জ্বলদর্চি

আবৃত্তির পাঠশালা-১১/শুভদীপ বসু

আবৃত্তির পাঠশালা-১১
শুভদীপ বসু

বিষয়-অলংকার
(পূর্বে অলংকার কি,শব্দালংকার অর্থালংকার এর সংজ্ঞা ও অনুপ্রাস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে)

২)যমক-একই শব্দ বা একই রকমের শব্দ যদি দুবার বা একাধিকবার আলাদা আলাদা অর্থে ব্যবহৃত হয় তবে তাকে যমক অলংকার বলে। এটি মূলত চার প্রকার-আদ্য,মধ্য অন্ত্য ও সর্বযমক।
১) আদ্য যমক-কবিতার চরণ এর বা পংক্তির শুরুতেই এই যমক থাকে তাই এর এরূপ নাম।
উদাহরণ-
'ভারত ভারত খ্যাত আপনার গুণে'
-এখানে ভারত শব্দটি দুবার ব্যবহৃত হয়েছে দুই ভিন্ন অর্থে। প্রথমবার কবি ভারতচন্দ্র কে বোঝানো হয়েছে,দ্বিতীয় বার ভারতবর্ষকে বোঝানো হয়েছে।
২)মধ্য যমক-চরণের মধ্যবর্তী জায়গায় ব্যবহৃত হয় যে যমক তাকে মধ্য যমক বলে।যেমন-
'আবরিহে দিননাথে ঘন ঘন রবে'
-এখানে ঘন শব্দটির দুটি ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে চরণের মধ্য অবস্থানে।প্রথমবার'নিবিড়'অর্থে এবং দ্বিতীয় বার'মেঘ'অর্থে।
৩) অন্ত যমক-চরণের বা পংক্তির শেষে যে যমক ব্যবহৃত হয় তাকে অন্ত যমক বলে।যেমন-
'মথুরা-বৃন্দাবন রাশিয়া ও চায়না, ঘুরে এসে মন কয় এসব সে চায়না।'-এখানে চায়না শব্দটি দুটি ভিন্ন অর্থে চরণের শেষে ব্যবহৃত হয়েছে।প্রথমবার'চীন দেশ'এবং দ্বিতীয়বার'কামনা করে না'এই অর্থে।
৪)সর্ব যমক-দুই বা একাধিক পংক্তি জুড়ে বা চরণের আদি,মধ্য, অন্ত শব্দের মধ্যে যে যমক ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বযমকবলে।যেমন-
কান্তার আমোদপূর্ণ কান্ত সহকারে
কান্তার আমোদপূর্ণ কান্ত সহকারে।
-প্রথম চরণে ও দ্বিতীয় চরণে কান্তার শব্দটির অর্থ যথাক্রমে বনভূমি ও দয়িতার। আমোদ পূর্ণ শব্দের অর্থ যথাক্রমে সৌরভময় ও আনন্দপূর্ণ। কান্ত শব্দের অর্থ যথাক্রমে বসন্তকাল ও দয়িত। সহকারে শব্দের অর্থ যথাক্রমে সমাগমে ও সঙ্গে।


৩)শ্লেষ অলংকার-যখন একটি শব্দ বাক্যে একবার ব্যবহৃত হয়ে একাধিক অর্থ প্রকাশ করে এবং পাঠক উভয় অর্থে গ্রহণ করে তখন তাকে শ্লেষ বলে। এটি দু'প্রকার-সভঙ্গশ্লেষ ও অভঙ্গ শ্লেষ।
১)সভঙ্গ শ্লেষ-যে শব্দ দিয়ে শ্লেষ অলংকার হয়,তাকে যখন না ভেঙে একটা অর্থ পাওয়া যায় এবং ভেঙে অন্য একটা অর্থ পাওয়া যায় তখন তাকে শ্লেষ বলে।
'পরম কুলীন স্বামী বন্দ্য বংশ খ্যাত'-এখানে কুলীন শব্দটির দ্বারা সভঙ্গশ্লেষ অলংকার হয়েছে।কারণ কুলীন শব্দটিকে ভেঙে পাই-'কু' অর্থে পৃথিবী এবং 'লীন' অর্থে মগ্ন অর্থাৎ 'আমার স্বামী পৃথিবীর শুভাশুভে লীন বলে,বিখ্যাত হয়েছেন।'অন্যদিকে কুলীন শব্দটি না ভেঙে পাই-সৎ বংশজাত অর্থাৎ আমার স্বামী সদ্বংশজাত ও বন্দ্যোপাধ্যায় উপাধিতে বিখ্যাত।
২)অভঙ্গ শ্লেষ-যে শব্দ দিয়ে শ্লেষ অলংকার হয় তাকে না ভেঙেই একাধিক অর্থ যখন পাওয়া যায় তখন তাকে অভঙ্গ শ্লেষ বলে। যেমন-'মধুহীন করো না গো তব মন কোকনদে'
এখানে'মধু'শব্দটির দ্বারা শ্লেষ হয়েছে।মধু শব্দটিকে না ভাঙলেও একাধিক অর্থ পাওয়া যায়।
-মন রূপ পদ্মকে মধুহীন করো না ও অন্যটি মধুসূদন দত্তকে বঙ্গজননী যেন তার মন থেকে নির্বাসন না করেন।
৪) বক্রোক্তি অলংকার-বক্রোক্তি কথার অর্থ হল বাঁকা।কোন কথা সোজাভাবে না বলে প্রশ্নের স্বরে, বিকৃতির মধ্য দিয়ে,বাঁকা ভাবে বললে বক্রোক্তি অলংকার হয়। শব্দ বা ধ্বনি সাম্যর জন্য অথবা কণ্ঠস্বরের পরিবর্তনের জন্য বক্তা যে অর্থ আশা করে সেই অর্থের বদলে অনেক সময় শ্রোতা অন্য অর্থ গ্রহণ করে। এটি দুই প্রকার কাকু বক্রোক্তি ও শ্লেষ বক্রোক্তি।
১) কাকু বক্রোক্তি-কণ্ঠস্বরের বিশেষ ভঙ্গের জন্য যখন না-বাচক কথার হ্যাঁ বাচক অর্থ দাঁড়ায় বা হ্যাঁ বাচক কথার না বাচক অর্থ দাঁড়ায় তখন তাকে কাকু বক্রোক্তি বলে।
যেমন-'স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে কে বাঁচিতে চায়?'
-এখানে বক্তার বলার ভঙ্গির মধ্যেই উত্তর নিহিত আছে স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচতে চায়? প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নের মধ্যেই আছে। -কেউ বাঁচতে চায় না।বক্তার এই কণ্ঠস্বর এর বিশেষ ভঙ্গি যার দ্বারা বাক্যের উত্তর না বাচক এ পরিণত হয়েছে এটি হলো কাকু বক্রোক্তি।
২)শ্লেষ বক্রোক্তি-যখন বক্তা এক অর্থে কথা বলে আর শ্রোতা সেই অর্থকে অন্য ভাবে গ্রহণ করে তখন তাকে শ্লেষ বক্রোক্তি বলে। যেমন ছাত্রকে শিক্ষকের প্রশ্ন-পড়ছো তো? ছাত্রের উত্তর-পড়ব কেন পা টিপে টিপে চলেছি।
 
 এখানে দেখা যাচ্ছে ছাত্রকে শিক্ষক এক অর্থে অর্থাৎ পড়াশোনা করার কথা জিজ্ঞেস করেছেন কিন্তু ছাত্র তাকে সেই অর্থে গ্রহণ না করে অন্য অর্থে গ্রহণ করেছে বা বলা যেতে পারে বক্তার অভিপ্রেত অর্থ কে শ্রোতা গ্রহণ না করে কায়দা করে অন্য উত্তর দিল,যে সে পা টিপে টিপে চলছে পড়ে যাবে না।
৫) পুনরুক্তবদাভাস-কোন বাক্যে একই অর্থে একের বেশি শব্দ বিভিন্ন রূপে ব্যবহৃত হয়েছে বলে যদি মনে হয় কিন্তু একটু মন দিলেই যদি দেখা যায় যে তারা একই অর্থে প্রযুক্ত হয়নি তাহলে সেই অলংকারের নাম পুনরুক্তবদাভাস। যেমন-
'তনু দেহটি সাজাব তব আমার আভরণে'-এখানে তনু ও দেহ শব্দের অর্থ একবলে মনে হলেও এখানে তনু শব্দের অর্থ ছিপছিপে।
(পরবর্তী অধ্যায়ে অর্থালংকার আলোচিত হবে।)
পেজ- এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
মন্ট ব্লাঙ্ক'এর পর্বত শিখরে ভেঙে পড়ল হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা'র বিমান বোয়িং ৭০৭। কিংকর্তব্যবিমূঢ় জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে গোটা দেশ। শোকে-দুঃখে মূহ্যমান সকল দেশবাসী। ঘটনার আকস্মিকতায়। পরমাণু বিজ্ঞান গবেষণায় নেতৃত্বহীনতার শূন্যতা তৈরি হওয়ায়।
✒️

Post a Comment

0 Comments