমার অগস্তি। নামটা কি কস্মিনকালেও কখনো শোনা মনে হচ্ছে? যদি না হয়, তাহলে জেনে রাখুন ইনিই মেদিনীপুর জেলার প্রথম ভূমিপুত্র যিনি শতবর্ষ পূর্বের বাংলা - বিহার - ওড়িশার প্রায় ১৩-১৫ টি জেলার প্রশাসনিক পদে কৃতিত্বের ছাপ রেখে যান। ব্রিটিশ যুগে একজন প্রজ্ঞাবান ভারতীয়ের উপর নিখাদ আস্থা রাখতে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভাগলপুর, পাবনা বা বালেশ্বরের মতো জেলাগুলির প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করতে ব্রিটিশ সরকারকেও দু'বার ভাবতে হয়নি।
১৮৮২ থেকে ১৯১২ সালের সময়কালে সূর্য বাবু অবিভক্ত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মধ্যে ১৩ টি ভিন্ন জেলার জেলাশাসকের পদে আসীন ছিলেন। এর মধ্যে এপার বাংলার বর্ধমান, নদিয়া এবং ওপার বাংলার খুলনা, যশোহর, পাবনা প্রভৃতি ছাড়াও ওড়িশার বালেশ্বর, পুরী অথবা বিহারের পূর্ণিয়া, ভাগলপুর প্রভৃতি জেলা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯২১ সালে মেদিনীপুরে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের মেদিনীপুর শাখা  আয়োজিত সাহিত্য সভায় অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি রূপে তাঁর দীর্ঘ ও আবেগময় বক্তৃতা তাঁর অনন্য সাধারণ বাগ্মিতার পরিচয় দিয়েছিল। মহাত্মা গান্ধী যখন মেদিনীপুরে প্রথম পদার্পণ করেন তখন সূর্য কুমার অগস্তিই ছিলেন সেই অনুষ্ঠানের প্রধান আয়োজক ও সঞ্চালক। 
সূর্য কুমার ছিলেন একজন প্রকৃত সাধক। নীরবে চলত তাঁর সাধনা। তাঁর দিগন্তবিস্তৃত কর্মকাণ্ড আজও অপরিমাপযোগ্য। ১৮৮৮ সালে জন্মভূমি গড়বেতার শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ও সামাজিক উন্নতির লক্ষ্যে তিনি একটি হাই-ইংলিশ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জেলা জুড়ে বহু কাজে কৃতিত্বের ছাপ রেখে ১৯২৩ সালের ৩০ নভেম্বর তিনি ভিন্ন লোকে যাত্রা করেন । 
আজকের আধুনিক গড়বেতা হাইস্কুলের সামনে এস কে অগস্তি তোরণ নির্মাণ করে তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে ঠিকই , কিন্তু এই অসাধারণ মেধাবী, দক্ষ প্রশাসক, শিক্ষাবিদ, বহুভাষাবিদ, মানবদরদী নিষ্ঠাবান সমাজসেবক তথা   গড়বেতা হাইস্কুলের অন্যতম রূপকার সূর্য কুমার অগস্তির  রূপকথাসম জীবন কাহিনী জেলাবাসী মনে রেখেছে তো?

কেন চরম অবহেলায় পড়ে রয়েছে এই মহান মনীষীর একমাত্র স্মৃতিসৌধ?

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

আরও পড়ুন

Post a Comment

0 Comments