জ্বলদর্চি

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা (গুচ্ছ কবিতা)/বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বাপ্পী

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা 
গুচ্ছ কবিতা 
বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বাপ্পী

ঠিকানা

তুমি মনুষ্য গাও গান মানবতার
স্ব-প্রজাতির অস্তিত্ব বিলিনে ভীষণ ব্যস্ত
ঠিকানাহীন থেকে ঠিকানা নিয়ে ভীষণ মত্ত
করছো দম্ভ;মৃত্তিকায় ঘুমিয়ে আকাশে উড়ো!
এক একটি মানুষই এক একটি উড়ন্ত বিহঙ্গ।
ঠিকানা-ঠিকানা করে বেড়ায়,
জীবন ঘুছে গেলে ঠিকানা হারায়।

বিহঙ্গরা গায় সুখের কাকলি
স্বজাতির অস্তিত্বে সংঘবদ্ধ-সজাগ
ঠিকানাহীন উড়ে অনন্ত-আকাশে।

মনুষ্য কিংবা বিহঙ্গ সবই ঠিকানাহীন
শুধু নীড়ের ঠিকানা অনন্ত অব্দি বয়ে রয়।
একই প্রবাহ থেকে উৎপত্তি স্থান ভেদে 
নদ-নদীর নাম ভিন্ন।ভিন্ন-ভিন্ন নামের
একই জল প্রবাহ শুধু অর্ণবে হয় ধাবিত।


অবেলার দুঃস্বপ্ন 

হাওর ঘেঁষে হাওর বয়ে বেড়ায়
কিনারা বিভক্ত করে সীমানা ও নাম
গ্রামগুলো রাশি রাশি জলে বেড়ায় ভেসে
কালো কালো নৌকো সাদা সাদা রাশিতে
একই গন্তব্যে ছুটে যায়...
নৌকোর'পর দিয়ে চলে যাচ্ছে ঢেউ
একটুও টলছে না!
গাছের ছায়া ডাকে—
তবু আমরা পিছু তাকাবার নই;
চাঁদের জোৎস্না স্নানের জন্য নয়।

খসে যাওয়া ধ্রুব তারা টা'র পড়ার স্থান নেই।
চারপাশ জলের সাগরে ভাসমান,
কিন্তু মন্দিরের দেবীর অর্ঘ জলশূন্য।

ধ্রুপদী নৃত্যের তামাশায় চারপাশ মাতোয়ারা
কপোত-কপোতীর বাসা বাঁধার চল নেই আর
কালো কালো নৌকা সাদা সাদা রাশিতে একই গন্তব্যে যায় ছুটে।...
চোরপকেটমার দের দখলে হাট—
চুরি করে দিল,ফেলনা বানানো ই কাজ।
প্রেমিকা স্বামীর এষণায় দ্বীপান্তরিত দূরদ্যাশে...

প্রিয় পাখি পণ ভেঙে লালসায় ফেরে ভিন্ন নীড়ে,অবেলায়—
বুকের বুননে সভ্যতার গম্বুজকৃত মন্দির নিমজ্জিত আজ।
আঁখির উত্তাপ দাহ নিভাতে যায়নি,বাষ্প হবে সমুদ্রের জল।
অরবে বুকের ক্ষত ঢেকে,মুখে অচিন হাসি এঁকে—
অবিরাম পাড়ি দিচ্ছি স্মৃতির সাগর;
নৌকোর উপর দিয়ে ঢেউ চলে যাচ্ছে,
একটু ও টলছে না,থামছে না,থামবার নয়।
পূর্ণিমার জোৎস্না স্নানের জন্য নয়।

তোমার নীল ভণিতায় প্রণয় লুফে নিয়েছে
জগৎ আদিম খেলায় মেতেছে তোমার ডবকা চোখে;
ললাটে কি অপরূপ অদৃষ্ট লেখা ভগবানের
কপোলের মাতাল করা হাসি কখনো না থামে।...


স্বপ্নের গাড়ি

 হঠাৎ করেই থামে ঝুমঝুম বৃষ্টিতে
অপেক্ষার স্বপ্নের সেই মেরুন রঙের গাড়ি
তড়িঘড়ি করে উঠি এ জীবনের গাড়িতে
গন্তব্য অজানা,ভীষণ বেগে ছুটছি তো ছুটছি—
কোথাও থামতে যেন মানা।

বহু রাস্তা উদ্যান মরুভূমি দ্যাশ-বিদ্যাশ পাড়ি দিয়ে
থেমেছি;থেমেছি তোমার কুঠিরে।
ও হে পরিচিতা,আসো দরজা খুলে
তোমার অনিন্দ্য সুন্দর মুখ খানি দ্যাখে নয়নের তৃষ্ণা মিঠাই—

এসো না এসো না,বিদায় বিদায়...!
গাড়ি ছুটে চলছে...ভীষণ বেগে
দাদুভাই,জাহ্নবীদি আরও কত প্রিয়জন গেল—
কারোই গাড়িতে জায়গা না হল।
গাড়ি চলছে তো চলছেই‌:
কোথাও যেন থামতে মানা।

বউ-সন্তান-স্বপ্ন-বাড়ি সবই তো ভেস্তে গেল
মহাকালের কালো গ্রাসে—
গাড়িতে স্বর্ণ রৌপ্য অর্থ বিত্ত
কাউকে উঠাতে তিলটুকু ঠাঁই নাই।
সহসা কোথাও থামতে যেন মানা।

তোমাকে ভুলে যেতে বলেছিলে এক অপরিচতার মতো
এজন্য আরো বেশি মনে পড়ে প্রতিদিন-প্রতি মুহূর্তে...
বলছিলে চড়বে একত্রে
কই!পরে কভু সঙ্গ না দিলে।

খাদ্যের পাশে বসে আছে ভীষণ অনাহারী কাক
খাচ্ছে না;ডাস্টবিনের পাশে পড়ে আছে সোনার ফসল
নিচ্ছে না।ধ্বংস হয়ে যাওয়া সভ্যতার বাটখারা
নিকাশের বালাই নেই।...
 
একদা থামবে,থামবে স্বপ্নের গাড়ি;
চালক বদলানোর প্রয়োজনে
একা উঠবে, কোথাও থামতে যেন মানা...


উত্তরের জানলা

উত্তরের জানলায় দ্যাখা যায় বুড়া-বুড়ির সংসার
ঝাউগাছ থেকে তেঁতুল তলা বুড়ার আনাগোনা
বুড়ির ভাতের মাতাল গন্ধে উত্তরের জানলা গিলে খাই...
মিলন কালে আটকে যাওয়া কুত্তাকে ঢিল মেরে দৌড়াই—
সবার পেটে ডুকে পড়ছি,মাতাল-গন্ধের হাওয়ায়।

জোছনা রাতে হাওয়ায় ভাসানো চালতা গাছে খোলা চুল
দ্যাখি।অঙ্গখানির দিকে তাকিয়ে থাকি—
একটু নেমে আস।দু'হাতে মেপে মেপে দ্যাখি
সভ্যতার আধুনিকতায় ডুবে থাকি—
জোছনা রাতে শাদা ছিপছিপে দু'পায়ের
ফাঁকে তাকিয়ে থাকি।দ্যাখি...

ঘুম ভাঙে।স্বপ্ন ভাঙে।বুড়া-বুড়ি আর নাই
পোড়োবাড়ি চোখে পড়ে হিজল গাছের কোনায়
কয়েকটা চালতা ঝুলে আছে গাছের আগায়
এত ঝড়ে অর্ধেকটাও জীর্ণ পাতা মাটিতে পড়ে নাই!

উত্তরের জানলায় বুড়া-বুড়ির সংসার দ্যাখা যায়...


দেবতার ঘুম

কবে ভাঙ্গবে তোমার ঘুম?
ঘুম কি কেবলই অনাথের সাথে?
আর কত কোটি বার পূজলে,
তোমার চক্ষু খুলবে?
প্রত্যুষে কিংবা স্নানের শেষার্ধে—
তোমার চরণে পড়ে থাকা আকুতিরা
আজ গিয়েছে নির্বাসনে।
ফের আচমকা আঘাত করে হৃদয় সমুদ্রে
ভেঙে চুরমার তটে—
ফের আশা বাঁধে নতুন সবুজের।

তোমার চক্ষু কত্ত দামি বলো তো?
কত্ত টাকার বিনিময়ে তোমার চক্ষু  খোলে?
ধনাঢ্য'রা ঢেলেছে ধন
তোমাকে আড়ম্বরে করবে অর্ঘ্য নিবেদন।
তোমার চক্ষু তো তাদের-ই জন্য খুলে
তুমি তো তাদের-ই দলে!
কেন রেখেছ এমন বাণী পুঁথি পুরে?
ধণী গরিবের ফারাক করেছ তুমি
কেহ না তা রুখতে পারে!

যারা খোলে তোমার চক্ষু বলে কিংবা ছলে
তুমি তো তাদের-ই দলে।
আপন তেজমায়া তাদের দিয়েছ যেন পুরে।
গরীব-কে দিয়েছ কেবল সহিবার শক্তি।
যেনো মনে কোন আশার প্রদীপ না জ্বলে।
অনাথের মনে আশার আলো জ্বলা,
ভীষণ এক যেন মত্য পাপ।
কেন এমন করে ঘুমিয়ে আছ প্রভু?
কবে তোমার এমন দূর্ভেদ্য ঘুম ভাঙবে?
কবে তোমার পুঁথির বাণী অক্ষরে অক্ষরে ফুটবে?
নতুন জ্যোতিতে পৃথিবী ভরে উঠবে!

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

আরও পড়ুন

Post a Comment

0 Comments