জ্বলদর্চি

বাজেট আসে বাজেট যায় আর শুধু পিলে চমকায়/গৌতম বাড়ই

বাজেট আসে বাজেট যায় আর শুধু পিলে চমকায়
গৌতম বাড়ই

রোববারের বাজারে আলাদা একটি আমোদ উপকরণ জড়িয়ে থাকে। গেল রোববারে পেয়েছিলাম গাঁজানন কবিকে। জানিনা কোন গুহা থেকে ঐ প্রত্নকবি বেরিয়ে এসেছিলেন আবার কোন গুহায় গিয়ে আবার আস্তানা গেড়েছেন? বাজারের দিনুদা ঢুকতেই বললেন- দাদা তোমার ঐ গাঁজা কবি হাওয়া-  হাওয়াই। কে জানে বাবা কোথা থেকে এলো আর কোথায় মেলালো? সব পুলিশের চর। গোড়ালি দেখেছিলে? একদম ফটফটে ফর্সা, না-  ফাঁটা আর পরিষ্কার। ও দেখে বোঝাই যেত কে চর আর কে খেচর? 

  আমি বললাম- আরে দিনুদা কেয়া বাৎ! আরে আমিও দেখেছি গাঁজাননের গায়ে একদম বিচ্ছিরি পাগলাটে গন্ধ ছিল না! তাহলে? দিনুদা আমায় চিন্তায় পড়তে দেখে বললে-- ভায়া তারচেয়ে বেশি চিন্তা তোমার দু- তারিখের সাধারণ বাজেটে। দেখ আবার জনমুখীর সাথে সরকার কতটা দুঃখমুখীতে মিশেল দেয়। তবে এই বাজেট চিরটাকাল কাঁদিয়ে গেছে। তোমাদের কবি সুনীল গঙ্গোর মতন বলতে হয়, "কেউ কথা রাখেনি। চিরটাকাল সাধারণের ভোট নিয়ে গেছে শুধু, মসনদে বসে কেউ কথা রাখেনি"। বাজেটের পরদিন তিন তারিখে মিলিয়ে নিও দাদা ট্যাক্সে নো ছাড় আর আমরা যেই তিমিরে, সেই তিমিরেই। আমায় একটু বুঝিয়ে বলতো ঐ যে শেয়ার বাজার করে সব লাফায় জিনিসটি কী? উহা পেটে দেয়? না মুখে দেয়? না সেই পুরাতন কথায় মাথায় মাখে? দিনুদা ভেঙ্গিয়ে ওঠেন শেয়ারের ঘোড়া না ষাঁড় দৌড়চ্ছে। কী দৌড়চ্ছে টের পাচ্ছ তো ভায়া? ছুঁচো দৌড়চ্ছে কোটি- কোটি মানুষের পেটে। বাজারের একেবারে  ভেতরে ঢুকব এবারে। দিনুদার প্রাপ্য লাল- চা আর বিড়ি হল আমিও ঢুকলাম ভেতরে।
  দিনুদা তো হল দিন আনে দিন খায় ওর ভাষাতে। আসলে তিনি বলেন- নিজের যা বয়েস তার থেকে বের করে পুরো টাটকা চল্লিশটি বসন্ত এই বাজারে দালালী করি ভাই। পুরো বাজার নখ- দর্পণে। কার মাল কোথায় উঠবে?  আর কোথায় পড়বে ? এ দিনু দেখে। তবে নো মাস্তানি, নো তোলাবাজি। তোমাদের তো এখন সিন্ডিকেট রাজ। যা দেয় ভালোবেসে ওরা, তাতেই চলে যায়। একলা থাকি ভায়া বুঝলে,  দরকারে পেটে খিল মেরেও থাকতে পারি। কোন এক বসন্তে হারু চা- ওয়ালার মিষ্টি মেয়ে মালতীকে মনে ধরেছিল, সে আর হল কোথায়, সে পাখি উড়ে গেল রতন মাকড়ার সাথে। আর ও পথে পা বাড়াই নি। এই জীবন নিয়ে বেশ আছি। চৌধুরীদের নিচের ছোট্ট ঘরে ঘুমাই আর ঐ প্রকাণ্ড বাড়ির রাত- পাহারা দেই।

  শীত বাজারে সবুজ আর রঙ- বেরঙের  সবজিতে মন ভরে যায়। মাছের দিকে তাকালে পিলে চমকে যায়। খাসির মাংস বেশ রেড মিট বলে এড়িয়ে যেতে পেরেছি। পেঁয়াজ পঞ্চাশে ফিক্সড হয়ে আছে। বাজার সরকার লোকটি কে?  আজকাল বেশ পাক্কা খেলোয়াড় হয়েছে। ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিমের মতন। আগে জানতাম স্বদেশের ঘূর্ণি পিচে সিরিজ জিতবে আর বিদেশের মাটি থেকে গো- হারান হেরে মাথা নিচু করে ফিরবেন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিম। এখন তা কিন্তু নয়। সব পাক্কা খেলোয়াড়। বাজার সরকারটিও তাই। লোকটি কে? একবার সামনে পেলে মোক্ষম একখানা প্রশ্ন করতাম। 

  বাজার করে ঘরে ঢুকতেই গিন্নী আমার চুপচাপ রাশভারী মুখ দেখে বললে- কী কর্তা এক সপ্তাহের মধ্যেই সেই জমিদারি মেজাজের বেলুন চুপসে গেল? নাকি বাজারে আলু বেগুনের  ব্যাবসায় লস্ করে এলে? এত রামগরুড়ের ছানার মতন মুখ করে ঢুকলে? 
  আমি মনে মনে বলছি সব গোয়েন্দাগুলো মরেই পরের বাড়ির গিন্নী হয়ে ঢোকে। মুখের প্রতিটি রেখার ওপর এত নজর! তারিফ করতেই হয়। বাজারে কেউ একজন বললেন- "দাদা এবারে দেখুন কোভিড ট্যাক্স না জুড়ে দেয় সামনের বাজেটে"। যত বলির পাঁঠা তো এই চাকুরীজীবিরা। হিসেবের পয়সা কোনো কালো নেই, সব সাদা। তবে ট্যাক্সের বেলায় এ ব্যাটাদের- ই ঘাড় মটকে নে। আরে রেস্টুরেন্টে, অন- লাইনে, কেনাকাটায় এই জিএসটি কে দেয়? বাঁকা পথে আমি মানে আম- জনতাই। আর ভোট দিয়ে সরকার গড়ি ঐ আমি বা আম- জনতাই। গাধার মতন মিটিং আর মিছিলে হাঁটি এই আমি আর আম- জনতাই।  তো ক্ষীর খাচ্ছে কে? এত বছর চাকরী করেও কিছু সামান্য জিনিস এখনও বুঝি না। আর বুঝিনা বলেই আমরা গড্ডলিকা প্রবাহে চলি। শেয়ার বাজার উঠছে আর আমরা ডুবছি। কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়। সোনা তো এখন সাধারণ গৃহস্থের কাছে উত্তরমেরুর সোনালী সন্ধে। ধরাছোঁয়ার বাইরে। গিন্নী আর কী বুঝবে! আর একটি দিন পেরোলেই সংসদের বাজেট। যাদুকরদের খেল চলবে সেখানে লাইভ। 

  গিন্নী ঠিক বুঝেছে। বললে- গেলাসে গরম জল দিয়েছি হাত স্যানিটাইজড করে খাও এবার। কোভিড তো এখনও - "যেতে পারি কিন্তু কেন যাব?" আর তোমায় বলে দিলাম ঐ বাজেট নিয়ে বে- ফালতু টেনশন করবে না। অনেক বছর ধরেই তো শুনে আসছি- এবারেও আমাদের ট্যাক্সে সুরাহা হল না। এবার টিভি আর আলোচনা কিছুই চলবে না। বাজেট ছাড়া জীবন কাটাব। জীবনের বাজেট- ই একবছরে কত বিগড়ে গেল। আর ঐ কেতাবী বাজেট শুনে কী লাভ?

  আমি গিন্নীর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম- একদম হক কথাই বলেছ এতদিন পর। কোভিডে তোমার বুদ্ধি খুলেছে এবার। গিন্নী মুখ ঝামটায় বললে- মানে? আমি বললাম- হুম্ তাই!

আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments