২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা
গুচ্ছ কবিতা
প্রনবরুদ্র
কে জানে
জানে শুধু ঘাস ফুল আর আকাশের চাঁদ
ওরা জানে আবেগমাখা অনুভূতির স্বাদ
আজ থেকে অনেক গ্রীষ্ম বর্ষা বসন পরে
চাইবো তোকে পাগল আমি একই রকম করে।
তোকে ছাড়া পথ যাওয়া তৃষ্ণা বুকের চাতক
তুই ছাড়া আমার আমি নিজেই নিজের ঘাতক
চাই না একা বাঁচতে শুধু জীবন জুড়ে ধূ ধূ
আসুক বক্ষে কিউপিড দেব জমুক গাঢ় মধু।
হাজার আদর যত্ন করে চুমেছি তোর জন্য
জানি আমি তোর কাছে আজো অতি নূন্য
তবু আমি হৃদয় রাণী ভালোবাসি তোকে
জমা করে রাখবো প্রেম আমার সারা বুকে।
গোপন খবর আর কারো জানা আছে কি না?
কে জানে তা হয়তো পাগলি তোরই নেই জানা!
প্রণয়ের পথে আকাশ সীমানা
আজাবধি ফাঁকা গ্যালো বিবাহিত দাম্পত্যের সুখ
শোক নিয়ে পৃথিবীর মতো চুপচাপ সহ্য করি
নিজদেহে পচন ঝাপটে অসুখের শব পাশে
নিষ্প্রদীপ মাথা, মরা ঢেউ খেলে সংসারের গায়ে।
ঠোঁট-বুকে ভালোবাসে নারী কেউ, কেউ বাসে ক্রীড়া
যাকে খুঁজেই পাই না সে-ই থাকে হয়ে মনপ্রিয়া।
দূরবর্তী ফলগাছে লোভ দেয় কতো পরকীয়া
কে যে কাকে খাবেক্ষণ, ফুঁড়ে দেবে ষোল কলা চাঁদ!
অতৃপ্ত বাসনা যদি মেলে পাখা- দোষ কাকে দেবে
সহ্যের একটা শেষ সীমা পরে, উড়ে যেতে হয়
হাওয়ায় পাখি গায়; তাকে গাইতে দাও, বেঁধো না
মনে মন না থাকলে আইন পারে না বনিবনা।
ঘরকন্নার মনমালিন্য শুষে রতিপরবাশ
যদি থাকে বাতাসে চন্দন পূর্ণপ্রেমে গৃহবাস।
প্রণয়ের পথে আকাশ সীমানা, এসো আমাদের-
বৈবাহিক কফিনের শীতে শ্রান্ত ফুল রেখে, হেঁটে
যাই চলো দু'জন দু'কূলে; এ শীত যে বিছিয়েছে-
চাদর সর্বত্র, তোমার আমার মাঝে মৃত্যুাবধি।
সিজোফ্রেনিয়া
লোভ ছিলো না বললে অপলাপই হবে বটে
স্বপ্ন তো ছিলোই ভালোবাসার মতো মন ও শরীরের
এর বেশি সমস্ত জীবনে অধিক প্রণয় প্রয়োজন ছিলো না
অন্য কোন ফুলের সুবাসেরও।
কতিপয় নন্দন অন্ধকার রেখে দিয়ে বিছালো বাসর
তারপর লুকিয়ে রাখা মিথ্যার আগুন বেড়িয়ে পড়লো
কাগজে কলম রাখতেই জায়া-পতি সঙ্গ ঠোকরায় মাছরাঙা
অক্ষর বুঝিনি, আঁকড় বুঝিনি, বুঝিনি তারই বক্রতলে স্রোত!
দাদা, শেষমেশ নিদারুণ সত্যে পুড়ে যাচ্ছি আমি
তোমাদের সুরক্ষার মান মূল্য দিতে
এক বোধহীন জীবভর কাঁধে এখন
রসহীন অনুর্বর ভূমি আর উন্মাদিনী তার মন।
কৃষ্ণগহ্বরের এতো শক্তি আলোকেও টেনে নেয় কোষে
মস্তিষ্কের কার্যগতি কর্মসম্পাদনে পরম্পরা বুনতে না জানলে
বিভাজন জেগে ওঠে ঘর-গৃহস্থালি-ওমে।
দিন শেষে পাখিরাও ফেরে নীড়ে, আমি- আমি কার টানে ফিরি গৃহে?
অগুণিত শূন্যতার ভীড়ে সহবাস মৃত্যু নিয়ে আছড়ে পড়ছে আর্তনাদ
আমার লেখার টেবিলে রইলো পড়ে খোলা-
রিক্ত অমিল অসুখী জীবনের উপন্যাস…
কি করি আমি ?
ঘুম আসছে না একদম, রাত দু'টো পঁচিশ
কী করে আসবে ঘুম! আজ তোর পাকাদেখা হলো
আগামী রবিবার আশীর্বাদ, বিয়ে কবে এখনো জানি না।
আমি কি করবো বলতে পারিস?
অবশ্য তোর কোন দোষ নেই এতে,
তুই আমার সাথে যেতেই চেয়েছিলি
আমিই বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বাড়ি ফেরালাম তোকে।
অনেক তত্ত্বকথা আউরিয়ে, বাবা মা-র সন্মান রাখতে বলে
নিজেকে বসন্তের বঞ্চিত দেবদাস বা রাজা হরিশচন্দ্র
অথবা তারচেয়েও মহান কিছু বানালাম!
আমি কি করবো বল্? ভীতুর ডিম যে আমি!
চিরকাল লাস্টবেঞ্চে বসা ছাত্র
যার পড়া মুখস্ত হলেও বলতে গিয়ে তো তো করে
আমার কি সাহসে কুলোয় তোকে নিয়ে যাবার?
এরপর কি সব যোগাযোগ, দেখা, স্পর্শ, ভালোবাসা-
বন্ধ হয়ে যাবে? থাকবে না কোন অপেক্ষা অভিযোগ?
এখন বুঝেছি- ভালোবাসা যা দেয়
তারচেয়ে অনেক বেশি নিয়ে নেয়
শূন্যতার অতলান্তে
হৃদয়ের মধ্যে শূন্যের পাশেই শূন্য বসে
গভীর শূন্যতা থাকে জেগে
পরপর শূন্যগুলির সামনে আছে ১
এক আমি, একা আমি
শূন্য যত বেশি হয় ১-এর ঘাড়ে বাড়ে তত ভর
আলো কাঁপছে বাতাস কাঁপছে
দৃষ্টি অগোছালো পাগল পাগল লাগে
আমি উন্মাদ হয়ে গেছি শূন্যতার অতলান্তে
রোমাঞ্চকর দিনগুলির শিহরন অনন্ত দূরে
ভালোবাসা কখনই সুখ পেলো না
ভালোবাসা মরে যায়নি
আসলে এখানে "সে" জন্মই নেয়নি
অন্ধকার যত গাঢ় হয় আমি তাকে খাই
আর সেও আমাকে
মহাবিশ্বে শুধু অন্তহীন শূন্যতাই পড়ে থাকে
আরও পড়ুন
0 Comments