ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু
হে নৈঃশব্দ্য রাত্রি! আমার বিস্মৃত ঠিকানা
গৌতম বাড়ই
ভগীরথ সন্ধ্যায় অন্ধমুনির মতন বসে
তীরে-তীরে গান গায় ভেলার বেহুলা
লখীন্দর চুপ করে চোখ বুজে থাকে
নিজেও জানেনা মরে আছে না বেঁচে?
বেহুলা সুন্দরীর গাঙের জলেই
দীর্ঘকালীন বন্ধুত্ব এখন
যেখানে চুপ করে চেয়ে থাকে কাতলা
আড় রুই সরপুঁটি শোল বোয়ালের দল
শ্বাপদেরা ঘাটে-ঘাটে তীরে তীরে হা
তারা নারীগন্ধ অনেক পেয়েছে পুরাণে
মৎসকন্যার চেয়েও সুন্দরী জলজ রাত জাগে
সন্তরনে মাছেদের চিরস্থায়ী শান্তির দেশে।
বেহুলাও চুপ করে চেয়ে আছে জলে
কালোরাতে ঘুমভেঙ্গে বারবার গান গায়
জেগে-জেগে দেখে প্রতিপদ চাঁদের
মায়াবী অন্ধকার।
আমাদের ধূমাবতী মেঘের আঁচল সরিয়ে
এক খিলিপানে লজ্জার দোক্তা পাতায়
নেশাতুর কাম আঁঠালো আঠায়
দেহের জাহ্নবীতে সসেজ পাকোড়ায়
উর্বর চিকেন হান্ডী হাতড়ে-হাতড়ে
একমুঠো চালের গুঁড়ো বাতাসের সন্ধি
খিদে নিয়ে শেষ কবে গান হয়েছিল?
সুরকারের সুর সপ্তকে প্রাণ পায়নি
অবিসংবাদিত শব্দকোষের শব্দহীন জগত
রূপটানে খইফোটে চোখে-মুখে
জড়ভরতের কী বোর্ডেও কত আকুলি-বিকুলি
পৃথিবীর যাদুকর পোষাক খুলে এসো
তোমাদের আমি যুদ্ধের কৌশল শেখাবো--
তারপর হিম হয়ে আসে মাঘের বৃদ্ধেরা
মৃত্যুর ষড়যন্ত্রে ওদের চারপাশে ভারী বাতাস
পুরোনো পুরাণের সাথে
টুকটাক ওদের ষড়যন্ত্রের গল্পই বলছিলাম
হাতের জপমালার সুতো ছিঁড়ছিল
এক-এক করে জানি।
গাম্বাট নৌকোটাও ভেসে যায় বুড়ি চাঁদের সাথে
আলকাতরার গন্ধ লেগে থাকে নাকে
ঠিক যেমন করে মায়ের মৃত্যুগন্ধটা
এখনও অনুভব করি চোখে-মুখে-নাকে।
গন্ধরাও স্মৃতির মতন কোথাও যেন
জমা হয়ে থাকে
ত্বকে জিভ ঠেকিয়ে আচারের
পুরোনো স্বাদ গন্ধ যেমন পাই--
এখানে গভীর রাতে মরণ নাচতে আসে
ধুনুচি নৃত্যে পারদর্শী ছিল বিধবার মরণ ছেলে
সাড়ে সাতটাকায় দিনভর রিকশা টানত
দেড়টাকা যেত কিস্তিতে আর একটাকা খিস্তিতে।
মরণ নাচতে নাচতে আসে
লরীর ঘুরন্ত চাকার নিচ থেকে ঠিক এখানে।
যেভাবে বেহুলা আসে বেহালার ছড়ে
আমি যেভাবে মাছেদের সাথে গা-ভিজাই
শাহেনশাহ্ শেয়ারের দরে খোঁজে ওঠা-নামা
নামা-ওঠা বাজারের।
আজও মনে হয় হারিয়ে ফেলেছি বাড়ির ঠিকানা
যে ঠিকানায় আমি জন্মেছিলাম
আজও মনে হয় ভুল পথে ফিরি রোজ এখানে
পথটাও হারিয়ে ফেলেছি।
তারপর ভুল পথে রোজ ভগীরথ সন্ধ্যায়
অন্ধমুনির মতন
পৃথিবীর ভুলপথে এ বাড়ি ফেরা
যেখানে বেহুলা ভেলায় জলে
মাছেরা শুধু জলের সজীব জগতে
ওদের জলপৃথিবী অনেক বড় পৃথিবীর চেয়ে
ওদের হৃদয় ফুসফুস হাত পা অনেক বড়
তাইতো ভেসে চলে নটিকাল মাইল সাঁতরে সাঁতরে
চুপ করে বেহুলা সুন্দরীর গান শোনে
প্রকৃতই আমার বাড়ি ফেরা হয়না প্রতিদিন
গাঙের জলেই জীবন খুঁজে খুঁজে --
ভোর হলে ঝুরো ইতিহাস হয় প্রতিটা রাত্রি
এও জানে জনে-জনে
কবিকে কারাগারে দিলেও
তারজন্য মোলায়েম বাতাস আর ঘর দিও
লোহার গারদ দিও না
তোমার শেষের ভয়ংকর দিনে
তাতে আখেরে লাভ
কিছু মোলায়েম শব্দের পরশ
শেষ শান্তির ঘুমটা পাড়াতেও পারে
কবিকে ভয় পেয়োনা
ওঁর দাঁত-নখ-মুখ খুব মোলায়েম
ঠিকমতন আপেলটাও কামড়াতে পারেনা।
ত্রস্ত হরিণীরা সজল চোখে মুখে তুলে চায়
আকাশের সবুজে।
এখন আমিও মাছেদের কাছ থেকে
অনেক সন্তরণ শিখেছি
জলে ডুবে যাওয়ার প্রাক্ মুহূর্তে
লখীন্দর চোখ খোলেনি তাই
বৃদ্ধদের হিম জগতের গল্প শুনেছে বলে।
আমি সাঁতরে সাঁতরে হারানো জন্ম ঠিকানা
ঠিক খুঁজে নেব----
পূর্ব জন্মের একবস্তা ঋণ
প্রতিপদের চাঁদের মতন মাথার উপরে।
জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
0 Comments