জ্বলদর্চি

পূর্বমেদিনীপুর জেলার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথ্যভাষা-২৭/ বিমল মণ্ডল

Spoken language of the fishing community of East-Medinipur district / Bimal Mondal
পূর্বমেদিনীপুর জেলার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথ্যভাষা
পর্ব-২৭

চতুর্থ অধ্যায় || বাক্যতত্ত্ব (Syntax) 


৭.ভাবগত দিক দিয়ে বাক্যের শ্রেণিবিভাগঃ
মান্যচলিত বাংলাভাষার মতোই  পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মৎস্যজীবীদের কথ্যভাষাতে বাক্যের ভাবগত দিক থেকে কয়েকটি  ভাগে ভাগ করে বাক্যের  ব্যবহার  দেখা  যায়।যেমন-

৭.১. নির্দেশকসূচক  বাক্য:
এই জেলার  মৎস্যজীবীদের  কথ্যভাষাতে প্রায়শই  নির্দেশকসূচক  বাক্যের  প্রয়োগ দেখা  যায়।তবে এই বাক্যে মান্য চলিতের থেকে এই জেলার কথ্যভাষায় বেশ পার্থক্য  পরিলক্ষিত হয়।তাই  মান্যচলিত ভাষাতে  দুই ভাগে ভাগ দেখা  গেলেও এখানে  এই বাক্যকে   ছয়টি  ভাগের   ব্যবহার  দেখা যায়। যেমন-

৭.১.১. হ্যাঁ -সূচক বাক্য:
ক. আইজু  নউকা লিয়ারে।( আজ নৌকা  নিয়ে  যাচ্ছে।) 
খ.তুমকু লেইখি কি জ্বলা (তোমাকে নিয়ে কি জ্বালা।) 
গ.আপনঁ কহেলে মুই তাই করিমি।( আপনি  বললে আমি করবো।) 
ঘ.তনেএঠি রই যা।( তোমরা এখানে থেকে যাও।)
ঙ.ঘর চ পটকরিয়া।( ঘর চল তাড়াতাড়ি।) 
চ.মোর নউকা ডুবিয়ালো। ( আমার নৌকা ডুবে গেল।)
ছ.একপেস গাড়িতে  যাবু।( এক্সপ্রেস  গাড়িতে যাবি।)
জ.মোর খাবা হইচে।( আমার খাওয়া  হয়েছে।)
ঝ.নউকা বুসিয়ালা।( নৌকা বসে গেল।)
ঞ.মাচ ঠিকরিকি উপপরে আসি পড়ুছে।( মাছ উপরে উঠে  এসেছে।) 

৭.১.২. না- সূচক বাক্য:

ক.তুই  ভা খাবুনি।( তুই ভাত খাবি না।)
খ.মন্নে নক্কায় কাল থাইলি নি।( আমরা নৌকায়  কাল ছিলাম না।)
গ.অউ কাজটা আমি কত্তে পারবানি।( অই কাজটা আমি করতে পারবো  না। 
ঘ.তনে গমাই থাসবি না।( তোরা গোবর  মাড়াবি না।)
ঙ.ঠাকমা খেরাপ নেই।( ঠাকুমা খারাপ  নেই।)
চ.কাচাকড়ি আইজ তুলবো নি।( কাঁচা খেসারি  আজ তুলবো  না।)
ছ.সকাঁউ বাহারো যাবে না।( সকালে বেরিয়ে যাবে না।)
জ.চেলতা লিকি হাটোরো যিবোনি।(চালতা নিয়ে হাটে যাব না।)
ঝ.মাউশা নউকায় কুনদিন যাবেনি কইছে।( মেশো নৌকায়  কোনদিন  যাবেনি বলেছে।)
ঞ.তরমোনে সকালনু খাউনু।( তোরা সকাল থেকে  খাস নি।)

৭.১.৩.কাতরতা সূচক বাক্য:

ক. মা রে, মাচ নেই পড়লে মরিয়াবো রে।( মা, মাছ না পড়লে মরে যাবো।) 
খ.লোকটা  নাই খেতে পায়া মরিযালা ঠাকুর। ( লোকটা  না খেয়ে মরে গেল  ঠাকুর।)
গ. তনে বারিআয় কি সর্বনাশ  হইছে রে।( তোরা বেরিয়ে আয় কি সর্বনাশ  হয়েছে।)
ঘ.বোননায় টকাগুয়া ডুবিয়া মরিয়ালো গো।( বন্যায় ছেলেগুলো  ডুবে মরে গেল গো।)
ঙ.মায়াটা আঁ ধত্তে যায়্যা  আর আইলোনি।( মেয়েটি মিন  ধরতে গিয়ে আর আসেনি।) 
চ.মা গো মোর খুব যন্তরণা হউছি।( মা গো আমার খুব যন্ত্রণা  হচ্ছে।) 

৭.১.৪.প্রতিহিংসা পরায়ণ বাক্য:

ক.মুই অকে শেষ  দেখিয়্যা ছাড়বো।( আমি ওকে শেষ  দেখে ছাড়ব।)
খ.তুই চলি যাউরি যা পরে তকে দেখাইবো।( তুই চলে যাচ্ছিস যা পরে তোকে দেখাব।)
গ.হো-রে, তকে দেখি লি কি যিবা।( হ্যা রে, তোকে দেখে নিয়ে যাব।)
ঘ.মারিয়া না ভুত করি দুবা।( মেরে ভুত ছেড়ে দেব।)
ঙ.আমি আইজকে কইটি তোকে ছাড়বা নি।( আমি আজ বলছি তোকে ছাড়বো  না।) 

৭.১.৫.নিবেদনাত্মক বাক্য:

ক.মোর নউকা য্যানো ঠিক করিয়া যায় গো।( আমার নৌকা  যেন ঠিক করে  যায়।)
খ. ওকে কয়াগুয়া বেবাগ দুবো নি।( ওকে সব কলা দেবে না।)
গ.তুমানে আমারে টকাটাকে ভালো রাখবো। ( তোমরা আমার ছেলেটাকে ভালো রাখবে।)
ঘ.হউ, তুমর সাথর মু যিবা।( হোক, তোমার সাথে আমি যাব।)
ঙ.কি হলা অকে অসুধ দাও।( কি হলো  ওকে ঔষধ  দাও।)

৭.১.৬.কামনামূলক বাক্য:

ক.ভালা করিয়্যা য্যানো পরীক্ষা  হয় গো।( ভালো  করে যেন পরীক্ষা  হয়।)
খ.ঠাকুর মোর মা কে বাঁচি দও।( ঠাকুর আমার মাকে বাঁচিয়ে দাও।)
গ.হে ভগবান , আমানে আরো ক'দিন নাই খায়া রইবা।( হে ভগবান, আমরা  আর কত দিন না খেয়ে থাকবো।)
ঘ.জালে য্যানো বেশি মাচ পড়ে  ঠাকুর। ( ঠাকুর জালে যেন বেশি মাছ পড়ে।)
ঙ.বাবা - মাকে  ক'দিন ঘুরি লিয়া  আসবা।( বাবা- মা কে কদিন ঘুরিয়ে নিয়ে আসবো।)

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মৎস্যজীবীদের কথ্যভাষা আলোচনা করতে গিয়ে বাক্যের যে ভাগ আলোচিত হলো এই পর্বে তা মান্যচলিত বাংলা ভাষার সাথে বেশ ফারাক দেখা যায়। পরবর্তী  পর্বে  এই জেলার মৎস্যজীবীদের  কথ্যভাষায় বাক্যের  আরও  ব্যবহার গত দিক দেখানো হবে।

পেজ-এ লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments