জ্বলদর্চি

ব্যাজার মুখে বাজার/গৌতম বাড়ই

ব্যাজার মুখে বাজার
গৌতম বাড়ই

বাজার করার হাজার ঠ্যালা আমরা জানি। বাজার করতে গিয়ে ব্যাজার হয়ে ফেরা সেও তো হাড়ে- হাড়ে প্রত্যেকের দেখে নয়, ঠেকে শেখা। একটু পাতে আলুসেদ্ধ গিলব, সে আর হচ্ছে কোথায়? আলু চটকাতে গেলেই চোখ বেয়ে দামের ঝাঁজে জল গড়াবেই। একটু আলুসেদ্ধ ভাত! সেও তো মহার্ঘ বস্তু এখন। জ্যোতি আর চন্দ্রমুখী। জ্যোতি তো একটু ধরা-ছোঁয়ার মধ্যেই থাকে আপামর বাঙালীর হেঁসেলে এই শীতের মধ্যে নতুন আলুর যোগানে। সেও করোনার ছোঁয়াচে লাগাম ছাড়া। চন্দ্রমুখী ঐ দিকে ধেই-ধেই মূল্যবৃদ্ধির নৃত্যে সারাবছর জমিয়ে রেখেছে। এখন প্রশ্ন খাব কী?

  বাজারের দিনুদা। ঐ যে দিন আনে, দিন খায়। এখন নাকি প্রায় চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে- "ওরে পাগলা খাবি খা"। আমি বাজারে ঢুকতেই হাত বাড়িয়ে আমার জামার হাতা ধরল। আমায় বললে- "বলি দাদা আছেন ক্যামন?"

  বড় শক্ত প্রশ্ন। এ প্রশ্ন তো সবসময় বিব্রত করে আমাদের প্রত্যেক-কে। কী যে উত্তর দি, মাথা চুলকোচ্ছি। নাকি সত্যি খাবি খাচ্ছি ঐ দিনুর কথায় বুঝতে পারছি না। বলি- আছি দাদা ভালো। 
দেখি দিনুদা খ্যাক-খ্যাক করে হাসছেন আর বলে উঠলেন- "ঝুট্ সব ঝুটোমুঠো কথা। এ বাজারে কেউ ভালো নেই। কী করে ভালো থাকা যায়? ভালো থাকা যায় না। যেতে পারে না। এভাবে ভালো থাকা যায় না। বিশ্বে পেট্রোলের দাম তলানীতে আর ভারতবর্ষে হু- হু করে চড়ছে খালি"।

  তবে কী করে ভালো থাকা যায়? আমি দিনুদা-কে জিগ্গেস করি।

  --- সেটাও বলে দিতে হবে! আরে বাবা একটা ছোটো- বড়, মেজো- সেজো গোছের নেতা হও। রাজনীতির রঙ লাগাও, জামা পাল্টাও। একবার এ-দিকে আর একবার ও-দিকে ঝোপ বুঝে কোপ মেড়ে, জনগণের সেবা করবার নামে কোটি-কোটি টাকা ঝেড়ে ক্রোড়পতি বন যাও। নো কেস, নো ট্যাক্সো। ব্যাস কেল্লা ফতে। এই বলে দিনুদা আমার দিকে তাকালেন। আমার মাথায় তখনও ঘুরছিল আলু আর একমাত্র আলু। এই যে এত-এত আলু উৎপাদন হয়, আলুচাষী দাম পায়না আর আত্মহত্যা করে মরেন। খুব গভীর দুঃখের কথা। সত্যি ভীষণ কষ্ট লাগে। আর আমরাও সস্তায় কিনতে পারিনা। তাহলে খাচ্ছেটা কে লাভের গুড়? ওদিকে চাষীকে মেরে আর এদিকে আমাদের ছা-পোষা, দুঃখু- পোষা হাজার হাজার আমজনতাকে মেরে। 

  গিন্নী বললেন- আগে শীতকাল এলে বাজারের ব্যাগ দেখলে বুঝতুম। কী সুন্দর হরিয়ালী শাক-সবজীতে ভরা ব্যাগ। আলু-ই আসতো কত ধরণের! স্বাদের বেগুন পোড়া! কী সাইজ সেইসব বেগুনের। গোল-গোল গোলাকার, লম্বা। চন্দ্রমুখী আলুর  আলুসেদ্ধ ভাত গরম- গরম , গাওয়া ঘিয়ে মেখে ও কী অপূর্ব! বলি, হাঁ গা, তুমি কী সরকারি চাকরি করতে করতে গরীব হয়ে পড়লে? নাকি একটা উৎকৃষ্ট কেপ্পনে পরিণত হয়েছ? মরণ! কী ভিখিরিদের  মতন বাজারের থলির চেহারা গো।
  ভাবি বলি- তোমরা আর বুঝবে কী! এখনও তো সোনার দামের ওঠাপড়া দেখো আর ইউটিউবে রান্না। কোভিডের মরণ, ফ্লিপকার্টের অফার এইসব। যদি বাজার দর দেখতে দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের তবে বুঝতে বাজার করবার সত্যি হাজার ঠ্যালা গিন্নী। কী করে যে কর্তা-মশাই এই কীর্তন চালিয়ে যাচ্ছেন ঐ নিরেট মাথায় ঢুকবে না। যা বললাম তা সবটুকু ঐ  মনে- মনে। তবে পাগলা ঐ চেপে যা! এটুকু তিরিশ বছরে মস্ক করে ফেলেছি।

  হাঁ ফিরে আসি আলুর কথায়। আলুবাজী আর আলুবাজ অনেক শুনেছি। তবে আলুর জন্য হা-পিত্যেশ বা পোড়াকপাল এই মধ্যশীতের বেলায় বঙ্গদেশে আগে ছিলনা। এখন তো হর- হামেশাই ঘটছে। আহা! মনে পড়ে সেই কড়াইশুঁটি দিয়ে গোল- গোল ছোটো আলুর আলুদম, মায়ের হাতের রান্না। সে গন্ধ এখনও নাকে লেগে। না, এও বলা যাবে না। আলুর দুঃখ বুকে থাক। শুন্যবুকে শুধু এখন গোল-গোল আলু। গন্ডায় গন্ডায় হিমঘর হচ্ছে আর তারচেয়েও তেজে বাড়ছে আলুর দাম। পরের জন্মে আলুখোর হতে আর চাইনা, তারচেয়ে আলুবাজ হলে কেমন হয়! এও বলা যাবে না প্রকাশ্যে। অতএব ঢোঁক গিলি। দিনুদা- কে একটা লাল চা আর বিড়ি দেই কিনে। বাড়ি ফিরে আসি।

এ বাজারে একটা নতুন চরিত্রের আবির্ভাব হয়েছে। দিনুদা দেখালেন-  "ঐ দেখো বিটকেলটাকে ও নাকি কবি! আমি বলি কবি গাঁজানন"।

পরের পর্বে আসবে কবি গাঁজাননের সরস কীর্তি।

পেজ- এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন

Post a Comment

0 Comments