জ্বলদর্চি

পাঠকের দরবারে- (ভোট প্রসঙ্গ)/ সন্দীপ কাঞ্জিলাল

পাঠকের দরবারে -ভোট প্রসঙ্গ

 সন্দীপ কাঞ্জিলাল


প্রশ্নঃ(১) আমরা যে গণতন্ত্র বলে চিৎকার করি, সেই গণতন্ত্র কাকে বলে যদি একটু বলেন। আর সেটা খায় না মাথায় দেয়?
-----হরেকৃষ্ণ গাড়ু। রসিক নগর। পুরুলিয়া। 

গণতন্ত্র বলতে কোনও জাতি বা রাষ্ট্রের সংগঠনের এমন একটি শাসন ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে নীতি নির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে। যা বললাম এটা আমার কথা নয়। কথায় বলে সাবধানের মার নেই। একটু অসাবধান হলেই জীবনের সুখ শান্তি সব হারাম হয়ে যাবে। বলছি কথায় সাবধানতা। ঐ যে সাধক ভূতানন্দ বলেন- অনেক কথার অনেক দোষ, ভেবেচিন্তে কথা কোস। তাই আমি যে কথাটা বললাম, তা বিশ্বাস করবেন কিনা,সেটা আপনার ব্যাপার। তবে গণতন্ত্রের হাতে নিজেকে তুলে দিতে বড়ো ভয় করে। দায়িত্বশীল মানুষের সংখ্যা যেমন কমছে, তেমনি গণতন্ত্রেরও দায়িত্ব কমছে। হয়তো বলবেন, একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিতে হবে। যেমন আপনি দেখেশুনে বেশ খরচ করে মেয়ের বিয়ে দিলেন। মেয়ে প্রথমবার শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেই কান্নাকাটি। বাবা মা বলবে, একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিতে। কিন্তু এই মানানোর প্রশ্ন আসছে কেন? যথোচিত মূল্যে কেনা পাত্র। হাজারো পরীক্ষার পর তো জুতা কেনা হয়। মনে খুঁত রেখে মেনে নেবার প্রশ্নই ওঠে না। কত কষ্টের বিনিময়ে পাওয়া এই গণতন্ত্র। 
ঐ যে আমাদের রবি ঠাকুর বলে গেছেন- আমরা সবাই রাজা। তবে আপনি যা খুশি করতে পারেন, যদি রাজা হন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, গোটা দেশ আপনার মামার বাড়ি নয়।এখন সবাই সমানের যুগ।তাই 'ঢিলটি মারলেই পাটকেলটি খাইতেই হইবে।' অতএব সাবধান, যা খুশি করবেন ভাবলে, এই সিষ্টেমে কিন্তু সব করা যায় না।

  যেমন ধরুন খাবার টেবিলে নানারকম খাবার। আপনার গণতন্ত্র আছে বলে সব খাবার আপনার নয় কিন্তু। কিছু খাবার টেবিলের শোভাবর্ধক, কিছু খাবার আপনার দেখার জন্য। যে খাবার আপনার কাছাকাছি, সেটাই আপনার খাওয়ার জন্য। আবার খাওয়ার টেবিলে ডান হাত গণতন্ত্র ভোগ করে। অফিসে ভোগ করে বামহাত। এমন একপ্রকার গণতন্ত্র আছে, যা কুকুর ভোগ করে তা আবার মানুষও ভোগ করে। যেমন অনেক পোষা কুকুর কিছুদিন পর রাস্তার কুকুর হয়ে যায়।কারণ সময়ে খাওয়ার জন্য গলায় শেকল পরে থাকতে হয়। তার চেয়ে রাস্তার কুকুর হলে,যেমন স্বাধীন থাকা যায়, তেমনি মোড়ের চায়ের দোকানে যারা চা খেতে আসে, তারা টুকরো বিস্কুটও দেয়। এছাড়া ইচ্ছেমতো ভাগাড়ে ঘুরে ভালোমন্দ খেয়ে ছাইয়ের গাদায় শুয়ে থাকে। গলায় শেকলও নেই, রাত জেগে পাহারা দিতেও হয় না। তেমনি কিছু মানুষও ফকটিয়া  খাওয়া-পরার জন্য তারা-ও কুকুরের মতো হয়ে যাচ্ছে। এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ভাবতে শুরু করেছে। তাই গণতন্ত্র ভিখারিও সাজায়। তবে যাই হোক না কেন, বিয়ে না করলে মনটা যেমন হু হু করে। তেমনি নিজেকে গণতান্ত্রিক না ভাবলে মনটা তেমন ফসফস করে।

এবার আসি আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নে। গণতন্ত্র যেমন খায়, তেমনি মাথায় দেয়। যেটা বলেননি, তা হলো গণতন্ত্র আবার গায়ের পোশাকও বটে। 
গণতন্ত্র খায়। অবাক হচ্ছেন। ভাবুন, আমাদের দেশ একটা গৃহস্থের পুকুর। এই পুকুরে সম্বৎসরের খোরাকীর জন্য সবরকম মাছ ছাড়া আছে। শোল কই ভেটকি পোনা চিংড়ি আরও অনেক রকমের মাছ। গর্ব করে আবার গৃহস্থ বলে, আমার পুকুরে সবরকম মাছ আছে। কিন্তু আমরা সবাই জানি শোল ভেটকি বোয়াল ইত্যাদি ছোটো মাছ খেয়ে বড়ো হয়। শোল ভেটকি বোয়ালের সে গণতান্ত্রিক অধিকারও আছে। আর তা গৃহস্থও জানে। সেইজন্য বড়ো মাছদের গণতান্ত্রিক অধিকার ছোটো মাছ খাওয়ার। তাই গণতন্ত্র খায়।

  গণতন্ত্র আবার মাথায়ও দেয়। এই যে আমাদের শরীর অনেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে গঠিত। সব অঙ্গ গণতন্ত্র মেনে কাজ করে বলে আমরা বেঁচে আছি। কিন্তু শোয়ার সময় মাথা  সবার সাথে শোয় না।কারণ মাথা বড়বাবু। তাই তিনি একটি বালিশ রেখে উঁচুতে  ঘুমান। এ ব্যবস্থা অন্য সব অঙ্গ  গণতান্ত্রিক ভাবে মেনেও নিয়েছে। তাই মাথা গণতান্ত্রিকভাবে শোয়।
ভাবছেন, গণতন্ত্র পোশাক? এ আবার কেমন করে হলো শুনি? আচ্ছা, পোশাক কাকে বলে? যে আবরণের দ্বারা শরীরের দাদা হাজা চুলকানি ঢাকা দেওয়া হয়। সেরকম এই গণতন্ত্রের নামাবলী দিয়ে যত কুকর্ম ধর্ষণ রাহাজানি, বিশেষ করে আমাদের ভিক্ষাবৃত্তিও ঢাকা দেওয়া হয়। এই গণতন্ত্রের আড়ালে যে যেমন পারছে চালিয়ে দিচ্ছে আর নিচ্ছে। 
সবশেষে বলি, আমাদের দেশের পরিকল্পনায় কিছু ঘাটতি আছে। নইলে আপনারা এতো গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চীৎকার করছেন কেন? বেশ বুঝতে পারছি এবার এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে বলবেন "ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।"  আর গণতন্ত্রের মানে খুঁজবেন না।

প্রশ্ন--(২) শুনেছি গণতন্ত্রে সবাই সমান।  তাহলে বাস্তবে তা দেখতে পাই না কেন?
------পৌষালী মুখোপাধ্যায়। চুনাখালী। হাওড়া---৬

 আপনার প্রশ্ন পড়ে হাসি পেল খুব। কিছু মনে করবেন না। আচ্ছা আপনি বলুন তো, এ পৃথিবীতে সবাই কি সমান হয়? না সব সমান হতে পারে?  আপনার হাতের পাঁচটা আঙ্গুল, তারা কি সব সমান? নিশ্চয় নয়। মনে রাখবেন অনেক কিছু বলা হবে, কিন্তু আপনি যদি সব সত্যি বলে মনে করেন তাহলে বিপদে পড়বেন। যেমন ধরুন  আপনাকে আপনার মেয়ে  জিজ্ঞাসা করল, আজ রাতে  কি খাবার হবে মা? আপনার মুড তখন অফ ছিল। আপনি রেগে বললেন গুষ্টির পিন্ডি। আপনি কি সত্যি সত্যি গুষ্টির পিন্ডি রান্না করেন? করেন না। আবার ধরুন টিভিতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস, রাতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ প্রবল বৃষ্টি। সেইমতো রাতের খাবার গরম গরম খিচুড়ি আর বেগুন ভাজার ব্যবস্থা করলেন। রাতের খাবার রান্না করে বসে আছেন,  বৃষ্টি এলে খাবেন। ঘর বার করছেন, আকাশের দিকে ঘনঘন তাকাচ্ছেন। দেখলেন- 'গগনে ফুটিল তারা।' এদিকে খিচুড়ি ঠান্ডা হয়ে বরফ। অগত্যা খেতে বসলেন। যদি আপনি আবহাওয়ার কথায় ভরসা করে বসে থাতেন, তাহলে আপনার খাওয়ার দফারফা হতো। বৃষ্টি হতো না। সারারাত জেগে খালি পেটে সকালে দুর্বল লাগতো। দিদিভাই, কিছু কথা আছে কথার কথা। মনকে এই কথাটা বোঝান। মন যদি ঠিক থাকে সাত দিনের পচা পান্তা খেলেও অ্যাসিড করবে না। 

  এবার বলি দ্বিতীয় প্রশ্ন- গণতন্ত্রকে কোথাও দেখতে পান না কেন? আচ্ছা ভেবে দেখুন তো, ওয়ান টু-এর বাচ্চারা ক্লাসে পড়ে- তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে। সেই শ্রেণিকক্ষে কি তালগাছ থাকে? থাকে না। তা-ও তো ছাত্ররা আপন মনে পড়ে। কই প্রশ্ন করে না তো- স্যার এখানে তালগাছ কোথায়? আপনারা সেই মান্ধাতার আমলের কথায় বিশ্বাস করে পড়ে আছেন, যা না-দেখিবে নিজ নয়নে, বিশ্বাস না-করিবে গুরুর বচনে। এখন আধুনিক যুগ সব "old proverbs made new।"  মহাজ্ঞানী আর মহাজন' যা বলেন তাই বেদবাক্য। আর কোনোকিছু বিশ্বাস করবেন না। মহাজ্ঞানীর কথা না হয় বাদ দিলাম, হাতের কাছে তাদের পাবেন না। মহাজন তো আপনার বাড়ির কাছে রয়েছে। আগে ছিল কুঁড়েঘর এখন চারতলা বাড়ি। ছিল ভাঙ্গা সাইকেল এখন চারচাকা। দশ আঙ্গুলে দশটার বেশি আংটি। তাই তাদের হাত এতো ভারী  যে, হাত উপরে তুলতে পারেনা।বসলে হাটুর উপর হাত রাখে। দাঁড়ালে ঝুলিয়ে রাখে। দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বললে, তার কাঁধে হাত রেখে তবে কথা বলে। গলায় দেখবেন বিরাট চওড়া করে সোনার হার। ঠিক কুকুরের গলার বকলেস। আসলে সবেমাত্র কুকুর জন্ম শেষ করে মানুষ জন্ম হয়েছে তো-তাই। ওদের জিজ্ঞেস  করে দেখুন, গণতন্ত্র কোথায়? ওরা ঠিক বলে দেবে। সবসময় গণতন্ত্র ওদের ট্যাঁকে গোঁজা থাকে। এটাও ঠিক, গণতন্ত্র মাঝে মাঝে থাকে না আবার। অনেক সময় নেতারা বলেন না, এবার আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো। আরে বাবা আমার আপনার মত গণতন্ত্রের শখ আহ্লাদ আছে। তাই সে-ও মাঝে মাঝে একটু বেড়াতে যায়।

  ভেবে দেখুন গণতন্ত্রের জন্ম শহরে। সেই এথেন্স নগরী। তাই তার মন থেকে শহর এখনো যায়নি। মেয়েদের যতই বিয়ে হোক- তবু আমার বাবা আমার মা আমার বাপের বাড়ি। আপনি তো মেয়ে,এটা নিশ্চয় জানেন বাপের বাড়ি  সম্বন্ধে কিছু বললে, আপনারা আমাদের মতো পুরুষের কি হাল করে ছাড়েন বলুন দেখি। তাই গণতন্ত্র একটু শহরমুখী। আপনি শহরের দিকে যান গণতন্ত্রকে কোথাও না কোথাও খুঁজে পাবেন। আসলে আপনি মায়াচ্ছন্ন বলে আপনার চোখে ঠুলি লেগেছে। রোজ সকালে এক ফোঁটা হোমিওপ্যাথি ঔষধ খাওয়ার মতো, খালি পেটে গীতার একটি শ্লোক পড়ুন।দেখবেন আপনার মনে বৈরাগ্য ভাব আসবে। সাধক রূপ প্রস্ফুটিত হবে। আপনার শরীরে তখন তৃতীয় নয়ন গজাবে।সেই চক্ষুতে দেখতে পাবেন, গোমূত্রে সোনা আর করোনা সারানোর ঔষধ। তখন অদ্ভুত এক ঘ্রাণশক্তির দ্বারা বুঝতে পারবেন, চারদিকে ম' ম' করছে গণতন্ত্রের গায়ের গন্ধ। উপলব্ধি হবে-তুমি কার কে তোমার। তখন গণতন্ত্র আর আপনি একাকার। নমস্কার। ভালো থাকবেন সবাই। আবার পরের সপ্তাহে।

পেজ- এ লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments