জ্বলদর্চি

প্রেম ছিল না!/পীযূষ প্রতিহার

প্রেম ছিল না!

পীযূষ প্রতিহার

তখন আমি কলেজে যাই, বয়স আঠারো হবে;
কে জানতো তোমার সঙ্গে এমন দেখা হবে!

     এই উনিশ বছরে কম মেয়ের সঙ্গে আলাপ হয়নি। কো-এড স্কুল, টিউশনির ব্যাচ, সরস্বতী পূজার সময় পাশাপাশি স্কুল চষে বেড়ানো মিলে সংখ্যাটা না বলাই ভালো। তবে ভালো ছেলে বলে পরিচিত এবং পারিবারিক বদনামহীনতার ইতিহাস আমাকে সেই সব আলাপ গুলোকে প্রেমের গভীরতায় নিয়ে যেতে দেয়নি বা বলা ভালো আমি নিজেই বিরত থাকতে পছন্দ করতাম। তা হৃদয় আর কবেই বা মস্তিষ্কের কথায় চলেছে? যদিও বা কিছুদিন চলে তাহলে তা নিশ্চয়ই ততদিন যতদিন পর্যন্ত মস্তিষ্ক হৃদয়ের আবেগকে শাসন করতে পারে। তারপর যেদিন অতিষ্ঠ হৃদয় বিদ্রোহ করে সেদিন আর মস্তিষ্কের কোন কথাই সে শুনতে চায় না। আমারও প্রায় সে দশাই হল কলেজে পড়ার সময়।  আমাদের কো-এডুকেশন কলেজ হলেও তার কলেজ ছিল গার্লস কলেজ। দেখা হল টিউশনির ব্যাচে। চোখে চোখ, ব্যাস। বদলে যেতে লাগল দিনগুলো, বদলে যেতে থাকল রুটিন। আমি আমার হৃদয়ের আবেগে মস্তিষ্কের শাসন হারিয়ে ফেললাম। তখনো সেভাবে কথা বলা হয়নি। নামটুকু জানা হয়েছে মাত্র। তার পর মাঝে মাঝেই চোখে চোখ পড়ে যাওয়া ঘটতে লাগল অবিরাম। একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকল কথা বলা। একে অপরের সম্বন্ধে জানতে লাগলাম কিছু কিছু কথা। চকোলেট দিত মাঝে মাঝেই, ব্যাগে রাখত সে। নোটস ফটোকপি করতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হত অনেকক্ষন, সেখানেই মিলত বেশি করে কথা বলার সুযোগ। তখন তার সম্বন্ধে আমার আবেগটা বেশ বুঝতে পারতাম কিন্তু ওপক্ষ থেকে সেরকম কোন সিগন্যাল পাইনি। তখন ওর বা আমার কারো কাছেই মোবাইল ছিলনা। তাই বেশি বেশি কথা থেকে টান বোঝার কোনো উপায় ছিল না। দু-তিনটে বছর কিভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারিনি। তারপর যোগাযোগ গেল বন্ধ হয়ে। 

     আমি যখন এম এ করছি ইউনিভার্সিটিতে তখন প্রায় দু'বছর পর একদিন হঠাৎ দেখা হয়ে গেল। অল্পকিছু কথা বলার সুযোগ পেলাম। ফোন নম্বর দেওয়া নেওয়া হল। ততদিনে সাহস বেড়েছে অনেকটা। বিকেলেই ফোন করে চলে গেলাম দেখা করতে। কথা শেষ হতেই চায় না। প্রায় সন্ধ্যা নামার মুখে ওর ফোন এল। খুব লাজুক হেসে কথা বলে ফোনটা রেখে দিল। তারপরেই বিপ্ করে মেসেজ এল একটা। আমি না জানতে চাইলেও ও গড়গড় করে বলে চলল ছেলেটির কথা, নাম-ধাম-পড়াশোনা-ফ্যামিলি ইত্যাদি। শুনে কি মনে হয়েছিল বলতে পারব না। তবে চোখে জল আর মুখে বিমর্ষ হাসি নিয়ে অনেকক্ষন শুনেছিলাম, কিছু বলতে পারিনি। তারপর ও মাঝে মাঝে ফোন করতো আমায়, আমার খুব মনখারাপ লাগলে আমিও ফোন করতাম। না চাইলেও মনে পড়ত অনেক কথা। এমনি করতে করতে মস্তিষ্ক আবার হৃদয়ের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছিল।

    তারপর একদিন ফোন করে বিয়ের নেমন্তন্ন করল। না বলতে পারিনি। গিয়ে পৌঁছলাম সন্ধ্যায়। ওর বোনের থেকে দু-চার কথা শুনেই বুঝলাম আমি ওদের বাড়িতে বেশ পরিচিত। তারপর সময় করে এক ফাঁকে আমার কাছে চলে এসেছিল ও। দু চারটে সাধারণ কথার পর বলেছিল, 'তুই আর কবে বলতে পারার মতো সাহসী হবি?' আমি হেসেছিলাম শুধু,সেদিনও কিছু বলতে পারিনি। ও আবার বলেছিল, 'পারবি এখন আমার সঙ্গে পালিয়ে যেতে?' আমি নিরুত্তর বসে ছিলাম। বলল, 'চল পালাই'; বলেই হো হো করে হেসে চলে গেল সাজতে। আমি মাথা নিচু করে বসেছিলাম অনেকক্ষন। ছাদনাতলায় যেতে পারিনি। দেখা হল বিয়ের পর। বিয়ে হয়ে গেল, দুজনকেই মানিয়েছিল বেশ। 

      এখনও সেই স্মৃতি গুলো টাটকা মনে হয়। ভালো বন্ধু ছিল, আজও আছে।

পেজ-এ লাইক দিন👇
 আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments