জ্বলদর্চি

অন্যধারার শর্টফিল্ম -১২/ নিসর্গ নির্যাস মাহাতো

অন্য ধারার শর্ট ফিল্ম
পর্ব- ১২

নিসর্গ নির্যাস মাহাতো

বিষয়: স্টোরি লাইন

স্টোরিলাইন মানে সোজা কথায় গল্প কোন পথে এগোবে। এই স্টোরি লাইন ধরে স্ক্রিপ্ট লেখা হয়। আর তাই পূর্ণতা পায় ফিল্মে। 

  কী নিয়ে শর্টফিল্ম করব, সেই কনসেপ্ট আগে ঠিক করতে হয়। তারপর লেখা হয় গল্প। সেই গল্প ভাগ থাকে বিভিন্ন প্লটে। আর গল্পের যেই ধারাবাহিকতা, তাই স্টোরিলাইন। তা ধরেই নির্দিষ্ট পথে এগোয় স্ক্রিপ্ট।

  এই স্টোরিলাইন ধরেই ছোট করে তৈরি হয় গল্পের জিস্ট। যা সাধারণত প্রোডিউসার, ডিরেক্টর সহ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাজ শুরুর আগে জানানো হয়। সকলেই আঁচ করে নেয় গল্প কোন পথে এগোবে। তারপর শুরু হয় কাজ।

  ধরা যাক, শর্ট ফিল্ম হবে এক নকশালের মূল স্রোতে ফিরে আসা নিয়ে। গল্পের মূল বিষয়বস্তু এটুকুই। কতগুলো প্লটে বিষয়টা সাজানো হলো,

১. একজন ছেলে কী ভাবে নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে পড়লেন। 
২. আন্দোলনে ছেলের মুভমেন্ট‌‌।
৩.  সম্পর্কে একজনকে দিদি পাতানো।
৪. একজনের প্রেমে পড়া, দেখা করতে আসা।
৫. পুলিশের হাতে এনকাউন্টার।  দেখা যাবে সেই পুলিশ আসলে পাতানো দিদি।
৬. বহু বছর পর পুলিশ ছুটি কাটাতে গিয়েছেন। গোয়েন্দা এসে খবর দিল, বেঁচে আছেন সেই নকশাল।
৭. পুলিশ গ্রেফতার করতে গেলেন। দেখলেন, সেই নকশাল এখন তাঁর প্রেমিকার সঙ্গে কোনও এক গ্রামে সকলকে শিক্ষিত করার কাজে ব্রতী। মানে মূলস্রোতে ফিরে এসেছে। পুলিশ গ্রেফতার না করে তাঁদের জড়িয়ে ধরলেন।

  মূল বিষয়বস্তু ধরে গল্পের এতগুলো প্লট। এখানে শর্ট ফিল্মকে একটি নির্দিষ্ট দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নকশাল-এর সঙ্গে পাতানো ভাই-দিদি সম্পর্ক, যেই দিদি কী না আসলে পুলিশ। তারপর ওই ছেলের প্রেম-সহ বিভিন্ন ঘটনা দেখানো হয়েছে। এই সমস্ত প্লট জুড়ে আছে একটি নির্দিষ্ট স্টোরি লাইনে। আসলে প্লটগুলো যদি ফুল হয়, তাহলে সুতো স্টোরিলাইন। 

  আর শর্ট ফিল্ম মালা। আর শর্ট ফিল্মের  জিস্ট লেখা হতে পারে, এক অল্পবয়সী ছেলে নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে। প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করার সময় এনকাউন্টার-এ মৃত্যু হয় তাঁর। যেই পুলিশের হাতে মৃত্যু তিনি নকশালের দিদি। বহু বছর পর দেখা যায়, আসলে নকশালের মৃত্যু হয়নি। তিনি প্রেমিকার সঙ্গে এক গ্রামের শিক্ষার ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।- এখানে জিস্ট দেখেও স্টোরিলাইন বোঝা যাচ্ছে।

  স্টোরিলাইন ধরেই এগিয়েছে গল্প। মাথায় রাখা হয়েছে একটি বিশেষ বার্তার কথা। হিংসাত্মক আন্দোলন ছেড়ে মূলস্রোতে ফিরে আসার কথা। কারণ, এক নতুন স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয় বিপ্লব। কিন্তু অমোঘ বাণী 'শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে বিপ্লব, আর বিপ্লব আনে নবজাগরণ'।

  গল্পের বিষয় যাই হোক না কেন, ফিল্ম বা শর্ট ফিল্ম নির্মাণে সব সময় মনে রাখতে হবে তা যেন এগোয় একটা কম্প্যাক্ট স্টোরি লাইন ধরে। স্বল্পদৈর্ঘ্যে চলচ্চিত্রে সময় যেহেতু কম সেক্ষেত্রে কম্প্যাক্ট হওয়া টা আরও বেশি জরুরি। আর কম সময়ের চলচ্চিত্রের জন্যই সেই স্টোরিলাইন হওয়া দরকার একটু হটকে।

  ডকুমেন্টরি, ফটো স্টোরি, মিউজিক ভিডিও সবক্ষেত্রেই আবশ্যক স্টোরিলাইন। কোনটার পরে কোনটা তা সাজানো খুব দরকার। তারপরে দেখতে হবে তাতে যেন কোনও রকম ফাঁক না থাকে। গল্প যেন নির্দিষ্ট পথে এগোয় বা গল্পের বিভিন্ন পথ যেন শেষ হয় এক রাজপথে, এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার। শর্ট ফিল্ম যেহেতু ছোট গল্প তাই একটা ধোঁয়াশা রেখেই দিতে পারেন। দর্শক নিজেদের মতো খুঁজে নেবে বাকিটুকু। তাতে ঘোর লেগে থাকে। সবকিছু বলে দিলে তা আর শিল্প থাকে না।

  মেদিনীপুরের মধ্যে পার্থসারথি শ্যামের চলচ্চিত্রের স্টোরিলাইন সব সময় ছুঁয়ে গেছে সম্পর্ক বিষয়কে ধরে। বারবার তুলে ধরতে চেয়েছিলেন সমাজের অন্ধকার দিককে। আবার সুমন্ত সাহার স্টোরিলাইনে উঠে আসে সুপার ন্যাচারাল, দর্শন, নারী শক্তি। সুলগ্না চক্রবর্তীর কলম সবসময় এগিয়েছে মাইথোলজি, বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে। অনির্বাণ মিশ্রের স্টোরিলাইনে বারবার ফুটে উঠেছে প্রেম-বিরহ‌। দেবনাথ মাইতির গল্প এগিয়েছে সমাজ, পরিবেশ, সম্পর্ককে কেন্দ্র করে। নেহাল মারিকের কলম সবসময় খুঁজে নিয়েছে হাস্যরস। আবার সুমনদীপ পান্ডের টরি লাইনে বারবার উঠে এসেছে শিশু, সমাজ, অলৌকিকতা। বিশ্বজিৎ ঘোষের একটি শর্টফিল্ম আসতে চলেছে শীঘ্রই। সেখানে ফুটে উঠবে মানুষ ও মুখোশের সুস্পষ্ট দিক। সোমদত্তার কলমে এগিয়েছে নারীর অনুভূতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর নির্ভর করে।

  মেদিনীপুরে ফিল্মের সম্মিলিত প্রতিষ্ঠান বলতে মেদিনীপুর ফিলম সোসাইটি ও রিলিজ উইন্ডো। বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও স্থানীয় স্টোরিলাইন লক্ষ্য করা যায় মেদিনীপুর ফিল্ম সোসাইটির প্রদর্শনীতে। আবার স্থানীয় পরিচালকদের ও শিল্পীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে রিলিজ উইন্ডো। এখানে, লক্ষ্য করা যায় স্থানীয় শিল্পীদের শর্ট ফিল্ম, ডকুমেন্টরি, মিউজিক ভিডিও, ফটো স্টোরি। শহর তথা জেলা কী কী বিষয়ের ওপর কাজ করছে তা লক্ষ্য করতে পারেন এই প্রদর্শনীতে। সম্প্রতি রিলিজ উইন্ডো নিয়ে আসছে দ্বিতীয় প্রদর্শনী। এছাড়াও সরকারি উদ্যোগে হয় ফিল্ম সেমিনার। এখানেও প্রদর্শিত হয় বিভিন্ন শর্ট ফিল্ম। তুলে ধরা হয় আন্তর্জাতিক, জাতীয়, স্থানীয় স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র। বিভিন্ন ধরনের স্টোরিলাইন লক্ষ্য করতে পারেন এই প্রদর্শনীতেও। ফিল্ম- এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয় সমস্ত প্রোগ্রামেই। শিল্পের যেহেতু কোনও মানচিত্র নেই তাই এক ছাতার তলায় মিশে যায় আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও স্থানীয়। শিল্পের সার্থকতা সেখানেই।

  প্রতি ক্ষেত্রেই স্টোরিলাইন হতে হয় 'ক্যাচি'। কারণ শিল্পের আকর্ষণ করার ক্ষমতা থাকা চাই। ক্ষমতা থাকা চাই দর্শককে মুগ্ধ করে বসিয়ে রাখার।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

Post a Comment

1 Comments

  1. ভালো হচ্ছে, চলুক চৰ্চা ।
    সিদ্ধার্থ সাঁতরা

    ReplyDelete