জ্বলদর্চি

পাঠকের দরবারে -প্রসঙ্গ দলবদল/সন্দীপ কাঞ্জিলাল


পাঠকের দরবারে -প্রসঙ্গ দলবদল

সন্দীপ কাঞ্জিলাল

প্রশ্নঃ আজকাল এতো রাজনৈতিক দলবদলের কারণ কী? এই ঘটনা কে আপনি কি বলবেন? 
(পূর্ণপ্রকাশ মাটি। নরসিংহ দত্ত রোড। হাওড়া-৬)

প্রথমে আপনাকে জানাই এটি খুব পলকা প্রশ্ন, নচেৎ বেশ গুরুগম্ভীর। এর উত্তর পরে দেবো। আগে বলুন তো, আজ সকালে যা রান্না হয়েছিল, রাতেও কি তাই হবে? হতে পারে যদি আপনার স্বামী পত্নীবৎসল হাবাগোবা বা কঞ্জুষ হয়। আর একটু চড়িয়াল তুখোড় করিতকর্মা হলে, রাতে নতুন রান্না করতেই হবে। নতুবা সকালের রান্নার সাথে আরও কিছু ভ্যারাইটি যোগ করতে হবে।
  যারা পত্নীবৎসল হাবাগোবা হয়, তারা বউয়ের সামনে মুখ তুলে কথা বলে না। সামনে দাঁড়িয়ে হাত কচলায়। এরা নতুন বাড়ি তৈরি করে না। ঘনঘন রড সিমেন্ট বালির দাম বোঝে। আবার গড়ের মাঠে বেড়াতে গিয়ে, কাঠা প্রতি গড়ের মাঠের দাম কত হবে মনে মনে দাম কষে। এরা যে কোনো ব্যাপারে বুঝতে  একটু সময় নেই। তাই যতক্ষণ না বুঝতে পারে, বউ অন্য কোথাও গেলেও, না ফেরা পর্যন্ত এরা লন্ঠন হাতে একমনে দাঁড়িয়ে থাকে। হাজার লোক লক্ষ কথা বললেও এরা বিশ্বাস করে না। আর এরা যদি একবার বুঝতে পারে, লক্ষ কোটি অনুরোধেও কর্ণপাত করবে না। এ বউ ছেড়ে পালাবেই। তাহলে বুঝতে পারছেন একদল সত্যিটা বুঝতে পারলে দল ছেড়ে পালায়।


এবার আসি যারা একটু চড়িয়াল তুখোড় করিতকর্মা স্বামী- তাদের কথায়। এরা একটু উড়ুক্কু স্বভাবের। বেশিক্ষণ একজায়গায় থাকতে পারে না। এরা বউয়ের ন্যাওটা হয় না। আবার বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলেও সামনে প্রকাশ করে না। এরা আবার বিয়ের ব্যাপারে আবার বেশ খুঁতখুঁতে। বেশ কিছু এপার ওপার করার পর, তবেই ছাঁদনাতলায় হাজির হয়।বউবগলে এরা ঘোরে না। খাওয়ার পর তাড়াতাড়ি মুখ মোছে। যাতে কেউ না বুঝতে পারে এরা খেয়েছে। তাই এদের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স কখন যে পচা ডোবা থেকে সাগর হয়ে যায়, তারা নিজেরাও টের পায় না। এরা বিলিতি কুকুরের চেয়ে ভালো। কারণ কেউ পোষ মানাতে চাইলে, এদের তা পারে না। যখন এরা বুঝতে পারে শেয়াল মশাই পাঠশালা খুলেছে, কুমির বাচ্চা খাওয়ার লোভে, তখন এরা কেটে পড়ে। 
  আর একদল আছে, যার কথা আপনি বলেননি। যাদের মনে সবসময় একটা প্রশ্ন ঘোরে, ঈশ্বর কি আছেন? না নিত্সের কথা সত্যি --"গড ইজ ডেড"। যারা দু এক পেগ গলায় ঢেলে বলে-হু ইজ গড? আবার ডাক্তার যখন বলে, আর আমার করার কিছু নেই। এবার ঈশ্বরের হাতে হাত।তখন তিনি হাতে গলায় তাবিজ মাদুলি ঝোলায়।মনসার ডালে ঢিল বাঁধে আর আঙুল ভর্তি আংটি। 
  এরা একদল ছেড়ে অন্যদলে যাবে বলে, কিন্তু এরা কোথাও যাবে না। এরা রামকৃষ্ণের ভাবশিষ্য। এরা ফোঁসফোঁস করবে, কিন্তু কামড়াবে না।জানে কামড়াতে গেলে প্রাণে মারা পড়বো। কারণ এদের ভিত নড়বড়ে। মাঝেমধ্যে ফোঁসফোঁস করে, যদি ধমকিয়ে কিছু পাওয়া যায়। এরা পরগাছা। এদের শেকড় মাটিতে নেই। পরের রসদ নিয়ে, এরা বেশ চিকনাই। মুখ শরীরে তেলতেলে ভাব। তবে হ্যাঁ, কখনো সখনও দাঁতের তীক্ষ্ণতা পরীক্ষা করতে, বা বিরক্ত হয়ে কামড়-ও দেয়।মোদ্দাকথা এদের ভয়ও নেই ভরসাও নেই। ভাসা তরী।যখন খুশী যে কোনো তীরে ঠেকতে পারে। 

দ্বিতীয় প্রশ্ন এদের কি চোখে দেখছি। আমার দৃষ্টিতে এরা শিশু। এদের বড়ো বড়ো স্বপ্নভরা চোখ। আবার শিশুরা মেলা থেকে বায়না ধরে, যদিও বা একটি ভেঁপু নিয়ে এলো, বাড়িতে বাজালে বাড়ির লোক লাঠি নিয়ে তেড়ে যায়। আবার রাস্তায় যে বেরিয়ে বাজাবে সে উপায়ও নেই। তাহলে দাঁড়ালো এটাই, বাড়ির বাইরে বেরুতে দেওয়া হবে না। আবার বাড়িতেও বাজাতে দেওয়া হবে না। তাহলে এরা যাবে কোথায়? তাই মন খুলে বাঁশি বাজানোর জন্য যদি ঘর ছেড়ে পালায়, তবে দোষী কে?এটা তো বুঝতে হবে শিশুদের শিশুর মতো আচরণ, এ তাদের জন্মগত অধিকার। 
  দেখুন, একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয় নীতি ও আদর্শের উপর ভিত্তি করে। আর যে দলের কোনো নীতি বা আদর্শ কিছুই থাকে না,তারা গঠিত হয় চুক্তির মাধ্যমে। যারা একটা কাজের জন্য একটা জায়গায় মিলিত হয়ে দল গঠন করলো, কাজ শেষ হয়ে গেলে সেই দল ভেঙে যায়। যেমন ডাকাত দল।
  আবার অনেকে বলে, আমাদের দল একটি পরিবার। যেখানে রক্তের সর্ম্পক টেকে না, সেখানে আবার অন্য সর্ম্পক। পরিবার মানে সংসার। সংসার কাকে বলে -- "যেখানে কেউই কারোর নয়।এমনকি আপনিও আপনার নয়।তাকেই বলে সংসার।"  আর এই সংসারে বউকে বিশ্বাস করে- সন্তান লাভ। সন্তানকে বিশ্বাস করে-- বেদনা। বন্ধুকে বিশ্বাস করে-- ছলনা। শরীরকে বিশ্বাস করে-- ব্যাধি। আর ব্যাধিকে বিশ্বাস করলেই- মৃত্যু। তাই তো কথায় আছে 'দুর্বলের সংসার সবলের সন্ন্যাস'। যারা দল মানে পরিবার বোঝেন, তাদের যারা ত্যাগ করেন তারা সবল।

পেজ- এ লাইক দিন👇

Post a Comment

1 Comments

  1. পড়লাম ।

    আনন্দ বাজার পত্রিকায় বছর ১৫, ১৬ আগে
    সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের একটা কলাম নিয়মিত পড়তাম,
    প্রায় ৭বছর আগে
    প্রতিদিন পত্রিকায় সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের সঞ্জীবনী সুধা শিরোনামে ও একটা কলাম পড়তাম, লেখা গুলো এতটাই মনের গভীরে থেকে গেছে যে, আজও প্রায় স্মরণ করতে পারি।
    পাঠকদের দরবারে কলামটি ও লেখকের সহজ সরল শব্দের বিন্যাসে, বুদ্ধিদীপ্ত মনোগ্রাহী লেখার গুণে বহু বছর স্মরণে থেকে যাবে।।

    ReplyDelete