জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -১৮

বিশেষ ছোটোবেলা সংখ্যা -১৮

ছোট্ট বন্ধুরা, যে ভালো ছেলে হয়ে চুপটি করে স্কুলের বেঞ্চে বসে থাকে, তার কি তাবলে মাঝে মাঝে বটের ঝুরি ধরে, প্যান্ডেলের ম্যারাপ বাঁধা হলে বাঁশ ধরে ঝুলতে ইচ্ছে হয় না? হয় বই কি। এই যেমন ১৮ তম ছোটোবেলা সংখ্যায় সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পের চরিত্র আদির 'ভাই' হতে ইচ্ছে হয়েছিল। বহ্নিশিখা ঘটকের গল্পের চরিত্র অর্কের গভীর জলে ভয় থাকলেও বড়ো সাঁতারু হবার ইচ্ছার কথা বলেছিল। ভজন দত্তের গল্পের পিসি চরিত্রটির বড়ো লোক হবার ইচ্ছা ছিল বলেই না সে ইচ্ছা পূরণ হল। মুক্তি দাশের গল্পের চরিত্র আর্যের বীর হবার ইচ্ছা হয়েছিল অনলাইন ক্লাসের বন্ধুদের সামনে। শুধু বড়োদের গল্পের চরিত্রদেরই নয়, সত্যি সত্যি এই সংখ্যায় খুদে গল্পকার শ্রীপর্ণা আর খুদে নাট্যশিল্পী অমর্ষি হয়েছে চিত্রশিল্পী, খুদে গায়িকা বৈভবী হয়েছে গল্পকার। কি ইচ্ছেপূরণ হল কিনা! এবারের প্রচ্ছদের ফটোগ্রাফটি উপহার দেবার জন্য ঋপণ আর্যকে ও আমন্ত্রিত সকল গল্পকারদের অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রচ্ছদের শিশুটির হাসিটি ছড়িয়ে পড়ুক সমস্ত খুদে বন্ধুদের অন্তরে।৷ - মৌসুমী ঘোষ।



দাদা ও ভাই

সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়

ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজার আগেই গম্ভীর মুখে আদি বলল “আজ থেকে আমি ‘দাদা’ হবনা।”
“মানে? ‘দাদা’ হবিনা তো কী হবি?”মা রুমি অবাক হয়ে বলেন, “শুনছ,আদি কী বলছে, ও নাকি দাদা হবেনা।”
“আমি ‘ভাই’ হব।”
“ওমা সে কী কথা। ‘ভাই’ হবি কেন?”বাবা একেবা্রে হতবাক।মনেমনে ভাবলেন এই কোভিড পরিস্থিতির জন্য ছোট ছেলেটাকে স্কুলে ভর্তি করাই গেলনা।আর আদির ওপর চাপ বেড়ে গেল।অনলাইনে পড়াশুনো করা আবার পিসির কাছে পড়তে বসা, যেখানে ছোটটা খেলে বেড়াচ্ছে। 
“ভাই হলে পড়তে লিখতে হবেনা।বিছানায় হিসু করে ফেললে কেউ বকবে না।হাঁটার সময় পায়ে ব্যথা হলে মা কোলে নেবে।আর...।”
বাবা বলেন, “ঠিক আছে,ঠিক আছে।তুই ‘ভাই’ হ’।আমি কিন্তু ‘আদি’ মানে তুই হব।আর রুমি  তুমি কী হবে?”
“আমি মা, মানে আদির ঠাকুমা হব।”
ভাই কিছু বোঝেনা।সবে দু’ বছর বয়স।সে সোফা থেকে ঝাঁপ মারছিল।আদির দিকে তাকিয়ে একবার বলল “দাদদা হালুম।” তারপর জোরে ঝাঁপ দিয়ে মাটিতে পড়ল।
সুমন রুমিকে বললেন,বুঝেছ, “কাল সকাল থেকে আমি কিন্তু আদি।আজ কী কী বাজার দোকান আনতে হবে বলে দাও।নাহলে তোমাকে, মানে ঠাকুমাকেই বাজার যেতে হবে।”
আদির আসল ঠাকুমা থাকেন দেশের বাড়িতে।কাজেই একই বাড়িতে দুটো ঠাকুমা হবার ভয় নেই।

   পরের দিন ছিল রবিবার।সকালে বেল বাজছিল।ঠাকুমা রুমি দরজা খুললেন।ঘরের কাজকর্মের মেয়ে ডলি বাড়িতে ঢুকে অবাক।
“একি বৌদি তুমি সাদাসিদে ভাবে সাদা শাড়ি পরেছ কেন?” 
   রুমি কোন উত্তর দিলেননা।একটু হেসে বললেন, কপি আলুর  পাঁচফোরন দিয়ে একটা চচ্চরি ,আর গোটা ছয়েক পরোটা বানাস।দুপুরের খাবার পরে বলছি।
   বাবা আদি হয়ে দাঁত মেজে হরলিকস্‌ খেয়ে পড়তে বসেছেন।আদির বই থেকেই চুপচাপ অঙ্ক করছেন।রুমি ঘন্টা বাজিয়ে ঠাকুর পুজ়ো করছিলেন।আদি এখন ‘ভাই’ হয়েছে।ও ঘুম থেকে ওঠেনি।ভাই এর পাশে শুয়ে ঘুমোচ্ছে।একটু পরেই মুস্কিল হল।ছুটির দিনে মাঠে খেলা হয়।ওরা আদিকে ডাকতে এল।আর আদি হাঁ হয়ে দেখল বাবা দিব্যি ওদের সঙ্গে খেলতে বেরিয়ে গেলেন।

   ঠিক তার পরদিন আবার একটা ঝামেলা।আদি স্কুল যায়নি।ঠাকুমা হয়ে যাওয়া মা, আদির সামনেই বাবাকে বললেন, “কাল তোমাদের স্কুল থেকে চিড়িয়াখানা,মিউজিয়ামে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছে।তুমি যাবে নাকি?”
আদি হয়ে যাওয়া বাবা বললেন “যাব তো বটেই। স্কুলে একবার ফোন করে জেনে নিও সবকিছু।”

   পর দিন সন্ধেবেলা । সবার জন্য ফিস্ ফ্রাই এসেছে। সবাই খেল।শুধু আদিকে একটুও দেওয়া হল না।আদি কিছু বলতেও পারল না। কেননা ও তো এখন ছোটভাই।আর ভাই তো ফিস্‌ফ্রাই খায়না। 
আর একদিন পেরোলেই চিড়িয়াখানায় বেড়াতে যাওয়া।সেদিন সকালে মা ডাকাডাকি করে তুললেন ওকে।
   হাতে একগ্লাস দুধ সাবু।ইদানিং ভাইকে রোজ দুধ সাবু দেওয়া হয়।তাই আদিকেও ওটা খেতে হবে।
সেদিন দুপুরেই মা মানে ঠাকুমা রুমি, বাবা পরদিন কোন জামা পরে আদির বদলে বেড়াতে যাবেন  ঠিক করে দিচ্ছিলেন।আদি এসে চুপচাপ একটা চিরকুট দিল মার হাতে।
   মা সেটা দেখে তুলে দিলেন বাবার হাতে।
তাতে বড়বড় করে লেখা “আমি আর ভাই হতে চাইনা।আজ এখনই আমি আবার ভাইয়ের দাদা ‘আদি’ হলাম।”

আর্য’র বীরত্ব

মুক্তি দাশ

বিদিশাম্যামকে আর্য’র খু-উ-ব ভালো লাগে। শুধু সে কেন. তাদের ক্লাসের অনেকেরই বিদিশাম্যামকে ভালো লাগে, সে বন্ধুদের জিগেস করেও দেখেছে। তার উপযুক্ত কারণও রয়েছে। প্রথমত, বিদিশা ম্যামের ক্লাসে ইংরেজির পাট নেই। বিদিশাম্যাম যেহেতু বাংলা পড়ান ক্লাসে সর্বক্ষণ তাঁকে বাংলায় কথা বলতে হয়। আর আর্য ইচ্ছেখুশি বাংলাভাষায় কথা বলতে পেরে যেন হাঁফ ছাড়ে। যতই ওরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করুক, বাংলাভাষায় কথা বলে যেন অনেকখানি স্বস্তি আর আরাম পাওয়া যায়, যাই বল! বাংলায় কথা বলেও তো সুখ! দ্বিতীয়ত, বিদিশাম্যাম যা সুন্দর সুন্দর গল্প করতে পারে না! সারা ক্লাস তো বিভোর হয়ে সেইসব মজার মজার গল্প গিলতে থাকে!

   এখন তো আবার স্কুলে-ফুলে যাওয়ার কোনো বালাই নেই। সকালবেলা উঠেই খালি ব্রেকফাস্টটা সেরে নেওয়ার অপেক্ষা। তারপর দিব্যি বসে যাও অ্যানড্রয়েট মোবাইল সেটের সামনে। বাপি আর্যর জন্যে আলাদা করে একটা মোবাইল সেটও কিনে দিয়েছে অনলাইন ক্লাস করার জন্যে। প্রথম প্রথম এইরকম ব্যবস্থা তার খুব ভালোও লাগত। বেশ রোমাঞ্চকর ব্যাপার! একধরণের উত্তেজনাময় আনন্দের শিহরণ বয়ে যেত সারা শরীরে। এখন আর ভালো লাগে না। কেমন পানসে পানসে লাগে। কবে যে এসব করোনা-ফরোনা কাটবে! স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সাথে হইচই না করতে প[রলে আবার পড়াশুনো কিসের? ভাল্লাগে না, ধ্যুৎ! 

   ছাব্বিশে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্রদিবস না কী যেন ছিল, স্কুল, থুড়ি, অনলাইন ক্লাস বন্ধ ছিল। আগেরদিনের ক্লাসে প্রজাতন্ত্রদিবসকে নিয়ে অনেক কথাই বলে গেছেন ম্যামরা। পরেরদিন সকালে যথারীতি মোবা্ইল অন করে জুমে গিয়ে লগ-ইন করল আর্য। প্রথমেই ইংলিশ ক্লাস। জুলিম্যাম আজ খালি জিকে-র ওপর খানকয়েক কোশ্চেন করতে দিল। তারপর হোমওয়ার্ক। এইসব করতে করতে আধঘন্টা কাবার। ক্লাস শেষ। 

   পরের পিরিয়ড বিদিশাম্যামের। মোবাইলের স্ক্রিনে বিদিশা ম্যামের ছবি ভেসে উঠতেই ক্লাসসুদ্ধু ছেলেমেয়েরা হৈ হৈ করে উঠল। বিদিশাম্যাম মাথা দু’দিকে নাড়তে নাড়তে বলল, ‘আজ আমি কিন্তু তোমাদের কোনো গল্প-টল্প বলবো না। প্রায়দিনই তো আমি বলি। আজ আমার রেস্ট। গল্প বলবে তোমরা। আর আমি শুনবো।’

   বিদিশাম্যাম প্রথমেই ধরল অঙ্কিতাকে, ‘অঙ্কিতা, তুমিই বলো প্রথমে। আগে নিজেকে আনমিউট কর, তারপর বলো,  গতকাল তো ছুটির দিন ছিল, কী করলে সারাদিন? কোথাও বেড়াতে গেছিলে? বা ধরো পিকনিক-টিকনিক?’

   অঙ্কিতা দুঃখী গলায় বলল, ‘কোত্থাও যাইনি ম্যাম…সারাদিন বাড়িতে বসে বসে ইউটিউবের হেল্প নিয়ে কয়েকটা প্রজেক্ট করেছি শুধু। দেখাবো ম্যাম?

   ‘ক্লাসের পর দেখবো সোনা, তুমি তো খুব ভালো ভালো প্রজেক্ট কর, আমি জানি…’ তারপর অন্যদের দিকে তাকিয়ে বিদিশাম্যাম বলল, ‘এরপর কে বলবে?’

   আর্য অনেকক্ষণ থেকে আঁকুপাঁকু করছিল কিছু বলার জন্যে। ম্যামের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে সে সাধ্যমতো হাতও নাড়ছিল। অবশেষে তাকে ম্যাম দেখতে পেল। বিদিশাম্যাম বলল, ‘আর্য, আগে নিজেকে আনমিউট করে নাও, তারপর বলো, কাল সারাদিন কী করলে?’

   উৎসাহ পেয়ে আর্য বলল, ‘আমি কী করলাম?’ তারপর দাঁতমুখ শক্ত করে বীরদর্পে বলল, ‘আমি প্রথমেই একটা বাঘের নাকে পেল্লায় এক ঘুষি মারলাম, বাঘটা চিৎপটাং হয়ে পড়ে রইল…তারপর একটা সিংহের পেটে কষে এক জব্বর লাথি…একটা শিম্পাঞ্জির দু’গালে দু’টো বিরাশি-সিক্কার চড়…সবশেষে একটা হাতির লেজ ধরে মাথার ওপর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অ-নে-কে দূরে ছুঁড়ে ফেললাম…

   ক্লাসের মধ্যে ততক্ষণে তুমুল হাসাহাসি শুরু হয়ে গেছে। একজন বলল, ‘ডাহা মিথ্যাকথা বলছে ম্যাম…’

  আর একজন বলল, ‘পুরো গুল…’

   আরেকজন বলল, ‘ঢপ মারার আর জায়গা পাসনি?’

   আর্য রেগে গিয়ে বলল, ‘মোটেই না। আমি একটুও মিথ্যেকথা বলছি না…’

   আর্যর গল্প শুনে বিদিশাম্যামও রীতিমতো হতভন্ব। চোখ বড়বড় করে ম্যাম বলল, ‘ঠিক আছে। ঠিক আছে। মেনে নিলাম, তুমি মিথ্যে বলছ না। আমাকে শুধু বল যে, তারপর কী হলো?

   হতাশ হয়ে বিষণ্ণ গলায় আর্য বলল, ‘আসলে দুপুরের দিকে মা-কে লুকিয়ে আমি আমাদের পাড়ার মোহিতকাকুর টয়সেন্টার নামে খেলনার দোকানটায় গেছিলাম। তারপর…’ 

   কাঁদো কাঁদো গলায় আর্য বলল, ‘তারপর…শেষে মোহিতকাকু দেখতে পেয়ে আমাকে একেবারে কান মুচড়ে ঘাড় ধরে দোকান থেকে বার করে দিল…’


ডুব সাঁতার 

বহ্নিশিখা ঘটক 

কিছুদিন হল অর্ক এসেছে বর্ধমানে পিসির বাড়ি পিসতুতো দিদির বিয়েতে। পিসতুতো দাদা অসীম আর ওর বন্ধু গোপাল ওরা তিনজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটু দুরে মাঝারি একটা পুকুরের ধারে বসেছে। একটু আগে বিকেলবেলায় এইপথেই দিদি শ্বশুর বাড়ি চলে গেছে। বাড়ি থেকে সবাই এই রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরে গেছে। ওরা তিনজন রয়ে গেছে। 
   অসীম অর্ককে পরিচয় করিয়ে দিল গোপালের সঙ্গে। অর্ক মাত্র দশ বছরের। ক্লাস ফোরে পড়ে। ক্লাসে ফার্স্ট হয়। খুব ভালো ছবি আঁকে। সাঁতার শেখে। 
অসীম আর গোপাল দুজনেই ক্লাস সেভেনে পড়ে। কিন্তু গোপাল অসীমের থেকে দু বছরের বড়। পড়াশোনায় ভালো নয়। প্রায় সব বছরই ফেল করে। কিন্তু নিয়ম মেনে প্রতি বছরই ওপরের ক্লাসে উঠে যায়। পাড়ার ছেলে বলে অসীমের সঙ্গে বন্ধুত্ব। অসীম পড়াশোনায় ভালো। 
   পনেরো বছর বয়সী গোপালেরও অহংকারের একটা দিক আছে। গ্রামের ক্রিকেট দলের সে ক্যাপ্টেন। তাই সে নিজেকে জাহির করতে ছাড়লনা। "আমি যে এবার সেঞ্চুরি করে আমাদের ক্লাবকে জিতিয়ে দিলাম সেটা বল ! "

   হ্যাঁ। গোপালদা কিন্তু ভালো ক্রিকেটার। অসীম শুধরে নেয়।
গোপাল তাতে তৃপ্ত হলো না। এইটুকু পুঁচকে বাচ্চা তার কতো ফাঁট ! ও দেখেছে কোলকাতা থেকে যেইই আসুক গ্রামের সবাই তাকে মাথায় তুলে নাচে। অর্ককে ও কিছুতেই পাত্তা দেবে না। বলল, সাঁতার আবার শেখার কী আছে। গ্রামের সব ছেলে সাঁতার জানে। জলে নামতে নামতে সাঁতার শেখা হয়ে যায়। কিন্তু ক্রিকেট খেলা যে কেউ পারবে না। তার জন্য ট্যালেন্ট লাগে। 

   অর্ক ক্রিকেটের কথায় ভেতরে ভেতরে কষ্ট পায়। তার ইচ্ছে ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। মা-বাবার মত নেই। ওটা নাকি একটা বোরিং খেলা । তার চেয়ে ফুটবল খেলো। তবে সাঁতার সব এক্সারসাইজের মধ্যে ভালো। এতে শরীর একদম ফিট থাকে। 

   দুবছর হল অর্ক সাঁতার ক্লাবে যাচ্ছে। তবে মন থেকে ভালোবেসে নয়। বড় পুকুরটার ঘেরা জায়গায় ওদের ট্রেনিং হয়। ওর বাইরের গভীর জলটা দেখলে এখনো তার ভয় লাগে। ওদের ট্রেনার স্যার কিছুতেই তাকে রেহাই দেয়না। তাকে বড় সাঁতারু বানাবে যেন পণ করেছেন।

   এসব ভাবতে ভাবতে অর্কও নিজেকে জাহির করতে বলল, আমি তো গ্রামের পুকুরে সাঁতার কাটার জন্য শিখছিনা। আমি ইংলিশ চ্যানেল পার হবো। মিহির সেনের মতো। তার জন্য ট্রেনিং লাগে। লাক ভালো থাকলে অলিম্পিকেও যেতে পারি।
   কথার মাঝেই অসীমকে বাড়ি চলেযেতে হল। মা ডাকছে। বলল, তোরা গল্প কর। আমি আসছি। 
গোপালের অর্কর সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছিল না। অসীম চলে যেতে সে বললো, আমারও একটা কাজ আছে। আমিও যাচ্ছি। অগত্যা অর্ক উল্টো দিকে পিসির বাড়ির পথ ধরল। 
দু'পা না যেতেই পেছন থেকে পায়ে ধাক্কা। গড়িয়ে পড়ে গেল পুকুরে।

   সন্ধ্যায় পাড়ার ক্লাবে ডাক পড়েছে অর্কর।

   পুকুরে পড়ে গিয়ে প্রথমটায় অনেকটা গভীরে চলে গিয়েছিল। তারপর হাবুডুবু খেয়ে হাত পা ছুঁড়ে জল থেকে মাথা তুলে সাহস হল। ডুব সাঁতার দিয়ে পাড়ে এসে দেখে কোমরের বেল্টে আটকে আছে একটা ভারি সোনার হার। 
বাড়ি ফিরেই পিসির হাতে তুলে দিয়েছিল সেটা।

   জানা গেছে ক্লাব সেক্রেটারি সুশান্তবাবুর মেয়ের হার ওটা। কোনো সময় চান করতে গিয়ে হয়তো পড়ে গেছে, টের পায় নি। 

   সব সদস্যরা আজ ভীড় করেছে ক্লাবে। অর্ক র বাবা-মা সুদ্ধ পিসির বাড়ির সবাই সামিল তাতে। তাদের আদরের অর্ককে সম্মান জানানো হচ্ছে!
কম কথা !
   তার সততা ও স্পোর্টসম্যান স্পিরিটের জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ দিয়ে ও তার ভবিষ্যত সাঁতারু জীবনের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে সুশান্তবাবু একটা বিরাট ভাষণ দিলেন। 

   অর্ক ট্রফি আর সম্মাননার টাকার খামটা নেবার সময় লক্ষ্য করল, গোপাল ভীড়ের মধ্যে মুখ চুন করে দাঁড়িয়ে আছে। সে জানে পেছন থেকে পায়ে ধাক্কা দিয়ে সে-ই ফেলে দিয়েছিল। গভীর জলে পড়ে প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে তার এতদিনের জলের ভয়টা কাটিয়ে উঠতে গোপাল সাহায্যই করেছে। মনে মনে তাকে থ্যাংকস জানালো অর্ক।


পিসির মন্দির 

ভজন দত্ত


হরেকরকমের জীবন ও জীবীকা আছে এই পৃথিবীতে, সেগুলোর কিছু আমরা জানি আর কিছু আমাদের অজান্তেই রয়ে যায়।এসো,আজ তেমনই একটা গল্প শুনি। গল্পটা এক পিসির গল্প। পিসি মানে তো বাবার দিদি! না,সেই পিসি বাবার রক্তের সম্পর্কের কেউ ছিলেন না। কমবয়সে বিয়ে হওয়ার পর একদিন  বিধবা হয়ে তিনি বাপেরবড়ির একটুকরো জমিতে গড়ে তুলেছিলেন তাঁর সংসার।সেখানেই ছিল তার সবজি বাগান আর কিছু ফুলের গাছ।সে সবই তার নিত্যপুজোয় লাগতো।বাপের বাড়িতে তার বাবা-মা একদিন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন।তারপর ভাই, ভাইয়ের বাউরা সব ভিনু হয়ে গেলে পিসিকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করার কেউ থাকলো না।তখন পিসি পড়লেন মহা-মুশকিলে!জীবনধারণের জন্য  পিসির কিছু টাকাপয়সারও তো দরকার! সেই সময় মানুষ খুব ধর্মে  বিশ্বাস করত।

তো, পিসি সেই পথটাই অবলম্বন করলেন। 


একদিন রাতের অন্ধকারে তার বাড়ির উঠোনের একপাশে একটা  পুরনো পিতলের বিষ্ণু মূর্তি পুতে রাখলেন। তার বেশ কিছুদিন পর তিনি গ্রামের সকলকে জানালেন তার স্বপ্নের কথা।

 তিনি বললেন,ভোররাতে স্বয়ং বিষ্ণু ভগবান তাকে স্বপ্নে দেখা দিয়েছেন।ঠাকুর খুব কষ্টে তার বাড়ির ঈশান কোণে মাটির নীচে চাপা পড়ে আছেন।ঠাকুর নিজে জল চাইছেন তার হাতে।তাকে উদ্ধার করে নিত্যসেবার ব্যবস্থা করতে হবে। 

ব্যাস, স্বপ্নের কথা প্রচার হতেই শুরু হলো ঈশান কোণে খোঁড়াখুড়ি।কিছুটা মাটি খুঁড়তেই পাওয়া গেল সেই মূর্তি। সে খবর রটে গেল দূরদূরান্তে। প্রথমেই এগিয়ে এলো গ্রামের মানুষরা। তারা সবকিছুই তো স্বচক্ষে দেখেছে,তারাই প্রথমে ধুমধামে ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করে পিসির হাতে নিত্যপুজোর ব্যবস্থা করে দিল।প্রণামীর থালা ভরে উঠতে থাকলো পঁচিশ, পঞ্চাশ, এক-দুই পাঁচ টাকার কয়েনে। মাঝে মাঝে তার মধ্যে দশ-বিশ-পঞ্চাশের নোটও পড়লো।

যতদিন যায় ততই পিসির স্বপ্নের কথা ফুলেফেঁপে প্রচারিত হতে থাকলো। সেখানে পুজো দিলে মানুষের নাকি সব স্বপ্ন,আকাঙ্খা পূরণ হয়! খুব জাগ্রত দেবতা।বেকার চাকরি পায়,পরীক্ষায় ভালো ফল হয়,ব্যবসায় উন্নতি হয়,নতুন কোনো যানবাহন সেখানে  পুজো করালে পথের বিপদ দূর হয় এরকম আরও কত কী!

  দূরদূর থেকে প্রতিদিন মানুষরা এসে ভীড় জমাতে থাকলো পিসির সেই মন্দিরে।পিসির পক্ষে একা সব সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই তারই ভাইয়ের ছেলে তাকে সাহায্য করে।পিসি শুধু একটা সময় মন্দিরে সব ভক্তদের দর্শন দেন।কতজন তার পা ছুঁয়ে প্রণাম করার জন্য ব্যাকুল থাকে।কিন্তু কারা পাবেন তার চরণ স্পর্শ করতে পারবেন,মোটা প্রণামীর বিনিময়ে  সেসবই ঠিক করে ঐ ভাইয়ের ছেলে।


পিসির এখন পাকা বাড়ি, মন্দির হয়েছে দেখার মত।মন্দিরের নিত্য কাজকর্মের জন্য আছে কত কর্মচারী। পিসির জীবন এভাবেই চলছে। সাধারণ মানুষের অভাব থাকলেও ভগবান বিষ্ণুর ইচ্ছায় এখন তার আর কোনও অভাব নেই। 

সংক্ষেপে এই হল পিসির গল্প। তোমরাও খুঁজে দেখো, আশেপাশে এরকম অনেক মাসি-পিসি-মামা-মামি বা মামা-ভাগনে আছে। খোঁজ নাও, দেখো নতুন কিছু পাবেই। সত্যি কতরকমের জীবন কতরকমের জীবীকা, ভাবলে অবাক হতেই হয়।


সেই পাখিটা 

সূর্যাণী নাগ 
দ্বাদশ শ্রেণী, ইউ পি পাবলিক স্কুল, সিউড়ি, বীরভূম

দ্রুম দ্রাম দ্রুম দ্রাম ---এই যে শুরু হয়ে গেল। রোজ সকালে উঠে এক আওয়াজ। কান ঝালাপালা হয়ে যায়। শান্তিতে কোনও কাজ করা যায় না। আসলে আমাদের পাশে ঘোষদাদুদের বাড়িটা ভাঙা হচ্ছে। ভাঙার কাজ প্রায় শেষের মুখে। প্রতিদিন সকালবেলা আমাদের বাড়ির পাশে ঐ এক ফালি জমির দিকে তাকালেই বুকের মধ্যে কেমন টাটিয়ে ওঠে। কিছুদিন আগেও ঘোষদাদুদের বাড়িটা ছিল ধবধবে সাদা। সেই বাড়ির লাগোয়া এক বাহারি ফুলের বাগানে আমরা খেলা করতাম। সেই আমগাছে টাঙানো দোলনায় বন্ধুরা সব  দুলতাম। রঙ-বেরঙ্গের পাখি আসতো সেখানে। একটা টিয়া পাখির সঙ্গে আমাদের ভারি বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। কি সুন্দর ‘মিঠু মিঠু’ বলে কথা বলতো। আমাদের হাতে ছোলা লঙ্কা খেত। ঘোষদাদু আমাদেরও খুব ভালো বাসতেন। আমাদের বাড়িতে নিয়ে যেতেন। দিদিমা  আমাদের কত রকমের চকলেট বাদাম খাওয়াতেন। কত মজার গল্প বলতেন দুজনে। কিন্তু  হঠাৎ দাদু মারা গেলেন। ভীষণ কষ্ট হয়েছিল আমাদের। দিদিমাও ভেঙে পড়েছিলেন। আমরাও তারপর থেকে খুব  কমই যেতাম ঐ বাড়িতে। উঁচু ক্লাসে উঠতেই পড়াশুনার চাপ বাড়ল। আর তাছাড়া বাড়িটাতে গেলেই মনটা খারাপ হয়ে যেত। দাদুকে খুব মনে পড়ত। আর দেখতাম দিদা খুব যত্ন করে দাদুর বিভিন্ন জিনিসপত্রগুলোকে ঝেরে মুছে আবার সাজিয়ে রাখতেন। দাদুর ছড়ি, একটা ছোট্ট ঘড়ি, চশমার ফ্রেম – সবই যেন খুব জীবন্ত মনে হত । হঠাৎ একদিন গান শিখে বাড়ি ফিরছি – দেখি ঘোষদাদুদের বাড়ির সামনে ভিড়। কাছে যেতেই বুঝলাম দিদাও চলে গেলেন। তখনই বাড়িটার দিকে একবার তাকালাম। আর ভাবলাম – এবার এই সুন্দর বাড়িটাকে কে  দেখাশুনা করবে? কিছুদিন পর জানলাম বাড়িটা বিক্রি হয়ে গেছে প্রমোটারদের কাছে।  
আজ দু’মাস হয়ে গেল। বাড়ি ভাঙার কাজ প্রায় শেষ। জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম সেই ধ্বংসস্তূপকে। মনে হচ্ছে এত বড়ো বাড়িটাকে কেউ যেন ইরেজার দিয়ে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলেছে। হঠাৎ   মনটা যেন কেমন করে উঠল। মনে মনে ভাবলাম আজ বিকেলে যখন খেলতে যাব, তখন ঐ ধ্বংসস্তূপটার কাছে একবার যাবো।  
যেমন ভাবা তেমনি কাজ। বিকেলে খেলতে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম। দেখতে পেলাম কত  ভাঙা ইট পাথর বালি ছড়ায়ে রয়েছে। আমি ভাবলাম ওই সমস্ত জিনিসগুলো দিয়েই একদিন একটু একটু করেই এই বাড়িটা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আজ যেন মনে হচ্ছে এক লহমায় বাড়িটা ভেঙে গেল। ভাঙা কত সহজ তাই না?  
এই সব ভাবতে ভাবতে ফাঁকা জায়গাটায় হাঁটছি।  হঠাৎ দেখতে পেলাম ঘোষদাদুদের বাগানে ওই বেদিটা। ওখানে দাদু দিদা বসে আমাদের খেলা দেখতেন। বেদিটাও কিছুটা ভেঙে গেছে। কাছে যেতেই দুটো আশ্চর্য জিনিস চোখে পড়ল আমার। বেদিটার তলায় দাদুর সেই শখের এলার্ম ঘড়িটা পড়ে আছে আধভাঙা অবস্থায়। হয়তো জিনিসপত্র সরানোর সময় মাটিতে পড়ে গেছে কেউ খেয়াল করেনি । ঘড়িটা তুলতে যাবো অমনি দেখি একটা টিয়া পাখি সেখানে উড়ে এসে বসেছে। টিয়া পাখিটাকে যেন মনে হলো ও আমাদের সেই মিঠু যার সাথে খুব বন্ধুত্ব হয়েগেছিল। দাদু দিদা মারা যাবার পর ওকে দেখিনি অনেক দিন। আমি ওর  কাছে গিয়ে মুখ বাড়ালাম। আর বললাম। এই তুই কি আমদের সেই মিঠু? ও মা অবাক কাণ্ড! পাখিটাও বলে উঠল , --মিঠু মিঠু। ব্যস! আর কোনও সন্দেহ নেই। ও তার মানে আমাদের মিঠুই। হঠাৎ আজ  চলে এসেছে আমার মতই দাদুর ঐ ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ যেন মনে হল মিঠুরও চোখ ছল ছল করছে। আচ্ছা ওরও কি দাদুর কথা মনে পড়ছে ? ঘড়িটা দেখে দাদুকে অনুভব করতে পারছে ? ওরও কি মন খারপ করছে ? আমি মনে মনে ভাবলাম, একটা ছোট্ট পাখির যে হৃদয় থাকে সেই হৃদয় মানুষের কেন থাকে না।

হাট 

সুহেনা মন্ডল
তৃতীয় শ্রেণী, দিল্লী পাবলিক স্কুল, নর্থ কলকাতা

সোধপুরে বসেছে হাট
তার পাশে খেলার মাঠ।
উচ্ছে বেগুন পটল মুলো
চুপটি করে দেখছে হুলো।
রুই কাতলা মাগুর পুঁটি
গাজর টমেটো কড়াইশুঁটি।
শীতের রেপার বিক্রি হয়
তার সাথে বাচ্চা দের টয়।
নানান রকম পোশাক পাব
নানান রকম খাবার খাব।
হাট থাকে বারো মাসে
খেলার মাঠের একদম পাশে।

মিনার দাঁতে ব্যথা
 
বৈভবী সেনগুপ্ত
প্রথম শ্রেণি, প্রমিলা মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট, কলকাতা
 
মিনা কাল ডেন্টিস্ট এর কাছে যাবে, আর ডেন্টিস্ট মিনার দাঁতটা তুলে দেবে। মিনার দাঁতে খুব ব্যথা, মা বাবা ওকে চকলেট খেতে মানা করেছিল। কিন্তু ও অনেক চকলেট খেতো। তাই মিনার দাঁতে পোকা হয়ে গেছে,‌  আর ব্যাথা করছে। মিনা ভেবেই পাচ্ছে না কাল কি করবে? মিনা রাতের বেলায় শুতে গেল। মন খুব খারাপ। সে ঘুমিয়ে পড়ল। 
 
 সকালে ঘুম থেকে উঠে সে মায়ের কাছে গিয়ে জানতে চাইল, 'মা আজ কখন আমি যাব ডেন্টিস্ট আংকেলের কাছে? আমার দাঁতে যে খুব ব্যথা'। মা বলল, ' তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও, আমরা একটু পরেই বেরাবো'। 
 
একটু পরেই মিনা তার বাবা, মামণির সাথে চলল ডেন্টিস্ট আংকেলের কাছে। ডেন্টিস্ট আংকেল মিনার দাঁত দেখে বলল, 'এবারের মতো আমি তোমার দাঁত ওষুধ দিয়ে ভালো করে দিচ্ছি, কিন্তু তুমি আমার কাছে প্রমিস্ করো তুমি সারাদিন ধরে আর চকলেট খাবে না, খুব কম চকলেট খাবে, নাহলে কিন্তু তোমার সব দাঁত তুলে ফেলতে হবে, সবাই তোমাকে ফোকলা বুড়ি বলবে'। এরপর ডাক্তার আংকেল মিনার দাঁতে ওষুধ লাগিয়ে দিল। আর মিনার দাঁতের ব্যথা একদম কমে গেল। মিনা খুব খুশি হল। সে ডাক্তার আংকেল কে প্রমিস্ করল সে খুব কম চকলেট খাবে। তারপর সে বাবা মায়ের সাথে খুশি মনে বাড়ি চলে গেল‌।

প্রকাশিত।  ক্লিক করে পড়ুন।
সাঁতরাইচেঙ্গার রহস্যময় সাতকাহন- ৮

গৌতম বাড়ই

যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই। বাটির ভেতর শুকনো মুড়ি আর চিনেবাদাম মিশিয়ে খাচ্ছে এবং আমাকেও তাই দিল খেতে। হঠাৎ চমকে দেখি পাশে সুশান্ত নেই। আমি বাইরেতে উঁকি মারলাম তাই দেখে একজন বামন আমায় বললে-  বুদ্ধদেব, এ তোমার এ বন্ধুটিও অনেক ডরপুক আছে। ভেগেছে ভয়ে। তবে আজ তোমায় একটা কথা বিলকুল ক্লিয়ার করছি এ খুব সাধারণ প্রশ্ন তোমার মাথাতেও খেলছে, আমরা এই বানজারাদের দলে কী করে এলাম? তাই না?
চিত্র - সুব্রত দেব

- হ্যাঁ, এ একদম সত্যি।

আমার উত্তর শুনে বামন তিনটে সামনে এগিয়ে এসে বসল। বানজারাদের দলের সর্দার ঐ যে তোমাদের যে ডেকে নিয়ে এল সে। এদের জানতো এখানে ওখানে এই অস্থায়ী জীবন কিছুদিনের জন্য ফেলে। তারপর আবার অন্য কোথাও। সবাই এদের চোর বদমাশ অপবাদ দেয়। এরা কিন্তু চোর বদমাশ না সবাই। চোর ডাকাত বদমাশ তো তোমাদের সাধারণ লোকদের মধ্যেই বেশি আছে। আমরা পৃথিবীকে আর তার মানুষজনাকে  জানতে এদের  মধ্যে আছি মিশে। এরা কী অমনি ওদের দলে ঢুকতে দিলো? প্রশ্ন করে আবার নিজেই উত্তর দিতে শুরু করল বামুনটি। বললে- আমরা এদের দু-বেলা, এই পঁয়ষট্টি জন বানজারার খাবারের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। ওরা খুশ আর আমরাও খুশ। তোমাদের মতন এদের অগাধ কৌতূহলও নেই। আমরা দিব্যি আছি আর এই শরীর ধরেই আছি। আমরা নিজেদের অদৃশ্য করে রাখতে পারি যে কোন সময়, সে তুমি জানো ভালমতন। ঐ যে লম্বু বানজারাটি, তোমরা তাকে এই নামেই চেনো, জান কী সুন্দর গান গায়? আমাদের গ্রহে গান বলে কিছু নেই। আমরা মুহূর্তে তোমাদের ভাষা শব্দ গান সবকিছু নিয়ে নিতে পারি কপি করে। গতকাল আনমনে একা-একা ঐ গাছের তলায় মাঠের ধারে বসে  গাইছিল মহম্মদ রফির একটি গান। আসামের কোঁকড়াঝাড়ে গতবার গ্রীষ্মে যখন তাঁবু ফেলেছিল ওর ছেলেটি সাপের কামড়ে মারা গিয়েছিল। তার কথা মনে পড়লেই  এই গানটি করে সে। " রাহী মনওয়া দুখ কী চিন্তা কিউ সাতাতি হ্যায়, দুখ তো আপনা সাথী হ্যায়"। একজন বানজারা আমাদের খুব মনযোগ দিয়ে গান শুনতে দেখে কাছে এসে জানিয়ে যায়। এইভাবে ওদের সাথে গল্প করতে গিয়ে দেখি বাইরে অন্ধকার হয়ে আসছে। আমি এবার মা- বাবা আর দিদির ভয়ে বলে উঠলাম-  এবার বাড়ি যাব। সন্ধে হয়ে এলো। বাড়িতে বকবে।

   এলিয়েন বন্ধুরা বললে- যাও। দুসরা দিন আরও গল্প হবে। পোস্টার পড়বে আরও, আর কিছু খেল দেখাবো সাঁতরাইচেঙ্গা গ্রাম, ভুটনিরঘাট গ্রামকে। দেখবে বন্ধু।

    আমি ঠিক আছে বলে পা চালাই।

   বাবা আর মা দেখি দেওয়ানীর বাড়ির মোড় পর্যন্ত এগিয়ে এসেছেন। আমায় দেখতে পেয়েই বলে উঠলেন- তোমার দিনকে দিন সাহসটা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে যখন দেখতেই পাচ্ছ ঘরের ভেতরে কে বা কারা অদ্ভুত সব পোস্টার মেরে গেছে। সারাগ্রামে এক অজানা ভয় আর আতঙ্ক গ্রাস করছে আর তুমি বানজারাদের তাঁবুতে ঢুকেছ? কেন? 

   আমি বুঝে গেলাম প্রশান্ত বাবা- মাকে সোজা গিয়ে সবকথা বলে দিয়েছে। কী আর করি। সোজা মাথা নিচু করে বাবা-মাকে বললাম- ওখানে তিনজন বামুন বন্ধু হয়েছে। প্রশান্ত ভয় পেয়েছে। আমি তো পাইনি। আমার ওরা কোন ক্ষতিও করেনি। 

   বাবা বললেন- তুমি একটু বেশি বোঝ সবসময়ে। কথা না বলে সোজা বাড়িতে চলো।

   আমি মাথা নিচু করে বাড়ির দিকে চললাম। আমার পেছনে বাবা আর মা।

   হাত-পা- মুখ ধুয়ে পড়তে বসেছিলাম। দিদি কাছে এগিয়ে এসে বলল--- ভাই তোর জন্য বাবা এ-ঘর আর ও-ঘর পায়চারি করছিল। কেন সন্ধে করিস? মা খুব চিন্তা করছিল।

   আমি বললাম- বিশ্বাস কর দিদি। আমি দেরী করতে চাইনি। আমার তিনটে বন্ধু হয়েছে ওখানে। ওরা আমায় ডাক দিয়েছিল। তাই ওদের সাথে গল্প করতে বানজারাদের তাঁবুতে ঢুকি।

   দিদি ভয়ে আঁতকে উঠল। আমায় বললে- জানিস ওরা ছোটো ছেলেমেয়েদের চুরি করে নিয়ে যায়? তোর এত সাহস ভাল নয়। কাল থেকে তোর প্রাইমারী স্কুলের মাঠে খেলা না বন্ধ হয়ে যায়। বাবা সব জেনেছে প্রশান্তর কাছ থেকে।

   আমি দিদিকে বলি- তোরা সবকিছু ভুল জানিস। মানুষের মনগড়া গল্প এইসব । যেহেতু ওরা ভবঘুরে তাই ওরা চোর, ছেলেধরা, বদমাশ এইসব। আর আমি তো শুধু ঐ বামুনদের সাথে ---- এই বলে চুপ করে গেলাম।

   বাবা পাশের ঘরে লন্ঠনের আলোয় একটা বই নিয়ে বসেছিল। মা সন্ধের হাল্কা জলখাবার নিয়ে এসেছে। ভাই বই খুলে বসেছে। পড়ছে কতটুকু তা আমি জানি। এমন সময় বাইরে থেকে একটা হৈ- হৈ আওয়াজ উঠল। সবাই একদম চুপ মেরে বোঝার চেষ্টা করছি এই হৈ- হৈ আওয়াজটা কেন? মা সদর দরজায় ভাল করে খিল দিয়ে ছিটকিনি এঁটে দিল। বাবা আমাদের আওয়াজ করতে না করে সামনের ঘরের জানালার দিকে এগিয়ে গেল। হৈ- হৈ আওয়াজ আরও বেড়ে গেল যেন। বাইরে লোকের দৌড়ঝাঁপ টের পেলাম। বাবা জানালায় বসে আছেন।কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। এমন সময় কে একজন ডাক দিলেন বেশ জোরে- বিনয়বাবু বাইরে আসুন। দেখুন কী আজব ঘটনা ঘটছে বাইরে। তাড়াতাড়ি আসুন। বাবা হতভম্ব হয়ে ভাবছেন কী করবেন! মা বাবাকে বললে- তোমার এখন  এই চট করে বাইরে গিয়ে দরকার নেই। যতই ডাকুক না কেন। 

   বাবা বললেন- না লক্ষণ ডাকছে। যাই। গিয়ে দেখি কী ঘটছে বাইরে। বাইরের রাস্তায় যে প্রচুর লোকজন জড়ো হয়েছে আমরা ঘর থেকে কোলাহলে টের পাচ্ছিলাম। বাবা বললেন মাকে- আমি বাইরে বেরুচ্ছি। তুমি স্যান্ডো গেঞ্জীটা দাও ও-ঘর থেকে এনে। সঙ্গে টর্চটা দাও। দরজাটা আটকে রাখবে আমি না ফেরা পর্যন্ত।

   বাবা বাইরে বেড়িয়ে গেলেন এরপর। মা সামনের উঠোনে একটা লন্ঠন রাখলেন আর ভেতরে এসে দরজাটা বন্ধ করলেন। আমরা বাইরের হৈ- চৈ শুনছি চুপ করে কান পেতে। লক্ষণকাকু জোর গলায় বলছেন বিনয়বাবু দেখুন দেখুন ওখানে কী আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটছে। চিরকাল লক্ষণকাকু ঐ জোরে হাঁকডাক দিয়ে কথা বলেন। আমাদের বাড়ির বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বোধহয়, তাই তার কথা আমরা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিলাম। মা দেখি ভয়ে চুপটি করে আছে। দিদির মুখ দেখে মনে হল, এই না ভয়ে কেঁদে ফেলে। ভাই সামনে এগিয়ে এসে বলল--- দাদা চলতো আমরা বাইরে গিয়ে দেখি।

   দিদি ভাইকে বললে- খুব সাহস বেড়েছে দেখছি।

   আমিও চুপ করে ছিলাম আর ভাবছিলাম কী যে ঘটছে একটু দেখতে পেলে ভাল হত। হৈ- হৈ চলছেই। কেউ কেউ বলছে-- আরে দেখুন দেখুন! ঐ যে! ঐ যে!

   বাইরে কী ঘটছে? তা জানতে এর পরের পর্বে----


জানো কি!
 বিষয় :  কিছু আবিষ্কার ও তার আবিস্কারক।

১. খনি শ্রমিকের সুবিধার্থে নিরাপত্তা লণ্ঠন কে আবিষ্কার করেন?
২. প্রথম মুদ্রণ যন্ত্র কে আবিষ্কার করে মূলত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার ঘটাতে সাহায্য করেন?
৩. প্রথম বৈদ্যুতিক বাল্ব কে আবিষ্কার করেন?
৪. আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বস্তু হলো পেন বা কলম। এটি কে অবিস্কার করেন?
৫. আমরা তো বাই সাইকেল চড়তে সকলেই পছন্দ করি, বলো তো এর আবিস্কারক কে?
৬. টেলিফোন কার সৃষ্টি?
৭. এরোপ্লেন চড়া তো সকলের স্বপ্ন থাকে। তো বলো এটা কার সৃষ্টি?
৮.ডায়নামো কার আবিষ্কার?
৯. ট্রানজিস্টার কে আবিষ্কার করেন?
১০. দোলক ঘড়ি একটি অনবদ্য আবিষ্কার। এটি কার আবিষ্কার?

গত সপ্তাহের উত্তর
১.১৮৯৭ ২.জানকীনাথ বসু  ৩.তুমি আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব  ৪. নেতাজি  ৫.দুইবার ৬.গান্ধীজি  ৭.এমিলি শাঙ্কেল  ৮.১৯৩৯   ৯.বর্তমান নিউ দিল্লি  ১০.১২৫ তম।

পেজ-এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 



Post a Comment

0 Comments