গুচ্ছ কবিতা
ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু
আবীর ভট্টাচার্য্য
আমার না-বলা বাণীর ঘনযামিনীর মাঝে
যতবার ডাক দিই মনে মনে,
বিনাশর্তে পাশে এসে বসাে,অনঘ আলিঙ্গনে
যেন এ আমার প্রাপ্য অধিকার! আজন্মকালের, যেভাবে বিষন্ন গোধূলি হাত ধরে প্রসন্ন সকালের;
নিঃশব্দশিশিরপাতে,কোরকের আধাে প্রস্ফুটনে, আনমনে,হয়তাে নেহাতই অকারণে।
তবুও কখনাে, বৈরাগী শীতেরও ঘটে প্রাদুর্ভাব লক্ষণরেখা টেনে বলে,' আর না! এবার বিভাব!
ব্রহ্মচর্য ধর্ম তােমার, নিস্পৃহতা পূজা আচমন। উত্তুরে হাওয়ায়,একাকী নির্জন ফিরে ফিরে আসে কবেকার বিরহবেদনায়,পর্ণমোচী মারন উল্লাসে।
তবু..... অনাগত বসন্ত-স্বর কানেকানে বলে যায়,
তুমি তার নিমগ্ন-প্রেমিক,অসতর্কে বা সংগোপনে
শীতার্তের একান্ত-উপশম, হৃদয়ের উষ্ণ-আমন্ত্রণে।
কুন্তীর প্রার্থনা
তুমি বুঝি ভেবেছিলে,একালের দেয়াসিনী আমি
রত্নগর্ভে ধরে সূর্যসুখ,আলোজন্ম দিয়েছি তােমায়
হায় পুত্র! এত সাধ্য ছিলাে কি আমার!
কন্টক আকীর্ণ পথ পেরিয়ে এসেছি বারবার
দীপটুকু জ্বালাতে অনিবার, তােমার মঙ্গলে
বিজনের সেই সূর্যপূজা, যাবে না বিফলে....
জানতাম ভষ্মীভূত হবো,তবুও ছুঁয়েছি সূর্যতেজ
কুন্তী-তপস্যায়।যত্নে জ্বালিয়েছি আলাে,ফুলসেজ তবু কেন বােঝ না যে তুমি.... .স্নেহ নিম্নগামী ;
আর তাই মাতৃস্নেহ ভীষনই অবুঝ।
স্বপ্ন দেখি,জন্মান্তরে গাছ হই যদি ;নাগকেশরের
তুমি হয়ো তার কোলে গুচ্ছগুচ্ছ ফুল ; বসন্তের
ঐ শােনাে,দিগন্ত উঠেছে ভরে সুরে ; বুঝি কেদারের।
কথা ছিলাে
কথা ছিলাে; কথা ছিলাে ,কথা রাখবার।
রাত্রির জঠর থেকে দিন আনবার, মনে রাখবার। প্রতিটি শিশুরমুখে হাসি ফোটাবার,স্বপ্ন দেখাবার
কথা ছিলাে কথা রাখবার, ভুলে না যাওয়ার।
যে চেতনায় পঙ্কজিনী ফোটে হৃদয়কাননে
সবুজ মাঠ হেসে উঠে হেমন্তের সােনালী ধানে, বর্ণপরিচয় ডানা মেলে চেতনে-মননে----
শিশু ভােলানাথ আনমনে খেলে আঙিনায়,
কৃষাণীর মুখের ফুটে ওঠা শ্রমক্লান্ত ব্যঞ্জনায়
গরম ভাতের সুগন্ধ ছড়ায় নিকোনাে উঠোনে!
