জ্বলদর্চি

প্রেম নদীর মাঝি/মঞ্জীর বাগ

প্রেম নদীর মাঝি

মঞ্জীর বাগ

আমাদের বাড়ি যেতে হলে জল পেরিয়ে যেতে হতো। একটি নৌকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো পূর্নকাকা। অন্ধকার রঙের বলিষ্ঠ চেহারার আলো ছিল তার গান। হাল হাতে নিয়ে সে গান বাঁধতো, গাইত ও চমৎকার। পূর্ণকাকার ঘর ছিল, ঘরনীও ছিল। পরিপূর্ণ সংসার ছিল তার। তার এক ভালবাসার  সুর ছিল সারি পিসি। ছেলেবেলা থেকে ভালোবাসার  গান পরিনতি পায়নি সামজিক সম্পর্কে। নিচু জাতের গরীব ছেলেটি কল্কে পায় নি বিয়ের বাজারে।সারি পিসি বিয়ে হয় দোজবর জমিদারের সঙে। সুখে থাকতে পারে নি পিসি। ফিরে এসে ছিল।পূর্নকাকার পরিপূর্ণ  সংসার তখন। তবুও সারি পিসি পূর্ণকাকার গান হয়ে বেঁচে থাকল। তাকে ঘিরে কত না গান লেখা। জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে চারিধার। পূর্ণকাকা তার বাড়ি থেকে বের হয়ে বাঁধানো চাতালে বসে গান গাইছে। মনে হতো সুর যেন স্পর্শ করছে প্রেমিকার হৃদয়। সারিপিসির ঝরে পড়া জলে নৌকা ভাসায় পূর্ণমাঝি।
বহুদিন কেটে গেছে বহুদিন দেশ গাঁয়ে যাওয়া হয়না। এবার বাড়ি যেতে ওদের দুজনের খোঁজ  করলাম। কাকার ছেলে বলল পূর্ণকাকার বাড়িতে কেউ  নেই,বউ মরেছে।ছেলেরা বিদেশে। পূর্ণকাকার উঠবার শক্তি তেমন নেই। চিনতে পারেনা কাউকে। এমনকি সারিপিসিকেও না। কেবল তার নিজের লেখা গান গুলো মনে আছে। উঠিয়ে বসিয়ে দিলে যন্ত্র হাতে গান গায়। এখনও তার গলায় সুর আছে। সারি পিসি সারাদিন দেখাশুনা করে।খুব গালি ও খায়। রাগ করে না।

দেখতে গেলাম একদিন। সারিপিসি চেহারা  মলিন কিন্তু কি সুন্দর হাসি। বলল--
      এলি এতোদিনে। দেখ মানুষ টাকে। সুরটুকু মনে রেখেছে। সুরেই তো আমি বেঁচে আছি।ঈশ্বর আমায় অনেক কিছু দিলেন।

    বলে পিসি প্রণাম করল না দেখা ঈশ্বরকে। আমি এক ঈশ্বরীকে দেখি চোখের সামনে। ভালবাসার মাঝির নৌকায় এক ঈশ্বরী পুনঃপ্রাণ প্রতিষ্ঠা।গান ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশে। নীল রঙে এক ভালোবাসার  ছবি আঁকা। সেদিন দোতালার বারন্দায় বসে আমি আর ঠাকুমা, দূরে ওদের বাড়ির আলো দেখা যাচ্ছে।ঠাকুমা  বললেন,দেখ সব কিছুই যে ছকে বাঁধা হবে এমন কি কথা আছে। ওরা সমাজের বাঁধনে বাঁধা পড়ল না বলে হয়তো কষ্ট পেল। কিন্তু  ওদের ভালোবাসা টা বেঁচে গেল। এভাবেই  পাওয়া আর না পাওয়ার মধ্যে ভালোবাসা  ঘুরেফিরে শ্বাস নেয়। মরে যায় না। গান শোন--
আমি আকাশে দিকে তাকিয়ে তারার ভেঙে যাওয়া দেখতে লাগলাম।ভালবাসা নাও হারিয়ে যেও না

পেজ-এ লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments