জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা - ২৬

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -২৬
সম্পাদকীয়
ছোটোবেলায় আমার যখন খুব টি ভি দেখতে ইচ্ছে হতো তখন বাড়ির বড়োরা বেশি টিভি দেখতে দিতই না। ঠিক এখন যেমন তোমাদের মোবাইল গেম খেলতে, ইউ টিউব দেখতে ইচ্ছে হয় আর বড়োরা দেখলেই বকে তেমনই। আসলে কী জানো, ছোটোবেলার ইচ্ছেগুলো যাতে হারিয়ে না যায় তাইতো বড়োরা বারণ করে। তারচেয়ে এসো ঐ লাল ফ্রক পরা ছোট্ট মেয়েটার মতো লাল পলাশের পাপড়ি নিয়ে রঙ খেলি। বেশ মজা হবে না! মজার কি আর শেষ আছে? জানো, রিমি মজা করে টাইম মেশিনে চেপে মার্গারেটের কাছে চলে যেতে চায় বারে বারে। মার্গারেটকে তুমি চেনো তো? আর মিতুলকে? মার্গারেটতো ভগিনী...  না বলব না। আর মিতুল তো মাসতুতো বোন। তোমরা যারা প্রতি সংখ্যায় আঁকিবুকি করো তারা যাতে আরো সুন্দর করে আঁকতে পারো তারজন্য বানীয়া দিদি আঁকার কিছু টিপস দিয়েছে। খুব সুন্দর একটা ছড়া উপহার দেওয়ার জন্য কবি প্রভাত মিশ্রকে শ্রদ্ধা। প্রবাসী শিশু সাহিত্যিক অনন্যা দাশ ও গল্পকার রীতা মজুমদারকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। আর প্রচ্ছদের লালে লাল ছবিটি পাঠিয়ে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ফটোগ্রাফার সুদীপ পাত্র পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দুই সৃষ্টি শিশু আর ফুলের যে মেল বন্ধন তুলে ধরেছেন তারজন্য তাঁকেও অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। ছোটোরা যারা লিখছ তারা, যারা আঁকছ তারা, যারা পাঠপ্রতিক্রিয়া পাঠাচ্ছ তারাও সকলে খুব মেতে ওঠো রঙের খেলায়।৷  - মৌসুমী ঘোষ


রিমি আর মার্গারেট

অনন্যা দাশ

রিমির মামা একজন বৈজ্ঞানিক, তাঁর নিজের গবেষণাগার আছে। সারাদিন উদ্ভট মেশিনটেশিন নিয়েই পড়ে থাকেন! সেদিন মামার অফিসে যেতে মামা রিমিকে কম্পিউটারের সামনের চেয়ারটাতে বসিয়ে বললেন, “তুই এখানে বসে খেল শুধু মনে রাখিস ঘরের কোণের ওই যন্ত্রটাতে হাত দিস না। ওটা টেস্ট করার জন্যে, হাত দিলে বিপদ হতে পারে!”         

কিছুক্ষণ কম্পিউটার গেম খেলার পর রিমির মনটা কেবলই অফিসঘরের কোণে দাঁড়িয়ে থাকা মেশিনটার দিকে চলে যেতে লাগল। খেলা ছেড়ে মেশিনটার কাছে গিয়ে রিমি দেখল যে ইলেক্ট্রিকের তারটাই প্লাগে ঢোকানো নেই তাই সে তারটা নিয়ে সকেটে ঢুকিয়ে দিল। অমনি ক্রিং ক্রিং করে শব্দ হল আর মেশিনটার গায়ে অসংখ্য আলো জ্বলে উঠল। রিমি মেশিনটার চারিদিকে ঘুরে দেখছিল এমন সময় আচমকা তারে হোঁচট লেগে সে হুমড়ি খেয়ে পড়ল মেশিনটার ওপর। প্রচন্ড জোরে শক লাগল তার। তারপর আর ওর কিছু মনে নেই।

(২)

জ্ঞান ফিরতে রিমি দেখল সে একটা চোখ জুরোনো সবুজ মাঠে শুয়ে রয়েছে। একজন মেম সাহবের মতন ফর্সা মেয়ে ওর চোখে মুখে জল দিচ্ছে।

ওকে চোখ খুলতে দেখে মেয়েটা আনন্দে ইংরেজিতে চিৎকার করে বলল, “এই তো চোখ খুলেছো! ঠিক আছো তো?”  

রিমি বোকার মতন বলল, “আমি কোথায়?”

“এটা আয়ারল্যান্ড!”

“অ্যাঁ! তা তুমি কে? তোমার নাম কি?”

“আমি মার্গারেট, দাদু-দিদার সঙ্গে এখানে থাকি। তুমি কে?” 

“আমি রিমি। আমি ভারতে, মানে কলকাতায় থাকি।“

“ভারত থেকে জাহাজে করে এলে বুঝি? ”

রিমির হঠাৎ কেমন একটা সন্দেহ হল, সে জিজ্ঞেস করল, “এটা কোন সাল বলো তো?”

মেয়েটা হেসে বলল, “এখন ১৮৭৮ চলছে তো!”  

রিমির বুঝল মামার ঘরের ওই যন্ত্রটা আসলে টাইম মেশিন। ওকে ১৮৭৮এ পৌঁছে দিয়েছে! রিমির ভয়ে কান্না পেয়ে যাচ্ছিল। তাই দেখে মেয়েটা এত নরম স্বরে ওর সঙ্গে কথা বলতে লাগল যে রিমি সব দুঃখ ভুলে ওর সঙ্গে খেলায় মেতে গেল। কিছুক্ষণ পর রিমি মাথা ঘুরে  ঘাসের ওপর পড়ে গেল। তারপর আর ওর কিছু মনে নেই।  

(৩)

যখন জ্ঞান হল তখন দেখল সে মামার অফিস ঘরে! মামা খুব চিন্তিত হয়ে ওর মুখ জলের ছিঁটে দিচ্ছেন!

 রিমি ধড়মড় করে উঠে বসে বলল, “ওই মেশিনটা মামা!”

“কী হয়েছে মেশিনটার? আমি তো তোকে ওটা ছুঁতে বারণ করেছিলাম!”

“হ্যাঁ, কিন্তু আমি কৌতূহলের চোটে তোমার কথা না শুনেই ওটাকে প্লাগে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম! তারপর ওটা আমাকে আয়ারল্যান্ড নিয়ে চলে গিয়েছিল। সেখানে একটা  মেয়ে বলল নাকি ১৮৭৮ সাল ওটা!”  

“অ্যাঁ! কে মেয়ে, তার নাম কী?”

“মার্গারেট। পুরো নাম নাকি মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল!”   

তাই শুনে মামা ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়ে বললেন, “তুই যার ছোটবেলায় পৌঁছে গিয়েছিলি তাঁকে আমরা সিস্টার নিবেদিতা বলে জানি। স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকা থেকে লন্ডন গিয়েছিলেন ১৮৯৫ সালে। সেখানে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাড়িতে স্কুল শিক্ষিকা মার্গারেটের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। বিবেকানন্দর কাছে ভারতবর্ষ আর বেদান্তের কথা শুনে এতটাই মোহিত হয়ে যান মার্গারেট যে ১৮৯৮ সালে ইংল্যান্ড ছেড়ে কলকাতা চলে আসেন। তারপর থেকে ভারতবর্ষকে ভালোবেসে ফেলেন মার্গারেট। স্বামী বিবেকানন্দ ওঁর নাম দেন ‘নিবেদিতা’। সেই থেকেই উনি সিস্টার নিবেদিতা নামে পরিচিত। এর পর সিস্টার নিবেদিতা নিজের জীবন নিবেদন করেন নিঃস্বার্থ ভাবে মানুষের সেবায়। ১৮৯৯ সালে কলকাতায় প্লেগ নামের একটা ভয়ঙ্কর অসুখ দেখা দেয়! সেই সময় নিবেদিতা অক্লান্ত ভাবে রুগীদের সেবা করেন, রাস্তা ঘাট পরিষ্কার করেন। সারা ভারতে ঘুরে ঘুরে সংস্কৃতি ও ধর্ম নিয়ে কথা বলেন এবং বেশ কয়েকটি বইও লেখেন তিনি। উনি বাগবাজারে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর জন্যে একটা স্কুলও খুলেছিলেন। সেই স্কুল আজও আছে। ভারতকে ভালোবেসে ভারতের স্বাধীনতার লড়াইতেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মারা যান সিস্টার নিবেদিতা কিন্তু উনি যা করে গেছেন সেই সব কীর্তি আমরা ভুলতে পারিনি।”  

মামা থামতে রিমি বলল, “এত কিছু আগে জানলে তো অটোগ্রাফটা নিয়ে নিতাম! শুধু খেলে সময় কাটালাম! আরেকবার চেষ্টা করব মামা, যদি আবার নিবেদিতার সঙ্গে দেখা করা যায়!”

তাই শুনে মামা গর্জে উঠলেন, “খবরদার না! কে জানে কোথায় নিয়ে চলে যাবে ওই মেশিন!”

আমপাতা জামপাতা 

প্রভাত মিশ্র 

আমপাতা জামপাতা
ছুটে যায় ব ই খাতা 
ভোর-ভোর দোর-দোর 
ঘুরে যায় ফুলচোর
ছুট্-ছুট্ সাইকেল
জ্যাকসন মাইকেল 
বন্-বন্ বন্-বন্
লেখাপড়া শন্-শন্ 
রবিমামা আটটার
টিভিটা এখন ছাড়্ 
দেখে নিই রঙ্গোলি 
যেতে হবে দূর গলি 
অঙ্কের মাস্টার
দুই পায়ে প্লাস্টার 
কামাই সহ্য নয় 
ভয় হয় ভয় হয় 
ইশকুল ফিশকুল
মারো গুল মারো গুল 
দোরে দোরে দুরু দুরু 
এই শেষ ওই শুরু ...

হাসি 

রীতা মজুমদার

আমি আর মিতুল এক বয়সী। আমরা মাসতুতো বোন হই। এই মুহূর্তে মিতুল আমার অভিভাবক। ও যা বলছে আমি তাই শুনছি। নৈহাটি স্টেশান থেকে ট্রেনে ফিরছিলাম। সঙ্গে ছিল মা আর মাসি।  ট্রেন ছাড়তে দেরি আছে ভেবে বেআক্কেলের মত ওরা দুই বোন প্ল্যাটফর্মে চা খেতে নেমে ছিল। মায়েরা ট্রেনটা ধরতে পারেনি। গাড়ি চলতে শুরু করলে আমি চেঁচাতে যাচ্ছিলাম। মিতুল আমার মুখ চেপে ধরে। ফিস ফিস  করে বলে, কেউ যেন বুঝতে না পারে আমরা হারিয়ে গেছি। তারপর আমার কান্না পাচ্ছিল। মিতুল আমার হাতে রুমাল গুঁজে দিয়ে আস্তে আস্তে বলল একদম কাঁদবি না। সামনের লোকটাকে দেখ! মনে হচ্ছে মেয়েধরা। লোকটাকে দেখে আমারও রক্ত হীম হয়ে যাবার জোগাড়।  কেমন কদাকার অসভ্য অসভ্য চাউনি।দু হাতে মেলে ধরা খবর কাগজটা নামিয়ে আমাদের দেখছে।

ব্যান্ডেল স্টেশানে নামার পর ও  লোকটা আমাদের পিছু ছাড়েনি। আমরা তিনবার জায়গা বদল করেছি।সে এখন একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। মিতুল বলেছে লোকটার দিকে তাকাবি না। তাসত্বেও কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে। প্রতিবারই ভয়ে আমার কাঁপুনি লেগেছে আর কান্না পেয়েছে। আমার কোনো কথাই মিতুল শুনছে না।বলেছিলাম, পুলিশ কিংবা টিকিট চেকারদের বলতে। ও শোনেনি। বলেছিলাম ব্যান্ডেল লোকালে চেপে বাড়ি চলে যাই। ও শোনেনি।  ওর একটাই কথা, পরের নৈহাটি লোকালটা আসুক ওতে
মায়েরা ঠিক চলে আসবে। কিন্তু সে তো একঘন্টার
ব্যাপার, এর মধ্যে যদি লোকটা আমাদের ধরে নিয়ে যায়! মিতুল বলেছিল, এত লোকের মধ্যে সেটা পরবে না। আমি বুঝতে পারছিলাম লোকটা দাঁড়িয়ে থাকলে কি হবে একটু একটু করে যেন  আমাদের কাছে চলে আসছে। তাকিয়ে আছি নীচের দিকে।দেখলাম সিমেন্টের বেঞ্চে বসা মিতুল হঠাৎ উঠে দাঁড়লো।
লোকটা এখন  একদম সামনে চলে এসেছে। ঘাড়টা নামিয়ে মিতুলকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছে। ঠিক তখনি মাইকের ঘোষনায় লোকটার গলা হারিয়ে গেল। আমার উৎকন্ঠা আরও বেড়ে গেলো। আর লোকটাকে দেখলাম  একটু দূরে সরে যেতে। জিজ্ঞাসা করতে মিতুল বলল, জিজ্ঞেস করছিল আমাদের বাড়ি কোথায়?   দেখতে দেখতে লোকজনে ভরে গেল
প্ল্যাটফর্ম। নৈহাটি লোকালটা স্টেশানে এসে আমাদের সামনে থামলো।

ওটা নামার জন্য হৈহৈ শুরু হল। মিতুল বেঞ্চের উপর উঠে দাঁড়িয়েছে। ও মায়েদের খুঁজছে।ভীড়ের ফাঁক দিয়ে আমি দেখছিলাম লোকটা একটু দূরে দাঁড়িয়ে। চোখে চোখ পড়ল। এখন আর  অতোটা ভয়  করছে না। মিতুল হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে,  ও মাসি ও মাসি আমরা এখানে। ভীড় ঠেলে হুড়মুড় করে এসে মা আমায় জড়িয়ে ধরে। কাঁদতে শুরু করে দেয়। আমি ও কাঁদছিলাম।দেখলাম মেয়েধরা লোকটা হাসছে। হলুদ ছোপ লাগা তার দেঁতো হাসি থেকে ঝোড়ে পড়ছিল স্নেহ আর মমতা। আমি চুপ করে দেখছিলাম লোকটাকে। মনে হচ্ছিল না লোকটা মেয়েধরা। আর
একটু চওড়া হাসি হেসে হাত নেড়ে মানুষটা প্ল্যাটফর্মের কোলাহলে হারিয়ে গেল।

আঁকাআঁকি 
বানীয়া সাহা

তখন ক্লাস থ্রী। সকাল বেলা একটা ঝোলা ব্যাগের মধ্যে একটা কাঠের বোর্ড, একটা খাতা আর পেনসিল বক্স নিয়েই শুরু হয়েছিল আমার এই যাত্রা। বাবার সাথে দুরুদুরু বুকে প্রবেশ করলাম ড্রয়ং স্কুলটাতে। হুম, ছোটোখাটো একটা স্কুল ই বলা চলে আমাদের তুলি কালচারাল শিল্পালয় কে! আমার থেকে বয়সে অনেক গুন বড়ো বেশ কয়েকজন স্টুডেন্টের মাঝে আমার অবস্থা ছিল দেখার মতো! বাবা আমাকে দিয়ে চলে আসলে কিছুক্ষণ পর একটা ভারী গলা, "উঠে এসো বানীয়া"। চমকে উঠে তাকালাম টুলের ওপর বসে থাকা সেই শান্ত মুখটার দিকে। হ্যাঁ, ইনিই সেই মানুষ, যার জন্যে আজ এই লেখাটা লিখতে আমি এক ব্যকুল আগ্রহ বোধ করছি। আস্তে আস্তে খাতা নিয়ে এগিয়ে গেলাম টেবিলটার কাছে, আমার হাত থেকে খাতাটা নিয়ে খসখস করে কতগুলি সোজা লাইন টেনে দিলেন তিনি বিভিন্ন রকম ভাবে। 
"প্রত্যেকটি লাইন পাঁচটা করে এঁকে এনে দেখাও" এটুকু বলেই খাতাটা আমার দিকে ফিরিয়ে দিলেন। ভয় গুলো তখন একটু একটু করে সরে যাচ্ছিল মন থেকে। আমি খাতা নিয়ে মনের আনন্দে পেনসিল চালিয়ে দিলাম। কাঁচা হাতের সেই ট্যারাব্যাঁকা লাইনগুলো দেখে তিনি বোধহয় বুঝেই ছিলেন আমি বিষয়টার প্রতি মোটেই মনোযোগী নই, মুখে একটা গম্ভীরতা থাকলেও তিনি সেদিন আমায় বকেননি, বরং আমার হাত ধরে ধরে লাইনগুলো আঁকতে শিখিয়েছিলেন। এমনই ছিল আমার প্রথম দিনটা। এরপর পেরিয়ে গেছে অনেকগুলি বছর। আমি আমার অঙ্কন জীবনে যা কিছু শিখেছি এবং যে সফলতা পেয়েছি তার পিছনে এই মানুষটির অবদান সত্যিই ভোলার নয়। তাঁর সেই পরামর্শ এবং নির্দেশগুলোকেই চেষ্টা করলাম তুলে ধরার।
লেখা শেখার জন্য প্রথমে যেমন হাতেখড়ি দিয়ে অ আ ই ঈ শিখতে হয় তেমনি আঁকার ক্ষেত্রেও কিছু বেসিক বিষয় জানা প্রয়োজন। প্রথমে বিভিন্ন আকার আকৃতি গুলোকে রপ্ত করে তারপর সেগুলো দিয়ে একে একে ঘর, নৌকো, গাছ, সূর্য এই সকল ছোটো ছোটো বিষয় গুলোকে শিখে নিয়ে ধীরে ধীরে সিনারি, ল্যান্ডস্কেপ, হিউম্যান ফিগার এগুলোর দিকে এগোতে হয়। তারপর আসে পেনসিল শেড এবং এর পরে রঙের স্পর্শ। একটি ছবি জীবন্ত হয়ে ওঠে 'আলোছায়ার' সঠিক ব্যবহারে। ছবির যেদিকটাতে অন্ধকার দেখানো হবে সেদিকে পেনসিলটাকে একটু চাপ দিয়ে শেড আনতে হবে, যত সামনের দিকে যাবে তত শেডটা হালকা হতে হতে মিশে যাবে। এক্ষেত্রে ফার্স্ট টোন, সেকেন্ড টোন এবং থার্ড টোনের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রতিটি টোন ছবির ওপর এমন ভাবে প্রয়োগ করতে হবে যাতে টোনগুলি পরস্পরের সাথে সঠিক আলোছায়া অনুসারে মিশে থাকে। ওয়েল প্যাস্টেল, জলরঙ, বা তেল রঙ যা কিছুই হোক না কেন প্রধান বিষয়রূপে স্কেচের পাশাপাশি রঙের এই ব্যবহারকে মনে রেখে ছবিটিকে উপস্থাপন করা প্রয়োজন। একটি ছবিকে প্রাণময় করে তুলতে যেমন এই ব্যকরনগত দিক গুলিকে মনে রাখতে হবে তেমনি ছবি আঁকার উপকরন গুলিকেও হতে হবে যথাযথ। শুধুমাত্র বই থেকে নয় চেষ্টা করতে হবে চোখের সামনে যা কিছু দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোকেই খাতায় পেনসিলের ছোঁয়া দিতে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন স্পট নির্বাচন করে বা যেকোনো কিছুকে মডেল হিসেবে রেখে তাকেই এঁকে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। না বুঝে রঙ না চালিয়ে একটু ভালো করে ছবিটাকে পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম ভাবে রঙের প্রয়োগ করতে হবে। বেশিরভাগ স্টুডেন্ট ই বই থেকে দেখে দেখে ছবিটিকে উপস্থাপন করে থাকে কিন্তু এই নকল করার প্রবণতাকে এড়িয়ে তার পরিবর্তে যদি নিজস্ব কল্পনাকে বিস্তৃত করে নির্দিষ্ট ছবিটিকে তার যথাযোগ্য রূপ দেওয়া যায়, তাহলেই ব্যক্তিটির অঙ্কনকলার প্রকৃত দক্ষতা কে চেনা যায়! তাই সবসময় কপি করার বদলে চেষ্টা করা প্রয়োজন নিজস্বতাকে বের করে আনার। এর পাশাপাশি প্রয়োজন নিয়মিত অনুশীলন। কারণ, "Practice makes a man perfect" 
অঙ্কনের সাথে জড়িত প্রতিটি মানুষের পরিচয় যাতে একজন দক্ষ শিল্পী রূপে হয়ে উঠতে পারে তার প্রচেষ্টা সবসময় সে নিজের মধ্যে সক্রিয় করে রাখবে বলে আশা রাখি।

বিতর্ক 

প্রবাহনীল দাস
সপ্তম শ্রেণি, একমি একাদেমী, কালনা, পূর্ব বর্ধমান

মুরগি এবং পায়রা মিলে করছিল জোর বিতর্ক
আওয়াজ শুনেই শালিক, ফিঙ্গে, সবাই হল সতর্ক।
বুলবুলি আর কাকাতুয়া পালিয়ে গেলো মেছেদা
গাছটা থেকে পড়ল সরে বউদি সমেত গেছোদা।
টুনটুনি, কাক, কোকিল সবাই বিপদ দেখে চূড়ান্ত
উড়তে উড়তে ছাড়িয়ে গেলো ভারত-চায়না সীমান্ত।
মুরগি এবং পায়রা কিন্তু চালাচ্ছে তাও বিতর্ক
রুখতে ওদের ফ্লেমিঙ্গরা আসলো ছেড়ে তুরস্ক।

খেলনা

সাঁঝবাতি কুন্ডু
দ্বিতীয় শ্রেণি, গার্ডেন হাই স্কুল, মোহনপুর, নদীয়া

পিকলু আর গুবলু দুই ভাই ।পিকলু বড় আর গুবলু ছোট।পিকলু এখন অনেকটাই বড়--পড়াশোনা করে সারাক্ষণ।একদম খেলার সময় পায় না।যদিও ক্রিকেট প্র্যাকটিসে যায় প্রত্যেক শনি-রবি। মা-  পিকলুর ছোটবেলার সব খেলনা ড্রইং রুমের শোকেশে যত্ন করে রেখে দিয়েছে।
গুবলু একদম পড়াশোনা করে না। সারাক্ষণ খেলা আর খেলা। গুবলু কে মা কিছু বলেও না।পিকলুর খুব রাগ হয়।মা কে- গুবলুর নামে কিছু বললেই বলে-
-ও তো ছোট। তুই তোর পড়াশোনাটা মন দিয়ে কর।
পিকলুর একদম ভাল লাগে না। ওরও তো ছোটবেলার খেলনা গুলো দিয়ে ভীষণ খেলতে ইচ্ছে করে, কিন্তু সে গুলো যে এখন ভাইয়ের সম্পত্তি। এমনিতেই মাঝে মাঝে মা ওর সুন্দর সুন্দর পুরোনো জামা ভাই কে পরায়।
তবে পিকলুর একটা প্রিয় খেলনা  ডিগবাজি খাওয়া বাঁদর ও নিজের পড়ার টেবিলে রেখে দিয়েছে। ওটা ও কিছুতেই ভাই কে দেবে না।গুবলুরও কিন্তু সব খেলনা ছেড়ে ওই বাঁদরটাই চাই।
একদিন স্কুল থেকে ফিরে পিকলু দেখে পড়ার টেবিলে বাঁদরটা নেই। খুব খুঁজলো- কিন্তু কোথাও পেল না।পিকলুর খুব মন খারাপ আবার ভাইয়ের উপর খুব রাগও হলো। 
ভাই কে জিজ্ঞেস করে-
-কি রে ভাই আমার বাঁদরটা কোই?
-আমি তো দা-নি না।
ভাই কে বেশি কিছু বলতে পারে না। তাহলে তো মা আবার পিকলুকেই বকবে।
পিকলু বাবার সাথে শোয় আর গুবলু অন্য ঘরে মায়ের সাথে।
রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে পিকলু চুপি চুপি উঠে পা টিপে টিপে মায়ের ঘরে যায়।এই ঘরেই ভাইয়ের সব খেলনা থাকে। এখানেই নিশ্চয়ই লুকিয়ে রেখেছে।
- এ কি ঘরটা এত অন্ধকার কেন। নীল লাইট টা কেন জ্বলছে না। মনে মনে বলে পিকলু।
আন্দাজ করে আস্তে আস্তে খেলনা রাখার বাক্সগুলোর দিকে এগোয়।
- ও মা গো!
আচমকা এই আওয়াজ শুনে মা ধড়মড়িয়ে উঠে বসে।
মা লাইট জ্বালায়।
- কি রে কি হয়েছে?
- আ আ মা মা র পা য়ে র উ পর দি য়ে কি যে ন একটা চলে গেল।
মা জলের বোতল নিয়ে পিকলুর কাছে যায়।
- হয়ত ইঁদুর হবে।ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
এতক্ষণে  বাবাও চলে এসেছে 
- তুই এখানে কি করছিস।
এবার কাঁদো কাঁদো গলায় বলল 
- আমি আমার বাঁদর খেলনাটা খুঁজে পাচ্ছি না তাই এই ঘরে দেখতে এসে ছিলাম।
হঠাৎ ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্নার আওয়াজে ওরা তিনজন সেদিকে তাকিয়ে দেখে
গুবলু কাঁদছে।
ওই খেলনাটা আমার বালিশের তলায় আছে। ওটা আজকে আমার কাছে ছিল সারাদিন।
পিকলুর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

সাঁতরাইচেঙ্গার রহস্যময় সাতকাহন

গৌতম বাড়ই

পৃথিবীতে যেমন দিন গড়িয়ে রাত আসে আবার রাত গড়িয়ে দিন। এই নিয়মের ব্যাতিক্রম কোনদিনও ঘটেনি। সাঁতরাইচেঙ্গায় ঠিক এইভাবে কেটে গেল আরও অনেকটা দিন- রাত। কোন রহস্যময় ঘটনা বা নতুন কিছু এরমধ্যে ঘটেনি যা মানুষের মধ্যে কৌতূহল বা ভয়ের কারণ ঘটাবে। স্কুলে আবার পড়াশোনা শুরু হয়েছে ঐ নিয়মিত এবং জোরদারে। পুজো এগিয়ে আসছে। প্রকৃতি সত্যি- সত্যি ঋতুরঙ্গে এক- একটা ঋতুতে কী রকম আলাদা করে সেজে ওঠে। সকালের রোদের আলো কেমন যেন সোনালী হয়ে উঠেছে। মুজনাইয়ের পাড়ে একদিন চুপিসারে গিয়ে দেখে আসি অনুপের সাথে কাশেরবন। দূর থেকে মনে হল কেউ যেন ঢাক বাজাচ্ছে।এরমধ্যে একদিন বাবার সাইকেলে চেপে বালাসুন্দর গ্রামে গিয়েছিলাম হারাধন কাকার বাড়ি। তখন তো সব পথ- ই কাঁচা মেনরোড থেকে ভিতরে ঢুকলে। টোটো- অটো এইসব কিস্যু ছিল না। তবে ঐ মেঠোপথের একটা মিষ্টি গন্ধ ছিলো। সোনালী রোদ্দুরে সেই মেঠো পথের ছবি আজও মনে পড়ে। কাকীমা একটা জামবাটিতে সদ্য ভাজা মুড়ি আর ছোলাসেদ্ধ খেতে দিয়েছিলেন। তাও ভুলিনি আজও। যেতে যেতে পথে ভুটনীরঘাটের ঐ বড়গর্তটা চোখে পড়ল যেখানে এসে ইলু- বিলু আর তিলুরা নেমেছিল। বন্ধুদের জন্য মনোকষ্ট হচ্ছিল অনেক। ওরা তো বলেছে আবার পুজোর পরে শীতের শুরুতে আসবে। এই ভেবে মনের দুঃখ দূর করলাম।

স্কুলে পুজোর ছুটি পড়ে গিয়েছে। ভুটনীরঘাট থেকে সাঁতরাইচেঙ্গা, এই পশ্চিম ফালাকাটা পেরিয়ে ধূপগুড়ি মোড় পর্যন্ত ছ- সাতটি দুর্গাপূজা হত তখন। ফালাকাটা বন্দরে দশমীর দিন থেকে বিরাট এক মেলার আয়োজন হয়। আমার মন পড়ে থাকত কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুলের দিকে। বাবা- মাকে বায়নাও করতাম কিনে দিতে। এবারে দেখছি সেই পুতুলের টান মনের ভেতর থেকেই নেই। তবে আমি কী বড় হয়ে উঠছি? প্রশ্ন করি নিজেকে। দিদিও বললে হাসতে- হাসতে-- ভাই তোর গলা তো বদল হয়ে কী বিশ্রী হয়ে গিয়েছে! 

আমি নিজের থেকেই নিজেকে প্রশ্ন করি কেন? ঐ আমার ভিনগ্রহী বন্ধুরা কোন কারসাজি করেনি তো? আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। মা কাছে এগিয়ে এসে বলল--- বুদ্ধ তুই এবারে পুরুষ মানুষ হয়ে উঠবি। তোর গলা ভাঙ্গছে। 

মায়েরা সব বোঝে। আমার মুখ দেখে আমার দুশ্চিন্তা পড়তে পেরেছিল। দেওয়ানি কাকা প্রতিদিন সন্ধের মুখে আমাদের বাড়িতে আসে। চা আর হালকা কোন খাবার খেয়ে বাড়ি যায়। বাবার সাথে কী যেন বিড়বিড় করে কথা বলে। বিডিও ছিরিং লেপচাও দু- দিন বাবার কাছে এসে সব খবরাখবর নিয়ে যায়। তবে রাত পাহারা চললেও পাহারার লোকসংখ্যা কমে গিয়েছে। তবে নিয়ম করে ফালাকাটা থানার পুলিশ পেট্রোল ভ্যান নিয়ে  দু- তিনবার দেখে যায় বাবা বলছিল। পুলিশ পাঠায় না রাত্রে আর। দরকার নেই বলে।

নতুন এসএসবি ক্যাম্প ঠিক মুজনাই নদীর এপারে হয়েছে,  এবার নাকি দুর্গাপূজা করবে তাদের কর্মীরা ওখানে। আমাদেরও সবার সাহস বেড়েছে ঐ ক্যাম্প আস্তে- আস্তে তাদের লোকজন, তাদের উর্দিপড়া জওয়ানে ক্যাম্পভর্তি হয়েছে বলে। পুজো এগিয়ে আসতেই দেখলাম বিপুল উদ্দীপনার মধ্যে বড় ম্যারাপ বেঁধে এসএসবি ক্যাম্প দুর্গাপূজার প্রস্তুতি শুরু করেছে। যাত্রা, নাটক, নাচ, গান সবই থাকবে। মনটা পুজোর আনন্দে ভরে গেল। ইলু- বিলু- তিলুকে একটু ভুলে থাকতে পারছিলাম। কিন্তু রাতে শুয়ে পড়লেই তারা আমার মাথার মধ্যে এসে ভিড় করতো। 

এখন ভোর রাতের দিকে হালকা ঠাণ্ডা হাওয়া আসে, গায়ে শিরশিরানি হয়। মা বললেন-- একটা জানালা ঐ পাশের ওপরের পাটটা খুলে শুবি। নইলে নতুন ঠান্ডা বুকে লেগে যাবে। ভুটান পাহাড় থেকে রাতে ঠাণ্ডা এসে নামত আমাদের গ্রামে। ধান পেকে উঠত আর হাতীর পাল ধানের লোভে গ্রামে ঢুকত। আমরা রাতে ক্যানেস্তারা পেটানোর আওয়াজ শুনতাম। কখনও পটকার আওয়াজ। একদিন রাতে গভীর ঘুমে, প্রচন্ড হৈ চৈ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল। মা লন্ঠনের আলো হ্যারিকেনের চাবি ঘুরিয়ে বাড়িয়ে তুলেছে, বাবা কান পেতে বাইরের আওয়াজ শুনছেন। হাতীর পাল এসেছে নাকি! শোনা গেল চোর! চোর! শব্দ। বাবা গায়ে জামা গলিয়ে বললেন মাকে- দরজাটা খোল আর আমার টর্চটি দাও। মনে হচ্ছে দেওয়ানিদের বাড়ির দিক থেকেই এ আওয়াজ ভেসে আসছে। তুমি দরজায় খিল দাও। দেখে আসি। বাবা টর্চ হাতে বেড়িয়ে গেলেন। 

আমরা টেবিলক্লকে দেখলাম ভোর চারটে বাজে। তবে এখনও ঘন অন্ধকার বাইরে। শুয়ে পড়েছি কিন্তু বাবার চিন্তায় ঘুম আসছে না। একা- একা তো বাইরে গেলেন!

