জ্বলদর্চি

পাঠকের দরবারে প্রসঙ্গ ভোট/ সন্দীপ কাঞ্জিলাল

পাঠকের দরবারে 
প্রসঙ্গ ভোট 
সন্দীপ কাঞ্জিলাল 

প্রশ্ন--১. 
জীবন মিস্ত্রি। টেংরা কাঁটা রোড। বয়স 62। আপনি লিখেছেন এবার কী ভোট দিতে পারবো?গতবছর পঞ্চায়েত ইলেকশনে এখানে কনটেস্ট হয়নি। তার আগে লোকসভায় পাড়ার নাক কাটা পচা বলেছিল জেঠু বয়স হয়েছে, কষ্ট করে ভোট দিতে যেতে হবেনা।আপনার ভোটটা আমরা দিয়ে দেবো।
 তাই বলছি এবার কি নিজের ভোট নিজে দিতে পারবো? 

  মাননীয় জীবনবাবু, প্রথমে জানাই এটি একটি বাজে প্রশ্ন। আপনার ভোট আপনি দেবেন কিনা তা আমি কি করে বলবো। আপনার ছাগল আপনি দেবেন কি রাখবেন, সে আপনার একান্ত ব্যক্তিগত। তাছাড়া এই ভোট দেওয়ার অধিকার আপনার বাপ মা কিংবা আপনার চৌদ্দ পুরুষ আপনাকে দেয়নি। দিয়েছে সংবিধান। সংবিধানের বয়স এখন বেশ। গা গতরও নেই। বাদামি পাতা। ওল্টাতে গেলে ঝুরঝুর করে ভেঙ্গে পড়বে। যদি আপনার ভোট কেউ দিয়ে দেয়, যদি তারা চায় 'জোর যার মুলুক তার' প্রতিষ্ঠিত করতে, তাতে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হলো শুনি? তারা চাইছে একটু পিছিয়ে যেতে। আপনি তো জানেন ব্যাকগিয়ারে গাড়ি চালানো কি কষ্ট। তারা আপনাকে বুঝতে না দিয়ে তা করে যাচ্ছে। করুক না, আপনার ক্ষতি কী? অতীত মানেই ইতিহাস ইতিহাস মান স্মৃতি,  আর স্মৃতি সততই সুখের। নিজের  ভোট নিজে দেওয়া মানে এগিয়ে যাওয়া। এগুনো ভীষণ সোজা।এবার ভাবুন আপনি এগোবেন না পিছোবেন।এ সিদ্ধান্ত আপনাকে নিতে হবে।  এর উত্তর আপনার কাছে রয়েছে। হাতে পাঁজি রেখে মঙ্গলবার খুঁজছেন?

প্রশ্ন- ২.
টুনিয়াবিলা পূর্ব মেদিনীপুর থেকে টুনটুনি তলাপাত্র।বয়স ৪৭। লিখেছেন গতবার বিকেলে ভোট দিতে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি, হঠাৎ বোমাবাজি ধোঁয়ায় চারদিক অন্ধকার।দুজন পুলিশ ছিল উধাও। লোকজনের ছোটাছুটি। আধঘন্টা পরে যদিও সি আর পি এফ এলো, আবার যখন লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে গেলাম, ভেতরে  শুনলাম, আমার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। তাহলে কি এবার ভোট দিতে যাব?

  ম্যাডাম তলাপাত্র, আপনাকে জানাই-- ভোট দিতে গিয়ে আপনার ভাগ্যে যা ঘটেছে তা না ঘটলে অবাক হতাম। নিশ্চয়ই একথা শুনে চমকে উঠছেন। শুনুন, এমনিতে কথায় আছে, করবি যদি কাজ ভোর ভোর সাজ। আপনি তা উপেক্ষা করে ভোট দেওয়ার দিনকে ছুটির দিন ভেবে, আরাম করে পাঁঠার মাংস খেয়ে সাঁচি পানের খিলি   চিবোতে চিবোতে গেছেন। যাত্রাকালের সময় ডানে না বামে যোগিনী ছিল, তাও দেখেননি। এবার আসুন দ্বিতীয় পয়েন্টে,  আপনার সংসার পরিচালনায় যেমন পরিকল্পনা থাকে, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরও তেমনি  পরিকল্পনা থাকে। তা থাকলে তাকে আপনি দোষ দিতে পারেন না।আর সেই পরিকল্পনার মধ্যে আপনি পড়ে গেছেন। অতএব দোষটা তাদের?না দোষটা আপনার? এবার আসুন পুলিশের কথায়। আপনার যেমন ঘর সংসার আছে, পুলিশের ও আছে।  তাদের কাছে কি থাকে? একটি লাঠি আর অন্যজনের একটি বন্দুক।যেটা আবার অনেকদিন পড়ে ছিল গুদামে। গুলি ছুড়লেও বেরোয় না। যারা এসেছে তারা প্রত্যেকে স্থানীয় ক্লাবের ছেলে।ভোটের মরশুমে একটি দিন খাটবার জন্য, প্রত্যেক বছর তাদের টাকা দেওয়া হয়।অতএব তারা সেজেগুজে আসে। সে বেচারা পুলিশ তাদের সামনে কি করবে বলুন? আর যেহেতু আপনার বুথ টার্গেট, সেহেতু এখানে সি আর পি এফ দেওয়া হবে না।ছোটবেলায় পরীক্ষায় পাশ করার জন্য আপনার যেমন ছক থাকতো,এ-ও ঠিক তেমনি। 
  তৃতীয়ত, আপনার ভোটের বোতাম অন্য লোক টিপেছে। দেখুন আজকাল কে যে কোথায় সুযোগ পেলে কি টিপছে, সে কেউ বলতে পারবে না।শুধু লক্ষ্য রাখতে হবে নিজেরটা যেন অপরে না টেপে। তাছাড়া সকাল থেকে খালি পড়ে থাকলে যে কেউ টিপে দিতে পারে। ধরুন বাদুড়ের ভয়ে বাগানের সপেদা বাড়িতে তুলে রাখলেন। আপনি কি মাঝে মাঝে টিপে দেখেন না, পাকলো কিনা-বলুন? আসলে, ভোটের দিন মানে আপনার কাছে, একটু আরাম আয়েষ স্ফূর্তির দিন। ভুরিভোজ খেয়ে বিকেলে সেজেগুজে শাড়ি পরিপাটি, ঠোঁটে লিপস্টিক, ভ্রু একটু প্লাক করে,আড়চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে, হিসাব করতে করতে গেলেন, কতজন আপনাকে দেখছে। এসব বলছি বলে কিছু মনে করবেন না।তাছাড়া এই বেকারত্বের যুগে বোম বাঁধা কুটির শিল্প। যারা ছুঁড়বে তারা রাত করে ঘুমায়। দেরি হয় তাদের সকালে উঠতে। তাই বিকেলে তারা বোম ছুঁড়ে। কি দরকার বিকেলে ভোট দিতে যাওয়ার? সকাল সকাল নিজের ভোট নিজে দিয়ে আসুন।এসে জমিয়ে রান্না, বাড়ির লোকের সঙ্গে গল্প গুজব। কর্তার মাথায় যদি দু একটা পাকা চুল থাকলে দেখে দিলেন। তারপর একটু উল বুনলেন।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
কলকাতা বইমেলা স্থগিত! 


Post a Comment

0 Comments