জ্বলদর্চি

সংক্ষিপ্ত মহাভারত-৪/ সুদর্শন নন্দী


সংক্ষিপ্ত মহাভারত
পর্ব-৪

সুদর্শন নন্দী

কৌরবরা ও মামা শকুনি  পাণ্ডবদের গোপনে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। একদিন পাণ্ডবদের শুনিয়ে শুনিয়ে কৌরবদের কিছু অনুগত লোকজন বারাণাবত স্থানটির খুব প্রশংসা করে এবং সেখানে বেড়াতে যাওয়া খুবই আনন্দের বলে জানায়। পাণ্ডবদের সেখানে যাবার কথা বললে তাঁরা রাজী হয়।তখন শকুনির নির্দেশে স্থপতি পুরোচন বারণাবত নামক স্থানে গালা, মোম প্রভৃতি বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ দিয়ে ‘জতুগৃহ’ নামে এক প্রাসাদ তৈরি করে ও সেখানে পাণ্ডব ও কুন্তীকে ছুটি কাটাবার পরামর্শ দেয়। বিদুর  কিন্তু শকুনির ষড়যন্ত্র বুঝতে পারলেন। তিনি সেকথা পাণ্ডবদের জানালেন। ব্যবস্থা করলেন সুড়ঙ্গ কাটার। জানালেন জতুগৃহে আগুন লাগলে তারা ঐ সুড়ঙ্গপথে যেন পালিয়ে আসেন । এদিকে ঐ রাত্রে এক নিষাদ মা পাঁচ পুত্রকে নিয়ে সেখানে খেতে এসেছিল। তারা ঐ জতুগৃহে থেকে যায় এবং আগুনে পুড়ে মারা যায়।  জতুগৃহে আগুন লাগানো হলে সকলে মনে করল তাদের মৃত্যু হয়েছে। আর পাণ্ডবরা সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে গঙ্গা পেরিয়ে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হন। এদিকে তারা যে বনের মধ্যে দিয়ে পালাচ্ছিলেন সেই বনে হিড়িম্ব নামক এক রাক্ষস ও তার ভগিনী হিড়িম্বা বাস করত। মানুষের গন্ধ পেয়ে হিড়িম্ব তার বোনকে বললে মানুষগুলোকে নিয়ে এস, আজ মহাভোজ হবে। কিন্তু হিড়িম্বা সেখানে উপস্থিত হয়ে ভীমের রূপ দেখে হিড়িম্বর মনে পরিবর্তন এল, তার প্রেমে পড়ে যায় সে।  সুন্দরী নারীর বেশে ভীমের কাছে এসে হিড়িম্বা হিড়িম্বর অভিসন্ধি জানায়।   হিড়িম্বা আরও বলে যে সে ভীমকে ভালবেসে ফেলেছে।  সে সবাইকে নিয়ে পালিয়ে যাবার কথা বলে ভীমকে। এদিকে বোনের আসতে দেরি হচ্ছে দেখে হিড়িম্ব নিজেই হাজির হল সেখানে। শুরু হল যুদ্ধ। হিড়িম্ব মারা গেল ভীমের হাতে।

  হিড়িম্বা ভীমকে বিয়ে করতে চাইলে সে রাজী হল না। কিন্তু কুন্তীর আদেশে ভীম হিড়িম্বাকে বিয়ে করেন। তাদের যে পুত্র হয় তার নাম ঘটোৎকচ। ঘটোৎকচ খুব ধার্মিক ও বীর যোদ্ধা ছিলেন।

এরপর পাণ্ডবরা তপস্বী বেশে  মৎস্য, ত্রিগর্ত, পাঞ্চাল, কীচক ঘুরে শেষে  ব্যাসদেবের সাথে দেখা হয়। তিনি একচক্রা নগরে ব্রাহ্মণ বাড়িতে পাণ্ডবদের থাকার ব্যবস্থা করলেন। সেখানে ব্রাহ্মণের বেশে  ভিক্ষা করে দিন অতিবাহিত হয়।  সে নগরের কাছে বনে থাকত বকরাক্ষস। তাঁর জন্য পালা করে এক একজন মানুষকে প্রত্যেক ঘর থেকে  খাবার হিসেবে পাঠাতে হত। সেদিন সেই ব্রাহ্মণদের পালা। সবার কান্নাকাটি শুনে এবং ব্যাপারটি জানতে পেরে বক রাক্ষসের কাছে ভীম গেল। বকের সাথে ভীমের প্রচণ্ড যুদ্ধ হল এবং মারা গেল বক রাক্ষস। একচক্রানগরে নেমে এল শান্তি। যদিও অনেকে পঞ্চপাণ্ডবদের উপর সন্দিহান হয়েছিলেন।  

এই সময় পাঞ্চালের রাজা ছিলেন দ্রুপদ। যজ্ঞ করে ধৃষ্টদ্যুম্ন ও দ্রৌপদী নামে দুই পুত্র-কন্যা লাভ করেন তিনি। সেখানে বিশাল আয়োজন হয়েছিল দ্রৌপদীর বিয়ের জন্য স্বয়ংবর সভার। বিভিন্ন রাজ্যের রথী মহারথীরা হাজির সেই সভায়। পাণ্ডবরা ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াবার সময় দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভা আয়োজিত হয়। পাঞ্চালে এক কুমোরের বাড়িতে আশ্রয় নেন তাঁরা।  

কাহিনীর এই অংশে আমরা ধৃষ্টদ্যুম্ন ও দ্রৌপদী বিষয়ে দু চার কথা বলব। আমরা জানি  দ্রোণাচার্য  তাঁর  শিষ্যদের দিয়ে পাঞ্চালরাজ দ্রুপদকে পরাজিত করেন। দ্রোণ দ্রুপদকে অর্ধেক রাজ্য ফেরত দিয়ে পুনরায় মিত্রতা স্থাপনে আগ্রহী হন কিন্তু দ্রুপদ এই অপমান ভুলতে পারেননি। এজন্য তিনি দ্রোণকে শায়েস্তা করতে পুত্রলাভের জন্য যাজ ও উপযাজ ঋষির সাহায্য  উপদেশে তিনি যজ্ঞ করে দ্রোণবধী পুত্র ধৃষ্টদ্যুম্নকে লাভ করেন এবং সেই যজ্ঞে দ্রৌপদীর জন্ম হয়। তাঁর নাম হয় কৃষ্ণা। দ্রুপদের কন্যা বলে তাকে দ্রৌপদী বলে ডাকা হয়।   

 তাঁর জন্মের আগে পাঁচটি জন্মের কথা জানা যায়। পঞ্চম জন্মে তিনি দ্রৌপদী।   শিবের বরে তাঁর মধ্যে   পাঁচজন মানুষের  গুণের সমাহার ঘটে। তাই তিনি পাঁচজন স্বামী লাভ করেন।

আসি ধৃষ্টদ্যুম্ন বিষয়ে। এক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গ টানতে হবে বিষয়টি সম্পূর্ণ করতে।  কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ধৃষ্টদ্যুম্ন পাণ্ডবদের সেনাপতি নিযুক্ত হন। যুদ্ধের পনেরতম দিনে দ্রোণ ধৃষ্টদ্যুম্নের পিতা দ্রুপদকে হত্যা করেন। এদিকে দ্রোণকে হত্যা করার জন্য পাণ্ডবরা ছলের আশ্রয় নেয়। তাঁর পুত্রের নাম ছিল অশ্বত্থামা। অশ্বথামা নামে একটি হাতিকে মেরে সে খবর যুধিষ্ঠিরের মারফত পান দ্রোণ। যুধিষ্ঠির হাতির কথাটি খুব আসতে বলেন। যুধিষ্ঠিরের কথা শুনে নিহত অশ্বথামা পুত্র ভেবে পুত্রশোকে অস্ত্রত্যাগ করেন দ্রোণ এবং ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁকে হত্যা করে। অন্যদিকে দ্রোণপুত্র অশ্বথামাও তাঁর তিনদিন পর ধৃষ্টদ্যুম্নকে হত্যা করেন।   
 তা দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় ঘোষিত হয়, উঁচুতে ঝুলন্ত একটি মাছের চোখটির প্রতিবিম্ব নিচে জলে দেখে ঘূর্ণায়মান চক্রের মধ্য দিয়ে যে রাজকুমার চোখটিকে শরবিদ্ধ করতে পারবে, সে দ্রৌপদীকে পত্নী হিসেবে লাভ করবে।

সব রাজারা অসমর্থ হলেন। কর্ণকে সারথির পুত্র বলে প্রত্যাখ্যান করলেন দ্রৌপদী। কর্ণ এ অপমান কুরে কুরে খেতে লাগল। জেগে উঠল প্রতিশোধ স্পৃহা। কে ছিল না সেই সভায়।  সভায় কৃষ্ণ, বলরাম,  জরাসন্ধ, শিশুপাল, সবাই ছিলেন।  এদের সম্বন্ধে দুচার কথা বলে স্বয়ম্বর সভায় এগোব আমরা।

প্রথমে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথায়। আমরা জানি, শ্রীকৃষ্ণ হলেন হিন্দুদের আরাধ্য ভগবান। তিনি ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার রূপে খ্যাত। কখনো কখনো তাকে সর্বোচ্চ ঈশ্বর ('পরম সত্ত্বা') উপাধিতে ভূষিত করা হয় এবং হিন্দুদের অন্যতম ধর্মগ্রন্থ ভগবৎ গীতার প্রবর্তক তিনি। আবার তিনি হলেন বৃন্দাবনের রাধিকার প্রাণ। দেবকী হলেন তাঁর মাতা, বসুদেবপিতা, এবং যশোদা পালক মাতা,নন্দ পালক পিতা।
যুধিষ্ঠির রাজা হতে কৌরবরা সুখী হতে পারেনি। এই সময় অর্জুন দ্বারকাধিপতি শ্রীকৃষ্ণের বোন সুভদ্রাকে বিবাহ করেন।কৃষ্ণের পিতা বসুদেবের ঔরসে রোহিণীর গর্ভে সুভদ্রার জন্ম হয়। তাই,তিনি ছিলেন বলরামের সহোদরা এবং কৃষ্ণের বৈমাত্রেয় বোন।রোহিণী দেবী হলেন বলরাম এবং সুভদ্রার মাতা। বসুদেবের প্রথম স্ত্রী। বসুদেবের দুজন স্ত্রী, রোহিণী দেবী ও দেবকী। দেবকী তার সপ্তম গর্ভ রোহিণী দেবীকে প্রদান করেন, যার ফলে বলরামের জন্ম হয়। এরপর দেবকী ও বসুদেবের অষ্টম পুত্র কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বসুদেব ও রোহিণীর এক কন্যা জন্মগ্রহণ করেন যার নাম সুভদ্রা যা বাসুদেব কৃষ্ণের সাথে বদল করে কৃষ্ণের প্রাণ বাঁচান।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇
 আরও পড়ুন

Post a Comment

0 Comments