কথা ছিল গাছে গাছে পাখি গাইবে গান,
ভােরের আলােয় ভৈরবী, সন্ধ্যায় ইমন-কল্যাণ। আজানের সুর,মন্ত্রধ্বনির ছন্দে বিছাবে আঁচল মানুষের মনে।------মিলে যাবে আসমুদ্র হিমাচল; ভালােবাসায় ভেসে যাবে নদী-বিধৌত-সমতল ;
অনেক; অনেক কথা ছিলাে----
প্রত্যাশার ভূমিতে স্বপ্নের বপন ; মাটির জীবনে স্বপ্নের রূপায়ন ;
কথা ছিলাে-------কথা ছিলাে, ভুলে না যাওয়ার।
স্বপ্নোত্থিতা
তােমার কথা ভাবলে পরেই হঠাৎ পড়া ঢিল
বৃত্তের তরঙ্গ তােলে হাঁস-চরা পুকুরে, নিস্তব্ধ দুপুরে।
কুবাের কুহক,আসন্ন শীতকাতরতা আমলকী মর্মরে,
সাহসী উত্তরে হাওয়ায় কাঁপে জলতল,থরেথরে
মনে পড়ে কোন মুখ,কোন গান, ঠোঁট পাশে তিল!
তােমায় লিখতে গেলে আজও চিঠি ভরে যায় শব্দফুলে,কবিতায়
সাদা কাগজে কালির আঁচড়,অক্ষরের আওয়াজ ওঠে খসখস
শীতঘুমের আগে দীর্ঘায়িত সর্প-মৈথুন-ধ্বনির মতন নিরালায়
জোৎস্নায় কেয়াবনে হিমের পরশ, শিরশির স্পর্শশিহরণ....
তবু পূণ্যতােয়া সেই স্পর্শে সব পাপ দেহসুখ ভেসে ভেসে যায়।
দেখি, নিশিভােরে কার্তিকের কুয়াশালীন পথ-চংক্রমণ
সুষুপ্তি চেতনায়, 'রাই জাগাে,রাই জাগাে'..নাম সংকীর্তন
চতুর্দশী চন্দ্রমার হাসি অবিকল অষ্টাদশী তােমার মতন।
এসব ভাবতে ভাবতেই তাে কেটে গেল সমস্ত জীবন,
কতাে চাওয়া রয়ে গেল বাকি । পাওয়াও বইকি,
দিনশেষে কুলুঙ্গিতে হাত! ছেলেমানুষী। নয়কি!
জানি নাই তো সাধন তোমার....
এতাে আলাে ভরা ছিলাে হৃদয়-কুসুমে, জানতে পারিনি
আনমনে ভাবি, এ পথ তােমার, তবু তুমি এ পথের নও।
দূর ঐ তারাটির আলাে, চিরন্তন সবুজ দিশারী ছায়াপথে; তাই বুঝি একা একা সুধাপাত্র বও।
এতাে তৃপ্তি ছিলাে এ আঁচলে,কখনাে বলোনি পল্লবিত শিশুবৃক্ষ,ক্রমে মহীরুহ,নামে ঝুরি
তবু ইচ্ছে ফিরে যাওয়া মূলে, যা তার আশ্রয়।
যে শুশ্রষা-মায়া বিছিয়ে রেখেছ ঐ বুকের গভীরে
তার ছায়া,বিন্দু বিন্দু প্রতিষ্ঠায়, তাতাে তুমি নয় তােমার আসন পাতা মাটিতে, ঘাসের শিহরে.....
এতােটা সমৃদ্ধ ছিলে আপাত সে নিরাসক্তি আড়ালে!
পাহাড়িয়া ছােটনদী আপন গমনপথে ক্ষণিক দাঁড়ালে
দুহাতে জড়িয়ে, জন্ম-রহস্যকথা খানিক বিশ্রাম সানুমূলে,
যেন ঐ কবির কথায়,'শ্যামলে শ্যামল তুমি', নীলিমার নীলে।
জানি,আমার একার তুমি নও,তবু লিখি আখরে আখরে
একমাত্র তােমারই জন্য, মহার্ঘ্য অভিমান ঝরে হেমন্তশিশিরে.....
জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
"ভারতীয় আধুনিক ইংরাজী কবিতার মা বলা হয়।"
কমলা দাশ ও তাঁর কবিতা
অনুবাদ - তপনজ্যোতি মাজি
1 Comments
অসম্ভব ভালো , প্রতিটি !!! ধন্যবাদ, কবি | ধন্যবাদ, 'জ্বলদর্চি' কর্তৃপক্ষ ; এতো সুন্দর সৃজন, পাঠের সুযোগ করে দেওয়ার জন্যে ||
ReplyDelete