জ্বলদর্চি

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা (কর্নাটক থেকে 'ফিরে দেখা')/বন্দনা সেনগুপ্ত

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা 
বন্দনা সেনগুপ্ত

কর্নাটক থেকে ফিরে দেখা

ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকেই যখন করোনার কথা শুনেছিলাম, তখন দুটো জিনিস লক্ষ্য করছিলাম। সাধারণ মানুষ যেন দুটো ভাগে ভাগ হয়ে গেছেন। একদল, ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন যেন এখুনি সবাই মারা যাবে, আর কিছুই করার নেই। আরেক দল সব সতর্ক বার্তাকে উড়িয়ে দিতে ব্যস্ত। তবে সবাই নানান রকম ভাল মন্দ আলোচনাও করে চলেছেন। 

সংকট ক্রমশ গভীর হতে লাগল। অনেকে প্রাণ হারালেন, এখনও সে যাত্রা বন্ধ করা যায়নি। আরও অনেকেই হারালেন রুজি রোজগারের রাস্তা, প্রাণ হারানোর চাইতেও বোধহয় তা বেশি কষ্টের। আমরা দেখলাম পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা। দেখলাম সামগ্রিক অর্থনৈতিক অরাজকতা। আর, সরকারের অপ্রস্তুত অবস্থা। 

এই কোভিড কালে, কিছু ভাগ্যবান বাদে, আমাদের অনেকেই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে হয়ত নিজেরা অত বেশি প্রভাবিত হননি কিন্তু পারিপার্শ্বিক তাঁদের আরও অনেক দরদী করে তুলেছে। অনেক দরদী ও মরমী ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী নিজের জীবন বাজি রেখে রোগীর প্রাণ বাঁচিয়েছেন, তেমনি আবার অনেকে কাজ করতে করতেই প্রাণ হারিয়েছেন।  

সরকার খুব তাড়াতাড়িই সবার সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে। প্যাকেজের পর প্যাকেজ ঘোষণা হয়েছে। অবশ্য তাতে কাজ কতটুকু হয়েছে বা সত্য সত্যই কে বা কারা উপকৃত হয়েছে তা নিয়ে তর্ক আর তরজা চলতেই থাকবে, বিশেষ  করে যখন ইলেকশন সামনে।

আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। অনেক বেড বেড়েছে। নতুন হাসপাতাল বানান হয়েছে ও হচ্ছে। প্রচুর মেশিন আমদানির করা হয়েছে ও অনেক যন্ত্রপাতির কারখানা তৈরির ব্যবস্থা হয়েছে। তবুও অপ্রতুল ব্যবস্থার অভিযোগ এড়ানো যাচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতির কথাও বাদ দেওয়ার উপায় নেই। 
অনেক ব্যবসা ও কল কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জানি না সব আবার খুলবে কিনা! কাজেই বোঝা  যাচ্ছে যে শুধু যে অনেকে কাজ হারিয়েছেন তাই নয়, যাঁদের কাজ আছে তাঁরাও বঞ্চনা ও শোষণের শিকার হচ্ছেন এবং প্রতিবাদ করার কোনও উপায়ই নেই। 

2020 শেষ হল, কিন্তু কোভিড কতদিন থাকবে, আদৌ যাবে কিনা এখনও স্পষ্ট নয়। আমাদের এখনকার অবস্থা কিন্তু তারিখের সঙ্গে পাল্টাবে না। যাঁদের শোষণ চলছিল, চলতেই থাকবে। যাঁদের চাকরি চলে গিয়েছিল বা ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাঁদের সেই ক্ষতি পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলতে হবে এবং সে কাজ দুরূহ। যাঁরা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদেরও সংগ্রাম চলতেই থাকবে।

সব চাইতে কঠিন কাজ মানসিকতার পরিবর্তন। এখনও, এই কঠিন দিনেও, বেশির ভাগ মানুষ যেন যেমন ছিল, তেমনই চলছে। বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত যেন উটের মত বালিতে মুখ গুঁজে রয়েছে। ভাবখানা যেন আর সবার যা হয় হোক আমার কিছুই হবে না। সমস্ত  সতর্কতা ব্যবস্থা তাঁরা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছেন। আরেক দল শুধু সমালোচনায় ব্যস্ত, প্রতিবেশী, এদেশের বা বিদেশের সরকার, সবাই এঁদের লক্ষ্য। ডামাডোলের বাজারে বেশ কিছু জন এই সুযোগ ব্যবহার করছেন বিভিন্ন অসামাজিক ও দুর্নীতিমূলক কাজ কর্মের জন্য। 

শেষ করার আগে একটু এখানের কথা বলে নিই। আমি কর্নাটকের একটি ছোট্ট শহরের বাসিন্দা। এখানে ওয়ার্ক অ্যান্ড স্টাডি ফ্রম হোম ছাড়া করোনা কালের আর বেশি প্রভাব পড়েনি। যদিও প্রথমে বেশ ছড়িয়েছে, কিছু প্রাণ গেছে, ভয় পেয়েছে সবাই। ভয় পেয়ে এখনও পর্যন্ত সবাই মাস্ক পরছে! এখানে দেখেছি জনদরদী চিকিৎসক ও চিকিৎসার ব্যবস্থা। ছোট্ট জায়গা বলে আলাদা কোভিড হাসপাতাল করা সম্ভব হয়নি, কিন্তু সাধারণ হাসপাতালেই এমন সুরক্ষার ব্যবস্থা যে সেখানে নিশ্চিন্তে যাওয়ার কোনও বাধা নেই। যে কোনও ব্যক্তির চিকিৎসার কোনও ত্রুটি সম্ভবত সহজে এখানে হবে না।
--------------------------
ছবি- শিবশঙ্কর মাল

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments