চিঠি
অলক জানা
"নতুন পাতা নতুন ভোর/ ছিলাম আমি আছিও তোর" এখন আমাদের মধ্যে কারো চোখে পড়ার মতো আর কোন যোগাযোগ নেই। বলাও শক্ত কে কিভাবে পরস্পরের খোঁজখবর রাখে। না চিঠি না টেলিফোন না এস এম এস কোন কিছুর সূত্র ধরে আটকে থাকার বাতিক কারো নেই সেটাই এখন চরম সত্যি। দ্বিধাদ্বন্দ্ব, ভালোলাগা মন্দলাগার পঠন পাঠনে সময় অপচয় করার মতো মানসিক প্রস্তুতি কারো নেই এই সত্য এখন বেশ পরিষ্কার। সুতরাং আক্ষেপের আর কিছু নেই যে তাকে ঘটা করে রাগে অভিমানে অগ্নিশর্মা হতে হবে। আসলে কবি চিরদিনই ভূমির মতো আধার হতে চায়। যদি তুমি বিদ্যুৎ ব্যস্ততায় নদী কিংবা চকিত ঝর্ণার মুক্তধারায় বয়ে আসো তবে তিনি অবাধ পথ সাজিয়ে রাখেন। অনন্যোপায়ে গতি পালটে নিলে তখন কে আর দায় বয়ে বেড়াতে চায় ? স্বেচ্ছাচারে নিয়ম গড়লে তার সুফল অন্যের জন্য কখনোই সুখকর নয়। যারা সম্পর্ক চায়, সম্পর্ক গড়ে তারা হাড়ে হাড়ে বোঝে। সময়োচিত সবকিছু সহ্য করতে হয় এটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
কিছু অনুকূল সময় সুযোগ একবারই আসে, তার পুনরাবৃত্তি কিছু আকর্ষণীয় পরিস্থিতিকে সাময়িক ভাবে মনে করা হলেও তা কেবল সান্ত্বনা। অথবা হতে পারে কোন্ মানসিকতায় কোন্ টি কে গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ প্রতিটি ঘটনাই জন্মগত আলাদা ও ভিন্ন মাত্রার হয়। কিছুক্ষেত্রে আপাত দৃষ্টিতে মিল খুঁজে পাওয়া গেলেও তা ওই পর্যন্ত। এর বেশি কোন সারবত্তা নেই। ধরা যাক কেউ রবীন্দ্রনাথ-জীবনানন্দ পড়তে চায়, কেউ বিদ্যাপতি, কেউ চণ্ডীদাস আবার কেউ ভারতচন্দ্র। এদের সার্বিক মিল হলো পড়া, কিন্তু এই সব পৃথিবী পরিক্রমার ফলাফল এতটাই অমিল হয়ে যায় যে তখন প্রতিটি কক্ষপথই ভিন্নতর ও আলাদা। সুতরাং আজ ভালোবাসার দিনে তার কথাই হোক, যে চণ্ডীদাস পড়েছিল ! তারপর জীবনানন্দের জন্য কৌতূহল। এক সময় অজ্ঞাতসারে কখন সে আপাদমস্তক কবিতা হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গ অপ্রসঙ্গে তার কথা উঠলেই যেন ভেতরে অপার্থিব আনন্দ। এক নাতিশীতোষ্ণ প্রস্রবণ ভাসিয়ে দিচ্ছে আমার সমূহ ইন্দ্রিয়মালা, এক অনির্বচনীয় আরাম বিন্দু বিন্দু ছড়িয়ে পড়ছে ভালোলাগার অপার মহাশূন্যে।
এখন তো একাকার হওয়াই যায়? এই সম্মতির জন্য সম্পর্কবাহুর উভয় প্রান্তই অপেক্ষায় ছিল জানিনা কতকাল, হতেও পারে বর্ণপরিচয়ের প্রথমপাঠ সে আমার থেকে নিয়েছিল, নাকি আমি নিয়েছিলাম তার থেকে। একদিন তো বলতেই শুনেছিঃ আজ হঠাৎ ঋতুবিভ্রাট স্পর্শে দোষ লাগতে পারে কী ? তখন কামনার সমস্ত বাতি নিভিয়ে তার ললাটের অস্বস্তির ঘাম মুছিয়ে দিয়েছে বিশ্বস্ত ঠোঁট। বসে দাঁড়িয়ে শুয়ে বিবিধ আসনে সেই ঐকান্তিক মগ্নতার সুখকর মুহূর্ত জন্ম দিয়েছে অনেক কবিতার মুখাবয়ব। সে তখন এসে বসতো আভূমি নগ্ন আলোর পলেস্তারা মেখে নাগালে। উরুসন্ধির ব্রহ্মে সযত্নে ডুবে গেছে ওষ্ঠাধর ও জ্বিহার সুখ। শঙ্খধবল উর্বর বুকে বারবার ছড়িয়ে গেছে বালকত্বের ন্যাড়াগাছ হাতের আঙুল। জলে জল, ছায়ায় ছায়ার মতোই ধারণ করে সে একদা হয়ে উঠল কবিতাতীর্থ নিস্তারিণী ক্রমা। যাকে একপলক দেখার জন্য একটা ছটপটানি বুকের পাঁজরটা তোলপাড় করে দিত। মোবাইলে দীর্ঘ সংলাপ সফর, হোয়াটস অ্যাপে সরস চ্যাটিং এক কথায় ক্রমার সঙ্গেই কেবল চলতে পারে ছেলেমানুষির সাতকাহন !
যে ক্রমে ক্রমে ক্রমশ ক্রমাগত কবিতা উপুড় উজাড় করে দেয় তার নাম "ক্রমা"। কেবল কবি শ্রীকেশের ক্রমা, আর কারো নয়, কখ্খনো কারো হতে পারে না! এই বিশ্বাসের কাছে জীবনের বহুকিছু পরাজিত হারিয়েও গেছে চিরতরে তবুও ক্রমা'র জন্য দুর্বলতা ফুসফুসের একাংশ। এখন সমূহ যোগাযোগের ঊর্ধ্বে যে জায়গা করে নিয়েছে তার নাম স্মৃতি ও মনেপড়া। প্রতিদিনই যখনতখন ব্যস্ততম ছায়াবিমর্ষতার ভেতর ভেসে ওঠা ক্রমা'র মুখ ছড়িয়ে যায় সুখ ও রোমাঞ্চ। একটা অসমাপ্ত তৃষ্ণা পরমায়ুর সঙ্গে আমরণ থাকার প্রতিশ্রুতির বোধকরি অনুমোদন পেয়ে গেছে। শরীরে শরীরে যে অক্ষর লিখে গেছে ক্রমা তাকে মুছে ফেলার কারিশমা কার জানা আছে? শরীরে শরীর একাকার মিশে গেলে রচিত হয় এক অক্ষয় চুক্তিপত্র। যা অবিচল এবং সংরক্ষিত। যাকে আগলে অনেকের মতো শ্রীকেশও এখন বাঁচতে শিখে গেছে। একটা বাসনা তো থেকেই যায় ক্রমা নিজেকে গুছিয়েই ভালো থাক্। কবিতার মতোই তার ভালো থাকা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য খুব দরকারি।
পেজ-এ লাইক দিন👇
2 Comments
খুব ভালো একটি লেখা পড়লাম
ReplyDeleteসুন্দর লেখা
ReplyDelete