বাবা ফিরতেই দেখলাম ভোরের আলো ফুটে উঠেছে। আমার দুই- চোখ ঘুমে তখন জড়িয়ে এসেছে। বাবা বললেন-- দেওয়ানিদের পাড়ায় চোর ঢুকেছিল দু- জন। একজন ধরা পড়েছে। আমি ওদের নিষেধ করেছি মারতে। পুলিশে খবর দিতে একজনকে ফালাকাটা থানায় পাঠিয়েছি। পুলিশ এলেই ওরা আমাকে ডাকবে। 

মাকে বললেন- একটু ঝটপট স্টোভে চা করে দাও।
আমি এবারে চোরের কথা শুনে পুরোপুরি জেগে উঠলাম। আমারও চা খেতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু তখন বড়রা ছোটদের দু- কাপের বেশি চা- পান করতে দিতেন না সারাদিনে। বাড়ির বাইরে একটু বাদেই দু- চারজনের হাঁক- ডাক শোনা গেল। বাবাকে ডাকছেন। বাবার হাতে তখনও কাপে চা। আর আমি চোর দেখবার জন্য এক ফন্দী আঁটছি।

বাবা বেরোতেই , আমিও বাথরুমে যাবার নাম করে বাইরে এসেই বাবার পেছনে ছুট লাগালাম চোর দেখব বলে। সকাল হয়েই গিয়েছে। দূর থেকে জটলা দেখলাম। সামনে গিয়ে দেখি পুলিশের ভ্যান আর বাবার সাথে দারোগাবাবু কথা বলছেন। তারপর নজর একটু ঘোরাতেই সদ্য যে টেলিগ্রাফের খুঁটি পোঁতা হয়েছে এসএসবি ক্যাম্পের জন্য সেখানে মোটা দড়ি দিয়ে একজন কাউকে  বাঁধা হয়েছে। জীবনে সেই প্রথমবার চোর দেখা। এবার তার মুখের দিকে নজর করতেই চমকে উঠলাম। আরে একে তো আমি চিনি! ইনি তাহলে সত্যি চোর!

এরপর আগামী পর্ব এবং শেষ পর্ব। যারা পড়ছেন এবং পড়ছো অবশ্যই পড়তে হবে শেষ চমকের জন্য।

পাঠপ্রতিক্রিয়া ১
(জ্বলদর্চির ২৫ তম ছোটোবেলা সংখ্যা পড়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সিউড়ির শ্রীনীলা যা লিখল )
 
সংখ্যাটি পড়া শেষে আমার মনে হল এর মূল বিষয় হল  বন্ধুত্ব এবং মানুষের সুসম্পর্ক।

এই  সংখ্যাতে আছে তিনটি গল্প, দুটি ছড়া আর একটি কল্পবিজ্ঞানের রহস্য গল্প এবং আমাদের মত শিশুদের আঁকা ছবি।
সংখ্যাটি পাঠ শেষে চুপ করে ছিলাম খানিকক্ষণ।  সম্পাদক মৌসুমী আন্টিকে প্রণাম জানাই আমাদের জন্য এইরকম একটি পত্রিকা ভেবেছে বলে ।এই পত্রিকা কিনতে হয় না।
আমি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ,নবনীতা দেবসেন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুকুমার রায়  শেষ করেছি। বেতালের গল্প দারুণ লাগে।তবে বলতে কি এতোগুলো গল্প ছবি ছড়া কবিতা  এবং টানটান রহস্য গল্পে সাজানো খুব কম পত্রিকায় পাই। সুন্দর গাছে চাপার ছবি।
এবারের সংখ্যাটি আমার বিশেষ ভালো লাগার কারণ হলো রাঙাপিসি। সত্যি সত্যি আমাদের স্কুলে এবার  সরস্বতী পূজা হয়নি। তাই আমাদের সবার মন খারাপ ছিল। আমরা  করোনার সময়ে  ঘরে ঢুকে থাকার কষ্ট পেয়েছি।
রাঙাপিসির মুখে শুনলাম পক্সের কথা। মাকে জিজ্ঞেস করলাম  পক্স কি ? মা বলল  রাঙাপিসি  যেটা বলেছে সেটাই ঠিক। পক্সের কারণে  বন্ধ হয়ে যাওয়া পুজো আবার নতুন করে করার মজার গল্প শুনে মন ভাল হয়ে গেল। সঙ্গে পেলাম   বড়িমামাকে। ও  সব কাজ করে দেওয়া পুজোর জোগাড় করে দেয়। শেষে রাঙাপিসির  মায়ের বড়িমামাকে শিক্ষিত করার প্রবল ইচ্ছা এবং তারপর রাঙাপিসি শিশুদের লেখাপড়া শেখানোর তাগিদ আমাকে নতুন করে ভাবাল।
    এরপর শঙ্খনীল সরকারের আঁকা  একসঙ্গে ফুটবল খেলার ছবি আমাকে অভিভূত করল। এখানেও সেই বন্ধুত্বের ছবি। আমাদের মাঠ এখনো খোলেনি।
রবি ঠাকুরের অমল ও দইওয়ালা কার না জানা। অমলের গল্প অমলের কাছ থেকেই জানতে হয় । কবি বিপ্লব চক্রবর্ত্তী খুঁজে চলেছেন সেই সুস্থ অমলকে । শুধুমাত্র অমলটা সেরে গেলে ওর সাথে খেলবে। খুব ভালো লাগলো আমার।
আমি ছড়া কবিতা  বুঝতেও পারিনা কিন্তু অমল কে খুঁজতে গিয়ে কবির সঙ্গে আমিও ছুটলাম।
তুলি দাসের জঙ্গলের ছবি আমাকে ঘরে থাকতে দেয় না। খুঁজে বেড়াই সেই  পাখিদের ডাক ।কেননা আমার বাড়ির কাছেই একটা জঙ্গল আছে।
জিদানের গল্প আমার জানা ছিল না। মায়ের কাছে জানলাম ফ্রান্স দলের একজন ফুটবলার। এই গল্পে মুকুন্দপুর স্কুলের রতন সেই জিদান। আবার কালিপদ শত্রুতা করলেও মাঠে কিভাবে মেজাজ ঠিক রাখতে হয় এবং সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয় তার শিক্ষাও খুব সুন্দর ভাবে দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে গল্প শেষে আমাদের চমকে দিয়েছে ।গল্পকার দীপক কুমার মাইতি আমাদের আনন্দ দিয়েছে ।এখানে এক  বন্ধু  অন্য বন্ধুর মনের উন্নতি চেয়েছে। সঠিক পথ দেখিয়েছে।
ঋতব্রতা দিদি আমার মনের মত করে ব্যাটম্যান সুপারম্যানের ছবি তুলে ধরেছে। এই সংখ্যায় ছবিগুলি সব চেয়ে ভালো লেগেছে।
অনন্যাদি ' আড়ি' ছড়াটি আমার  ভালো লেগেছে। কারণ আমরা যে ওরকমই করি । রেগে গিয়ে আড়ি নিই।  আবার দুদিন যেতে না যেতেই মন খারাপ হয়ে যায় ওর জন্য। অনন্যাদি আমাদের মনের কথা লিখেছে।
হিয়াদির ছবি অন্যরকম । অবাক হয়ে ছবিটি দেখি।
প্রীতিদির 'শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন' গল্পটি একেবারে নতুন ধরনের। আমার একটা বন্ধুর ভাই হয়েছিল। তার আনন্দ ঠিক এরকমই হয়েছিল। কিন্তু সে এইরকম মোবাইল ছুঁড়ে দেয় নি। এই গল্পটি শিশুদের আরো যত্ন নিতে শেখায়।
এরপর ভিনগ্রহের কল্পনার রহস্য গল্প নিয়ে হাজির হয়েছে  সাঁতরাইচেঙ্গার রহস্যময় সাতকাহন   গল্পে আমি নতুন কিছু জানতে পারলাম ।শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির কথা, বায়ুমণ্ডলের স্তরের কথা, মহাকাশে রহস্যময় জীবের কথা , এমন টানটান গল্পের জন্য আগামী সংখ্যায় অপেক্ষা করতেই হয়। শেষে আফরিন বোনের রং খেলা আমাদের মনে হোলির আগমন বার্তা জানিয়ে দেয়। মনের মধ্যে রং মাখার ইচ্ছাটা জেগে ওঠে। - - - হ্যাপি হোলি।
মৌসুমী আন্টি সামনের সংখ্যাটার জন্য অপেক্ষায় রইলাম
শ্রীনীলা অধিকারী
পঞ্চম শ্রেণি
সরোজিনী দেবী সরস্বতী শিশু মন্দির
পাইকপাড়া সিউড়ি বীরভূম

প্রকাশিত। ক্লিক করে পড়ুন। 


পাঠপ্রতিক্রিয়া ২
( জ্বলদর্চির ২৫ তম ছোটোবেলা সংখ্যা পড়ে চেন্নাই থেকে বাসবদত্তা অমিত কদম লিখলেন )

খুব আন্তরিক সম্পাদকীয় মৌসুমী ঘোষের আর তেমনই আন্তরিক সব লেখায় ভর্তি জ্বলদর্চির সব সংখ্যা। 
 জ্বলদর্চি বিশেষসংখ্যা২৫ সাথে ছোট্ট বন্ধুদের  আঁকা লেখা কবিতা এককথায় একদম জমে উঠেছে এই প্রয়াস। অপু পালের নেওয়া প্রচ্ছদের ছবিটি এক কথায় অপূর্ব।  
শ্রীকান্ত অধিকারীর বড়িমামার হাতেখড়িঃ বাইরে যাওয়া নেই।খেলা নেই।স্কুল নেই এমনকি সরস্বতী পুজোও নেই।ছোট্ট বন্ধুদের মন খারাপ তো হবেই তখনই হাজির রাঙা পিসির তার ছোটবেলার গল্পের ঝুড়ি নিয়ে মন ভালো করতে। এই গল্পে বড়ি মামার এত উৎসাহ বাচ্চাদের সরস্বতী পুজো নিয়ে যেন  কৃপা পায় মা সরস্বতীর তার হাতেখড়ির মধ্য দিয়ে।রাঙা পিসির মায়ের চরিত্র টি লক্ষ্যনীয় রকমের সুন্দর। 

বিপ্লব চক্রবর্তীর অমলের খোঁজঃ ডাকঘরের  অমলকে ভালো তো হতেই হবে খেলতে যেতেই হবে বন্ধুদের সাথে।রাজার চিঠি সেই কবে থেকে তার অপেক্ষায় আছে ডাকবাক্সে ঘুমিয়ে। 

দীপক কুমার মাইতির জিদানঃ পৃথিবী বিখ্যাত খেলোয়াড় জিদানকে  গ্রামের সম্ভাবনাময় রতনের সঙ্গে মিলিয়ে গল্পের প্রচেষ্টাটি বেশ ভালো। 

অনন্যা মৈত্রর আড়িঃ ছোট্ট মনের ভালোবাসা আর রাগের প্রতিফলন ছন্দে। খুব সুন্দর।  তাকে বলব অনেক অনেক কবিতা লেখ আরো কবিতার সঙ্গে যেন দিয়োনাকো আড়ি

প্রীতি জ্যোতির শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনঃ বেশ হয়েছে গল্প। ভাইকে তো দিদির ভালোবাসতেই হবে তবে রেগে গিয়ে ফোন না ছুঁড়ে ফেলতে পারলে অবশ্য বেশী ভালো। 

গৌতম বাড়ইএর সাঁতরাইচেঙ্গার রহস্যময় সাতকাহনঃ পর্ব ১৫ বেশ এগোচ্ছে। ছোট্ট বন্ধুদের সঙ্গে আমরাও অপেক্ষায় আছি পরের পর্বের।  

শঙ্খনীল সরকার, তুলি দাস, ঋতব্রতা নন্দী, হিয়া বক্সি, আফ্রিণ হাফসানা, সায়নী কুন্ডু কি সুন্দর সুন্দর রঙিন ছবি যে তোমরা এঁকেছ দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। 

আমার নজর থেকে কেউ বাদ পরে যাওনি তো? আড়ি করে দিও না প্লিজ।

পাঠ প্রতিক্রিয়া ৩
(জ্বলদর্চির ২৫ তম ছোটোবেলা সংখ্যা পড়ে নদীয়ার অনামিকা ঘোষ যা লিখলেন )

দেখতে দেখতেই বসন্ত পা রেখেছে তার অন্তিম দুয়ারে। আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় এখন শুধুই আবির রঙের খেলা। তাই বার বার বলতে ইচ্ছা করে " রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও ; যাও গো এবার যাবার আগে।" দোল উৎসব এসেই গেছে। তাই মৌসুমীদি ও জ্বলদর্চির সমগ্র পরিবারকে জানাই হোলি উৎসবের রঙিন শুভেচ্ছা। আমার ছোট্ট বন্ধুদের বলব বসন্তের বিদায়ে তোমরা যেন মন খারাপ করো না। প্রকৃতির নিয়মে- "যে আসবে সে তো যাবেই"। কিন্তু তোমরা চাইলে বসন্ত কে ধরে রাখতেই পারো সব সময়ের জন্য। বলো তো কি ভাবে ? তোমাদের আকাশের মতো বিস্তৃত সরল মনের মাঝে ; প্রাণ খোলা হাসিতে। জ্বলদর্চির প্রতিটি সংখ্যায় গল্প, কবিতা, ছবি, ছড়া ছোটদের জন্য প্রকাশিত হলেও আমরা বড়োরাও তা পড়ার লোভ সামলাতে পারি না। কেননা এই ধরনের লেখার মাঝেই আমরা জীবনের সবচেয়ে ভালো সময় শৈশবের দিনগুলো খুঁজে পাই। 
      বাড়ির উঠোনের আমগাছটি থেকে ঠিক এমনি এক সময়ে যখন আমের মুকুল ছিঁড়ে এনে খেলতাম রান্নাবাটি; কত বকুনিই না খেতে হতো ঠাকুমার কাছে। ২৫ তম সংখ্যার ছোট ছেলেটির গাছে ওঠার প্রথম ছবিটা সেই দিন গুলির কথা মনে করিয়ে দিল। উঠোনের সেই আমগাছ টি আজ আর নেই; নেই শৈশবও। ভাইরাসের দাপটে সারা বিশ্ব জুড়ে বন্ধ হয়ে গেছে বৃহৎ সামাজিক অনুষ্ঠানগুলি। তবে স্কুলের সরস্বতী পুজো বন্ধ হলেও বাড়িতে ও ছোট ছেলেমেয়েদের উদ্যোগে পাড়ার মোড়ে পুজো বন্ধ হয় নি। শ্রীকান্ত অধিকারীর গল্পে পক্স নামের মহামারির সময়ে ঠিক তেমনই রাঙাপিসির পাড়ার ছোট ছেলেমেয়েদের সরস্বতী পুজোর প্রথম প্রয়াসের কথা পড়ে খুব ভালো লাগলো। বাড়িতে ছোট অতিথি এলে সবার মন ভালো হয়ে যায় ঠিক "শুভেচ্ছার" মতো।
ছোট্ট ভাই অভিনন্দনের মাথায় আঘাত করে বাবার ভয়ে শুভেচ্ছার নিজেকে টয়লেট এ আটকে রাখার ঘটনায় নিজের হাসি আর চেপে রাখতে পারলাম না। বসন্তকালে নানা রোগ ব্যাধির উপদ্রব দেখা যায়। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। নইলে "অমল" এর মতো অসুস্থ হয়ে পড়লে কবির মতো আমাদের বন্ধুরাও খেলার সাথী হারাবে। অনন্যা মৈত্রের " আড়ি" কবিতাটি বন্ধু বান্ধবীদের খুনসুটি মাখা ভালোবাসার বাস্তব রূপ টি ফুটিয়ে তুলেছে - 
       ' ঠিক করেছি করেই নেব ভাব / একটু আসুক করতে সেধে দেখা' । 
"জিদান " গল্পটিতে ফ্রেঞ্চ ফুটবলার জিদান কে প্রতীক করে লেখক কালীপদ বাবুর মুখে রতনের জন্য সতর্কবার্তা রেখেছেন। সুব্রতকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা একটি ইন্টার- স্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতা যা ১৯৬০ সালে দিল্লিতে প্রথম শুরু হয়। শঙ্খনীল সরকারের আকা চিত্র টি এই গল্পের সাথে একেবারে মানানসই। "সাঁতরাই চেঙ্গার রহস্যময় সাতকাহনে" লেখকের এলিয়ন বন্ধুরা স্পেসে ফিরে যাওয়ায় তার গ্রাম ভুতুড়ে কাণ্ডের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু এই পর্বে লেখক যে প্রশ্ন রেখেছেন - "প্রাণের প্রথম অস্তিত্ব জলে না মহাকাশে ?" তার উত্তর খুঁজে পেতে পরের পর্ব টির জন্য আমার কৌতূহলী রইলাম। হিয়া বক্সীর আকা গণপতির চিত্র আসন্ন পহেলা বৈশাখ এর ইঙ্গিতবাহী। এছাড়া ঋতব্রত, তুলি, আফরিন এদের প্রত্যেকের ছবিগুলিই লেখা গুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সবশেষে মনোজিৎ বেরার "জানো কি ?" পর্বটি অনেকাংশেই পত্রিকার মানোন্নয়ন ঘটিয়েছে। এই পত্রিকায় যে সব শিল্পীরা লিখে চলেছে , এঁকে চলছে , তারা প্রত্যেকেই ভবিষৎ শিল্প আকাশের এক এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আর এই শিল্প স্রষ্টা জ্বলদর্চি পরিবারের জন্য রইল আমার শুভকামনা। তোমাদের প্রাপ্তি হোক এক বৃহৎ পাঠকসমাজ । 

অনামিকা ঘোষ
পাটিকাবাড়ি , নদিয়া।
আজকের বিষয়: প্রথম প্রচলন কোন দেশে!

১.ক্রিকেট খেলা কোন দেশে প্রথম প্রচলন হয়?
২. সাইক্লিলিং খেলা প্রথম কোন দেশে প্রচলন হয়?
৩.হকি খেলা প্রথম কোন দেশে প্রচলিত হয়?
৪. গল্ফ খেলা কোন দেশে প্রথম প্রচলন হয়?
৫. লনটেনিস খেলার জন্ম কোন দেশে ?
৬.বক্সিং খেলার জন্ম কোন দেশে?
৭.ভলিবল খেলার জন্ম কোন দেশে ?
৮. কবাডি খেলার জন্ম কোন দেশে?
৯.জুডো খেলার জন্ম কোন দেশে?
১০.ক্যারাটে খেলার জন্ম কোন দেশে?

আগের সপ্তাহের উত্তর:
১.ইংরেজি ২.ইংরেজি ৩.বাংলা ৪.বাংলা ৫.হিন্দি ৬.ইংরেজি ৭. হিন্দি ৮.বাংলা ৯.গুজরাটি ১০.হিন্দি।

পেজ-এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments