জ্বলদর্চি

বাংলা ব্যাকরণ ও বিতর্ক-২০/অসীম ভুঁইয়া

Bengali grammar and debate
বাংলা ব্যাকরণ ও বিতর্ক
পর্ব ২০
অসীম ভুঁইয়া

শব্দার্থ পরিবর্তনের ধারা

শব্দার্থ পরিবর্তনকে মূলত পাঁচটি ধারায় আলোচনা করা যায়। 
১. অর্থবিস্তার 
২. অর্থসংকোচ 
৩. অর্থসংক্রম  
৪. অর্থের উৎকর্ষ ও  
৫. অর্থের অপকর্ষ।

১. অর্থবিস্তার: 
     কোনো শব্দ তার মূল ব্যুৎপত্তিগত সংকীর্ণ অর্থ থেকে বেরিয়ে এসে ব্যাপকতর অর্থ প্রকাশ করলে, তাকে অর্থবিস্তার বলে।
 
  যেমন: "তেল" শব্দটির মূল অর্থ তিল থেকে উৎপন্ন স্নেহ জাতীয় তরল। কিন্তু শব্দটির অর্থ পরিবর্তিত হয়ে, হয়েছে  যেকোনো বস্তু থেকে উৎপন্ন স্নেহ জাতীয় তরল।
  "কালি" কালো রঙের তরলকে বোঝাত। কিন্তু মূল অর্থ পরিবর্তিত হয়ে এখন  যেকোনো রঙের তরলকেই( লেখা বা আঁকার কাজে ব্যবহৃত) বোঝায়। যেমন: নীলকালি, সবুজকালি, লালকালি প্রভৃতি। 

    অর্থাৎ শব্দ তার মূল বা আদি অর্থ থেকে পরিবর্তিত হয়ে ব্যাপক অর্থ গ্রহণ করেছে। এভাবেই অর্থের বিস্তার ঘটেছে।

২. অর্থসংকোচ: 
    কোনো শব্দ তার  ব্যুৎপত্তিগত, ব্যাপকতর অর্থ থেকে সরে এসে সংকীর্ণ বা বিশেষ  অর্থে ব্যবহৃত হলে, তাকে অর্থসংকোচ বলে।
 
   যেমন: "প্রদীপ" শব্দটির আদি অর্থ সমস্ত রকম আলো। আর পরিবর্তিত অর্থ শুধু মাটি বা পেতল প্রভৃতি কয়েকটি বিশেষ আধারে প্রজ্বলিত আলো।
  "মৃগ" শব্দটির আদি অর্থ যেকোনো পশু। কিন্তু অর্থ  পরিবর্তিত হয়ে, এখন শুধু হরিণকেই বোঝায়।
 
    অর্থাৎ শব্দ তার মূল বা আদি অর্থ থেকে পরিবর্তিত হয়ে অপেক্ষাকৃত সংকীর্ণ অর্থ গ্রহণ করেছে। মানে অর্থ সংকুচিত হয়েছে।
  ৩. অর্থসংক্রম/অর্থসংশ্লেষ:       
    কোনো শব্দ তার ব্যুৎপত্তিগত বা আদি অর্থ থেকে নানান ধাপে পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ নতুন অর্থ গ্রহণ করলে, তাকে অর্থসংক্রম বা অর্থসংশ্লেষ অথবা অর্থের রূপান্তর বলে। 

   যেমন: "সন্দেশ" শব্দটির মূল অর্থ সংবাদ। কিন্তু পরিবর্তিত অর্থ মিষ্টান্ন ।
 "পাত্র" শব্দটি পান করার আধার হিসেবেই ব্যবহৃত হত। কিন্তু পরে তা জলপাত্র হয়ে যায়। তারপর আবার পরিবর্তিত হয়ে বর বা স্বামী হয়।
  প্রথম উদাহরণে "সন্দেশ" শব্দটি "সংবাদ" অর্থে ব্যবহৃত হত। আগে যখন ডাক ব্যবস্থা শুরু হয়নি তখন সংবাদদাতা কারোর বাড়িতে সংবাদ নিয়ে যাওয়ার সময় সৌজন্য হিসেবে মিষ্টি নিয়ে যেত। সেই থেকে শব্দটির অর্থ একেবারে পরিবর্তিত হয়ে, বর্তমানে মিষ্টান্নতে পরিণত হয়েছে। 
    
    আর দ্বিতীয় উদাহরণে পাত্র শব্দটি সংস্কৃতে পান করার আধার অর্থে ব্যবহৃত হত। পরবর্তীকালে অর্থ বিস্তার হয়ে যেকোনো আধারকেই বোঝাত। বর্তমানে এটি বর বা স্বামীকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। তবে জলপাত্র বা আধার হিসেবে শব্দটি এখনো বহু ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
 
৪. অর্থের উন্নতি: 
   কোনো শব্দ তার মূল সাধারণ বা হীন অর্থ থেকে সরে এসে উন্নততর বা  উৎকৃষ্ট অর্থ প্রকাশ করলে, তাকে অর্থের উন্নতি বা অর্থের উৎকর্ষ বলে ।
  
  যেমন: "মন্দির" শব্দের আদি অর্থ ছিল ঘর। পরিবর্তিত অর্থ দেবালয়। 
  "বাতুল" শব্দের আদি অর্থ বায়ুগ্রস্ত বা পাগল। পরিবর্তিত অর্থ বাতুল>বাউল। বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায়।

   ওপরের উদাহরণে "মন্দির" ও "বাতুল" শব্দদুটিতে অর্থের  উন্নতি হয়েছে।

   অর্থের উন্নতি বিষয়টি অনেকটাই সামাজিক বিশ্বাস, অনুভূতির উপর নির্ভর করে।

   ৫. অর্থের অবনতি: 
   কোনো শব্দ তার ব্যুৎপত্তিগত বা আদি উন্নত অর্থ থেকে সরে এসে অপেক্ষাকৃত হীন অর্থ প্রকাশ করলে, তাকে অর্থের অবনতি বা অর্থের অপকর্ষ বলে ।

   যেমন: "মহাজন" শব্দটির আদি অর্থ মহৎব্যক্তি। কিন্তু  পরিবর্তিত অর্থ সুদখোর।       
    "বস্তি" শব্দটির আদি অর্থ বসতি। কিন্তু পরিবর্তিত অর্থ দরিদ্র পল্লি।

   এখানে শব্দ তার মূল উন্নত অর্থ থেকে সরে এসে অপেক্ষাকৃত হীন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই এদের অর্থের অপকর্ষ বলে।

    আরো অনেক উদাহরণ দেওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু...
বিশেষ কারণে একমাস এই ধারাবাহিকটি বন্ধ থাকবে। তারপর আবার শুরু হবে; নতুন সাজে, নতুন ভাবনায়... 
মতামত জানাতে পারেন।
Mail id: ashim.bhunia1982@gmail.com
Whatsaap 7001888143
West Bengal,India 

পেজ-এ লাইক দিন👇
আরও  পড়ুন

Post a Comment

2 Comments

  1. ধন্যবাদ। ভালো লাগলো পড়ে। এভাবে বাংলা সবাই বুঝিয়ে দিলে বাংলাতে আর অনীহা থাকতো না।

    ReplyDelete