জ্বলদর্চি

ড.হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা : ভারতের উন্নত পারমাণবিক শক্তি সম্ভাবনার একটি অকাল মৃত্যু / পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

বিজ্ঞানের অন্তরালে বিজ্ঞানী ।। পর্ব ― ০৮
ড. হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা : ভারতের উন্নত পারমাণবিক শক্তি সম্ভাবনার একটি অকাল মৃত্যু 

পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা 

'বুঝতেই পারছো, ছয়ের দশকে আমরা ভারতকে নিয়ে খুব সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলাম। ভারত ওই সময় যে শুধুই পরমাণু বোমা বানানোর তোড়জোড় শুরু করেছিল, তাই নয়; তড়িঘড়ি পরমাণু বোমা বানানোর জন্য শুরু করে দিয়েছিল কাজও। আর ওই সময় রাশিয়ার সঙ্গে খুব দহরম মহরম ভারতের'― টেলিফোনে স্পর্শকাতর বিষয়ে মন্তব্য করে বসলেন রবার্ট টি. ক্রাওলি। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ)-র একজন উচ্চপদস্থ অফিসার। গোপন তথ্য ফাঁস করলেন ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা 'টিবিআরনিউজ ডট ওআরজি' ওয়েবসাইটের ঝানু সাংবাদিক গ্রেগরি ডগলাস-এর প্রশ্নের উত্তরে। 

  ক্রাওলি আরও বলেন― 'বিশ্বাস করো, ওই লোকটা খুব ভয়ংকর ছিল। একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা (বিমান দুর্ঘটনা) ঘটেছিল। পরমাণু বোমা নিয়ে লোকটা আমাদের ভাঁজ আরও বাড়ানোর জন্য ভিয়েনায় যাচ্ছিল একটি সম্মেলনে যোগ দিতে। তাই ওর বিমানে আগেভাগেই রাখা হয়েছিল একটি বোমা।' এ কী সাংঘাতিক জিঘাংসা! নিজের পরম শত্রুকে উচিত শিক্ষা দিতে এক নিরীহ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল প্রথম পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রটি!

  এ হেন টেলি-কথোপকথন রেকর্ড করা হয়েছিল ২০০৮ সালের ১১ জুলাই। আর সেই টেলি-কথনের অনুলিপি ওয়েবসাইটের অফিসে পৌঁছয় সে-বছর নভেম্বরে। অথচ উক্ত কথোপকথনে বর্ণিত বিমান দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর আগে। ১৯৬৬ সালে। এতদিন পর্দার আড়ালে থেকে গেছে ঘটনার প্রকৃত কারণ। যদিও তার দু'দশক পূর্বে মাটিতে মিশে গেছে হিরোশিমা-নাগাসাকি। পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের তপ্ত আঁচে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। হিংসা ভুলে গিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে মানুষ। আর যুদ্ধ নয়। এবার শান্তি চাই। স্বাক্ষরিত হয়েছে প্যারিস শান্তি চুক্তি। আর সেই শান্তি চুক্তির অন্তরালে চলছে কি-না এক গভীর ষড়যন্ত্র! আবারও এক যুদ্ধ! 'কোল্ড ওয়ার' (Cold War) বা ঠাণ্ডা যুদ্ধ! সরাসরি রণাঙ্গনে নামল না কেউ, অথচ ভেতরে ভেতরে প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি চোরা স্রোত বয়ে যেতে থাকল দু'পক্ষে। যুযুধান সেই দুই প্রতিপক্ষ কে? সোভিয়েত রাশিয়া এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। তৎকালীন বিশ্বের দুই শ্রেষ্ঠ পরমাণু শক্তিধর দেশ। একে অপরকে টেক্কা দিতে চাইছে দু'পক্ষ। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়, কূটনৈতিক বিচক্ষণতায় এবং সর্বোপরি পৃথিবীতে কর্তৃত্ব করার অদম্য নেশায়। ঠিক যেন হিটলারি মানসিকতা। তবে অহিংস উগ্রতায়। সেই দ্বিধাবিভক্ত কঠিন সময়ে রাশিয়ার প্রতি অভিন্ন বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হল ভারতবর্ষ। স্বাক্ষরিত হল একগুচ্ছ নতুন চুক্তি। যা উন্নত রাষ্ট্রগুলো ভালো চোখে দেখেনি। তারই খেসারত দিতে হল ১৯৬৬ সালের ২৪-শে জানুয়ারি। এক ভয়ংকর প্লেন দুর্ঘটনায় ছারখার হয়ে গেল ভারতের নিউক্লিয় শক্তির অধরা স্বপ্ন। ভারতের কাছে যে ক্ষতি অপূরণীয়। ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন? যা মাত্র ১৯ বছর আগে স্বাধীন হওয়া ভারতবর্ষের আকাশ জাতীয় শোকে আচ্ছন্ন করে!
           
  ভয়ংকর সুন্দর মন্ট ব্লাঙ্ক(mont blanc)।   সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতমালার উচ্চতম শৃঙ্গ। মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের সমাহার আর পরতে পরতে ভয়ানক মৃত্যুর গোপন হাতছানি। ঠিক তার উপরে উড়ছে 'কাঞ্চনজঙ্ঘা'। মুম্বাই থেকে নিউইয়র্কগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১০১ বোয়িং ৭০৭ বিমান। ১০৬ জন যাত্রী ও ১১ জন বিমানকর্মী নিয়ে। সবাই ভারতীয়। দিব্যি চলছিল প্লেনটি। আর মাত্র পাঁচ মিনিট। তারপরেই জেনেভায় অবতরণ করবে সেটি। বিমানবন্দরের মাটি ছোঁবে। হঠাৎই কেঁপে উঠল বিমানটি। তারপর? বাকিটা অন্ধকার। মন্ট ব্লাঙ্ক'এর বুঁসো হিমবাহের উপর ভেঙে পড়ল এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট। কিছুই আর আস্ত নেই। টুকরো টুকরো কণায় পরিনত হয়েছে ততক্ষণে। বিমানটি যেভাবে ভেঙে পড়েছে পাহাড়ের চূড়ায়, তাতে কারও জীবিত বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা নেই। দুঃসংবাদ পৌঁছে গেল ভারতে। গোটা দেশ এক লহমায় অন্ধকারময় শোকে আচ্ছন্ন। বুকে পাথর চাপা হাহাকার। কান্নার ঢেউ। কারণ তিনি আর নেই। 

  তিনি ভারতের পরমাণু বিজ্ঞানের জনক ড: হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা। সেদিন ওই ১০৬ জন যাত্রীর মধ্যে তিনিও ছিলেন সেই অভিশপ্ত বিমানে। ভিয়েনার উদ্দেশ্যে এয়ার ইন্ডিয়া বিমানে আসছিলেন তিনি। ভিয়েনায় আই.এ.ই.এ. সম্মেলনে যোগ দিতে। ইতিহাস অপেক্ষা করে আছে। ইতিমধ্যে ভারতের সঙ্গে একগুচ্ছ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ফ্রান্স। জানা যায়, ওই বিমানে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না। এমনকি মাঝপথেও নিয়ম মেনে যান্ত্রিক ত্রুটি নেই বলে রিপোর্ট করা হয়েছিল। অথচ জেনেভা এয়ারপোর্টে টেক অফের ঠিক ৫ মিনিট আগেই ভেঙে পড়ে সেটি। 

  এ কী নিছক দুর্ঘটনা, না গভীর ষড়যন্ত্র? যদিও ভারত সরকার দুর্ঘটনার তদন্ত বেশি দীর্ঘায়িত করেনি। বিমান দুর্ঘটনার আনুষ্ঠানিক কারণ হিসেবে বলা হয় যে জেনেভা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়া বিমান চালকের ভুল বোঝাবুঝির জন্য বিমান ক্র্যাশ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু তথ্য অন্য কিছু ইঙ্গিত করে। কারণ ঘটনা হল, ১৯৬৫-র অক্টোবরেই অল ইন্ডিয়া রেডিও’য় একটি অনুষ্ঠানে ভাবা বলেছিলেন, 'সরকার সবুজ সঙ্কেত দিলে দেড় বছরের মধ্যেই পরমাণু বোমা বানিয়ে ফেলতে পারবে ভারত।' সে উদ্দেশ্যে একটি জরুরি পরমাণু সম্মেলনে যোগ দিতে তাঁর ইউরোপে আগমন। এমন ঘোষণার তিন মাস পরেই প্লেন ক্র্যাশ হল। শুধু তাই নয়, প্লেন ক্র্যাশের ১৩ দিন আগে রহস্যজনকভাবে দেশের প্রধানমন্ত্রী মারা গেলেন। তাহলে কি ভারতের উত্থানে কেউ শঙ্কিত হয়ে পড়ছিল? সে বা তারা মনে প্রাণে চায়নি বিশ্বের দরবারে ভারতের পরমাণু শক্তির চির উন্মেষ ঘটুক? পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের স্বীকৃতির সম্ভাবনা মুছে ফেলতে কোন বিকল্প কসুর ছাড়েনি। তাই বুঝি পৃথিবী থেকে বিজ্ঞানী ভাবা'কে চিরতরে সরিয়ে দেবার অসাধু চক্রান্তের ছক কষা? বিমান দুর্ঘটনা তারই অঙ্গ! তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে যবনিকা নেমে আসবে ভারতের পরমাণু গবেষণা প্রকল্পে― এ তো জানা কথা। তাহলে কে বা কারা ভারতের সেই জাতীয় শত্রু? সিআইএ এজেন্ট রবার্ট ক্রাওলি ও সাংবাদিক ডগলাস-এর কথোপকথনের পাশাপাশি আরও কিছু তথ্য স্পষ্ট ইঙ্গিত করে বিমান দুর্ঘটনায় কার হাত রয়েছে!

  প্রথমত, ফরাসি পত্রিকা 'লিঁয় ক্যাপিটাল'-এ প্রকাশিত গ্রাফিক নভেলে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় ১৯৬৬ সালের ২৪ জানুয়ারি ওই বিমান দুর্ঘটনায় উদ্ধার কাজ বিলম্বিত হয়েছে এবং তদন্তে বিস্তর ফাঁকফোকর আছে। বিখ্যাত কার্টুনিস্ট নিকোলাস ভিল্ড এই বিতর্কিত গ্রাফিক নভেল তৈরির জন্য সাহায্য নিয়েছেন ফাঁসোয়াজ রে ও তালিন তের মিনাশিও নামের দুই ফরাসি সাংবাদিকের। দুই সাংবাদিকের অভিমত― সে-সময় পরমাণু গবেষণায় বিজ্ঞানী ভাবা ভারতকে এমন উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করেছিলেন যে আর মাত্র বছর দেড়েকের মাথায় দিল্লির হাতে পরমাণু বোমা এসে যাওয়ার কথা। পরমাণু গবেষণায় ফ্রান্সের সঙ্গে একগুচ্ছ চুক্তি হয়েছিল ভারতের। যার নেপথ্যে মাস্টারমাইন্ড ছিলেন ভাবা। স্বাভাবিকভাবেই নভেলের বিষয়বস্তু বহু দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। এই প্রসঙ্গে কার্টুনিস্ট ভিল্ড-এর বক্তব্য খুব স্পষ্ট― 'গ্রাফিক নভেল লেখার জন্য অল্পবিস্তর কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়েছে ঠিকই, তবে ঘটনার বিবরণ, চরিত্র― সবই আসল।'
  
  দ্বিতীয়ত, ড্যানিয়েল রোচে নামে এক অভিযাত্রী দাবি করেছেন; দুর্ঘটনা স্থল থেকে তিনি এমন কিছু নমুনা পেয়েছেন যা না-কি মার্কিন সামরিক ফৌজের! ১৫ বছর ধরে তিনি দুর্ঘটনা স্থলে বারবার গিয়েছেন। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নমুনা-নথি সংগ্রহ করেছেন। সে-সব নমুনা ও নথিপত্রের ভিত্তিতে তিনি মনে করেন, হোমি ভাবা যে বিমানের যাত্রী ছিলেন, তার সঙ্গে ন্যাটো'র একটি যুদ্ধ-বিমানের সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনা স্থল থেকে কেন মার্কিন বায়ুসেনার বিমানের ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রাংশের নমুনা মিলেছে, সেই প্রশ্নও তুলে ধরেছেন তিনি।
         
 তৃতীয়ত, জেনেভা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়া বিমান চালকের ভুল বোঝাবুঝির জন্য প্লেন ক্র্যাশ-এর যে তত্ত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে খাড়া করা হয়, তা সর্বৈব মিথ্যা। রোচে'র দাবি, ঘটনা মোটেও তা নয়। বোয়িং-৭০৭ বিমানের চালক ক্যাপ্টেন জো ডিসুজা খুবই দক্ষ চালক ছিলেন। এ ব্যাপারে রোচে মুম্বাই এসে এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন।

  চতুর্থত, 'শত্রুর মিত্র আমার শত্রু'― এ হেন ট্যাগলাইনে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলির সস্তা ইগো কাজ করেনি তো? সোভিয়েত রাশিয়াকে টাইট দিতেই কি ভারতের বিপক্ষে দুর্ঘটনার জাল বিছানো? অস্বীকার করার উপায় নেই।

  উপরে বর্ণিত টেলি-কথন ও সংগৃহীত তথ্য ষড়যন্ত্রের তত্ত্বে সিলমোহর লাগিয়ে দেয়। আর এ হেন ষড়যন্ত্রের পেছনে কে বা কারা, তাও দিনের আলোর মতো পরিস্কার। এখন প্রশ্ন হল, দুর্ঘটনায় পরমাণু গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আরও বিজ্ঞানীর জীবন সংশয় হয়েছে ভারতে; তাহলে এই একটি বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে গোটা ভারতবর্ষ এত বিমর্ষ কেন?

  আসলে বিজ্ঞানী ভাবা ছিলেন একাধারে বিশ্বমানের গবেষক, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, গণিতবিদ, সঙ্গীতজ্ঞ, চিত্রকর, দক্ষ প্রশাসক, প্রতিষ্ঠান-নির্মাতা। যদি একই ব্যক্তির মধ্যে আমরা এই সবগুলো গুণের সমন্বয় দেখি, তখন তাকে অবাস্তব কাল্পনিক চরিত্র বলে মনে হয়। কিন্তু কল্পনা নয়, হোমি জাহাঙ্গির ভাবা ছিলেন এমনই একজন বিরল সত্যিকারের মানুষ।

  তা, এ হেন মানুষটির জন্ম এক ধনাঢ্য পার্সি পরিবারে, ১৯০৯ সালের ৩০ অক্টোবর। তাঁর মা মেহেরেন ফ্রামজি পাণ্ডে ছিলেন ভিখাজি ফ্রামজি পাণ্ডে'র কন্যা এবং বিখ্যাত সমাজসেবী, ব্রিটিশ ভারতের প্রথম ব্যারোনেট স্যার দিনশ পেটিট-এর নাতনি। তাঁর পিতা জাহাঙ্গীর হরমুসজি ভাবা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এম.এ. এবং লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করেন। টাটা শিল্পগোষ্ঠীর আইন উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। সেই সুবাদে টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের পারিবারিক আত্মীয়তা ছিল। তার ওপর, হোমি'র পিসির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল টাটা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা জামশেঠজি টাটা'র জ্যেষ্ঠ পুত্র দোরাবজি টাটা'র।

