জ্বলদর্চি

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা (অণুগল্প) /অন্তরা ঘোষ

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা 
পাঁচটি অণুগল্প  
অন্তরা ঘোষ


নিথর ঢেউ
                 
ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে বহুক্ষণ ধরে গঙ্গার ঢেউয়ের তোলপাড় দেখছিলো ঋতম। একটা সময় পর স্থির গঙ্গার রূপ এলো সামনে।
চাঁদের অদ্ভুত আলো পড়ে জলের মধ্যে মাঝে মাঝে মায়ের মুখ আঁকা হয়ে যাচ্ছে।
অয়ন আর ঋদ্ধিমার ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবিটা কুটিকুটি করে ছুঁড়ে দিলো জলের মধ্যে।
সিদ্ধান্ত বদলে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো সে।
তোলপাড় সৃষ্টি যতই হোক, সব ঢেউই একসময় নিথর হয়। হতে বাধ্য।

 
আলো আর আলেয়া
                     
মিথ্যে মায়াবী আলোতে রঙ মাখতে গিয়ে অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছিল রোশনি।
মডেলিং করবে বলে স্বামী ও সন্তানকে নির্দ্বিধায় ছেড়ে চলে যেতে তার কোথাও বাধেনি।
কিন্তু আলো আর আলেয়ার তফাৎ বুঝতে তার অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।
তারপর থেকে হাতবদল হতে হতে সাতবছর পর ফের স্বামীর ঘরেই ফিরলো সে। নিজের ছেড়ে যাওয়া সন্তানের আয়া হিসেবে।


গাছ
                       
গড়ে ওঠা নতুন পাড়াটা একজোট হয়ে ঘিরে ধরলো মানুষটিকে। আজ নিয়ে তেরোদিন তারা তাকে মোড়ের ছাতিম গাছের নিচে বসে থাকা অবস্থায় দেখছে। রাত দশটা থেকে বারোটা।
তাকে ঘিরে ধরে কটূক্তি, হুমকি, ঘেরাও, থানা পুলিশের ভয় দেখানো সবকিছুই হলো।
নির্বাক যুবক কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকার পর জানালো আসল সত্যিটা।
বছর দশেক আগে এই মোড়েই পথদুর্ঘটনায় স্ত্রী কন্যাকে হারিয়েছিল সে। তারপর কিছুদিন মানসিক চিকিৎসকের  তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়েছিল তাকে।ডাক্তারের কথামতো এই ফাঁকা জায়গায় মেয়ের নামে একটা সপ্তপর্নী গাছ লাগিয়ে গিয়েছিল।
গত আটবছরে গাছটা ডালপালা মেলার পর তার পরম আশ্রয় হয়ে উঠেছে।


সারপ্রাইজ
                 
আরাত্রিক কেঁপে গেল ভেতরে ভেতরে। বরফ সরিয়ে রাস্তা ক্লিয়ার করছিল টিমের সাথে। ধ্বসে চাপা পড়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত দুটো গাড়ি। হঠাৎ করে বেরিয়ে এলো একটা হাত, লাল চুড়ি পরা, অনামিকায় হিরের আংটি।
এইরকম একটা আংটি তো সে গতছুটিতে গিয়ে আরোহীকে দিয়েছিল। তিনদিন আগে ক্যাম্পে থাকাকালীন ফোনে শেষ কথা হয়েছে।আরোহী তখন একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা বলেছিল।
তবে কী...?


দক্ষিণের বারান্দা
               
দক্ষিণের বারান্দাটার প্রতি এক অদম্য টান সেন বাড়ির ছোট বউয়ের। ওখানে যাওয়ার অছিলায় বাড়ির অন্য বউদের চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে সে। অন্যরা এজন্য মুখ টিপে হাসলেও, সে পাত্তা দেয়না খুব একটা।

নিঃসন্তান ছোটবউ দক্ষিণের বারান্দা থেকে চোখ পাতে সামনের কৃষ্ণচূড়া গাছের ডালে। সেখানে পাখিদের ঘর গেরস্থালি দেখে। দেখে মা পাখি আর তার বাচ্চাদের আদর সোহাগ। বারান্দার এককোণে ওদের জন্য সে চাল, গম, জল দিয়ে রাখে।

জীবন বুঝি এমন করেই ভারসাম্য রক্ষা করে।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

আরও পড়ুন

Post a Comment

0 Comments