  মুম্বাই-এর ক্যাথিড্রাল স্কুলে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। জন কোন্নন বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক। ১৯২৪ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি সিনিয়র কেমব্রিজ পরীক্ষায় সম্মানের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। এর পরের ধাপ ইংল্যান্ডে গিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা। কিন্তু কেমব্রিজে ভর্তির ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। তখন হোমি'র বয়স মাত্র ১৫। অগত্যা আরও দু'বছর কাল অপেক্ষা করতে হবে। বাড়িতে বেকার বসে না থেকে তিনি এলফিনস্টোন কলেজের আর্টস-এ ভর্তি হয়ে গেলেন ১৯২৫―২৬ শিক্ষাবর্ষে। পরের শিক্ষাবর্ষে আবার রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স-এর বিএসসি কোর্স। শেষে ১৯২৭ সালে ১৮ বছর পূর্ণ হলে ইংল্যান্ডে পাড়ি দিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য। তাঁর বাবা জাহাঙ্গীর ভাবা ও পিসেমশাই দোরাবজি টাটা'র পরিকল্পনা ছিল কেমব্রিজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে জামসেদপুরে টাটার নতুন ইস্পাত কারখানার দায়িত্ব নেবেন হোমি। এতে তাঁর আপত্তি ছিল না। কিন্তু যখন তিনি কেমব্রিজের গনভিল অ্যান্ড কেইয়াস কলেজে ভর্তি হলেন, তখন কেমব্রিজের পদার্থবিজ্ঞান শাখায় নতুন বিপ্লবের সূচনা হয়েছে। একঝাঁক পণ্ডিতের গবেষণায় সমৃদ্ধ হচ্ছে ফিজিক্স। ক্যাভেনডিস ল্যাব‍রেটরিতে লর্ড রাদারফোর্ড পরমাণুর নিউক্লিয়াস ও প্রোটন আবিষ্কার করে ফেলেছেন। অন্যদিকে হাইজেনবার্গ, নীলস বোর, শ্রোডিংগার, পল ডিরাক প্রমুখ বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় অত্যাশ্চর্য সব থিওরি আবিষ্কার হচ্ছে। 

  পদার্থবিজ্ঞানের সেই সুবর্ণ যুগে ফিজিক্সের শিক্ষক হিসাবে তিনি কাছে পেলেন অধ্যাপক পল ডিরাককে। তৈরি হল গণিত ও ফিজিক্সের প্রতি অনড় টান, অকৃত্রিম ভালোবাসা। ঠিক করলেন ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে পড়বেন গণিত ও ফিজিক্স। ১৯২৮ সালের ৮ আগস্ট অনুমতি চেয়ে বাবাকে চিঠি লিখলেন তিনি। অনেক কষ্টে একটি শর্তে মিলল অনুমতি। শর্ত এই : ইঞ্জিনিয়ারিং-এ প্রথম শ্রেণী পেতে হবে। তাহলে পরের দু'বছর পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়নের অনুমতি মিলবে। অন্যথায় বিষয় বদল করা চলবে না। শুরু হল কঠিন অধ্যবসায়। ফলস্বরূপ, ১৯৩০-এ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হলেন। তারপর সময় নষ্ট না করে ভর্তি হয়ে গেলেন গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে। এ সময় পদার্থবিজ্ঞানের একঝাঁক বাঘা বাঘা পণ্ডিতদের সান্নিধ্যে নিজেকে সম্পৃক্ত করে তুললেন তিনি। কোপেনহেগেনে নীলস বোর, জুরিখে উলফগ্যাং পাউলি ও রোমে এনরিকো ফার্মি'র সঙ্গে এক বছর ধরে চলল গবেষণা। বিফলে গেল না তাঁর সে অধ্যবসায়। ১৯৩২-এ গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানেও প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করলেন। ১৯৩৩-এ পাউলি'র তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গবেষণাপত্র। গামা রশ্মির বিকিরণে ইলেকট্রনের ভূমিকা বিষয়ে। এই জার্নালের সুবাদে ১৯৩৪-এ পান 'আইজাক নিউটন স্কলারশিপ'। ১৯৩৫ সালে প্রফেসর ফাউলার-এর অধীনে কমপ্লিট হল তাঁর পিএইচডি।

  কোয়ান্টাম ইলেকট্রো-ডায়নামিক্সের বিকাশ ঘটছে তখন। হাই-এনার্জি ফিজিক্সে কাজ করছেন হাতে গোনা কয়েকজন বিশেষজ্ঞ। হোমি ভাবা এই গ্রুপের অন্যতম প্রধান একজন বিজ্ঞানী। তিনি প্রথম ১৯৩৫-এ ইলেকট্রন-পজিট্রন স্ক্যাটারিং ক্রস-সেকশন গণনা করেন। যা আদতে 'ভাবা স্ক্যাটারিং' বা ভাবা বিক্ষেপন নামে পরিচিত হয়। অ্যান্টি-পারটিক্যাল তৈরির বড় কোন কণাত্বরকে শক্তির ক্রম পরিমাপ করতে এই বিক্ষেপন প্রনালী খুব কাজে লাগে। ১৯৩৬-এ কোপেনহেগেনে নীলস বোর-এর ল্যাবে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে ভারতের আরেক দিকপাল প্রফেসর মেঘনাদ সাহা'র। স্বভাবতই প্রফেসর সাহা ভাবা'র প্রতিভার দ্যুতিময় উপস্থিতিতে দারুণ মোহিত হন। সে-বছর ভাবা জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ওয়াল্টার হেইটলারকে সঙ্গে করে যুগ্মভাবে মহাজাগতিক রশ্মির ধর্ম নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। তাদের এই জুটি কসমিক রশ্মির ইলেকট্রন-পজিট্রন ঝর্ণা (Cosmic Ray Showers) সৃষ্টির তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন। এই তত্ত্ব ১৯৩৭ সালে রয়্যাল সোসাইটির জার্নালে 'ভাবা-হেইটলার তত্ত্ব' নামে প্রকাশিত হয়। গবেষণাপত্রে তাঁরা মহাজাগতিক রশ্মির মিথষ্ক্রিয়ায় ইলেকট্রন ও প্রোটনের মধ্যবর্তী ভরের কণার অস্তিত্ব উল্লেখ করেন। ওই নব্য কণা পরে 'মেসন' নামে পরিচিতি লাভ করে। যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বিজ্ঞানী ভাবা নামটা 'মেসন' রাখলেন।

  ১৯৩৯ সালে তিনি ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানী প্যাট্রিক ব্ল্যাকেট-এর গবেষণাগারে একটা বড় গ্র্যান্ট সমেত ডাক পান। সেখানে কাজে যোগ দেওয়ার আগে কিছুদিন ছুটি কাটানোর জন্য বাড়ি ফিরলেন ভাবা। তারপরেই শুরু হয়ে গেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ব্যাস, যাতায়াতের সমস্ত পথ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। অনির্দিষ্টকালের জন্য থেকে গেলেন ভারতে। কেমব্রিজের অসমাপ্ত গবেষণার সুযোগ এখানে বড় একটা নেই। বাধ্য হয়ে ব্যাঙ্গালোরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স (আইআইএস)-এ প্রফেসর সি ভি রমনের অধীনে গবেষণা শুরু করলেন। এখানে তাঁর কাজের আদব-কায়দাটি বেশ অভিনব। থাকতেন শহরের অভিজাত 'ওয়েস্ট এন্ড' হোটেলে। রাত জেগে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের গণিতের সমস্যা সমাধান করতেন। ফলে ঘুম থেকে উঠতেন একটু দেরি করে। দুপুর গড়িয়ে ইনস্টিটিউটে আসতেন নিজের দামী ঢাউস গাড়ি চড়ে। প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ছোট্ট অফিস ঘরে পাঁচ - ছয় ঘন্টার কাজ। তারপর পুনরায় হোটেলে ফিরতেন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে। এভাবেই ১৯৪১ সালে ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স থেকে প্রকাশ পায় তাঁর 'Scattering of Charged Mesons' নিবন্ধটি। এর জন্য প্রফেসর রমন ভাবা'র নাম রয়্যাল সোসাইটিতে সুপারিশ করেন। মাত্র ৩২ বছর বয়সে ১৯৪১ সালে রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন ভাবা। 

  ১৯৪২-এ তাঁর পিতৃ-বিয়োগ ঘটে। শোকে-দুঃখে অসম্ভব ভেঙে পড়লেন তিনি। দু'মাস পর পিতৃশোক কাটিয়ে উঠে আবার কাজে যোগ দেন। এ সময় ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁর কাছে অফার আসে অধ্যাপনা-গবেষণার জন্য। সব অফার ফিরিয়ে দিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সংকীর্ণ রাজনীতি ও তীব্র দলাদলি তাঁর না-পসন্দ। ব‍রং এ সময় তিনি উপলব্ধি করতে শুরু করেন; এদেশে বাইরে থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ধার করলে চলবে না। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গড়তে হবে বিশ্বমানের গবেষণা কেন্দ্র। সেজন্য ১৯৪৫-এ যুদ্ধশেষে ইউরোপে আর না-ফেরার স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি। তার উপরে মহাত্মা গান্ধী এবং জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে পারিবারিক সখ্যতা তো ছিলই। এর সঙ্গে যুক্ত হলো স্বদেশ প্রেম। দেশের জন্য নিজের মনের মত করে কিছু করার অদম্য স্পৃহা জাগ্রত হল। যেখানে কেবল বিশুদ্ধ গবেষণাই মূলমন্ত্র হবে। তাঁর সে-ভাবনা থেকে উঠে এল বিশ্বমানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ' (TIFR)। ১৯৪৫-এর ১-লা জুন মুম্বাই শহরে টাটাদের পুরনো বাড়িতে TIFR-এর পথ চলা শুরু হল। তিনি হলেন প্রথম পরিচালক। কেমব্রিজে ভাবা'র খুব কাছের বন্ধু ছিলেন নোবেল জয়ী সুব্রক্ষণ্যম চন্দ্রশেখর। আইআইএস-এ কাকা সি ভি রমনের ডাক উপেক্ষা করে সুব্রক্ষণ্যম চন্দ্রশেখর বন্ধু ভাবা'র অনুরোধে TIFR-এ শর্তসাপেক্ষে এক বছরের জন্য গবেষণা করতে সম্যত হয়েছিলেন। 
         
  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ম্যানহাটন প্রকল্পে পারমাণবিক শক্তির সাফল্য চাক্ষুষ করে তিনি উপলব্ধি করেন― স্বাধীন ভারতের জন্য একটি বড় সমস্যা দেখা দেবে আর তা হল বিদ্যুৎ সমস্যা। সেই সমস্যার সমাধান হেতু পারমাণবিক শক্তি একান্তই প্রয়োজন। স‍রাস‍রি কথা বললেন ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে। পারমাণবিক শক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বোঝাতে সক্ষম হলেন প্রধানমন্ত্রীকে। অনুমতি মিলল তেমন কেন্দ্র গড়ে তোলার। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন ভারতে সর্বপ্রথম গঠিত হল অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন। এর চেয়ারম্যান হলেন ভাবা নিজে। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য কোন দ্বিতীয় প্রশাসনিক ব্যক্তির হস্তক্ষেপের অধিকার রইল না এতে। সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে ভাবা'র অধীনে কাজ করবে কমিশন। TIFR-এ অস্থায়ীভাবে কাজ শুরু করে কমিশন। দেশ জুড়ে ভূতাত্ত্বিক জরিপ চলল ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামের মত তেজস্ক্রিয় মৌলের সন্ধানে। ১৯৫৪ সালে আরব সাগরের তীরে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে TIFR-এর পাকাপাকি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হল। ১৯৬২ সালে হল দ্বারোদ্ঘাটন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও দ্বারোদ্ঘাটন দুটোই করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহেরু। ১৯৫৪ সালে ভারত সরকার তাকে 'পদ্মভূষন' উপাধিতে সম্মানিত করে। ঐ বছরের ৩-রা জানুয়ারি আরও একটি গবেষণা কেন্দ্র 'অ্যাটমিক এনার্জি এস্টাব্লিসম্যান্ট, ট্রম্বে' (AEET) খোলা হয়েছে। ১৯৬৬ সালে মৃত্যুর পর তাঁর সম্মানে AEET-র নাম রাখা হয় 'ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার' বা বার্ক (BARC)।
        
  ইতিমধ্যে ১৯৫১, ১৯৫৩ ― ১৯৫৫ পর্যন্ত বেশ কয়েক বার তাঁর নাম নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন করা হয়। কিন্তু প্রতিবারই কোন অজ্ঞাত পশ্চিমী কারণে তা ফলপ্রসূ হয়নি। অবশ্য সেজন্য তাঁর কোন ক্ষেদ ছিল না। উপরন্তু তখন তিনি ভারতব্যাপী নতুন নতুন পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করে চলেছেন। আসলে নেহেরুর পরামর্শ ও অনুমোদনে বড় বড় সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হচ্ছিল না তাঁর। সমস্যা হল ১৯৬৪ সালে। প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর অকাল মৃত্যু পরমাণু শক্তি বিপ্লবে সাময়িক ভাটা বয়ে আনল। নেহেরুর পর লাল বাহাদুর শাস্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হলেন। তাঁর সঙ্গে কিছুটা সমঝোতা হল ভাবা'র। এর মাঝে ১৯৬৫ সালের অক্টোবরে অল ইন্ডিয়া রেডিও'য় তিনি ঘোষণা করলেন― 'সরকার সবুজ সঙ্কেত দিলে দেড় বছরের মধ্যেই ভারত পরমাণু বোমা বানিয়ে ফেলতে পারবে।' আবার ধাক্কা খেল তাঁর সে পরিকল্পনা! ১৯৬৬-এর ১১ জানুয়ারি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। যদিও মৃত্যুর কার্যকারণ রহস্যে মোড়া। যাইহোক, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন নেহেরু-কন্যা ইন্দিরা গান্ধী। সেটা ২৩-শে জানুয়ারি ১৯৬৬। বীর শহীদ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন। ঠিক তার একদিন পরে ২৪-শে জানুয়ারি ঘটে গেল ভারতবর্ষের এযাবৎ কালের সবচেয়ে বড় ইন্দ্রপতন। 
      
  মন্ট ব্লাঙ্ক'এর পর্বত শিখরে ভেঙে পড়ল হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা'র বিমান বোয়িং ৭০৭। কিংকর্তব্যবিমূঢ় জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে গোটা দেশ। শোকে-দুঃখে মূহ্যমান সকল দেশবাসী। ঘটনার আকস্মিকতায়। পরমাণু বিজ্ঞান গবেষণায় নেতৃত্বহীনতার শূন্যতা তৈরি হওয়ায়। নিয়তির নিষ্ঠুর অভিশাপে বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়ে গেল ভারতের পারমাণবিক শক্তি গবেষণায় ও কমিশনের প্রশাসনে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দ্যোদূল্যমান; এরপর পারমাণবিক প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নেবেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিল বহুমুখী প্রতিভাধর অকৃতদার মানুষটির স্থলাভিষিক্ত কাকে করবেন? অকালে ছেড়ে যাওয়া তাঁর পাদুকায় পা গলাবেন কে? যার কাছে ছিল আগে দেশ; পরে বাকি সব। তাঁর শূন্যস্থান কখনও পূরণ হবার নয়। নিজের গবেষণা ও প্রশাসন― নিজ হাতে সবদিক দেখাশোনা করতেন তিনি। তাই বলা যায়; তাঁর বিকল্প শুধু তিনি নিজে, অন্য কেউ নয়। তাঁর হাত ধরে ভারতে পরমাণু বিজ্ঞানচর্চায় জোয়ার এসেছিল। তাই তাকে ভারতবর্ষের পরমাণু বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তাঁর মৃত্যুতে অচিরেই যার আপাত সলিল সমাধি ঘটল। তবে বোধহয় একেবারে অস্তমিত হয়ে যায়নি তাঁর সাধের পরমাণু প্রকল্প। সেজন্য তাঁর মৃত্যুর পরে ১৯৭৪ সালে এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের চোখে ধূলা দিয়ে পুনরায় ১৯৯৮ সালে পরমাণু শক্তির সফল বিস্ফোরণ ঘটায় ভারত। রাজস্থানের পোখরানে মিশন 'স্মাইলিং বুদ্ধ' আজও হাসিমুখে ড: হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা'র অপূর্ণ স্বপ্নের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

পেজ- এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments